।। হান্টার ।। অমিতকুমার বিশ্বাস ।। অণুগল্প ।।

গুগল ইমেজেস 



  অণুগল্পর মতো দেখতে একটি গল্প
 হান্টার
 অমিকুমার বিশ্বাস                 

   
Haailoo...Hello...  
I am a hunter and she want to see my gun...
When I pull it out boy, the woman start to run...


প্রিয় পাঠক, গল্পটি চলাকালীন ‘গ্যাংগ্‌স অব ওয়াসেপুর’-এর ভুলে-ভরা এই দেহাতি গানটি চেতনে-অবচেতনে গুনগুন করা যেতেই পারে।  



এক 
খুরের চাপায় মারাই গেল বড় ভাই। বাকিরা তড়িঘড়ি ছুটল মায়ের কাছে।     
     রক্ত ছড়িয়ে গেল, যেভাবে বালতির জল গড়িয়ে যায়।
     রক্তের ভেতরে দোমড়ানো ছোট্ট শরীর, ছাল ছাড়ানো কুঁচের মতো নিঃশব্দে ছটফট করছে। শান্তিনিবাসের চারতলা থেকে ধুপ করে পড়ল সবে।  
      গোঙানিও নেই। 
      লিফটে নেমে মিতা লিফটেই তুলে নেয়। এ-ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। মিতার রাক্ষুসে চাউনিতে ভয় পায়। দু-পা এগিয়ে ছ-পা পিছিয়ে যায়।  
      নির্বিকার মিতা তরতরিয়ে উঠে যায় উপরে।



দুই
Haailoo...Haailoo...Hello...  
I say as a hunter, I must be brave and strong
She say  that she find that my gun extremely long...

মা-ব্যাঙ নিজের পেটটা ফুলিয়ে বলল, এত বড়?
          লোকটা রোজ আসত। মচমচিয়ে খেত লেগ-পিস। খেত রক্তও। এমনকি ঋতুদিনেও চলত আয়েস। রক্তের স্বাদই যে আলাদা !
             অনুরোধ
                      উপরোধ
                               প্রতিবাদ
                                        প্রতিরোধ
কিছুতেই কিছুই যখন হল না, ঘেন্নায় তখন ক্রমশ শীতল হয়ে এল শরীর, ওই যেমন তিন-চারটে দিন হয়ে আসে, তার থেকেও...  
              লোকটা উষ্ণতা চায়। লাইটার জ্বালে। সিগারেট ধরায়। হাত-পা-চোখ বেঁধে দেয়। মোমবাতি জ্বালে। ফোঁটা ফোঁটা গরম মোম ঢালে বরফদেশে। মর্গের বরফ !  
               লোকটার চাই চিৎকার। ছটফটানিকামড়ে-হাঁচড়ে রক্ত বের করে আনে। সিগারেটের লাল চক্ষু ঠেসে ধরে বৃন্তে। তবু বরফ গলে না। গলনের সামান্য চিহ্ন অদেখা কপোলেএরপর স্যাট করে বাটের পুরোটাই ঢুকিয়ে দেয় গর্তে। ধোঁয়া উড়ছে। পাশে মুখ রেখে লম্বা লম্বা শ্বাস নেয় অনন্তনেশা হয় ভরপুর। আহ্‌ সে আহা তক !

  
তিন

Oooooo…  
This girl harasses me, she won’t leave me alone
But that kinda behavior I really can’t condone...  
                        
মা-ব্যাঙ পেটটা আর-একটু ফোলায়।
                শান্তিনিবাসের দামি ফ্ল্যাট। গাড়িও। চাকরিতেও স্যাটাস্যাট প্রমোশন। মিতা মানে অপরিমিতা তো এমনই চেয়েছিল। অনন্তের বাপ-মা ছুটতে বলেছিল অনন্ত পথআর সেই যে ছোটা শুরু করল, আজও থামেনি। এখান থেকে তাঁদের চোখেও পড়ে না ঠিকমতো। মিতাও বলল, আর একটু তো ছুটতে পারো ! সবাই ছোটে, আর তুমি শুধু পায়ে পা তুলে থাকো সারাদিন। বড্ড অচল !  
                তাই সে আবার ছোটেছুটতে ছুটতে অফিস। বসের চেম্বারে। বেডরুমে। সঙ্গে আধবুড়ি মেম। বস পাশের ঘরে পিপ-হোলে।   
                 বেডরুমে চার হাত-পা বাঁধা। মেমের হাতে সিগারেট। চাবুকও। সপাং সপাং! লাল দাগ। এবারে ডোরাকাটা বাঘ যেন। তাতে কিছুটা নুন ছিটিয়ে দিল নরম হাতে। খাবারে নুন কম, তাই হয় নাকি ? এবারে ভরপেট্টা নেশা। পিপ-হোলের আড়ালেও। আহ্‌ সে আহা তক!  
                পালা অনন্ত পালা !
                কোথায় পালাবে? আগাগোড়া লোনে ডুবে।
                আবার সপাং ! অ আ আ আ আ আ...
                আ সে আহা তক !   
                ঘরে ন’বছরের স্পেশাল চাইল্ড। মুখে বাবা নেই মা নেই হাসি নেই কান্না নেই। সে ভাবে, মর্গের বারান্দার মতো রোদ্দুর নেমেছে ঘরে।
                পালা পালা!
                 কোথায়?
                 ছোট ছোট !
                 আর কত ছুটব? কোথায় ছুটব? ছুটতে ছুটতে পশু হয়ে গেছি। রক্ত চাই রোজ। রক্ত!


চার

Put on your hunting clothes, let we go on hunt 
Please don’t be embarrassed, you could touch it if you want...
                                                                   Haailoo...’ 

অনন্ত এখন অনেক দূরে। মিতা ডাকলেও শুনতে পায় না। মিতাও অনেক দূরে, উঁচু উঁচু বাড়িগুলো যেমন মাটি ছেড়ে বহুদূর...
             অনন্ত-মিতার জুতোয় ধুলো নয়, বরফকুচি। স্নেহও ডিপ ফ্রিজে সাজিয়ে রাখা।
             পালাবে ? কিন্তু কোথায়?   
             মেয়েকে আবার নতুন জামা পরিয়ে চার তলার ছাদে ওঠে মিতা...  
                                                             আবার ধাক্কা...
                                                                     ধুপ্‌!  
  
             লোকজন ঘিরে জায়গাটা। পুলিশ আসে। ক্যামেরা আসে।
             বাইক চেপে আসে নবীনবাবু। নতুন চাকরি। নতুন বিয়ে। বাড়িটাও সামনে।  বড়িয়া হ্যাঁয় !    
             ব্যাঙের গল্পটা আপনি জানেন প্রিয় পাঠক
             তবু
             তামাক ক্যান্সারের কারণ লিখলেই হয় না...

             Haailooo

                                     ...Hello...

             গল্পটি শেষ
             কিংবা সবে শুরু হল
             Hellooooooooooooo... 





গল্পটি 'সাহিত্যপত্র'-এর শারদ সংখ্যা ১৪২৪-এ প্রকাশিত। সম্পাদক শ্রীতপন দাস। 
কেমন লাগল প্রিয় পাঠক? আন্তরিক মতামত চাইছি আপনার কাছেই। মতামত ফেবুকে জানান, কিংবা মেলে। ফোনেও জানাতে পারেন। 
ইমেল amitagnimitra@gmail.com 
মোবাইল ৮১৫৯০৯৩৭১০ 
ব্লগজিনে প্রকাশিত অন্যান্য বন্ধুদের লেখা পড়তে অনুরোধ করছি। 
ধন্যবাদ।

গুগল ইমেজেস থেকে নেওয়া, রমন রাঘব ২.০ মুভির একটি পোস্টার 

মন্তব্যসমূহ