গ্লিসারিন
সুদেব ভট্টাচার্য
একদা ডাকসাইটে অভিনেত্রী রমাদেবী এখন
পোড় খাওয়া মন্ত্রী।সামনের ইলেকশন-এ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। সম্ভাবনাও তুঙ্গে। নিজের একা হাতে লড়াই করে
পার্টি তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন। কম খেসারত দিতে হয়নি অবশ্য তাকে। অনিমেষের সঙ্গে বিচ্ছেদ
করে শশুরবাড়ির পাট চুকিয়ে যখন এক কাপড়ে বেরিয়ে এলেন তখন তিনি খ্যাতির মধ্য গগনে। কেউ কেউ নাক সিটকে বলেছিল "হিরোইনদের
লাইনে এসব হয়েই থাকে!" বাবাই তখন খুব ছোট। বছর দুয়েক হবে । বাবার সাথেই রয়ে গেল বাবাই। অভিনেত্রী মায়ের স্নেহ
পাওয়ার কপাল করে আসেনি কিনা।
এরপর আরো দশটা বছর রুপোলি পর্দায় রাজত্ব
করে,অভিনয় জগতে ইতি টেনে রমাদেবী পলিটিক্স-এ চলে আসেন। লেখালেখিও শুরু করেন নারীদের
পত্রিকায়। নিজের হাতে পার্টি গঠন, অতঃপর মুখ্যমন্ত্রী আর এখন প্রধানমন্ত্রীর
পদের জন্য লড়াই। চড়াই উতরাই যা ছিল তা একরোখা
মনোভাব নিয়ে পেরিয়ে এসেছেন খুব অনায়াসেই। বাবাই প্রথম দিকটায় আসতো দেখা করতে
মায়ের সাথে.. মাধ্যমিকএর পর থেকে যাতায়াত থামল। রমাদেবির ফোন লিস্টে অসংখ্য
কন্টাক্ট-এর নিচে চাপা পরে গেছিল 'বাবাই' নামটা। ব্যাস ওটুকুই! এছাড়া ছেলে-মায়ের অস্তিত্ত্ব দুজনের টের পাবার অবকাশ খুব কম-ই ছিল।
আজ পয়লা শ্রাবন। আজ সকালে বাবাই মারা গেছে
তিনদিনের জ্বরে। বাইরে চূড়ান্ত বৃষ্টি... বেলি ফুলের গাছগুলো আছড়ে পড়ছে পাগলের
মত রমাদেবির বারান্দায়। তবে বৃষ্টির ছাট কাঁচ ভেদ করে ঘরে
এসে পৌছছে না। একটু
আগেই খবরটা এসেছে রমাদেবির কানে। বাবাইয়ের শরীর খারাপের খবর জানতেন
না রমাদেবী। তাই খবরটা পেয়ে চুপ করে
ছিলেন বেশ কিছুক্ষণ। সত্যি বলতে তার মনে ভেতরে
খচখচ করছে কিছু একটা যেন। একটা অজানা অস্বস্তি। অথচ, তিনি আলবাত জানতেন,
বিশ্বাস করতেন, এরকমটা কখনই হবার নয়।
তিনি ভুল জানতেন।
বহুক্ষণ দোটানার পর অবশেষে তিনি যাবেন
বলেই স্থির করেছেন..তবে বাড়িতে নয়,সোজা নিমতলায়। গাড়ি বের করতে বলে দিয়েছেন। কে জানে কোন মিডিয়া আসবে! বিশেষ করে পেজ
থ্রীড় রিপোর্টার আর বিরোধী দলের কুত্তাগুলো তো ওঁত পেতেই রয়েছে। পান থেকে চুন খসলে ফলাও
করে ছাপবে পার্সোনাল স্কাণ্ডল। এরা পুরনো কাসুন্দি ঘেটে পায় কি?
স্নান করে রমাদেবী ঘিয়ে রঙের তসরটা
পড়লেন পাটপাট করে। আয়না দেখে নিলেন একঝলক। চোখের তলাটা কি বেশি ফুলেছে? রে-ব্যান-এ ঢেকে যাবে ঠিক। গাড়ি এসে গেছে। রমাদেবী
বেরোতে গিয়েও কি একটা মনে করে ফিরে এলেন আবার। ড্রয়ার টেনে একটা শিশি
বের করলেন। জলের মত স্বচ্ছ তরলটা ঝটপট চালান হলো পার্স-এর ভেতরে।
অভিনয়টা ছেড়েছেন বহুযুগ আগে! বলা যায় না,
যদি লাগে.....
মন্তব্যসমূহ