অন্যগদ্যঃ তৃতীয়াংশ ।। শিমুল মাহমুদ ।। শ্লোগান ।। এন্টফিকিশন : ৬ষ্ঠ কিস্তি।।

শিমুল মাহমুদ
শ্লোগান
এন্টফিকিশন : ৬ষ্ঠ কিস্তি
তৃতীয়াংশ 


কবি রহমান হেনরী বুঝতে পারেন, তাকে একটা কিছু লিখতে হবে এবং এখনই; এবং এখনই তা গণজাগরণ মঞ্চের বিশাল সম্মিলিত নিঃসঙ্গতার সাথে ভাগ করে নিতে হবে এও আরেক নিঃসঙ্গতা; যে নিঃসঙ্গতা একটি স্বাধীন দেশের যাবতীয় অন্যায়কে রুখে দিতে মিলিত হতে পারে পরম মমতায়; সেই মমতা আর গণজাগরণের মোমের আলোয় সেই নিঃসঙ্গতা স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে অনন্ত সবুজের, উর্বর শস্যক্ষেত আর রোদঝলমলে এক একটি মায়ের মুখ এক ঝাঁক কৃষিরোদ প্রান্তর কাঁপছে থিরথির, থেমে থেমে, তারপর ঘনঘন চিরায়ত পাখিরব, অনিবার্য তোমার ঔরসজাত শস্যশাবক, হলুদ কৃষিরোদ; লাঙলের ছায়া ধরে হেঁটে চলে প্রিয় জাহানারা ইমাম চত্তর কে গাইবে বিজয়ের গান? হেঁটে যায় বয়সের ছায়া কে আমাদের জন্য বহন করে নিয়ে আসবে চাষাবাদ সংবাদ? চাষানুকুল সংবাদ কলোনি-স্বাধীন চাঁদ কি ভুলতে পেরেছে, গোলামী স্বভাব? কে করবে বিচার রাজাকার আর তার উত্তরজীবীদের? মনোবিদ্যা শেখা হয়নি তোমার, ঝাঁক বাঁধা মানুষের সম্মিলিত আওয়াজ তাহলে কী বইতে শুরু করেছে চিরায়ত মানবের অনুকুল বায়ু? বায়ু কি দিক বদলালো? অথবা গতিসূত্র?
ফেইসবুকে কবি রহমান হেনরী লিখলো, গ্রাফ কাগজে ডট-চিহ্ন দিয়ে মানচিত্র আঁকার রীতিটা বেশ পুরোনো এবং সহজতম বহুদিন কেটে গেল, স্বদেশের মানচিত্র আঁকি না আঁকা তো দূরের কথা, কতোকাল আমার দেশের মানচিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে মুগ্ধচোখে তাকিয়ে থাকবার ফুসরৎই পাইনি! অনেক বছর পর, টিভির পর্দায় চোখ রেখে বারবার দেখলাম, আমার শুকনো চোখেও জল এসে পড়লো শাহবাগ চত্বরে আমার ভায়েরা সমবেত, টিভি-ক্যামেরার টপভিউ থেকে মনে হলো, কয়েক লক্ষ মানববিন্দু দিয়ে আঁকা আমার মাতৃভূমি এবার সত্যিকারের একটা মানব-মানচিত্রে ফুটে উঠলো মমতা জ্বলে উঠলো দাউ দাউ শিখার মত প্রিয় বাংলাদেশ, তুমি আর শ্বাপদসংকুল নও

জাত গেল জাত গেলো বলে, একি আজব কারখানা আজব হাওয়া চারিদিকে আজিব মাইনষের ভিড়ভাট্টা কাটাইয়া উইঠা অবশেষে পুরান ঢাকার গলিটা চিনবার পারি মনে লয়, এইখানটায় কোরবান ব্যাপারি থাহে পরানের মানুষ, মিঠা লাগে ভাবতে ভাললাগে শিশুবেলা, বালকবেলারা সবাই মিলেমিশে ভেসে আসতে থাকে আলমডাঙ্গার লাল রেলস্টেশন থেকে হাজার কোটি আকাশ থেকে ভেসে আসে, ঝনঝন ঝাঁকবাঁধা নূপরের আওয়াজ আকাশের দিকে মুগ্ধ তাকিয়ে থাকি; স্বপ্নে পায় উড়ন্ত পায়রার ঝাঁকের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেল নেমে আসে তখন বাজিতপুরের জিকে ক্যানেলের ধারে দাঁড়িয়ে থাকি একা পেঙ্গার মাজায় কালো সুতোর সাথে বাঁধা ঘুঙুরের মিস্টি শব্দ; ঘুঙুর শব্দ তোলে নুনুর গোড়ায় আর তখন আমার খিদে পায় পা ছড়িয়ে দিয়ে খালের পাড়ে বসে থাকি, খাল নয়, কৃষিজীবী ক্যানেল; তখনও শেখের শাসন চলছিল দেশে আর যেদিন ১৫ আগস্টের রাত নেমে এলো, সেইদিন করিমন বিবির মাথার মধ্যে অনেকগুলো তেলাপোকা হাঁটাচলা শুরু করলে, আল্লা গো আমার শইলে বিচ্ছু, আতকা শইলের কাপড় টাইনা ছিড়া শুরু করলে গ্রামের আত্মীয় মানুষগুলা ওকে বাইন্ধা রাখবার পারে না; মাথায় গরম উঠলে মাথা ন্যারা কইরা বস্তা পিন্দাইয়া ছাইরা দেয় লাল রেল ইস্টিশানের উপর একটামাত্তর পোলা কোরবান চাইয়া থাকে আর হঠাৎ হঠাৎ মা মা কইরা চিক্কুর পারে
এই ঘটনারও তিন বছর পর যখন আমার সাথে করিমন বিবির রেল স্টেশনের উপর দেখা হইয়া যায়, মনে লয় করিমন বিবি আমারে চিনবার পারে; কাছে আসে, পরিচিত চোখ তুইলা তাকায়, শোনো সাহেবের পোলা, একখান খবর শোনো, গোপন খবর, কেউ জানবার পারে নাইকা এহনও, শেখ সাহেব শেখের বেটা বিটি বউ বেবাকতেরে রাইতে মাইরা ফালাইছে, কওন যাইতো না, আমি কারে কমু , কারে জিগামু, চুপ, তুমি হুনো নাইকা , কাউরে কইও না, মিনসেমাইনসের মাইর আমি দুদিন খাইছি আর তারপর করিমন বিবি কানের কাছে এগিয়ে আসে; ভয় পাওয়ার পরিবর্তে স্বপ্নাবিষ্ট আমি করিমন বিবি হনহন করে আলমডাঙার লাল রেলস্টেশনের উঁচু প্লাটফরম ধরে সোজা উত্তর দিকে যেখানটায় রেলস্টেশনের উঁচা লাল গোডাউনটা দেখা যায় সেইদিকে, সেই পাকিস্তান আমলেরও আগে ব্রিটিশদের বিশাল লাল রেলগোডাউনটার দিকে হাঁটতে থাকে; যেন বা বিলাতি কয়েদখানার ভেতরই করিমন বিবির যাবতীয় ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আর তখন সদ্য ডাক ছাড়া একটা লাল মালগাড়ি খোড়াতে খোড়াতে গড়াতে গড়াতে আলমডাঙ্গার লাল রেলস্টেশনের দিকে আসতে থাকলে কলোনি-স্বাধীন আকাশের দক্ষিণ দিকে প্রিয় ঝাঁকবাঁধা পায়রার পাগুলো জড়িয়ে যেতে থাকে তখন পায়রাগুলো সবাই গলায় ভয় ভয় চিৎকার তুলে ধানবিহীন জমিগুলোতে হুটোপুটি খেতে খেতে আছড়ে পড়তে থাকে কলোনি-স্বাধীন আকাশটা, আকাশের দুএক টুকরো কলোনি-স্বভাব মেঘ যেন বা খানিকটা অবাক হবার পর বিরক্ত হয়
শাহবাগের বাইরে, দূর থেকে বিস্তর বুদ্ধিজীবী বিরক্ত হন তারা নিরপেক্ষ মাটি খোঁজেন কিন্তু নিরপেক্ষতার ভেতর সেকুলার, অসাম্প্রদায়িক অথবা ধর্মনিরপেক্ষতার শাঁস ঢোকানো আছে কিনা তা ঠিক বোঝা যায় না অথচ তারা যেন বা ভাঙা দাঁতের ওপর ক্যাপ বসানো যুক্তির হাড়িতে শাঁন দেওয়ার সুযোগ আবিষ্কার করেন অথচ বুদ্ধিজীবীদের এহেন যুক্তিতর্কের বাইরে, তের বছর আগে কোরবান মিয়া তার মা করিমন বিবিকে আলমডাঙার লাল রেলইস্টিশন থেকে চিরতরে হারিয়ে ফেলে পুরান ঢাকার ভূতের গলির ভিতর ঢুকে পড়ে; আর তখন ভূতের গলির লেখক শহীদুল জহিরের শইলে ভূতের গলির ভূত ভর করলে আমি শহীদুল জহিরের গল্পপাঠে বিরক্ত হই; হালায় মনে লয় কবিতা লেখা চোদাইবার না পাইরা এই রকম আবোল তাবোল লিখবার লাগছে আমাকে শহীদুল জহিরের মতো ঢাকাইয়া বোল পাইয়া বসলে, আমি কোরবানকে খুঁইজা পাই, বিখাউজ কোনকার, কোন গাতায় বইআ হোলের বিচি খাউজাও? খুইজ্জা পাওন যায় না ক্যালা?
আর এদিকে শাহবাগচত্বরে বুদ্ধিজীবীরা বিরক্ত হলে যুক্তিতে ধার দেবার সুযোগ পেয়ে যায় সবাই মিথ্যাচারের বিচারে শুধু জামাত-শিবিরকে রাখলে এটা ভয়ানক অবিচার হবে বরং বুদ্ধিবৃত্তিক লেখালেখি দিয়া মিথ্যাচর্চা বেশি দেখা যায় বামদের ভিতর; গোল্লায় যাওয়া বাম অথবা চীনাবাদাম মার্কা বাম আহমদ ছফা হয়তো ভালো বলেছিলেন, কমিউনিস্টদের ব্যক্তিগত ত্যাগ তিতিক্ষা এত অধিক যে শ্রদ্ধা না করে পারা যায় না কিন্তু তারা যে মিথ্যার চর্চা করেন, তার জন্য লজ্জিত এবং দুঃখিত হওয়ার প্রয়োজন তারা আদৌ অনুভব করেন না খুব সম্ভবত সারা দুনিয়াতে এবং প্রচারের মধ্যবর্তী যে ফারাক, তার জন্যই কমিউনিজমের ভরাডুবি ঘটলো
রাজনীতিতে অভ্যস্তদের ভেতর ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স প্রবল মর্যাদার প্রশ্নে তারা বেশ কৌতুক উদ্দীপক শাহবাগেও এরা আছেন এদের অস্থিরতা, এদের গোপন শলাপরামর্শ, ষড়যন্ত্র; তবে তারা জানেন না যে, এই জাগরণের ভেতর রয়েছে রাজনীতি অপেক্ষাও অতিরিক্ত এমন কিছু যা তরুণ যুবা বৃদ্ধ বিগত প্রজন্ম নতুন প্রজন্ম সবাইকে বিয়াল্লিশ বছরের ক্ষোভ থেকে একই স্রোতে টেনে এনেছে এই স্রোতের টানে মুখ খুলতে বাধ্য হলেন ইহকাল এবং পরকালের যোগসূত্রের দায়িত্বেরত ধর্মভিত্তিক দলের আমির সাহেব আমার ধর্ম সেরা, সুতরাং অন্যগুলারে মাইরা ফেলো, এক ধর্ম এক দল থাকলে আবার সাম্প্রদায়িকতা কিয়ের আমির সাহেবের কাছে জেলখানার ভেতর নিজেকে নিরাপদ মনে হলে তিনি  ঘুমের ভেতরে খোয়াব প্রাপ্ত হন আমির সাহেবের ঘুম প্রগাঢ় হয়ে ওঠে ঘুমের মধ্যেই আমির সাহেবের চেহারা মোবারকে নুরানি ঝিলকাইলে সেখানে এক ধরনের প্রশান্তির কম্পন অনুভূত হয়; বন্ধ চোখের পাতার নিচে আইবল ঘুরপাক খায়, আর তখন তার সুরেলা মধুর গলা থেকে বেহেশতের আওয়াজ বাইর হয়, ওহে দুইনার মানুষসকল শুনো, মনোযোগ দিয়া শুনো, কান লাগাইয়া শুনো, বেয়াদবি করিও না, মন লাগাইয়া শ্রবণ করো, আমরা সারাজীবন অনেক পাপ করিয়াছি, অনেক মিথ্যা বলে মানুষকে ধোঁকা দিয়াছি; ’৭১ কে ধোঁকা দিয়াছি; এখন আমার মৃত্যু সামনে; আমি জানি জনতার মঞ্চে আমার ফাঁসি হয়া গেছে; আর ফাঁসিই আমার একমাত্র উপযুক্ত শাস্তি; হে আমার অনুসারিরা তোমরা শান্ত হও; নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করিয়াছি; ভেবেছি নিজেকে শুধরাবো, পারিনি; তোমাদের ধোঁকা দিয়াছি; তোমরা আমারে চাঁদে দেইখাছো; চাঁদতুল্য নারীসঙ্গ থাইকা তোমাদের দূরে থাকতে বইলা আমি নিজে দুইনার নিয়ামত দেদারসে ভোগ করিয়াছি; অথচ তোমাদের এই নেয়ামত থাইকা বঞ্চিত করিয়াছি; ওহে দুইনার মানুষ আমারে মাপ কইরা দিও, আমারে তোমরা ভুইলা যাইও; তোমাদের সামনে লম্বা ভবিষ্যত পইড়া আছে; আমার ফাঁসির পর তোমরা সঠিক পথে চলবার পথ খুঁইজা বাইর করবা, এই আমার অন্তিম ইচ্ছা
আমির সাহেবের এই অন্তিম ইচ্ছা যখন শাহবাগে ঢাউর হইয়া গেলো তখন আমরা এক নতুন যুদ্ধের ঘোষণা শুনতে পেয়ে চমকে ওঠার পরিবর্তে আটঘাট বেঁধে সাইবার যুদ্ধে যোগ দিলাম জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যখন সাংবাদিক, তখন কালোবাজারিদের বানানো গণমাধ্যম ডেড হয়ে যায় দুর্নীতি আক্রান্ত পচাসাবানতুল্য পুলিসি তদন্তের প্রতি জনগণ আস্থা হারায় ঔপনিবেশতাড়িত বিচারবিভাগ বুড়ো শকুনের মতো বুঝতে ব্যর্থ হয় শাহবাগের প্রকৃত তাৎপর্য বিচারবিভাগ কি রাজপথ নিয়ন্ত্রণ করতে ইচ্ছুক? শাহবাগ আর ইতিহাস কি সমার্থক? অজস্র ডেড মানুষেরাও এই ইতিহাসে ঢুকে যেতে শুরু করেছে ডেড মানুষগুলো হয়তো আবার প্রাণ ফিরে পাবে ব্লগার-ভার্চুয়াল কমিউনিটির শক্তি বাড়ছে অথচ ঘরের খুটির মতোই অথবা বর্ষাতি ছাতার পালিশ দেওয়া কাঠের হাতলের মতো সমাজের ডেড গার্জিয়ানরা বুঝতে পারছে না যে তারা ডেড; কেন-না এখনও তারা সমাজের খুটি আর এইসব খুটি উপড়ে ফেলার পরিবর্তে দূরে বসে যারা শাহবাগকে জ্ঞান দিচ্ছেন, তাদেরকে শাহবাগ খারিজ করে দিয়েছে চিপসের রঙরঙে ঠোসের মতো আর মনে রাখবেন রঙরঙে ঠোসওয়ালাগণ, শাহবাগের তারুণ্যই পাহাড়া দেবে গোটা বাংলাদেশ এই কথা বুঝতে না পারার অর্থ, এই কথা ভুলে থাকার অর্থ, আপনি কালোবাজারির টাকায় প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমে প্রেসরিলিজ দিয়ে স্বাধীন গণমাধ্যম কিনে ফেলার খেলায় অথবা টক শোতে মত্ত থেকে রেভিউলিশন ঘটিয়ে ফেলেছেন বলে ভাবছেন আর এত কিছু বুঝেও যদি হে শাহবাগ তুমি পিছু হটে যাও, তবে ইতিহাস তোমাকে ক্ষমা করবে না বিয়াল্লিশ বছরের পাপ কাঁধে নেবার শক্তি সাহস হারিয়ে ফেল না সাহস সঞ্চয় করে মুজিববাদি সানোয়ার সিরাজ রংপুর ফিরে এসে ফেইসবুকের আলোকদেওয়ালে লিখলেন, টানা দিন শাহবাগের সমুদ্রগর্জনে ভেসে ছিলাম বাড়ি ফিরিনি চাকরিতে যাইনি ঘুম ঘাম একাকার করেছি কিন্তু শাহবাগের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই মুহূর্তে উদ্বিগ্ন যতটুকু দৃষ্টিভঙ্গি বোধশক্তি দিয়ে শাহাবাগকে পর্যবেক্ষণ করেছি তাতে অখুশি উদ্বিগ্ন হবার মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে সেই বিস্তারিত বর্ণনা একদিন ইতিহাস নিজেই লিখবে এখন শুধু এতটুকুই কথা, শাহবাগের মাটি ছাড়া যাবে না বারডেম, পিজি, ডিএমসি কোনো দোহাই দিলেও না
আর আমরা শাহবাগবাসী, শাহবাগের আমজনতা কি উদ্বিগ্ন? শাহবাগ কি আওয়ামি পাণ্ডাদের খপ্পরে? এইরকম জল্পনা কল্পনা যখন চলছিল তখন শাহবাগের চরিত্র হননের আয়োজনে স্বাধীন বাঙালিদের মধ্যে একদল দেশে দেশে প্রজন্মচত্বরের দুর্গ গড়ে তুলতে পেশিশক্তির পরীক্ষায় যাতে কোনোক্রমেই পিছিয়ে পড়তে না হয় সেই জেদ এবং কী এক জৌলুসে মিছিলের আগের সারিতে হাতে হাতে কব্জিতে কব্জিতে নারীতেপুরুষে লৌহশিকল রচনা করে পাকা পথ কাঁপিয়ে মিছিলের আওয়াজ রাস্তার পাশে দাঁড়ানো বৃক্ষের শাখাগুলোকে বিব্রত করে এগিয়ে যেতে থাকলে গাছেরা সহসা বুঝে যায় মানুষের লোকালয়ে  রক্তপাত অনিবার্য এবং তারপর আমাদেরকে রক্ত দেখতে হয়েছিল; যে রক্তের জন্য ওরা ভেতরে ভেতরে ঠিক কীভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল তা তারা কখনোই ঠিক ঠাওর করতে পারেনি তখনও অথচ কেন্দ্রিভূত পূঁজি থেকে কালেক্ট করে নেওয়া স্কলারশিপধারী রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব সানোয়ার সিরাজ আপনি জানেন না, গণজাগরণের অর্থ আর মুজিববাদের অর্থ সমার্থক নয়; যদিও বঙ্গবন্ধু আমাদের পিতা; আমরা জানি পৃথিবীর আর সব মহান পিতাদের মতো জাতির পিতাও মরণক্ষম এবং তিনিও ভুল করেন সমস্যা এখানেই ইতিহাস থেকে আলো সংগ্রহ করে আমরা আজও আমাদের পথ নির্মাণ করতে পারিনি এবং আমরা আমজনতা এখনও পরিষ্কার নই আসলেই কী ঘটতে চলেছে অথবা কী ঘটতে যাচ্ছে শাহবাগে? অথবা সমগ্র বাংলাদেশে?
ওরা কারা বোরখার তল দিয়ে হেঁটে যায়, ঝাটা উঁচিয়ে? ওরা কারা, কোন অলৌকিক নির্দেশে লক্ষ কোটি সবুজ ডালপালার অক্সিজেন অস্বীকার করে হাজার বৃক্ষ পড়ে থাকে ভূমিতে, পাকা রাস্তায় অথবা লাল ইটে মোড়ানো রাস্তার বুকে? কেনই বা মৃতের সংখ্যা এক থেকে ক্রমাগত শত; শত থেকে শত শত ছাড়িয়ে গেলে আমরা কি তখনও ভাবতে থাকি প্রতি বছরের মতো ঈদফেরৎ মানুষগুলোর বুঝি জাহাজডুবি হলো? তখন কি বাংলাদেশের কোনো সাংবাদিক বিক্রি করে ফেলেন নিজেকে কালো পূঁজির কাছে? তা না হলে কারো কারো স্ট্যাটাসে কেন ক্ষোভ ঝরে পড়ে? ‘আমি সাংবাদিক হওয়ার জন্যেই জন্মেছি; ঢাবিতে মেরিট প্লেসে ১২৯ হওয়ার পর সব ছেড়ে সাংবাদিকতা পড়েছি; দুভাই সিডনী থাকে; পারিবারিক ব্যবসা আছে; আমি ভেসে আসা ফ্যামিলির সন্তান নই; আমি বিদেশ পাড়ি জমাই নি; আমি আমার চোখ কান আর বিবেক খোলা রেখে কাজ করি’... আমরা তার স্ট্যাটাস পাঠে বুঝতে পারি তার শেকড় পূঁজিসংশ্লিষ্ট তিনি কার পক্ষে কাজ করছেন

মন্তব্যসমূহ