কাব্যগ্রন্থ: প্রেরিত পুরুষ
প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি
২০১৬
পৃষ্ঠা ৮০: মূল্যঃ
২০০
প্রকাশনী: প্লাটফর্ম
জন্মের
নিজভাগে রয়েছে অন্য সড়ক
হঠাৎ একদিন
ঘুম ভেঙে দেখি পৃথিবীতে আমার জন্য আর কোন পথ নেই। শহর থেকে দূর এক ঘোর অরণ্যের
মুখের কাছে অস্ত্রে আমাকে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছে, আর পেছন থেকে বলা হয়েছে ‘এবার
দৌড়া!’
দৌড়াতে
দৌড়াতে এসে এক পাহাড়ের পায়ে ঘুমিয়েছিলাম। সেই সময়টুকু আমি পাহাড়কে মা বলে ডেকেছি।
দুই হাত পাশাপাশি ধরে ঝরণার জল নিয়েছি পান করে। স্থান ও কালহীন এই কোন আকারের দিকে
যাই- সূর্যশুভ্রতায়- এই কোন গ্রহের দরজা খুলে বাইরে নিয়েছি প্রবেশ! আমার দৌড়ানো পা
দুটো বুকে ধরে এই পথ যায় বেদনায়- আমাকে সামনে ঠেলে দিয়ে এই বৃক্ষগুলো গাড়ির মতো
ছুটে যায় শহরের দিকে- যেখানে সবকিছু ফেলে এসে- আমাকে পেছনে ঠেলে এই শহর ঠিক
দাঁড়িয়ে আছে তার জনগণ নিয়ে। মাতায়-পিতায়, ভাইয়ে-বোনে, ভগবানে মিলেমিশে অশ্রুর সাথে
এক হয়। নদীর পাড়ে প্রতীক্ষিত যে কাঠের গুড়ি পড়ে আছে চেরাবার- আর কারো জন্য জানালা
বানাবার! মানুষের নির্মাণ- তাদের জন্মের নিজভাগে রয়েছে অন্য সড়ক। দৌড়াতে দৌড়াতে
এসে-অচল আগুন থেকে তুষার নেই তুলে। দুই ভূভাগের মিলনে- তখন সব জনগণে কান্না করতে
করতে জাতীয় মাঠে জড়ো হতো। জড়িয়ে ধরতো পরস্পরের বুক। এই প্রেম আর প্রজ্ঞার সীমানা
দিয়ে পেরিয়ে আমি দৌড়াই- দৌড়াই- দৌড়াই।
অপেক্ষা
থেকে গাঢ়তর
আমরা এই
প্রাচীর ছেড়ে এগিয়ে মাঠের দিকে যাবো। আসমানী থেকে গাঢ়তর রঙে-যেখান থেকে পথ নেমে
যেতে থাকে- জলের তলায়, কারো কাছে আমাদের কোন প্রশ্ন নেই। আমরা সব জেনে–এখানে ওখানে
বসে শুনে যাবো শুধু তনয়ের গান। কোন যোগ্যপ্রান নারীর কাছে- কোন কারুময় বালিশ থেকে
আচমকা ঘুমজাগা বালিকার ফুলো চোখের মতো- এসবের প্রয়োজন আছে, হেমন্তের পাতা যেমন
খুলে। শীতের সকালে ঘাসফুল তার শ্বাসে যেভাবে জড়িয়ে নেয় সূর্যের মাধুরী- আমরা গতি
পাই আলোর দিকে- দিগন্ত থেকে আরোহীশূন্য একটি ঘোড়া আমাদের দিকে আসছে- আকাশে থেকে
কেবল একটি চিল, কাল ভেদ করে খড়ের হৃদয়ে আনে আরেক উদয়।
এর থেকে
আগে- তবে কি জীবিত আজও- কেন সে নেই- আমাদের প্রতিমুখে ক্লান্তি গড়ে তুলে। ঢেউয়ের
ওপর দিয়ে একমাত্র নৌকাটি কাছে ঘনালে- তারপর অপেক্ষা থেকে গাঢ়তর- এসে গেলে- যাত্রী
নিয়ে গেলে চলে- ফাঁকা হয়ে যায় ঘাট। তখন যেটুকু
জলের বয়ে আনা শোনিত সায়র- মানুষীদশায় আমরা তার চেয়ে বেশী ধরতে পারি না হাতে। একদিন
জনদলে- বিরানজুড়ে একটি মাত্র গাছে- তাকে পেরিয়ে যে পথ- ছুঁয়ে- নীরব রয়েছে হাওয়া। আমরা সময়ে এই সংবর্ধনার উপহার ফেলে,
গুণীর শুভেচ্ছা অস্বীকার করে, প্রেমিকার সাথে ঠিকই তুমুল যৌথতায় ঢলে পড়বো।
কিছুই হয়নি
আমি
কেউ যখন
জিজ্ঞেস করে, কি করছো এখন তুমি? চাকুরি!
কোথায় থাকো? বুকের মধ্য থেকে মেঘ ডেকে ওঠে। মোরগের ছিন্নভিন্ন পালকের ছড়ালো রক্তের
স্নেহ মেখে আছে- মনে হয় ক্লান্ত সূর্যকে স্কন্ধে নিয়ে বারবার একই পাহাড়ে উঠছি।
আসলে কিছুই হয়নি আমি। কিছু হবো না। তেমন বিশেষ, কিছু হওয়া বলতে অন্তত মানুষ যা
বুঝে। লক্ষ্যের উদ্বেগ পারেনি কোনদিন আমাদের তুমুল যৌথতা থেকে ভ্রান্তি দিয়ে
রুগ্নস্তরে ফেরাতে। কিছু হতে কখনো চাইনি। কেউ নেই ভাবলেই আমার বুক ফাঁকা ঝিনুকের
মতো মুক্তোশূন্য লাগে- বালিতে মুখ উল্টিয়ে দুভাগ করে পড়ে থাকি ঝিল্লী আর
শুকনোপ্রাণ খোলে। মূর্ছিত আগুন নিয়ে বুকে- ঘুমের মধ্যে আশ্চর্য স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমরা যুবক
হলাম। যাচ্ছো কোন দিকে? অফিসটা ঠিক কোথায়! রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছো? বিয়ে করেছো বুঝি!
প্রশ্নগুলো মগজে আঘাত করে খুলে দেয় স্মৃতির প্রস্রবণ- মানুষের একান্ত সাক্ষাতে
এসে- পাশাপাশি বসে কিংবা দাঁড়িয়ে- মানুষ কতো কি জেনেছে। পৃথিবী বদলেছে- রাজনীতি
বদলেছে- জীবন তার অতৃপ্ত হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চাইছে আমার অশ্রুতীর কপাল।
যখন সব সম্বন্ধ
শেষ হয়ে আসে দর্পনের ভেতর আমি রয়েছি একা। এইসব অর্থকে তুচ্ছ জেনে- এইসব সামান্য
প্রাপ্তিকে বোধের ওপাশে ঠেলে দিয়ে এলে। আমার বুকের বস্ত্রে ভালোবাসা ধ্বনি হয়ে বয়ে
যায়। যখন আবার বাহিরে দাঁড়াবো, সমস্ত গেলে- এইসব পুণ্যে আমাদের কোলের কাছে
প্রার্থনা ছিলো। এই ঘরে আমাদের অনবদ্য শরীর ছিলো। এই জলে একদিন আমাদের ছায়া পড়ে
ছিলো- এইসব মুহুর্তের সত্য সব সাধারণ স্বাভাবিক, মানুষ অকারণ পকেটে জমিয়ে রাখে অজ্ঞাত
হাওয়া। কেউ যখন জিজ্ঞেস
করে- কেমন আছো ফুল? ঘর থেকে গলি, প্রত্ন থেকে প্রেরণা, আমি এই হতে অশ্রুপাতে
ভাবনাগুলো উড়াতে উড়াতে নির্বিকল্প অবসানের দিকে যাই।
দুঃখের
আঙুলে বাজে নিসঙ্গ
দোতার
বালির গোপন
পায়ে পরিয়েছি কাচের নূপুর
সে অনেক
শিরার নীল, উপচিয়ে সমুদ্র হয়ে যায়
কাকের ডাকে
নেমে আসে নর্দমাক্লান্ত দুপুর
ডাস্টবিনের
বিষ্ঠা চারিয়ে তুলছে তারা উড়ে উড়ে
একটা
কুকুরকে বিষ্ঠার দখল থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে আরও দুটা কুকুর,
এই নিশ্বাস
আমাদের রক্তের প্রতিধ্বনি
আমাদের নাভী
যেন পৃথিবীর ত্বকের ভেতর কোন অস্ত্রের গান।
হায় শহর!
সত্যি বলতে আমার দু’হাতে আছে অবসরের স্তন
পাখির ডানা
থেকে ঝরে পড়া অরণ্যের শ্বাস
এই মহামারী,
এই সূর্যলিপ্ত দারুণ দিনগুলো
প্রজননী
আলিঙ্গন, সেখানে অন্তর্যায়ী বহুতল দালানের পেটিকা
আমার দুঃখের
আঙুলে বাজে নিসঙ্গ দোতার, এই সুর যেন কুড়াল
দেহের ঠিক
মাঝখান থেকে ফেঁড়ে চকচকিয়ে ওঠে।
কাপড়ের কতো
রকম ভাঁজ, ভাঁজের ভেতর দেহের গোপন ধবনি
সুন্দর আর
অর্থহীনতার দুই সহোদরা যোনি।
পিতা হতে
চাই না
সে এক নারী,
আমার হাত দুটো টেনে নিয়ে তার
বুকের কাছে
প্রাণদায়িনী
স্তনে ছুঁইয়ে রেখে বলে এবার
প্রবলবেগে
ঝেঁকে দাও- দেখবে পড়বে পাকা পাকা আপেল।
ঊরুর মাঝে
হাত বাড়িয়ে চলে গেছে পৃথিবীর দিকে
চেয়েছে কেবল
এক ফোঁটা বীর্য
বলেছি
কোনদিন পিতা হতে চাই না
অভাগা মানুষ
জন্ম দিতে চাই না, চাই না জনতা
আমার কোন
অধ্যক্ষ নেই, আয়না নেই, চিরুনী নেই
কেবল চুমু-ই
জ্ঞান, আর সব আলিঙ্গন ও হাসি মিথ্যা
তাড়না! যেন
একপাল ক্ষুধার্ত মানুষ
এক টুকরো
রুটি নিয়ে মারামারি করছে।
বীর্য, অমরা
আর অপত্যের কোন মূল্য নেই
এই পরম মোচন
শুধু হবে তোমার অশ্রুবিন্দু
তুমি মা হবে
অন্য কোন উপায়ে- অন্য দুঃখের দোহনে
সুমিষ্ট
দুগ্ধ হবে, পেট হবে- সোনার ডিম হবে, হও
এই দেহের
পীড়া, কিছু কামনা করি না
পৃথিবীর কোন
বিছানায় যেতে চাই না।
মূল
কাব্যগ্রন্থ থেকে কয়েকটি কবিতা এখানে প্রকাশ করা হয়েছে। কবিতা ভালো লাগলে
কাব্যগ্রন্থটি সংগ্রহ করতে অনুরোধ করি। ধন্যবাদ।
কবি পরিচিতি:
জন্ম ২৪ অগ্রহায়ণ ১৩৯৩, ৮ ডিসেম্বর ১৯৮৬। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়াশুনা করেছেন। প্রথম কবিতার বই ‘সোনেলা রোদের সাঁকো’ এর জন্য পেয়েছেন ‘সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার’। অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ ‘শরতের বাস টার্মিনাল’, ‘শূন্য সত্য একমাত্র’ ও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী নিঃসঙ্গতা’, গল্পের বই ‘আগ্নেয় আশ্বিনের তামুক’।সম্প্রতি প্রকাশিত উপন্যাস-'রাজনীতি'।
মন্তব্যসমূহ
Harrah's 전라북도 출장마사지 Cherokee Casino in Cherokee, NC. 충청북도 출장마사지 Find 울산광역 출장안마 reviews, hours, directions, 구미 출장샵 opening 군산 출장마사지 hours and more for Harrah's Cherokee Casinos in Cherokee, NC.