অনূদিত ছোটগল্প
গল্পকার: মানুয়েল আলারকন এচেভেররিয়া
দেশ: চিলে
ভাষা: স্প্যানিশ
পরিচিতি: জন্ম ১৯৪৯ এ চিলের ভিনিইয়া দেল মার'এ, সেখানেই থাকেন। পেশায় ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার। এখনো পর্যন্ত ৩০টিরও বেশি গল্প লিখেছেন। চিত্রকর এবং ফোটোগ্রাফার হিসেবেও তিনি পরিচিত। 'বৃষ্টি' গল্পটি তাঁর আন্তজীবনীতে সংকলিত। জীবনের প্রথম চাকরিতে যোগ দিতে তিনি যখন পুয়ের্তো মন্ত শহরে যান, সেখানকার প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্যে দিন কাটে তাঁর। সেই স্মৃতিই 'বৃষ্টি' গল্পের উৎস ।
অনুবাদক: মৈনাক আদক
মূল গল্প: Lluvia.
Una
mañana fría, a principios de otoño, el tren lo llevó hasta aquella hermosa
ciudad sureña.
Desde
la ventanilla del carro, tuvo su primera visión de la ciudad, la cual
se levantaba apretadamente entre un mar grisáceo y los bosques
centenarios del sur.
Respiró alegre el purísimo aire del lugar.
Recién egresado de una
universidad del norte, llegaba hasta allí para desempeñar su primer trabajo,
sintiendo en la pletórica juventud de sus veintidós años, que tenía por delante todo un
camino para recorrer.
Encontró alojamiento en una
pintoresca residencial. Era una gran casona de madera, recubierta de tejuelas
de alerce. Estaba enclavada en una loma, en medio de macizos de hortensia y
cardenales.
Allí reinaba siempre una atmósfera cálida, aportada por el
espíritu acogedor de las
gentes que moraban en la casa.
Su
lugar de trabajo se encontraba cercano a la residencial, de tal manera que se
acostumbró a recorrer a pie el
empinado sendero que llevaba hasta allí. Era un camino salpicado de
tramos de escaleras de cemento que serpenteaban cerro arriba, hasta desembocar
en la planicie desde la cual se dominaba la ciudad, el estuario y las islas
cercanas. Allí en lo alto, en un
edificio municipal, se encontraba su oficina, con inmensos ventanales abiertos
al paisaje.
Cada
mañana, después de un copioso
desayuno, emprendía el camino por la larga
cuesta, tiritando a causa del frío húmedo de la mañana.
La
dueña de la residencial, una
alemana grandota y rolliza de nombre Helga, lo acompañaba siempre hasta la
puerta, repitiendo diariamente el mismo ritual:
-Hasta
la tarde joven, tenga cuidado con la lluvia, acuérdese que Ud. no está acostumbrado...
El
se iba meditando acerca de lo que había querido decir la rubia matrona
y luego de recorrer un par de cuadras, siempre olvidaba aquella recomendación extraña.
Aquella
mañana el cielo amaneció encapotado. Las
intermitentes ráfagas de viento del
norte, acompañadas de esporádicos goterones, hacían presagiar el temporal
que se avecinaba.
Se
disponía a salir a la calle,
cuando la Sra. Helga lo detuvo:
-Joven, está a punto de llover, mejor sería que no saliera. No olvide que Ud. viene del norte y no está acostumbrado.
-Joven, está a punto de llover, mejor sería que no saliera. No olvide que Ud. viene del norte y no está acostumbrado.
La
miró con extrañeza, sin entender.
-Señora, no entiendo lo que
me quiere decir. Está bien que yo venga del norte, pero creo que tendré que acostumbrarme a
salir con lluvia.
Diciendo
esto traspuso la mampara de vidrio de la entrada de la casa y salió a la calle.
Alcanzó a vislumbrar la figura
de la Sra. Helga, con su rostro pegado a los vidrios de una ventana, observándolo alejarse.
Empezó a caminar con rapidez
calle arriba. Las ráfagas de viento lo hicieron estremecerse de frío.
De
pronto los goterones aislados, se convirtieron en una copiosa lluvia.
Sonrió divertido, jugueteando
con las gruesas gotas de agua que empezaban a empaparlo.
La
lluvia arreció violentamente, convirtiéndose en una cortina
blanquecina, que caía con un sonido violento y sostenido.
El
agua empezó a rebotar en su rostro
y en sus manos. Se sintió incómodo, una extraña sensación de desasosiego lo
dominó.
Apuró el paso, la lluvia lo
enervaba. Quería llegar pronto a un
lugar seco y protegido.
Miró sus manos y un escalofrío de miedo recorrió su espina dorsal Un líquido lechoso color
carne se desprendía de su piel. Observó con mayor detención, acercando las manos a
su rostro. Pudo comprobar que las huellas de su piel estaban borrosas.
Un
grito de terror escapó de su boca. Comprendió de golpe el significado
de las advertencias de la Sra. Helga. La intensa lluvia estaba diluyendo su
cuerpo.
Dominado
por el horror de la situación, empezó a correr de regreso a la
residencial, en busca de refugio.
Sintió sus piernas embotadas y
fofas. En medio de un paroxismo de terror, vio como una substancia pastosa y
blanquecina fluía desde el hueco de sus
pantalones y embadurnaba sus zapatos.
Volvió a contemplar sus manos.
Ahora estaban convertidas en dos masas informes, en las cuáles apenas se distinguían unas protuberancias
amorfas, que habían sido sus dedos.
Sus
piernas, convertidas en dos blandas columnas, ya no lo sostuvieron. Cayó de bruces en la vereda,
mientras su cuerpo iba perdiendo su forma y se convertía en un gran charco de
color rosáceo.
En
sus últimos instantes,
percibió como su ser se estiraba
y fluía derramándose hacia una
alcantarilla cercana.
Su
yo se mezcló con el agua barrosa,
mientras la lluvia inclemente azotaba sus ropas desinfladas y vacías.
Después de un rato, la lluvia
empezó a declinar. Pronto
escampó y el manto de nubes se
rasgó, dejando entrever un
sol brillante y frío.
En
aquel momento, llegó corriendo la Sra. Helga, provista de un paraguas rojo de
gran tamaño.
Al
ver las ropas desparramadas en la vereda, la mujer lanzó un grito y se arrojó de rodillas junto a
ellas, sollozando.
-¡Pobre muchacho!. Yo se
lo advertí y nunca me quiso hacer
caso. Los nortinos no entienden lo fuerte que llueve aquí en el sur.
বৃষ্টি
প্রাক-শরতের কনকনে ঠান্ডা এক সকালে সে ট্রেনে করে পৌঁছোল দক্ষিণের এই পরিচ্ছন্ন শহরে। কামরার জানলা দিয়ে শহরটাকে প্রথম দেখলো সে। একপাশে ধূসর সাগর অন্যপাশে আর শতাব্দী প্রাচীন জঙ্গলের মাঝে যেন শহরের ঘরবাড়ি সব উঁকি দিচ্ছে। তাজা বাতাস বুক ভরে টেনে নিল সে। উত্তরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়েই চাকরিটা পেয়ে গেল, তাই দক্ষিণের এই শহরে আসা। বাইশ বছরের যৌবনের দম্ভ, তার জীবনের রাস্তা শুধু সামনের দিকে দৌড়োয়। ছবির মতো সুন্দর একটা কাঠের বাড়ি ভাড়া নিল সে। চারপাশে ছোট ছোট পাহাড়, দেবদারুর বন আর নীল-সাদা-লাল ফুলের মেলা বসেছে।
জায়গাটা ভীষণ নিস্তব্ধ আর লোকজনও বেশ হাসিখুশি। অফিসটা তার বাড়ির এতই কাছে যে পাহাড়ি রাস্তাটা দিয়ে রোজ প্রায় দৌড়ে অফিস যেতো সে। সিমেন্টের তৈরি অসংখ্য সিঁড়ি সাপের মতো এঁকেবেঁকে পাহাড়ে উঠে এসপ্লানেডে গিয়ে শেষ হয়েছে। সেখান থেকে নদীর মোহনা আর ছোট ছোট দ্বীপগুলো ছবির মতো মনে হয়।
ওখানেই মিউসিপালিটির একটা বাড়িতে তার অফিস। বড় বড় জানলার ফ্রেমে সমস্ত নৈসর্গিক শোভা যেন আটকে রয়েছে। রোজ সকালে ভরপেট প্রাতঃরাশ সেরেই ঐ রাস্তা ধরে হাটত সে। সকালের স্যাঁতসেঁতে ঠান্ডায় তার গায়ে কাঁপুনি ধরে যেতো। ওর বাড়ির মালকিন এলগা নামের গোলগাল জার্মান ভদ্রমহিলা রোজ দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে আসতেন আর নিয়মমাফিক রোজ বলতেন: "সন্ধেবেলা দেখা হবে তাহলে। তবে বৃষ্টি থেকে সাবধান। এখানকার বৃষ্টিতে তুমি তো অভ্যস্ত নও..."
এলগা ঠিক কি বলতে চাইছেন ভাবতে ভাবতে সে অনেকটা রাস্তা পেরিয়ে যেতো, কয়েকটা পাথর ডিঙোবার পরই ওনার অদ্ভুত কথাগুলো সে বেমালুম ভুলে যেতো।
সেদিন সকাল থেকেই আকাশ মেঘে ঢাকা, দমকা উত্তুরে হাওয়ার দাপট আর বড় বড় জলের ফোঁটা আসন্ন ঝড়ের পূর্বাভাস দিচ্ছিল। সে বেরোবার সময় এলগা তার পথ আটকালেন:"বাছা,
এখনি বৃষ্টি নামবে। এখন নাইবা বেরোলে। তোমরা উত্তরের লোকেরা তো এমন বৃষ্টির সাথে পরিচিত নও।"
এ কথার মাথামুন্ডু বুঝতে না পেরে সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
"
ম্যাডাম,
আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি উত্তরের লোক ঠিকই, তবে এখানকার বৃষ্টির সাথে তো আমাকে মানিয়ে নিতেই হবে।"
কাঁচের দরজা ঠেলে রাস্তায় নেমে পড়ল সে। পিছন ফিরে দেখল, এলগা জানলার শার্সিতে মাথা রেখে তার যাওয়ার পথেই তাকিয়ে রয়েছেন। হাড়কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়ায় কাঁপতে কাঁপতে সে পাহাড়ী রাস্তায় প্রায় দৌড়ে উঠতে আরম্ভ করল। হঠাৎ সেই বড় বড় জলের ফোঁটা অঝোরে ঝরতে শুরু করল। তার শরীর বেয়ে নেমে আসা বৃষ্টির ফোঁটা নিয়ে খেলতে খেলতে সে হেসে উঠল। বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে মাতোয়ারা চারপাশ। বৃষ্টিধারা তার মুখে আর হাতে পড়ে চলকে উঠছিল। অদ্ভুত এক শিরশিরানি আচ্ছন্ন করে ফেলল তাকে। হাঁটার গতি সে বাড়িয়ে দিল। বৃষ্টি যেন তাকে স্নান করিয়ে দিচ্ছিল। সে আশ্রয় খুঁজতে লাগল ত্রস্ত পায়ে। কি মনে হতে সে নিজের হাতের দিকে তাকালো। তার শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের হিমেল স্রোত বয়ে গেল: তার শরীর থেকে দুধের মতো পাতলা মাংসের রস বেরিয়ে আসছে। সে থমকে দাঁড়িয়ে আরো ভালো করে দেখল। হাত ছেড়ে মুখের দিকে যেন এগিয়ে আসছে! তার মনে হলো, চামড়াটা কেমন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে তার গলা থেকে অস্ফুট আর্তনাদ বেরিয়ে এলো। এতক্ষণে সে এলগার কথার মর্মোদ্ধার করতে পারলো। বৃষ্টির দাপটে তার শরীর গলে যাচ্ছে। সে আতঙ্কে
বাড়ির দিকে দৌড়তে শুরু করল। তার পা দুটো যেন নরম তুলতুলে হয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে দিশেহারা সে দেখল তার প্যান্ট গলে বেরিয়ে আসছে এক চটচটে সাদা রস আর ধুইয়ে দিচ্ছে তার জুতো দুটোকে।
আবার সে নিজের হাতের দিকে তাকালো। নাহ্, এখন হাত দুটোর কোনো আকার নেই। আঙুলগুলো অনিয়তাকার স্ফীতি হয়ে উঠেছে। পা দুটো আকারবিহীন স্তম্ভে রূপান্তরিত হয়েছে। রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে গেল সে। ইতিমধ্যে তার শরীরটা একতাল মাংসপিন্ডে পরিণত হয়েছে।
জীবনের শেষ মুহূর্তে সে দেখল তার শরীরটা সম্পূর্ণ গলে গিয়ে নর্দমার দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে। শেষে তার শরীরটা কাদায় মিশে গেল। আর অবিশ্রান্ত বৃষ্টি তার ফাঁপা জামাকাপড় ধুইয়ে সাফ করে দিল।
কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টির তীব্রতা কমে এল, আকাশটাও বেশ দ্রুত পরিষ্কার হয়ে গেল। মেঘের চাদর ছিঁড়ে এক ঝলক উঁকি দিল সূর্য। এই সময় একটা বড় লাল ছাতা হাতে এলগা হন্তদন্ত হয়ে এলেন। রাস্তার ওপর ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা জামাকাপড় দেখেই তিনি আর্তনাদ করে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লেন: "বেচারা! কতবার বারণ করলাম! কিন্তু ছেলেটা আমার কথা কানেই তুললো না। উত্তরের লোকেরা বুঝতেই পারে না এখানে এই দক্ষিণে কেমন মর্মভেদী প্রবল
বৃষ্টি আসে!"
মন্তব্যসমূহ