হৃদয় ডানা মেলে




                                                                 













                         হৃদয় ডানা মেলে
                        ( একটি মুক্তগদ্যগ্রন্থ ) 












Hriday Dana Mele
A collection of Bengali  Micro-prose
By Amit Kumar Biswas  





Rs. 50/- (Hard Copy)


গ্রন্থস্বত্ব: লেখক  
প্রথম প্রকাশ: অনলাইন- শ্রাবণ, ১৪২১ (আগস্ট,২০১৪) 
প্রকাশকঃ ‘অচেনা যাত্রী’র পক্ষে সুমনা বৈরাগী বিশ্বাস, ‘অখিল-স্মৃতি’ গ্রন্থাগার, নিত্যানন্দ মনোরমা ভবন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সরণি, সুভাষনগর, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, পিনকোড-৭৪৩২৩৫
ইমেলঃ achenayatri@gmail.com
ওয়েবসাইটঃ www.achenayatri.blogspot.in
মুঠোফোনঃ +৯১  ৮১৫৯০৯৩৭১০
প্রচ্ছদঃ অমিতকুমার বিশ্বাস 
বর্ণস্থাপন: কুমারেশ পাত্র 

মূল্যঃ পঞ্চাশ টাকা 






                                           উৎসর্গ


              নতুনগ্রাম- চালকি- শ্রীপল্লি-বারাকপুর-আরামডাঙা- মোল্লাহাটির আবহমান মানুষদের
 

















এবং কাকতাড়ুয়া
তিলক্ষেতের ভেতর ভোটের পতাকা ! কাকতাড়ুয়া? বেশ। মেনে নিলাম মাঠও আজকাল রঙিন হয়ে থাকবে আর মানুষগুলো থাকবে সাদাকালো। তবু আমাদের অটো থেমে থাকে না। ভাঙাচোরা রাস্তার পাঁজরের উপর দিয়ে নিজেকে ঠেলেঠুলে  এগিয়ে নিয়ে চলে ক্রমশ। অটোচালকের পাঁজরের মতো প্রাচীন হতাশা আমাকে  আড়াল করতে পারিনি। কারণ চারিদিকে তখন পাটশাকের গ্রামীণ মেজাজ আর পায়ে পায়ে ধুলোর সংবাদ।  তবে মন ভেঙে গেছে যখন দেখেছি গ্রামের পর গ্রাম বন্ধ্যা জলাশয় বুকে নিয়ে হাহাকার করছে নিমঠাকুরুণ! আসলে এইতো তো আমাদের অদূর সকাল !শূন্য কলসির বিষণ্ণ গান নিয়ে ছুটে যাবো মাইলের পর মাইল আর নিজেদের খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরে টাঙিয়ে রাখবো পত্রহীন গাছে।


আদর্শলিপি
অবশেষে আমাদের ফিরতে হয় সেই সব তালখেজুরের দেশ থেকে। জানি  নক্সিকাঁথার শেষ অধ্যায় গুনে চলেছি  নীরবে। ভাটার আগুন ডাকছে আয় আয় । এভাবে বাঙালি ভুলে যাবে  অনেক কিছুই, আর আঁটিসার খেজুরের মতো জীবন নিয়ে কেবল ছুটোছুটি হেথাহোথা।  আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই । শুধু কেন্নোর মতো  সম্ভোগানন্দে এগিয়ে যাওয়া । চারিদিকে  কাতারে কাতারে ক্ষুধামুখ।  আমাদের ফানুস ফুলতে ফুলতে ফেটেযাবার  উপক্রম। মন খারাপ হয় । আমাদের ভাড়ের কাঁচা রস খেয়ে যায় অন্ধ  শকুনি। কী রেখে যাবে শেষমেশ?  কেবলই  আঁটিসার খেজুরের  গড়াগড়ি দেখতে দেখতে  কেটে যাওয়া । এই সব ফোঁকলা জীবন নিয়ে বাঙালি এগোবে আরো কিছুটা। যেমনটা  এগিয়েছি একলা  কাঁটাতারের  'পর হেঁটে হেঁটে । রক্ত আর বেদনার ছায়াছবি মেখে। আজো হুঁকোজোড়া বিষণ্ণ প্রশ্বাস নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে পুকুর পাড়ে। আমাদের জন্য এইসব ভাঙাচোরা আদর্শলিপি দেখে মুখ লোকায়  ইছামতী। সেও  পক্ষাঘাতগ্রস্থ গোধূলির ছায়ার মতো শুয়ে থাকে একা একা। আর আমি কান্নার আয়োজনে ব্যর্থ  হয়ে  নির্বোধের মতো কাঠকলের নিচে শুয়ে পড়ি সুদীর্ঘ গুঁড়ির বেদনা মেখে। 





ছবিঃ আইরিন সুলতানা 





হৃদয় ডানা মেলে  
লোকগুলো কলাগাছের মতো ভালোবাসা নিয়ে  এল সেদিন। আমাদের ভাবনাকে বোকা বানিয়ে দুই ভাই  সমস্বরে গেয়ে উঠল গান। আর আমরাও দোতারা হাতে অ-আ-ক-খ শেখা ছাত্রের আত্মবিশ্বাস নিয়ে নেমে পড়লাম মাঝপথে । আমাদের মাঠে কোনো রক্ত নেই। কোনো এগজিমার জীবাণু ছড়িয়ে পড়িনি এখনও । আমাদের  সোনাঘাটে কেবল লালন লালন খেলা। এসপার- ওসপারের  শিশুদের  হাসি মেখে  আমাদের মা ঠাকুমার ঘরে ভাসে  আবহমান ঝুলন্তসেতু । তবু কারা মাঝরাতে  শঙ্খচূড় লেলিয়ে দেয় পুকুরে ? বাতাসে মিশিয়ে দেয় ফলিডল?  স্তন কামড়ে উপভোগ করতে চায় সম্ভোগ? আমরা এমন দেশ চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম পালকিতে  রহিম- লতিফমিয়াঁদের সাথে  মদন বিশ্বাস- বুদ্ধু মন্ডল  থাকবে । আর হাঁকবে হেঁইয়া হো। ছুটে যাবে অনন্ত পথ। আর পান্তাভাতের মধ্যে কাঁচা লঙ্কা মিশিয়ে আলের উপর সেরে ফেলবে  আহারপর্ব।  তারপর আবার বেড়িয়ে পড়া। আবার কাঁচাআমের মতো ভালোবাসায় নুইয়ে পড়বে এইসব মুখগুলো । আর আমি চেয়ে থাকবো আমার শিশিরভেজা চোখ নিয়ে যেন হৃদয় ডানা মেলে  প্রথমবার দেখছি এই পরম  জগৎ কে ...




ছবিঃ আইরিন সুলতানা 




বুনো শুয়োরের পাজামা  
লালজামায় দেখে আবার খুলে গেল  অরণ্যের সিংহদুয়ার। যদিও সে  অরণ্যে ছিল বাঘেদের দাপট । খুব। যদিও সেইসব বাঘেরা আজ দাঁত খুঁইয়ে  বুনো শুয়োরের মতো ঘোঁত ঘোঁত করে ঘুরে বেড়ায় সারাটা দুপুর আর পাঁচিলে গুঁতো খেয়ে আবার ফিয়ে যায় গভীর অরণ্যে। তবে সময় কি একটুও হাঁটেনি ? নিটোল ভালোবাসার মতোই আজও তোমার  অমায়িক  সন্তরণ! বুনো মেঘেদের সাথে ছুটে যাও  সব থেকে উঁচু টাওয়ারে লেগে থাকা নিষিদ্ধ চুম্বনের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে কিছুক্ষণ । আবার ...আবার ছুটে চলা...আবার আমার বোহেমিয়ান চাউনিতে ধরা পড়ে গেলে হাতেনাতে ...আর একসাথে কেঁদে ফেললাম কিছুক্ষণ... যেন  উদ্বাস্তু স্বপ্নের শিবিরে ঠোঁটে ঠোঁট রেখেছে  নিরুদ্দেশ  সকাল ।
 অবশেষে আমাদের ফিরতে হয় সেইসব তালখেজুরের দেশ থেকে। জানি  নক্সিকাঁথার  শেষ অধ্যায় গুনে চলেছি  নীরবে।


গুহামুখে তবু তুমি
 
সেইসব অন্ধকার সেইসব অবহেলা এখনও  রোমকূপ ছুঁয়ে আছে... তবু অম্লান আকাশে উড়ে যাই  আজও... কারণ  একদিন গাছেদের কাছেই শিখেছিলাম পাখিদের আদর্শলিপি... একদিন রাতের কাছে শিখেছিলাম আঁধারের নিচে কীভাবে লুকিয়ে রাখতে হয় নিজ মুখ... গুহামুখে তবু তুমি আজও দাঁড়িয়ে... অন্ধকারের সাথে খেলতে খেলতে তুমিও বড়ো বেশি গম্ভীর হয়ে গেছো... যেন এ দেশে বাতাস বইতো না কখনও ... যেন  বন্ধ্যা মেঘের  হতাশা নিয়ে তোমার আজন্ম সন্তরণ ...জানি  একদিন শিমুল-পলাশের  তুমুল ভালোবাসায় তুমিও ছুটে আসবে কুয়াশার দরজা খুলে  ...  তখন যদিও আমাদের  ঘাসবন সটান ঢুকে যাবে পাতালরেলের উদরে!


ঈশ্বরের  সাজানো বাগান
মেঘলা আকাশের নিচে ছুটে চলেছে আমাদের রয়াল এনফিল্ড । রাস্তার দু'ধারে  ঈশ্বরের  সাজানো বাগান। বাঁওড় । ইছামতী । নদীর ওধারে  বাংলাদেশের  বাড়িঘর। রাস্তার বাঁদিকে বিস্তীর্ণ তাঁরকাটা। তার মধ্যে চলছে চাষাবাদ। ফাঁকে পান্তা ভোজন। আলে বসে। যুবক ও তাঁর বৃদ্ধা মা। কাজের ফাঁকে এ এক সুখের আহার। মুখে লেগে আছে প্রশান্তি । অর্থের হাহাকার লুকিয়ে রেখেছে সযত্নে। রাখবেও । এভাবেই। এমনই যাপন।  তাঁরকাটার পাশে সশস্ত্র প্রহরী  আমার ক্ষতচিহ্নের  মতোই আমার দিকে চেয়ে । মাঝে মাঝেই কৃষ্ণচূড়ার শোভা। আর সে আচমকা কিছুটা ক্ষত মুছে দিয়ে  পিছনে চলে যায়। অবশেষে কালীতলা আংরাইল বণ্যেবেড়িয়া ঝাউডাঙা পাঁচপোতা  ছাড়িয়ে এসে পৌঁছালাম  গোপালপুর ঘাটে।  ইছামতী বাঁদিক থেকে ঘুরে ডান দিকে 'ইউ টার্ন' নিয়েছে। বাংলাদেশের মাটিতে চুম্বন করে  আবার এদিকে! বৃদ্ধার অদ্ভুত চলন আজও। সম্মুখে কাঠের  সেতু। আমারও  এগোলাম। হেঁটে হেঁটে।  সেতুর উপর  দাঁড়িয়ে আমাদের সুপরিচিত ইছামতীকে একবার দেখে নিলাম দু'চোখ  মেলে। তারপর আরো পথ। আরো কিছুটা চলা। 




ছবিঃ রাজা সরকার 






আমাদের  কবিতাগ্রাম
হনুমানের মতো মুখ বাড়িয়ে  গলির গাড়িটা !  তাকে ডিঙিয়ে আমাদের কবিতাগ্রাম। মেঘের অভিমানও ভেঙেছে অবশেষে ; আর সে জড়িয়ে ধরছে পেছন থেকে, যেন ঝোড়ো হাওয়ায় মাটিতে  চুমু দিয়ে যায় বাঁশবন। আমাদের সেই চলা চিরপরিচিত পথ নতুন লাগে ।পাতায় পাতায় আজ গান লেখা । পথে পথে কাঁচা মাটির মতো আলপনা। তার উপর আমাদের ছুটে যাওয়া। এইসব বৃষ্টিদিনে মহাদেব পাগলকেও বড়ো বেশি রোমান্টিক লাগে। তার চোখের নিচে ভাঙা ভাঙা হৃদয়ের  সুদীর্ঘ প্রচ্ছায়া। বিড়ির ধোঁয়ার মতোই তার হতাশা। আবার নেমে পড়ে । হাত ছুঁড়ে দেয় । জুটে যায় । কিংবা জোটে না।  রাত কেটে যায়। তবু বেঁচে থাকে। তার প্রেমিকারা ইংলিশ মিডিয়াম  ইস্কুলের  পাশে বসে আজও চুটিয়ে প্রেম করে যায়। আচমকা বৃষ্টি থামল। ইছামতীর বুক ছুঁয়ে এগিয়ে যায় সুবোল হালদার। ছেলে পুলিশে  গেছে। শহরে উঠছে বাড়ি। টালি আজকাল দেওয়াল- মেঝেতে  থাকে । আর ভগবান পাঁচিলে! তবু সুবোল ঠাকুরের কাছে  জোড় হাত করে বলে , "ওদের ভালো রেখো পভু!"



ভাঙাঘর 
হঠাৎ চলে যাবে! কেন? এত তাড়া কীসের? এত ঘেন্নাই-বা কেন! না । তার চেয়ে বরং ফিরে এসো আর চলো  মৃত্যুর সাথে একদান লুডো খেলে নেমে পড়ি ভাঙাঘর মেরামতের  খেলায়। দেখো তোমার মতো আজ  বৃষ্টিও কেঁদে ফেলল! দেখো এই  আলোআঁধারির  ফাঁকে ফাঁকে যে সব ঝুলন্ত সেতু আছে তার প্রতিটা  পাঁজরে তুমি পেয়ে যাবে সব ক্ষতের ইতিহাস । দেখো তোমার জন্য এখনো ঘাসবনে উবু হয়ে  বসে আছে নীল সকাল ! আর তুমি ...

না। এভাবে কি নিভে যায় জোনাকির ভালোবাসা কিংবা
 সবুজ  মেঘের আশ্চর্য প্রদীপ! চলো , আমাদের নৌকো করে নেমে পড়ি আবার । আবার চলো  মেঘলা দিনে  জলের  আলপনা আঁকতে আঁকতে হারিয়ে যাই কোনো এক নির্জন কুটিরের জলধারায় ।



আততায়ী
বৃষ্টিবিন্দু মেখেই বেড়িয়ে পড়া। সেই  আদারেবাদাড়ে ।  বহুযুগ পর ভেজামাটির গন্ধে গুমরে উঠল মন। মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন আমি মাটির ভালোবাসায় বিরক্ত! এমনইতো হয়। যশোদাকে ছেড়ে যায় কানাই। রাধাকেও। তবু এগোনো। চটি জোড়া হাতে । সম্মুখে মাঠপাড়া । পাঁচ-ছ'টা ঘর নিয়ে নতুন পাড়া বাঁওড়ের পাশে। নতুন গ্রাম গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে। প্রথম দেখি এই গড়ে ওঠা। নির্জন ভূমিতে। আহা , এরকমই যদি থাকতো ! তা থাকবে না জানি। ক'দিন পর শুরু হবে কোলাহল। ঝগড়াঝাঁটি ঢুকে যাবে আততায়ীর মতো। গ্রাম আর গ্রাম থাকবে না, বাঁওড় আর বাঁওড় থাকবে না, সবুজ আর সবুজ থাকবে না! আরামডাঙায় তখন  গাড়ির ধোঁয়া। চোখ পুড়ে যাবে আমাদের কাক আর কাকতাড়ুয়ার শহরের মতো ! তখন আরো দূরে ছুটে যাবো । আরো দূরে মুখ লুকাবো। যশোদার স্নেহ আর রাধার প্রেম খুঁজে বেড়াবো অন্ধ ফকিরের মতো। হয়তো কংক্রিটের  থামে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাবো খালের জলে, হয়তো সেখানেই পড়ে থাকবো মহাদেব পাগলের সাথে, হয়তো এই পথেই চলছি আমি এবং আমরা । গ্রাম পোড়ানো চুল্লির নিচে তখন একে ওকে জড়িয়েই আমাদের  রাত্রিযাপন!



ছবিঃ পার্থ প্রতিম সেনগুপ্ত






অহংকার 
তরুণী মা  সন্তানকে নিয়ে ধেবড়ে বসে পড়ল প্লাটফর্মে ।আরো এল। পরিবারের । আরো মা। আরো কাচ্চা- বাচ্চা। ন্যাংটো --একপায়ে মোজা-- ঝুলন্ত সেতুর মতো  হাফ প্যান্ট ইত্যাদি। সারাটা প্লাটফর্ম জুরে তাদের খেলার মাঠ। কোমরবিছে আর খালিপায় ছুটে বেড়ানো মায়ের কোলের পুঁচকেটা কেমন তাকিয়ে ছিল আমাদের দিকে। মশারি মেলে এখানেই নেমে পড়ল একে একে। পথিক-যাত্রীরা সারারাত চেয়ে থাকবে তাদের আঁচলের নিচে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির দিকে। এরা সব ডুবুরি। সোনাদানা খোয়া গেলে ডাক পড়ে। সাপ ধরে। এভাবেই এক আস্ত জীবন। এভাবেই পথে পথে সঙ্গম। প্রসব বেদনা । তবু  দলপতির মুখে চওড়া হাসি। ঘর থেকে  ভোট মেখে ফিরে এসেছে । আঙুলে কালির  অহংকার স্পষ্ট।




ছবিঃ চন্দন নাথ 





অতিথি 
চাঁদ আমাদের দেখে লুকিয়েছিল মুখ। পাতার পিছনে। তারপর ওড়না মুখে মুচকি হেসে বলল,কেন আসেন এই অবেলায়?
-কেন আসি? সেতো জানি না। ভাবিনি কখনও ! শুধু জানি আসি আর আসবো বারে বারে। এভাবেই । আর তাকিয়ে থাকবো তোমর নীল চোখ দুটির দিকে ।অনন্ত কাল। অনন্ত তারার আলো মেখে।


ডানকানের ঘর 
এক মায়াভরা কাজলের মতো তোমার পদধ্বনি শুনে চমকে উঠি আর ভাবি তুমি কে! মৃত্যুও তো  হতে পারো। আমার। কাছের । খুব কাছের। প্রতিরাতে তোমাকেই চাই অথচ বাতাসের শরীরে লুকিয়ে থাকো অমায়িক ভাবে আর ফুসলিয়ে যাও আমার আধমরা কান্নাকে। আমার হতাশ্বাসের ছায়া - প্রচ্ছায়ায় ভরে যায় ঘাসবন। তবু ট্রামলাইন দেখলেই আঁতকে উঠি। ছুটতে ছুটতে ঢুকে পরি মহানগরের তলপেটে আর বেড়িয়ে যাই তার পায়ুপথ দিয়ে ... ঘুরপাক খেতে থাকি  ভালোবাসার নীল কমোডে  আর হারিয়ে যাই একরকম...এ-সব  ফ্যাসিনেশন ছাড়া কিছুই নয়, তোমরা যাকে বলো কবিতা -শিল্প-সাহিত্য আরোও কী-সব যেন নন্দন চত্বরে ঘুরপাক খায় ...বুঝি আমি ভালো নেই... বুঝি আমিও সিজোফ্রেনিয়া  আক্রান্ত জোছনার মতো  ছোঁড়া  হাতে ঢুকে যাই সটান ডানকানের ঘরে আর খুঁজে বেড়াই  নিজের লাশ।  লেডি,তখন তুমি ঘুমিয়ে কাঁদা। 

  
কমোডমুখী দিনযাপন 
মেঘগুলো  নেমে এসেছিল। মাটিতে।  ঘাসের 'পরে।  আর আমরা  চুম্বনে চুম্বনে এঁকেছিলাম আমাদের কমোডমুখী দিনযাপনের বিষণ্ণ আলপনা  মেঘেদের পাখনায়। মুহূর্তেই সেগুলি রাজহাঁসের মতো ডুব দিল দিঘিতলে , আর ফিরে এল আমার রুপালি দিনের ডানামেলা আশ্চর্য  কারুকার্যের  অহংকার নিয়ে।  সমুদ্রে যাওয়া হল না এবারের মতো। এবার এই সব মেঘেদের দেশে কাটিয়ে দিই কিছুকাল । জানি এখানে সমুদ্রের থেকে গাঢ় নীল হাওয়া ছুটে বেড়ায়, আর তাঁর ঢেউ এসে লাগে আমার  নিঃসঙ্গ প্রাসাদে ।  আমার ভেঙে পড়া কাঠের নাগরদোলার  সীমাহীন  কান্নারা মুছে আসে একে একে ।  দাদ-হাজা-চুলকানির মলম ফেরি করা শহরের উপকণ্ঠে দাঁড়িয়ে দেখেছি কালো  ফুসফুস  আর নীল হাফশার্ট পরা আমাদের একুশ যাপন। তবু আছি । ছিলাম । থাকবো। বিরিয়ানির প্যাকেট ঝোলাতে ঝোলাতে হেঁটে যাবো পেটফোলা কুকুরের মৃতদেহের পাশ দিয়ে। 



ছেনিবাদ কিংবা উড্ডয়ন
সঠিক যন্ত্র নেই... মন্ত্রেও তার ভরসা নেই, তাই ছেনি হাতুড়ি দিয়েই চাকা খুলতে শুরু করলেন। ভাবলাম  সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া নির্ভেজাল বিশ্বকর্মা লেগে পড়েছেন! ও মা! কি করে লোকটা! চাকাটার তো বারোটা পাঁচ বাজিয়ে ছেড়ে দেবে। বললাম , দাদা ছাড়ুন। কিন্তু সে ছাড়বার পাত্র নয়। সূচাগ্র মেদিনী পাশের দোকানকে দেবে না। সূচাগ্র সাফল্যও। তাতে যদি ছেনিবাদ চালিয়ে যেতে হয় যাবে!  ছেনিবাদ জিন্দাবাদ, আমরা খাবো তোমরা বাদ! শেষে আমাকে হস্তক্ষেপ করতেই হল । পদক্ষেপই উচিত ছিল। কিন্তু তা  আর সম্ভব হল না। ওই 'ক্ষেপ' আর আক্ষেপ নিয়েই এবারের মতো সন্তুষ্ট থাকতে হল।

এবারে পাশের দোকান! দ্বিতীয়  আলেকজান্ডার-এর হাত থেকে মুক্তি পেয়ে যমদূতের মুখোমুখি। কিন্তু ভয় পেলে  চলবে না,ভয় পেলে  হেঁটে যেতে হবে পুরো পাঁচ কিলোমিটার, তাও ঠেলতে  ঠেলতে! যাই হোক, যমদূত যম ছিলেন না। চেহারাটা  বিট্রে করছিল এই যা । শেষমেশ , তার হাতেই আমাদের উদ্ধার আর তারপর "গাভীর মতো চড়ে বেড়ানো মেঘেদের" দেশে আমাদের  উড্ডয়ন! 




ছবিঃলেখক 




মেঘেদের দেশ
শেষমেশ এসে পড়লাম মেঘেদের দেশে। আজ খুশির দিন। তাই বুঝি খুশি খুশি মুখ নিয়ে  তরুণীরা হেঁটে যায় এক তোড়া ফুলের মতোই। মাঝে মাঝে বাইক ছুটে যায়, আর যায় পিঠ ছুঁয়ে থাকা কিছু বেসামাল সময়। বৃষ্টির শব্দের মতো  আঙুল। কিছুই আমাদের চোখ এড়ায় না। সব যেন শিশুর মতো কুড়িয়ে রাখতে চাই রঙিন ঝুলিতে। সব। মেঘ। পাখি। গাছপালা। পাট। খেজুর। মেস্তা। নদী। জল।  হাওড়বাঁওড়। সব সব সব। আজ সরোবরে  হাঁস ছিল না একটাও। কেবলই এক নীরবতা ছিল সেখানে। আর সেই নীরবতা ভঙ্গ করে এক রমণী ডুব দিল জলে। জলে যেন ফুল ফুটল আকাশের মতো। আমরা এই সব দেখলাম , আর ভাবলাম মেঘেদের থেকে ভীষণ খুশি আর কেউ নয়। হতেও পারে না। রাজহাঁসগুলি বোধ হয় মেঘেই হারিয়ে গেছে আজ।  








ছবিঃ আইরিন সুলতানা




গন্তব্য
সে এক বৃষ্টি। রাস্তা থই থই।  ইশকুল ফেরত ছেলেমেয়েগুলো  তাথৈ  তাথৈ। বড়ো  বা ছোটো--- জল ছেটায়। এর গায়ে ওর গায়ে । নিজেরও। প্রণয় মেখে কিংবা  নিছক শৈশব-ঘুরির নেশায়।  এই সময় বেশ লাগে। জলের বুকেও লুকিয়ে আছে  আগুনের উপাখ্যান। সে আগুনে পুড়ে যায় বুক। গোপনে। আর তার ছাই উড়ে যায় পাখিদের ঠোঁটে ঠোঁটে। ঠোঁটে তখন  ভালোবাসার খোসা। নীল নীল নীল। সমুদ্র। নদীও । কিংবা গোটা আকাশ । আকাশের মেঘ। বৃষ্টি কণা।  যা শেষমেশ   ঝড়ে পড়ে। আমাদের বুকে। আমাদের তাথৈ তাথৈ বুকে। আর কাগজের  পানসি  ভাসতে ভাসতে ভুল  ঠিকানায় পেয়ে যায় গন্তব্যস্থল। অবশেষে। 


 মেলোড্রামা
পথিক থামে না। পথিক  আবহমানকাল হেঁটে যায় । সূর্যের এপার ওপার। আমরা বসে থাকি পথিকের নতুন পথের খবর আর মুঠোমধ্যে তারাদের গান শোনার জন্য।  আমরা বসে থাকি  গাজনের গানে ভণ্ড ফেরিওয়ালাদের মুখ দেখার জন্য । আমরা বসে থাকি চড়কের দিনে তিলেখচ্চর সব  মালীদের কাঁটা হাত দিয়ে আবার ফুল  লাগানোর প্রয়াসে। বেঁচে থাকুক আমাদের ঘাসবন আর একতারা। বেঁচে থাকুক ভাঁটফুল আর  নৌকোর  কোলাহল। বিশ্বায়নের মেলোড্রামায় জোকার বনে যাওয়া  পাখিদের  সাথে না হয় নাই গাইলাম গান। আমাদেরও ডানা আছে। ঘুম আছে। শান্তি আছে পাখিদের  ধ্যানের মতো। আর কি চাই!



ডেমোন্সট্রেসান
ধর্ষিতার মুখের মতো কেঁপে ওঠে কাচের জানলা। এই বৃষ্টিতে। এই মেঘের  চোখরাঙানিতে। আর আমরা কাঁপতে  কাঁপতে ঢুকে পড়ি লুডোর ছক্কার মতো এ-ঘর থেকে ও-ঘর। আমাদের কোনো ঠিকানা নেই। 'উদ্বাস্তু শিবিরের পাখি' মতো   আমাদের যাপন। ছক্কা  গড়িয়ে যায়। এ-রঙ থেকে ও-রঙ। আমাদেরও কোনো রঙ  নেই। ধর্ম নেই। বর্ণ নেই। কেবল আমারা উদ্বাস্তু। তবু কেউ কেউ এসে  সিলমোহর  মেরে চলে যায়। অনুষঙ্গে কাঁচা খিস্তির মতো শংসাপত্র। কিংবা ধর্ষিতার ক্ষতিপূরণ। এর মাঝেই আমরা বেঁচে থাকি। চায়ে মুখ দি। স্তনেও। জানু কিংবা আত্মহত্যার  ডেমোন্সট্রেসানেও   


ফটিকচাঁদ
আবার বৃষ্টি। আবার । থামার নাম নেই। এর ফাঁকেই বিমান উড়ে এল। ফটিকচাঁদ ভাবল আকাশ ফুটো  করে  পারুটি নেমে আসছে। এল। আর উড়ে গেল। কিছুটা রক্ত এসে লাগল দূতাবাসের দেওয়ালে। নিরপত্তাকর্মীরা সেগুলো মুছতেই ব্যস্ত। STICK NO BILL. ফটিকের ভাই, বোন, যারা তার থেকেও ছোটো , খুঁজে বেড়াচ্ছে ফটিককে। ফটিকের মা এখনও ঘরে বন্দি। পাঁচজন ঘিরে। এক এক করে। আসছে। বৃষ্টি। ঝোড়ো  বৃষ্টি। বাবা নেতিয়ে পড়ে আছে বেয়োনেটের নিচে। এই সব চিরকুট উড়ে আসছে আমার বেডরুমে। আর আমি ফটিকের মুখটা স্মরণ করে  আরামবাগ চিকেনে কামড় দিচ্ছি বেমক্কা গান্ডুর মতো। 


বুনোহাঁস 
পাকাধানের ঘ্রাণের মতো তোমার নূপুরের শব্দে চমকে উঠি আবার। জোছনার শরীর নিয়ে স্বপ্নের সাঁকোয় দাঁড়িয়ে তোমার তুমি। ঠোঁটে একঝাঁক বুনোহাঁস, চোখে ফড়িঙের চিরহরিৎ হৃদয়। এরকম মুহূর্তের জন্যই সুদীর্ঘ অপেক্ষা।  এরকম স্বাদু মেঘের জন্য ব্যাধের বেশে ছুটে যাই বুনো শুয়োরের পেছনে। তবু শূন্য হাতে ফেরা। আলোর গতিতে হারিয়ে যাওয়া ছবির পেছনে নির্বোধ চৈত্রদুপুরের মতো নিজেকে খুইয়ে দাঁড়িয়ে থাকি কিছুক্ষণ,আর একটু একটু করে কুলুকুলু জল বয়ে যায় নদীর গভীরে। সময়ও। তবু প্রেম আজও বুনোহাঁসের মতো চঞ্চল। লালাঝরা অসুস্থ  দেশে  বেনারসি পানের মতো ভালোবাসা নিয়ে নির্লোভ সকালে সে শুয়ে থাকে আমাদের ঘাসবনে।

নিরো ও কাঁকড়াবিছে

আশ্চর্য রোগগ্রস্থ বিকেলের মতো তোমার প্রশ্নচিহ্নের সামনে আজকাল আমি বড্ড বেমানান। তোমাকে ছেলেমানুষ ভাবি অথচ তোমার কথায় রয়েছে নিরোর মতো আত্মঅহংকার। খেয়ালই নেই কখন পুড়ে যায় তোমার রাজকীয় কুঁড়েঘর। তবু বেহালা বাজে, আর  সে-সুরে জন্ম নেয় কয়েক শহস্র বিলেতি কাঁকড়াবিছে।


ছবিঃ আইরিন সুলতানা



আমাদের ছোটো নদী এখন আর ছোটো নয় ঠিক....
চৌদিকের খিস্তি-খেউড় জীবনে ফেঁসে আছে তোমার মতো ভোর। ঘামছে দরদর করে। ছোটোবড়োর তুমুল তর্ক সেরে ঠোঁটে চা তুলতেই মনে পড়ে মায়ের কথা। বৃদ্ধাবাসের জঠরে অবাঞ্ছিত মাংসপিণ্ড নিয়ে এখনও সে অমলিন। সারাজীবন হেঁসেল ঠেলে ঠেলে ফুসফুসে জমে বিষণ্ণ গুহালিপি। আর তাকে ভুলেই দিব্যি আছো। বৈঠকখানায় পা তুলে শাসাচ্ছো একঝাঁক বুনোহাঁসদের। ক্রমশ  নির্মাণ করে চলেছো পিঁপড়েহত্যার দ্বিঘাত সমীকরণ। আদরের নৌকো ডুবে যায় ইছামতীর পাঁকে। তবু জাহাজবাসনা নিয়ে ঢুকে পড়ো আততায়ীর মতো গভীর রাতে। আজো প্রান্তিক চাষার মতো উপড়ে নিই দুচারটে শ্যামাঘাস। ঘাসের উপর হেঁটে হেঁটে বুঝি তর্কটা বড্ড বেমানান। বুঝি সিধু-কানুই খাঁটি দেশজ নায়ক। তাদের তীরধনুকের  সামনে আজও জোকার বনে যার খাস তালুকের ইংরেজরাও। তবু চলুক আমাদের এই তর্ক-বিতর্ক আর আদরের  সাঁকো নির্মাণ। 



জোকারযাপন
আত্মহননের ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে লিখছি এক সুদীর্ঘ কবিতা, যেন মন্দারমনিতে বিকিনি পরে  ছুটছো নগ্ন পায়ে। সম্মুখে স্বরণহরিণ। পেছনে কচিঘাসের ক্লিভেজে ডুবে যাওয়াএকফালি মিঠে রোদ।  প্রবল স্রোতে নিজেকে ভাসানোর আগে যে সকল পরিচিত সীৎকার মেখে তোমার বন্ধুটি হারিয়ে গেল তার ছায়াও এসে পড়েছে  এখানে। তবু অসম্পূর্ণ। আমি ও আমার সুদীর্ঘ কবিতা। অগত্যা  ফেরা। আবার। আবার লেফাফার মাঝে নিজেকে লুকিয়ে রাখা সংসারী জোকারের মতো। 





মার্চ ২৪, ২০১৫ তারিখে নিচের মুক্তগদ্যগুলি বইটিতে সংকলিত হয়েছে। এগুলো বিভিন্ন মুদ্রিত প্ত্রিকায় প্রকাশিত। - প্রকাশক






প্রণয়


বেশ, তবে একটা কবিতা শুনেই চলে যেও এই শীতের দুপুরে কেন যে বিপন্ন পাখিটা বার বার উড়ে আসে আকাশে! ওর ঠোঁটে ভঙ্গুর স্বপ্নের ছাইমাখা ভোর কাঁপতে কাঁপতে কেমন এক ছবি হয়ে যায় এমন একটা কবিতা যদি উঠে আসতো তাহলে এভাবে চলে যেতে না বোধহয় আসলে ক্রমশ সরে যাওয়া মেঘের নিচে আমাদের  ঘরবাড়ি, তার 'পর মিহি রোদের ঝিলিক দেখো, নদী পারাপার হওয়া লোকগুলো একদিন আমার কাছে এসে জানতে চায় নক্ষত্র ও মেঘেদের প্রণয়, এমনকি চাঁদের বুকে যত উই ঢিবি আর তার নিচে জমে থাকা দুঃখবাষ্প দিয়ে আদৌ কোনো কবিতা লেখা যায় কিনা! তোমার প্রস্থানেই গাঢ় কুয়াশা ঘিরে ফেলবে বাড়িটা, খসে পড়বে পলেস্তারা কিছু অলৌকিক পাখি ডাকবে জানি তার আগে চলুক এক দীর্ঘ কবিতা প্রয়াস  




ছবিঃ মেঘ অদিতি 



জাতিস্মর

আমাদের আর কথা হল না তুমি চোখ নামালে একটা হাত আর একটা হাতের মধ্যে টেনে নিয়ে কাটিয়ে দিলে সারাটা বিকেল সর্ষে ফুল আরো সোনালি জাব পোকার পায়ে আমার শব্দ ছেলেরা খড় টেনে জড়ো করছে দূরে কুয়াশার চোখের মতো এখন আমাদের স্মৃতিতে কেউ উসকে দিল আগুন ধোঁয়া সরিয়ে উঠে এল দুটো হাত বাড়িয়ে সেঁকে নিচ্ছ নিজেকে মৃদু তাপে খসে পড়ে আঙুলে লুকিয়ে রাখা সকল শব্দমালা সকালে কেবল ছাই পড়ে থাকে, আর ফিনিক্সের ডানায় উড়ে যায় কিছু শব্দ উড়তে উড়তে তোমার নীরবতার মতো মেঘগুলো পাশে এসে দাঁড়ায় কিছুক্ষণ তখন হয়তো তুমি বলে উঠবে, কটা সূর্য আত্মহননের পর আমাদের আবার দেখা হবে?



নীরবতা

কালোঘোড়ায় ছুটছে পড়ন্ত বিকেল আর হল্লা রাজার নৈশপ্রহরী... অবশেষে সবাইকে চমকে দিয়ে বৃষ্টি নামল ঘাসবনে...তাই ছাদে জমা জলে বসে আমিও ব্যাঙালাম তোমাকেই...একটু তাকালে একটু হাসলে কিংবা ভেবে ফেললাম সেরকমই...আড়াল থেকে দেখে নিলে ঘাসবনের নীলপাখি আর মোলায়েম দিনগুলির অসমাপ্ত বর্ণমালা  কালোঘোড়ায় ছুটছো তুমিও...কেবল আমিই খুরের মধ্যে লুকোলাম!
 



ভোর

বৃষ্টি নামলে আমিও কেমন আদিম হয়ে যাই...শরীর থেকে পোশাক খুলে যায় একে একে...এমনকি আমার লিঙ্গ আমার প্রিয় লিঙ্গ ছট্ ফট্ করতে করতে ঢুকে যায় কোনও রাতযোনিতে...আর এই বন্ধ্যা দেশে ফুটফুটে পাখির ছানার মতো ভালোবাসা কিচিরমিচির করে আমাদের ঘাসবনে...

ছবিঃ আইরিন সুলতানা 


যুদ্ধ

গলিতে ঢুকে পড়ে চন্দ্রবোড়া আর সাদা অ্যাম্বাসেডর তুমি উঠে পড়ো  নির্দ্বিধায় আসলে তোমার সামনে আছে অনন্ত ডুবো জাহাজ আর পেছনে এলাবোরেট নিতম্ব তবু শিরা-উপশিরায় বোমা বেঁধে নেমে পড়ি মাঠে বিস্ফোরণে কেবল ভাষাটাই কেঁপে উঠবে!



অন্ধত্ব

অজগরের নিতম্বে রেখে যাবো আমার বিষণ্ণ চুম্বন বুঝে নিও তুমি সুদূর মিশরে বসে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার মতো যত প্রেম লুকিয়ে রেখেছি সাপুড়িয়ার বাক্সে আর ছড়িয়ে দিয়েছি নিজেকে কুচি কুচি করে গোলাপ টুকরোর মতো আমাদের ঘাসবনে--সব ফিরিয়ে দেব একদিন পাথরকুচির ডানায় এখন বনে খুব একটা যাই না এখন ভয় লাগে খুব এখন একশৃঙ্গ গণ্ডারে ভরে গেছে তোমার রাতের ভূকম্পন আর প্লেটোর হাতখাতা তবু বুনো শুয়োর ছুটে যায়  জোছনার এসপারে ওসপারে আর আমি বসে থাকি যেন পৃথিবী সৃষ্টির রাতে বসে আছি এক কাপ কফি নিয়ে ভগবান আর রাক্ষসদের মাঝখানে সুঠাম ওৎ পেতে আছি কখন মেনকার হাত ধরে ঝাঁপ দেব পৃথিবীর কাঁধে সবার চোখে ধুলো দিয়ে ঢুকে যাব বাসরঘরে যদি এ-ও স্বপ্ন হয় তবে নিজের চামড়া তুলে বানাব কন্ডোম আর ঢুকে যাব কোনও নিটোল অন্ধকারে সেখানে সাড়ে তিন কোটি  বছর তখন মিসিং ডায়েরিতে কেবল লেখা থাকবে 'হুপ্ হুপ্' করে ছুটে যাওয়া শত সহস্র অসম্পূর্ণ চুম্বনগাঁথা



রাত

বৃষ্টিহীনতায় আমিও নীল পাখি বেদম প্রহারে হার না মানা ঘোড়ার মতো সাগরের নোনা জল মুখে তুলে ছুটেছি একা পালক খসার পর বুঝি ঝড় এক ধরনের অলৌকিক প্রতিভা খুরের মধ্যে আজও লুকোনো আমার প্রেমপত্র কিংবা গোপন হাহাকার আমার নীলপাখি আমার পালকহীন নীলপাখি আমার কালোঘোড়ার মনখারাপ কিংবা শিখণ্ডীদের মহামিছিল কেবলই বিষণ্ণ ধুলো ওড়ায় আমার কিস্যু যায় আসে না যদি মেঘও একদিন সন্ত্রাসবাদী হয় আসলে কথা কেড়ে নিলে প্রতিটি বরফ কণাও একদিন জল হয়ে যায়!

ছবিঃলেখক 


যাপন

বরফের নিচে আমাদের আগুনের সংসার তাজমহলের গায়ে হিসি করে দেয় মহাদেব পাগল আর এক নব্যপ্রেমিক অ্যাসিড ছুঁড়ে পরখ  করে ভালোবাসার মানচিত্র আমি কাকে বলবো প্রেম আর কাকে বলবো হত্যাকাণ্ড আমার সামনেই ধেই ধেই করে নাচে হিটলার আর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু সকল প্রাক্তন প্রেমিকার বুকে এখন পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ!

 

ধ্যান

তোমার উদাসীনতা ছুটে চলেছে বিষণ্ণ পাতাল রেলের অন্ধকার মেখে...একে একে আলো নিভিয়ে দিয়ে উন্মুক্ত হলে আজ মেঘ আর কুয়াশার কাছে...অথচ জোছনার পালঙ্কে বিছিয়ে দেব বলেছিলাম নীলমেঘ আর কলকে ফুলের উপাখ্যান দাও, এবারে হেমলক দাও, একটু ঘুমাই




আড়ালে যিশুর শব
ভালোলাগেনা কিছুইএই নদীনালা গাছপালা ঝাউবন বাউল মরে গেছে  কবে এখন কেবল ভূতের চিৎকারে বেসামাল  ঘাসবন তবু হাততালি তুমিও এসেছো উত্তরীও পরাতে তুমিও ববচুল করেছো তুমিও ক্লিভেজে শাসাচ্ছ গোটাদেশ অথবা রাতদুপুরে উড়ে যাচ্ছো ভোকাট্টা ঘুড়ির মতো এপাশ থেকে ওপাশ তুমিও...তুমিও..তুমিও...

আসলে এভাবে ভাবিনি ভেবেছি যুদ্ধের শেষে আমাদের একটা জমি হবে ঘর হবে স্লোগান ছেড়ে শুতে যাবো মাঝরাতে একসাথে আমাদের ছেলেটা হামা দিতে দিতে শুয়ে পড়বে মাঝখানে তবু জেগে থাকবো ঢের কথা এখনও যে বাকি সূর্য উঠলেই একটা দিনের শব পড়ে থাকে অবহেলায় তার আগে তার  ঢের আগে আর একটুখানি বেশি বাঁচা একটুখানি ছুটে যাওয়া পাখিদের দেশে নদী মরে ভূত ঝাউবন মরে ভূত আমাদের ছোটোগ্রাম একেঁবেকে চলা ছোটোগ্রাম সব সব! চারিদিকে কেবল মানুষ ঝান্ডা হাতে ডান্ডা হাতে কিলবিল করা মানুষ তারাও মরে তবু  হয় না ভূত কখনও ভয় পাই কাঁপতে থাকি নিজ হৃদয় উপড়ে নিয়ে বেণেরা  বসে আছে  রাজপথে আত্মাও নিজ কঙ্কাল ঝুলিয়ে রেখে শিখছে যোগবিয়োগ ধারাপাত কখনও কবন্ধ জীবনে বাসা বাঁধে স্বপ্নের পাখি লাফাই ঝাপাই পাখিরাও ভয় পায় উড়ে যার মহাকাশের বাইরেজীবন এক অদ্ভুত জাগলার! হাততালির নেশায়  আবারও নেমে পড়ে ঘাসবনে ছানিপড়া চোখের মতো উঁইয়ের ঢিবি মাথায় নিয়ে একা একা এগোতে থাকে এদিকে কেবলই অনন্ত বসে থাকা বসে থাকি আমি আমরা কেউ উঠে আসবে শেষ মহাভোজের আসরে কেউ কেউ ভীষণ একজন আর  কফিন থেকে সহসা সটান লাফিয়ে উঠবো আমি থেকে আমরা



সংযোজনঃ এপ্রিল ১৪,২০১৫ ।। দুপুর ২ঃ২৫



শূন্যযাপন

অরণ্যে যাওয়া হল না আজ। অথচ কথা ছিল যাবার। কথা তো থাকে হাজার। প্রতিদিন মৃত্যু মাখে কথা ও না-কথারা। আজ তাই বসে থাকি। ঘরে। একা। ঘরময় হেঁটে বেড়ায় আদরের বেড়ালছানা। তার পায়ে স্বপ্নের ঘুঙুর। ঘুঙুরের নৈঃশব্দ্যে আগুন লাগে সুদূরের পলাশবনে। পুড়ে যায় বন। পুড়ে যায় স্বপ্নের কালো ঘোড়া। পুড়ে যায় শব্দের কুঁড়েঘর কিংবা ইছামতীর নীল পাখনা। পুড়ে যাই আমি। আমার আত্মার ছাইভস্ম পড়ে থাকে কোণে। আসলে সবই শূন্যময়। আসলে সবই-তো কেবল কাঠপুতুলের গাঢ় মনখারাপ। এর মাঝেই আমাদের সুদীর্ঘ শূন্যযাপন।

                                           এপ্রিল ১৪, ২০১৫/ দুপুর ১.০০



বৃষ্টির মনখারাপ

একদিন খুব ভোরে শহর ছেড়ে চলে যাব ভাবি। যে-সব মিষ্টি বিক্রেতারা ফার্স্ট ট্রেন ধরতে বেরিয়ে পরে, তাদের ঘুমলাগা আলগা চোখের নীচে টাঙানো হোরডিং দেখে বুঝে আমার গন্তব্য। আসলে মানুষের কোনো গন্তব্য থাকে না। সে কেবল রসে টইটম্বুর এনামেলের পাত্রে অবশিষ্ট কয়েকটি কাঁচাগোল্লার মতো লাফাতে থাকে আজীবন। একদিন প্রেমিকার চোখে ঢেলে দেব নীল ফসফরাস। হলদে হয়ে আসা মণির ফাঁকে ঝুলে থাকা আধভাঙা ডানা একটু হাওয়াতেই পড়ে যাবে ভ্যাটের 'পর। দাবানল প্রবণ শব্দের অরণ্যে আশ্রয় চেয়ে আর কতক্ষণ? তুমি এখন একটু একটু করে ফর্কে তুলে নিচ্ছেু আমার ভ্রূণ। প্লেট সাফ। এবারে ছুটে যাও ক্রমশ ভোগবাদের নিতম্বে ঝুলে থাকা ঝুনঝুনির দিকে। ভরসা রাখো, হাততালি দেবই।


                                              এপ্রিল ১২, ২০১৫/ সকাল ৭ঃ৩৬



আধাঁর

খুব আতঙ্কে থাকি। এই বুঝি শুরু হল! ঝড় বৃষ্টি আর পোড়া রোদ্দুর গায়ে মেখেই বড় হয়েছি। মনে পড়ে ধানবাদে খুব লু চলত। দরজা জানলা বন্ধ করে ঘরে থাকা। যেন বোচকার মধ্যে পড়ে আছে ছেঁড়া ময়লা কাঁথা। আর লু থামলেই ছুটে যেতাম পলাশবনে। হাজার হাজার নিরহঙ্কার বনদেবতা রুক্ষদেশে দাঁড়িয়ে আকাশের নিঃসীমে ক্রমশ ছড়িয়ে দিচ্ছে রক্তিম পংক্তিদের।

সংসারের শিরা-উপশিরায় টান পড়ে। মাঝে মাঝে। ব্যথা হয়। খুব। আবার সেরেও যায়। তারপর উড়ে যাই। উড়তে ভালো লাগে। কিন্তু শেষমেশ আমাকে আততায়ীয় মতো ঘিরে ধরে। আতঙ্ক। এই বুঝি...
                                               এপ্রিল ১১, ২০১৫/ রাত ৯ঃ৪৯



ভ্রমণ

আজ একটু উড়তে ইচ্ছে করছে। ডানার ধুলো মুছে বসে আছি। শিমুলের শরীর থেকে ভালোবাসার তুলো উড়ছে আমাদের ঘাসবনে, ঠিক সেখানেই আজ উড়ে যাব, অনেক দিন পর। যারা উড়তে পারে না তাদের নীল শরীর আলো ছড়ানো বন্ধ করেছে আজকাল, তাদের ঘুমন্ত মুখের ভিতর মোষের মতো পাহাড়গুলো ধ্বসে পড়ছে একটু একটু করে। আমাদের কোনো পাহাড় নেই, কেবল উইয়ের ঢিবিতে নেওয়া সেলফিগুলোয় নেটিয়ে নিয়েছি দেওয়ালে দেয়াল।

                                                  এপ্রিল ১১, ২০১৫/ রাত ৯ঃ১২




সংযোজন
।। ১৮ এপ্রিল, ২০১৫ ।।  শনিবার সকাল ৯-১৭।।





‘ঘুমাও বাউণ্ডুলে ঘুমাও এবার...’ 

আর আপনার বাজনা থামল তবে। আমরা এতদিন শুনলাম। কিংবা শুনলাম না। আমাদের ইচ্ছা। আপনি বাজালেই শুনতে হবে তার কি মানে আছে! তাই শুনিনি। শুনেছি টুনির মা কিংবা মামার দেওয়াল লিখন। আর তাতেই আমরা ফুলেছি। ক্রমশ। এমনকি আমাদের সাধের কলকাতাকে নিয়ে কী-সব বিষ্ঠা-ফিষ্ঠা বললেন, তখনও আমরা কিন্তু ভালোভাবে ব্যাপারটাকে নিতে পারিনি। আমারা লণ্ডনের কথা ভাবছি। আমরা টেমসের কথা ভাবছি। আর আপনি খামোখা ঘা- পাঁচরাগুলো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রস বের করছেন। আমাদের হাহাকার আমাদের গর্ব, চিটফান্ডের ফাঁদে পড়ে আত্মঘাতীর আত্মহত্যানামা আমাদের গর্ব, কামদুনি-রানাঘাট- পার্কস্ট্রিট আমাদের গর্ব। আমারা আর একটু ফুললাম। ফুলতে ফুলতে একদিন  লণ্ডনে পৌছে যাবো ঠিক। যাই বা না যাই, আপনার বাদ্যি বেজে যাবে অনন্তকাল।  সীমানার ওপারেও। আর তা শুনতে শুনতে আমাদের ভোরগুলো ঘুমিয়ে পড়বে মাঝরাতে, স্বপ্নে তখন পিঁপড়েভুক মানুষগুলো চেয়ে থাকবে আদিম প্রশ্নচিহ্নের  মতো।

এপ্রিল ১৪ , ২০১৫



আজ শুধু স্বপ্নময়

বাদ্যি থামার দুঃখে যেমন মন খারাপ হল কালকের সকাল, আজ তেমনি আপ্লুত হলাম স্বপ্নময় বৃষ্টিতে। আমরা তো সেই কবে স্বপ্ন দেখাটাই ভুলে গেছি! ভুলে গেছি মানবতা, ভুলে গেছি হলদে গোলাপের নীল কান্না এবং আঁধারের গাঢ় নির্জনতা। কেবলই গাধার পিঠে গামবুট রেখে নাগরিক হবার সে এক প্রয়াস বটে! হাততালিও জুটে যায় খামোখা। থামেও। তবু থামে না স্বপ্নময় বোধ, ভাষা ও যাপন। থামে না আনন্দধারা। আকাশের সব মেঘগুলো থেকে আজ নামুক হলদে গোলাপবৃষ্টি। আসুন, একটু ভিজি। জ্বর আসুক। স্বপ্নময় জ্বর।  
                                                                                    এপ্রিল ১৫, ২০১৫



ঘুম 

আজ খুব শব্দের মেঘ করুক। আজ খুব বৃষ্টি নামুক। 'নকল-ভণ্ড' শব্দের কফ্‌থুতু ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাক। সোনার জল চড়ানো শব্দের স্যাকরারা ঘুমোক সাড়ে-তিন কোটি বছর। চলো এই ফাঁকে বৃষ্টির নীচে পানসি ভাসিয়ে দি-ই বহুদূর। চলো ফাগুনহারানো পলাশবনে রেখে আসি জোনাকিদের মৈথুন। চলো আমাদের ঘাসবনে, সেখানে হাওয়ায় মাঝে পাকাধানের পাঁচালি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া পাখিদের স্বপ্নে বিভোর পোয়াতি মাটি।
                                                                                    এপ্রিল ১৬, ২০১৫
  



মনখারাপের গদ্য 

বিষণ্ণ মেঘের নীচে ক্রমশ ক্ষয়ে আসছে আমাদের ঘাসবন। কফ্‌থুতুর রাস্তায় নেড়িগুলোও বিপন্ন। এর মাঝে নিজেকে সামলে নিচ্ছি উচ্চাঙ্গ ফেরেববাজের মতোই। নিজেকেই বলছি,সাব্বাশ! বলছি, ভালোই আছি মৃত চোখ আর কমোডের দেশে। ভালো আছো তুমিও সুদূরের কবন্ধজাহাজে। ভালো আছে তোমার ঝালমুড়ি আর প্লাজ্‌মা টিভি। রিমোট। কেবল ভালো নেই শীতলপাটি, ভালো নেই মেঘের নূপুর, ভালো নেই তোমার বেড়ালেরা আর গাছেদের ঘুম।
                                                                                    এপ্রিল ১৬, ২০১৫




‘কপাট-১’ 

সাঁত্রের কপাট বন্ধ। বন্ধই থাকে। অথচ ভাবছি কেউ আছে। কেউ এসে চুমু দিয়ে যাবে। কেউ এসে পিঠটা চুলকে দিয়ে বলবে, তোমার জন্য একটা পাউডার আনব, কেমন! কিন্তু কেউ আসে না। এ-ঘরে আছি আমি আমি এবং আমি--মোট এই তিনজন। তিনজনে দলপাকাই। চোখপাকাই। নখপাকাই। নেড়ির মতো খেঁকিয়ে উঠি। ঘাড়ের উঠে যাওয়া ছালচামড়ায় উইগ বসিয়ে সিংহ সাজি আর ভয় দেখাই আমার আমিকে। আমাকে তখন শয়তানের মতো লাগে। যখন দেখি আর ভয় পাচ্ছে না, তখন কপাটে ধাক্কা দি-ই। বারংবার। কপাট খোলে না। দেখি, দুজনে তখন গণতন্ত্রের কথা বলছে। যাক, আর কপাটের বাইরে যাবার দরকার নেই!
                                                                                  
এপ্রিল ১৭, ২০১৫ 




‘কপাট-২’ 

বৃষ্টির মতো পথে তোমার সাথে দেখা হল অবশেষে। তারপর তুমি-ই বললে, এই পথ সুদীর্ঘ নয়। এই পথ আগুন আর বরফের সোফায় শুয়ে আছে বহুকাল। তবু বলি, চলো। সে-ই শুরু। তারপর অনেক পথ। তারপর শব্দের মৃতদেহ থেকে পোশাক তুলে নিয়ে আরো কিছুক্ষণ। তারপর মেঘেদের দোলনায় পাখিদের বাউলের মতো ছুটে যাওয়া মরু থেকে মরুতে। এভাবেই। এভাবেই গড়াতে গড়াতে উলের গোলা হারিয়ে গেলে তোমাদের পুষিবেড়াল খুঁজে বেড়ায় রহস্যদানব। আমরাও। বুঝি বন্ধ কপাটের সামনে দাঁড়িয়ে কেবল হাতড়ে বেড়ানো নিজেদেরকেই। যেন আমরা কিছুই ছিলাম না, ছিল না আমাদের সুখ-অসুখ, খিদে কিংবা সুরের মহাফেজখানা। 
                                                                                    এপ্রিল ১৭, ২০১৫ 



ক্যানভাস 

প্রকৃত হত্যাকারির মতো আমার চাউনির নীচে অনন্তকাল হাতড়েছো একটি ভোর। অথচ কখনও বলিনি কৃত্তি তুলে রেখেছি চিরতরে, কখনও বলিনি রক্তের স্বাদুস্বপ্ন রেখে তোমার অরণ্যে হেঁটে যাব রাখালের সাথে। দ্যাখো, আমৃত্যু ছিঁড়ে চলেছি লেজের পালকগুলো। তবু সমবেত উড্ডয়ন-প্রয়াস! শহরের সমস্ত ডাস্টবিনে টাঙিয়ে রেখেছি সুবিশাল আয়না। আর দ্যাখো থুতু মেখেই রোদ্দুর গিলছে সময়। ম্যাকবেথের  ঘোড়াগুলো ক্যানভাস এফোঁড়ওফোঁড় করে ছুটে গেল তোমার সানুদেশে। ওদের নীল খুরে এখনও লেডির ক্ষয়ে আসা হাতের মোম। ওদের একটা চুমু দিও। তারপর আত্মহননের হলুদ বারান্দায় এসে দাঁড়াও, দেখবে লোপাট হওয়া ভোরের সাথে নিবিড় খেলায় মগ্ন তোমাদের বেড়ালেরা।

এপ্রিল ১৮, ২০১৫ 






বন্ধু সন্তোষকুমার সাহা'র ফ্রেমে অমিত। 



সে এক অভিশাপ। আশীর্বাদও। কষ্ট দিয়েছে সে যেমন, তেমনই দিয়েছে ঢের ঢের আহ্লাদ। শান্তি। ভালো থাকার উসকানিসেই সব মাঠঘাট, নদীনাল, হাওড়বাঁওড়, গরুগাড়ির চাকার সুদীর্ঘ পাণ্ডুলিপি, জলের আলপনা, নৌকো,  ভেড়ি আজও ঘাসবনে অম্লান। তারই মাঝে রক্ত। বেনোজল। দখলদারি। সাপ। মাছ। কাঁকড়া। পাখির কিচিরমিচির। এর ফাঁকেই অমিতের জন্মসালটা ১৯৮০। বন্ধ্যাত্বকরণের পরও পঞ্চাশের দশকে সাধের স্বাধীনতার শব কাঁধে নিয়ে বাপঠাকুরদার হেথাহোথা আশ্রয়ের খোঁজচলে উদ্বাস্তু উদ্বাস্তু খেলা। চলতে চলতে একসময় হাতের মুঠো খুলে পেয়ে যায় এক আশ্চর্য ঠিকানা। এভাবেই আরও এগোনো। সেই শব এখন অমিতের কাঁধে! তাকে নিয়ে প্রতিরাতে অমিত হেঁটে যায় বহুদূর। ভোর হবার আগেই ফিরে আসে, আর কেঁদে ফেলে বিষণ্ণ গাবের মতো। তবু এ-গন্তব্য অধরা। আর কতদূর? ‘আর কতদূর গেলে আমাদের বাড়ি?’ সেই অন্বেষণে অমিত। শূন্য থেকে আরও শূন্যে পথচলা। কখনও-বা শব্দের চালাঘরে রাত্রিযাপন। আর তাই...  









মন্তব্যসমূহ

নাজনীন খলিল বলেছেন…
প্রতিটি লেখাই অসাধারণ। প্রতিটি লেখায়ই একধরণের নিজস্ব স্বকীয়তা।যতবার পড়ি এক বিমুগ্ধ আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি।
লেখাগুলোর সাথে ছবিগুলো জুড়ে চমৎকার অলংকৃত করেছে বইটিকে।

খুব ভাল লাগলো।

এভাবে আরো আরো অনেক লেখা পড়তে চাই।
Unknown বলেছেন…
আপ্লুত দিদিভাই। অনেক ভালোবাসা।
ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় বলেছেন…
সব কটি লেখাই পড়লাম । কবিতা আর গদ্যের বেড়া ভেঙে দিয়েছো অমিত । তোমার লেখার ধারা বা নিজস্বতা এখন আরো স্পষ্ট , অন্তত আমার কাছে ।
Unknown বলেছেন…
“অমিত, আমাদের কবিতাগ্রাম আড়ালে যিশুর শব আগলে বসে আছে। তোমার মুক্তগদ্য আমার অহংকার । ঈশ্ব্ররের সাজানো বাগান থেকে গুহামুখ,তবু তুমি বুনোহাঁস । তোমার হৃদয় ডানা মেলে মেঘেদের দেশে । অন্ধত্ব, নীরবতা ভেঙে তোমার আদর্শলিপি আমাকে জাগরুক রাখে এবং কাকতাড়ুয়া যাপন শেখায়.” – দেবাশিস রায়চৌধুরী, গল্পকার
Unknown বলেছেন…
“অমিত? সে তো এক প্রতিভার ডানামেলা আকাশ.......সেখানে প্রশান্তি আছে... সীমাহীন অনুভব কানে কানে বলে যায়, বাঁচতে চাই হাজার বছর.... বাঁচতে চাই হাজারো মানুষের সাথে, অমিতের লেখার সাথে...” –শিমুল মাহমুদ, কবি ও সাহিত্যিক


Unknown বলেছেন…
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।