গুগল ইমেজেস |
অণুগল্প
আগুন,
বরফ
ও
একটি রিয়েলিটি শো
(এই শোয়ের সকল প্রতিযোগী-প্রতিযোগিনী
ও
বিচারকরা কঠোর ভাবে স্ক্রিপ্ট মেনে
চলবেন)
অমিতকুমার বিশ্বাস
লাগাতে ভালো লাগে, আরাম লাগে, তাই আগুন লাগাল ওরা।
এখন
ঘর দাউ দাউ।
এখন
মানুষ দাউ দাউ।
জানলার গারদে দুটি নগ্ন হাত, করুণ হাত। পোড়া চুলের গন্ধে মাথাটা বেঁকে
যাচ্ছে ঘুরে যাচ্ছে বিকট প্রেতের মতো।
পোড়াগন্ধ
ঘরময়।
আর্তনাদ ঘরময়।
প্রিয় পাঠক, এ-দৃশ্যে কষ্ট পেলে পড়া বন্ধ করে
দিতে পারেন, পত্রিকাটি উলটে ঘুরে আসতে পারেন পাশের ঘর। ধরে নিন কোনও মুভি চলছে
ঘরে, কিংবা এত সময় খবরের কাগজে ডুবে ছিলেন আপনি।
আচ্ছা তবে ধরে নিলাম মুভি-ই দেখছিলেন। তাহলে মিউট করে দিন এবারে। উঁহু মুভিটা চলুক। পোড়া চুলের
গন্ধ দূর করতে রুম-ফ্রেশনার ছড়িয়ে দিন। আপনার শরীরে কিংবা ফ্রিজে যে মাংস আছে তা
অনুমতি ছাড়া জানার অধিকার নেই কারও। কিন্তু হাল ফ্যাশানের দেশটা সেরকম
আর নয় এখন। সে টর্চ মেরে সব দেখতে চাইছে। প্রাচীন ভারত
গোরু খেত, শুওর খেত। একবার এক দুর্ভিক্ষপীড়িত মুনি কুকুর খেতে চেয়েছিলেন। খিদেই তো
প্রাচীন ধর্ম। মানবিকতাও। আর সেসব ভেঙে পড়ল হুড়মুড়িয়ে। পরিবর্তে গজিয়ে উঠল
হাম্বা হাম্বা হে...! আজ দেখুন ফেসবুকে, খবরের কাগজে, টিভি-নিউজে,
দেয়ালে দেয়ালে শুধুই হিংসা। হিংসা বিকোচ্ছে দেদার দাদা। এই দেখুন আমিও হিংসা নিয়ে
সটান হাজির আপনার দরজার কি-হোলে, হাতে নাইন এমএম। আমার ধর্ম আমাকে বলেছিল আমার ওফেলিয়া
আমাকে বলেছিল, ‘থামো, বনে চলো, চলো গাছদের দেশে দুজনে গান হই আবার...!’ কিন্তু ওরা
বলল, ‘তুই কাপুরুষ! বউ গেল মেয়ে গেল আর তুই কিনা...!’
ওরা বদলা চায়। খুনকা
বদলা খুন। আমিও চাই। থেঁতলে দিতে চাই খুনিদের।
তাই ওরাই সব ব্যবস্থা করে দিল। আর তাই আমি সটান আপনার
দরজায়। আপনি কিন্তু ঠিক টের পেয়েছেন। তাই আপনার হাতেও উঠে এল কিছু একটা। দরজা ভেঙে
ঢুকতে হল ঘরে। টিভি মিউট, কিন্তু চলছে। ঘরে পোড়া চুল আর রুম-ফ্রেশনার মিক্সড। আপনার যুবতী স্ত্রী-বৃদ্ধা মা এমনকি আপনার কন্যা পাশের ঘরে। আপনার খেল খতম করেই বাকিটা কাম তামাম
হবে। আমি জানি না আপনি কে। আপনিই সেই
খুনি কিনা। ওরা মিশন সেঁটে দিয়েছে আমার কপালে। কপালে ফেটি বেঁধে বেরিয়ে পড়েছি একাই। ওরা বলেছিল, এই টুকরো কাপড়টাই আমার মেয়ের শরীর ঢেকে ছিল! আমার কপালে এখন
আগুন। টিভিতেও। লাগাতে ভালো লাগে, আরাম লাগে,
তাই ওরা আগুন লাগিয়েছে ঘরে। আর টিভির বাইরে আপনি আর আমি, কিংবা টিভির ভেতরেও। এবারে
মুখোমুখি। ফা-আ-আ-আ-য়া-আ-আ-র !!
মুহূর্তেই আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম মেঝেতে। কিছুক্ষণ
শুয়ে থেকে উঠে পড়লাম আবার। আপনিও।
বড্ড খিদে পেয়েছে আমাদের। আমি টিভি-ঘরের ফ্রিজ খুললাম। আপনি
কিচেনের। দেখি ফ্রিজে বরফ। বরফ সরিয়ে দেখি একটি লাশ, কোনও মতে চেপেচুপে ঢোকনো। বের
করে দেখি, অবিকল আমি। কী কাণ্ড! পাশের ঘর থেকে আপনিও ছুটে এলেন। আপনার লাশও ওই
ফ্রিজে! ‘এখন?’ কাঁপতে কাঁপতে আপনি বললেন। বললাম, ‘লাশগুলো ফ্রিজেই ঢুকিয়ে দিই।
বাইরে থাকলে পচবে, গন্ধ বেরোবে, আপনার ঘরের লোকেদের অযথা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে। আর
এদিকে রুম-ফ্রেশনারও ফুরিয়ে এসেছে। তার চাইতে
বরং আসুন, পাশাপাশি বসে বাকি মুভিটা শেষ করি, তবে মিউট করেই।’
আমি আপনার দিকে
তাকালাম।
আপনি আমার দিকে।
দেখি আপনাকেও ঠিক আমার
মতো দেখতে লাগছে।
দুজনেই হেসে উঠলাম।
টিভি চলছে...
মন্তব্যসমূহ