যে জন রহস্য জানে ।। তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় ।।

যে জন রহস্য জানে   
তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়


যে কোনও রাত্রিই কেন রহস্যের মতো করে একা...
মনে হয় সম্পর্কের শূন্যতায় ভেসে যেতে যেতে
তোমাকে নিশ্চই আমি উপহার দেব একদিন-
উৎসের কাছে বসে তার সেই সব ব্যাথাগুলি
চুঁইয়ে পড়বে যেন ব্যার্থতার স্বাভাবিক বোধে

যে কোনও শহর আজ রাত্রির মতো বিহ্বল
তোমাকে দেখাব বলে শহরের আলো-ছায়া জুড়ে
সাজিয়ে রেখেছি রাত, রজনীর প্রীতি উপহার...


জানালায় হাত রেখে প্রতিদিন ঝরে যেতে থাকি
রহস্য পোড়ায় বুক গল্পের হাওয়াগুলো ডাকে-
যেন সে নিজের নয়, তাই সব বেদনা কুসুমে
সে আমাকে ডেকে চলে, অবিরাম আমাকে নাড়ায়

তোমার বিষয়ে কিছু লুকোনোর ছিল না আমার
গল্পের গ্রামান্ত পথ নিজস্ব বিশ্বাসে একেবেঁকে
আমাদের রক্তপাত মুছে দিত শহরের মেঘে
অন্ধকার ঘর থেকে উঠে আসা চরিত্রলিপির
এন্তার হুল্লোড় ভেঙে আমাদের দুঃখ ও শোকে
লুকোনোর মতো কিছু ছিল না এই ঝরে যাওয়ার
শুধু এক রহস্যের অজানা বাস্তববোধ যেন
গ্রাস করে আমাদের হাওয়া বদলের দিনক্ষণ


শরীর জানে না কিছু, রহস্যের বেশি বধিরতা
লতানো গাছের পাশে কীরকম পথ বেঁকে যায়...
দেখে দেখে অবশেষে ক্লান্ত এ শরীরে ঘুম এসে
আবার অসুখ আসে আবার সাহস ভুলে যাই

শরীর জানে না এত ভুলে যাওয়া সম্পর্কের পাশে
কেমন আঁধার জমে কীরকম পথ খোঁজে আলো
রাত নেমে এলে যেন হাত ধরে অদূরে দাঁড়ায়
আর সেই অপেক্ষার আজ কোনও কথা নেই মুখে
শরীর শিথিল হয়ে জড়িয়ে ধরেছে জল-হাওয়া

অপেক্ষা রহস্য জানে রাত জানে এই নিভে যাওয়া


কাহিনি সাজিয়ে রেখে সীমার অতীত দেশে আমি আজ একা
অদূরে চরিত্র খুঁজে কত যেন অবয়ব, উন্মাদ শরীর
প্রতীক বিহীন রাতে ভেসে যেতে শিখিয়েছে পাথরের স্রোতে,
বলেছে, সাজাও পথ, এসে গেছে গোপনের অবসন্ন আলো,
সাজাও তরুণ দেহ, কথা আর প্রলাপের করুণাসকল
আর দূর জঙ্গলের দিশেহারা গাছে গাছে বিপন্ন দেবতা
অনেক ফুলের কাছে, অনেক পাতার কাছে নত হতে হতে
আমার কাহিনি সব হরিদ্রাভ স্থিরতায় বেদনা সাজায়...
পতঙ্গ-তাড়িত জল ক্রমে ক্রমে একাকার করে রাখে ব্যাথা



 সকালের ঢেউ চেপে বনান্তর চলে গেছে আলোর ওপারে
আর সেই সন্দেহের আগুন জ্বালিয়ে ফিরে গমক্ষেত থেকে
কীরকম পেয়ে গেছি গল্প বলার সংহতি অপার নিঝুমে...
চরিত্র সাজিয়ে শুধু বলে যেতে যা সময়... বাকিটা অচেনা
বাকিটা অশান্ত গাছে বনান্তের বনফুলে ঠোঁট চেপে রাখা,
হাতে হাত রেখে বলা, শোনো, এ নিঝুমে আজ যত প্রাণ আছে,
একা এই অবকাশে যত মেঘ ফিরে পাচ্ছে অতীতের ছবি,
যত আলো দেহ নিচ্ছে, শিরায় শিরায় যয়ার জেগেছে পিশাচ,
আমার দেবতা জানে, আমার সকাল জানে সমস্ত গোপন...
ওদের অ-দীপ কথা আমাকেই বলে যেতে হয়েছে নিশিথে...



মন্তব্যসমূহ