।। গুচ্ছ কবিতা ।। মাসুদার রহমান ।।

ডাকবাংলো

দোলনাটি দুলে যাচ্ছে । নিঃসঙ্গ ।

অদ্ভুত কেয়ারটেকার বিশাল গাছের নিচে
দড়ির খাটিয়া পেতে ঘুমিয়েছে

নিচে ওর কুকুর ভুলুয়া

অচমকা মাথা টেনে উঠে বসে কুকুরটি তাকিয়ে আছে
দূর সড়কের দিকে । কিছু রহস্যের দিকে...



পথের দুপাশে ঘনগাছপালা । তার পাশ দিয়ে যেতে
মনে হলো- একেই তাহলে বলে
সবুজ ইশারা?
অথবা অরণ্যের জাদু ? কিংবা দূরের মায়া !

আরওপরে স্পষ্ট হবে; বনের গভীরে গোপনক্ষত এবং যা অনিরাময়যোগ্য
সেই ডাকবাংলো

আমাদের গাড়ির গতির সঙ্গে উড়তে থাকা ধুলো ও শব্দে
খুলে যাচ্ছে তার প্রতিটি দরজা-জানালা

জেগে উঠছে কেয়ারটেকার ও তার চঞ্চলতা

অভ্যর্থনায় নড়ে উঠছে কুকুরের লেজ



 
পাকশালা  উনুনে আগুন জ্বলছে । দুপুরের ভুঁড়িভোজ
মন্দ হবে না

কাটা মুরগির পাশে ইস্পাতের ছুরি; তার রক্তমাখা জিহবার দিকে
তাকিয়ে রয়েছে দাঁড়কাক

কাক বলতেই তা ট্রেড হিউজের

হিউজ ও সিলভিয়া প্লাথ তাহাদের মধুচন্দ্রিমায়
এই ডাকবাংলোয় এসেছিল কি না আজ আমরা জানি না

আমরা জেনেছি;স্টোভের আগুনে যদি কবির শরীরও পোড়ে
কবিতা পোড়ে না



দুপুরের বনের মধ্যে বিকেলের ছায়া দুলে আছে
অদ্ভূত নির্জনতা
পাখিদের চুপচাপ ! নতুন আগন্তুকে সন্দেহ বুঝি ?

এখন পাখির গানে ভেসে যাচ্ছে বন

বাংলোর জানালা খুলে সবুজ পাতার ফাঁকে
হাল্কা কুয়াশা মোড়া দূরের গির্জার চূড়া দেখা যায়

শুকনো পাতার ওপরে গিরগিটির ছুটে যাওয়া

দূরে কোথাও যেন পাহাড়ি ঝর্ণার শব্দ একটানা

কাঠঠোঁকরার ঠকঠক
একেই বলে কি না অরণ্যের ডাক !


মাউথঅর্গান বাজানো পাখি ডাকছে ; দূর পৃথিবীতে
হারিয়ে যাওয়া
সন্ধ্যা নামেরএক পরশি বোনকে

দিনশেষে এখনও তাই সন্ধ্যা নেমে আসে

গাছের আড়ালে কে ? ছায়ামূর্তি !

রহস্য উন্মোচনে নেমেছে কি শার্লকহোমস

কাঁপছে বাতাসে উঁচু ঘাসবন
সাপের জিভের জেরক্স


 
অ্যালানপোরকালোবিড়ালঅন্ধকারে
লাফদিলো

দোলকচেয়ারখানাদুলিওনামোমআনো
রাইটিংটেবিলেরউপরদেয়াশলাইআগুনজ্বালাতেগিয়ে
গোঁফপুড়েগেছে

ডাবলজানালাখোলাএকটানাঝিঁঝিঁকথা

পড়েআছেকবিরপান্ডুলিপিচাঁদেরগরল


আপেলকাটাছুরি  আর ডাকবাংলোর ঘরে বিস্তারিত আয়না
জেগে আছো?

ঘুমিয়ে পড়ার পর মেয়েটিকে
নিজহাতে নৃশংস খুন করবো আমি

এবং মৃত্যুপরনির্জন বাংলো জুড়ে মেয়েটির প্রেত-আত্না
কীভাবে দাপাবে

অন্ধকারে শোন তার
ফিসফাস...

রিহার্সেল চলছে

(রচনাকালঃ ০৫.০৭.২০১৫- ১২.০৬.২০১৫)


মন্তব্যসমূহ

মাসুদার রহমান বলেছেন…
এখনো আছে!