অ-সম্পাদকীয়

-সম্পাদকীয় 
ছবি: গুগল ইমেজেস 


ফিরে এলাম দু-বছরেরও একটু বেশি পর। এলাম, দেখলাম, পোস্ট করলাম। আমাদের মুদ্রিত পত্রিকা ‘দ্বৈপায়ন’ ২০০২ ও ২০০৩-এ পর-পর দুটি পাতি সংখ্যা প্রকাশের পর বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে প্রায় এক দশক ‘এরিনা’র বাইরে। ফিরে আসি ‘কারক’ নিয়ে, মুদ্রিত, ২০১৩-এর অগস্টে, যুগ্ম-সম্পাদনায়, যদিও অর্থ থেকে শ্রম সবই এ-অধমের, তো সেই ‘কারক’ ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায় শেষমেশ।
             ২০১৪ থেকে আবার ‘দ্বৈপায়ন’। এখনও পর্যন্ত মোট সাতটি সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে ‘দ্বৈপায়ন’-এর। ২০১৫–তে আমরা ISSN পাই। ‘দ্বৈপায়ন’ এর অহংকার শেষ দুটি সংখ্যা, বিষয়টি যাঁরা জানেন তাঁরা জানেন, বাকিরা জেনে যাবেন, জানি।
             অনলাইন পত্রিকাই আমাদের ভবিষ্যৎ----এটা অনুমান করেই ২০১৩-তে ‘অচেনা যাত্রী’ প্রকাশ করি, টানা দু-বছরে ২৬টি সংখ্যা প্রকাশের পর ২০১৫-তে বন্ধ করে দিই। আসলে আমার ক্ষতি হচ্ছিল খুব। সম্পাদনার ঠেলায় লেখা মাথায় উঠছিল। আবার এমন মনে হলে শুধু অনলাইন কেন, মুদ্রিত পত্রিকাও বন্ধ করে দেব। চালিয়ে যেতেই হবে, এমন শপথ করে জন্মগ্রহণ করিনি।
‘তাহলে আবার কেন বাবা?’  
মুদ্রিত পত্রিকা যতই ‘সেন্টিমেন্টাল’, ‘একটা ছাপানো দলিল’ আর ‘ইউজার ফ্রেন্ডলি’ হোক না কেন, এর সীমাবদ্ধতা ব্যাপক। লেখা সংগ্রহ থেকে কম্পোসিটরের কাছে ছোটা, কখনও কখনও তাঁকে ‘বাবা-বাছা’ বলা, আর মনে মনে ‘চোবাকোদা এই কাজে এত ঘোরাস?’---এমনও। ডিটিপি চার্জ পাতা প্রতি চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ টাকা, ছাপাখরচ, কাগজ-কভার-বাইন্ডিং-ভেন্ডার খরচ। ছাপানো হয় ২০০ থেকে ৩০০টি মাত্র। কেউ কেউ ‘অনডিম্যান্ড’ ছাপিয়ে নেয়, ৫০-৭৫, সেটা নিয়েই লাফায়, লিটল ম্যাগাজিন মেলায় ছোটে, ঘেউ ঘেউ করে, তাতেই পুরস্কার-টুরস্কার দেয়, আবার ‘ঘ্যাঁচ’ করে কামড়েও দেয়।
           লিটল ম্যাগাজিন, ‘দেখলে হবে? খচ্চা আছে।’ টাকার খেল এখানেও। এদিকে বিজ্ঞাপন নেই আমাদের। চেয়ে দেখেছি, ভিখারি ভিখারি মনে হয় নিজেদেরকে, তেমনই ভাবে বড়-মেজো এমনকি ছোট বিজ্ঞাপনদাতারা। কেউ কেউ মোটা ভিক্ষে দেয়। ভিক্ষে দেবার সময় সে কী ‘এক্সপ্রেশান’, যেন মাস্টারবেট-অরগাসজমের সাফল্য-মুহূর্ত। ক্লিক ইট!
             ধুর শালা, ও-পথে নেই।
             বিকল্প বেলাইন, শেষে অনলাইন।
             হ্যাঁ, তাই-ই, মানুন বা-না-মানুন। ওই ফেসবুকও তো অনলাইন, সারাদিন বিজ্ঞাপন সাঁটতে সেখানেই আসতে হয়, বড় গাছের ‘নাও’ কিংবা ছোট, সব এসে লেপ্টে যাচ্ছে ফেসবুকের দেয়ালে। আর বিজ্ঞাপনটাও হয় জবরদস্ত, হয়ে যায়, অস্বীকার করি না। 
              অগত্যা...
              প্রথম পর্বে, অর্থাৎ ‘অচেনা যাত্রী’-পর্বে, অপ্রকাশিত লেখাই প্রকাশ করেছি। কিন্তু এবারে দ্বিতীয় পর্বে, অর্থাৎ ‘দ্বৈপায়ন অনলাইন’-পর্বে প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত লেখা প্রকাশ করব, প্রকাশ করব প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিকেই। প্রকাশিত সেই লেখাই, যা কোনও এক বা একাধিক মুদ্রিত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, ব্যবসায়িক বা লিটল, যে যাই হোক, লেখকের সম্মতিতেই অবশ্য, এখানে আবার প্রকাশিত হবে। ব্যবসায়িক বা লিটল—এই নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনও চুদুরবুদুর, ধুনচুন বা বুলেটবাজি নেই----লেখা শেষমেশ হয়ে উঠলেই হল, ভালো লেখা অবশ্যই। আলফাল লেখা ছাপিয়ে গণসম্পর্ক গড়ার ইচ্ছে ছিল না কোনও কালে, নেই আজও।
           তবে অনলাইনে, সে ফেসবুক হোক বা অন্যকোথাও (একমাত্র ফেসবুকে ধারাবাহিক কোনও টাটকা গদ্য প্রকাশিত হলে সেক্ষেত্রে ছাড়পত্র থাকবে), প্রকাশিত কোনও লেখা প্রকাশ করব না। আর মাননীয়/ মাননীয়া লেখকবন্ধুদের অনুরোধ করব, আমাদের লিংক আপনারা আপনাদের ফেসবুক ওয়ালে ‘শেয়ার’ করুন, আপনাদের বন্ধুদের ই-মেল করুন ( প্রিয় পাঠকদের প্রতিও সেই একই অনুরোধ), শুধু একটি কথা, কপি-পেস্ট দেবেন না, বা অন্য কোনও অনলাইনে প্রকাশ করার অনুমতি দেবেন না, এই না-দেওয়াটা অনলাইন পত্রিকার প্রতি একটা সম্মানও বটে। তবে মুদ্রিত পত্রিকায় ছাপতে দিন, সেক্ষেত্রে ‘দ্বৈপায়ন অনলাইন-এ প্রকাশিত’ কথাটি উল্লেখ করলে ভালো হয় যদি টাটকা লেখাটি ‘দ্বৈপায়ন’-এ প্রকাশিত হয়।
           প্রকাশিত লেখার পাশাপাশি, অপ্রকাশিত লেখাও থাকছে, থাকবে।


           বন্ধুবর শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী'র কবিতা-গল্প-উপন্যাস পড়েছি। ওঁর ভক্ত আমি। 'দ্বৈপায়ন' (ISSN:2394-3602) থেকে ওঁকে তরুণ কবি হিসাবে সম্মানিত করা হয়েছিল ১৪২২-এ জীবনানন্দ সভাঘরে, করা হয়েছিল অর্ণব-কেও( কবি অর্ণব চট্টোপাধ্যায়)। তো 'দ্বৈপায়ন অনলাইন'-এর নবপর্যায়ে পেয়ে গেলাম তাঁকে, নতুন ভাবে, তিনটি অণুগল্পে, চমৎকার সে-সব, চমৎকারই, 'ঘুম', 'খিদে' 'তৃষ্ণা' নিয়ে, 'জিন্দেগীকা তিন বাম্বু মীনাজি'! এই তিনটি গল্পই অপ্রকাশিত। আমাদের অনন্ত অশান্ত অবচেতন সমুদ্রে সাবমেরিন নিয়ে নেমে পড়েছেন শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী। 
           এই সংখ্যায় কবি অর্ণব চট্টোপাধ্যায়ের ছ’টি অণুগল্প প্রকাশিত হল। ছ’টিই টাটকা, পূর্বে অপ্রকাশিত। চমৎকার ‘ফর্ম-ভাঙা’ গল্প-অগল্পের মায়া নিয়ে হাজির প্রিয় কবি। যতদূর জানি এই প্রথম অর্ণবের অণুগল্প প্রকাশ পাচ্ছে। ‘দ্বৈপায়ন’-এর কাছে এটাও কম গর্বের নয়।
        কবি আইরিন সুলতানা ও আমার গল্প দু’টি ‘দ্বৈপায়ন’ এর ডিসেম্বর ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। আইরিনের নির্মেদ গল্পটি প্রশংসিত হয়েছিল বেশ। আমরা আপ্লুত সেজন্য। আইরিনের কাছে আমাদের ঢের আবদার। আর পিয়ালি মজুমাদার গল্প বা গদ্য লেখার বিশেষ ক্ষমতা নিয়েই ‘ফিল্ডে’ নেমেছেন, দুঃখের বিষয় জীবন ও পেশার নানান জটিলতার কারণে তাঁকে খুব-একটা লিখতে দেখা যায় না। আমরা ক্ষুদ্ধ! আইরিন, পিয়ালি ও আমি প্রায় সমবয়সী। অর্ণব আমাদের থেকে বছর চারেকের ছোট, কিন্তু এই বয়সেই সে আমাদের ‘জ্যাঠা’ হয়ে উঠেছে। না, সাহিত্যে সে শিশুর মতোই সরল, আর ঘোর প্রেমিকের মতো তুখোর! কবীর সুমনের এই ছাত্রটি যখন অক্ষর-শব্দ-বোধ নিয়ে সাদা পৃষ্ঠায় খেলা করে, তখন মনে হয়ে মহাশিশুটি হাঁ-করে যশোদাকে সৃষ্টি আর প্রলয় দেখাচ্ছে অনন্ত!
         তো শুরু করা যাক প্রিয় পাঠক। হ্যাঁ, আসব প্রতি মাসেই, কথা দিচ্ছি, ভালো লেখা নিয়েই, আপনার সময়ের মূল্য দিতে জানি, এমন কোনও লেখা লিখব না, এবং প্রকাশও, যা পড়ে শেষে বলতে হয়, ‘ধোর’!
         আসব, তবে মাত্র চার-পাঁচ জনের লেখা নিয়ে, প্রতি মাসে।
         কেমন লাগল আপনাদের? একটু জানাবেন, এটাই অনুরোধ।
                                                     ভালো থাকুন।    

  

মন্তব্যসমূহ