অনুবাদ গল্প: গল্পকার: মাউরিসিও ভেনতানাস দেশ: কোস্তারিকা ভাষা: স্প্যানিশ

অনুবাদ গল্প:
গল্পকার: মাউরিসিও ভেনতানাস
দেশ: কোস্তারিকা
ভাষা: স্প্যানিশ

লেখক-পরিচিতি: জন্ম লাতিন আমেরিকার ছোট্ট দেশ কোস্তারিকার কেসাদা শহরে, ১৯৬৭ সালে পেশায় কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড ইঞ্জিনীয়ারিং-এর পরামর্শদাতা এই গল্পকার গীতিকার হিসেবেও প্রসিদ্ধ এখানে অনূদিত গল্পটি জন্ম মৃত্যুর প্রতি উৎসর্গীকৃত 'মুয়েরতেস নোর্মালেস' গল্প-সংকলন থেকে নেওয়া, যেটি তাঁরই লেখা 'মিয়েন্ত্রাস কায়েমোস' গান থেকে অনুপ্রাণিত
অনুবাদক: মৈনাক আদক

সময় ( মূল গল্প: এল তিয়েম্পো )

এখন তোমার যেখানে বাস, হাজার হাজার মানুষ সেখানে বৃষ্টিধারার নেমে আসে আর আবছা পদচিহ্নের আভাস রেখে মাটিতে আছড়ে পড়ে এই আবছা আভাস একসময় হাওয়ায় মিলিয়ে যায়
যদি ব্যাপারে কিছু জানতে চাও, তাহলে হয়তো জীবনের স্থায়িত্ব সম্পর্কে তুমি কিছু ধারণা করতে পারবে
- এবার প্রস্তুত হও
তুমি নিশ্চয়ই এখন ভেসে বেড়াচ্ছো যদি নীচের দিকে পড়তে শুরু কর, তাহলে এই পাতাটা ফেলে দিও ওটা যে তোমার কাজে লাগবে না, তুমি ভালো করেই জানো কিছুক্ষণ আগেই তোমার জন্ম হয়েছে, জন্মই তোমার স্বাধীনতা ভন্ডামির মুখোশ এখনো দেখনি, তাই তুমি সদাহাস্যময়, ভেসে বেড়িয়েই সন্তুষ্ট তুমি শান্ত, নির্ভার, তাই বুঝতে পারছো না মানুষ কেন এত নীচে পড়ে যাচ্ছে আসলে ওরা তোমায় দেখতে চায়, মরিয়া হয়ে আছে তোমাকে ওদের বক্তব্য জানাবে বলে তাই তোমায় ধাক্কা দিচ্ছে, তোমায় আঁকড়ে ধরতে চাইছে...
- সাবধান!
তুমি তো ওপরের দিকে উঠছ, এখন তোমার সামনে খোলা আকাশ আর তুমি সমাহিত হয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছো হয়তো এজন্যই তুমি আর নির্ভার নও, যদিও তোমাকে দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই তুমি ঝড়ের বেগে আকাশে পৌঁছে গিয়েছ আর তোমার চোখ ধাঁধিয়ে এক দেবদূত এসে তোমার দরবারে তার বক্তব্য পেশ করল:
- তিন মিনিট তুমি -কথার মানে বোঝোনি, কেননা, সময় সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণাই নেই যেই নীচে পড়তে শুরু করলে, তুমি ভয় পেয়ে গেলে গতির সামনে তুমি আতঙ্কিত হয়ে পড়লে, চোখ বন্ধ করে ফেললে লোকে সাধারণত সময় হাত-পা হাওয়ায় ছেড়ে দেয়, তাতে পতনের গতি অনেকটা কমে যায় কিন্তু তোমার  পন্থা কোনো কাজে দেয় না, আগের মতোই উল্কার গতিতে তুমি নীচের দিকে পড়তে থাকো এভাবেই লোকে তালগোল পাকিয়ে মাটিতে পড়ে, তখন তাদের নিজস্ব কোনো সত্তা থাকে না তখন পৃথিবীটাকে মনে হয় কানাগলি, অবিনশ্বরতায় পৌঁছানোটা অলীক স্বপ্ন মনে হয়
যখন তুমি তাড়াহুড়োর মধ্যে কোনো দরকারি জিনিস খোঁজাখুঁজি করো, তখন সেটাই করা উচিত যেটা প্রায় সবাই করে থাকে : এক জোড়া নারী-পুরুষকে খুঁজে বার করা
- কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি
...আর কিছু বাচ্চাকে ভাসন্ত অবস্থায় ছেড়ে দিতে হবে দু-তিনজনের বেশি নয় সময় তো বেশি নেই হাতে তাছাড়া একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ার মতো লজ্জাজনক আর কিছু হয় না পতনমুখী সেই নারী পুরুষ হাতের কাছে যে বাচ্চাটাকেই পায়, তাকেই আঁকড়ে ধরে, তাকে চুমু আর আদরে ভরিয়ে দেয় ওদের পতনের গতি যে পতনোন্মুখ পাথরের মতোই বেড়ে যাচ্ছে আর মৃত্যু কানের কাছে গুনগুন করছে, এটা ওদের মনেও আসে না ভ্রমণের শেষে ওদের কোলে অনিন্দ্যকান্তি এক শিশু ওরা কিছু বলতে চেষ্টা করে, কিন্তু পনেরো সেকেন্ডের মধ্যে কিই-বা বলা যায়! বাচ্চাটা কিছুই বুঝে উঠতে পারে না আর ওরা ওকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে এতটা সময় নিল বলে ওদের ভালবাসা আতিশয্য ছাড়িয়ে যায়... ওরা নিজেদের পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান আর সুখী ভাবতে থাকে...
কিন্তু এমনটা যদি না হয়, তবে সেই নারী পুরুষ তোমার কোনো কাজে লাগে না, তুমিও ওদের কোনো কাজে আসো না, ওরা ওকে তক্ষুনি ছেড়ে দেয় ওরা নতুন করে খোঁজাখুঁজি চালিয়ে যায়...খুব তাড়াতাড়ি, কারণ হাতে আর তিরিশ সেকেন্ডের বেশি সময় নেই
- একটু দম নেওয়ার জন্য এবার তুমি নিজেকে ওদের থেকে আলাদা করে নাও
বেশিরভাগ মানুষই পৃথিবীতে অন্তত একটা শিশু নিয়ে আসতে চেষ্টা করে, নাহলে তো পৃথিবী জনশূন্য হয়ে যাবে, যদিও এটা সময়ের ওপর নির্ভর করে আমার মনে হয়, ঊষালগ্নে খুব কম মানুষ জন্মায় কেননা সময় সবাই ঘুমোয় নয়তো সূর্য আর মেঘের লুকোচুরি খেলায় মোহিত হয়ে ওরা অসতর্ক হয়ে পড়ে চোখ ধাঁধানো আলোর ছটায় সময়ও স্তব্ধ হয়ে গেছে, এই ভেবে অনেকে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে অনন্তে চলে যায় তবে শেষ পর্যন্ত -সব গৌণ হয়ে যায় কেননা, ভাবনাচিন্তা করার জন্য আর মাত্র তিরিশ সেকেন্ড হাতে আছে তুমি মাটি প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছ তোমার পতনের গতি এতই বেড়ে গেছে যে ভয়ে তোমার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেছে
প্রত্যেকেই এই মারাত্মক পতনের হাত থেকে রেহাই পাবার রাস্তা খুঁজে চলে যেমন ধরো, আমি চাই পরিণতিটা তুমি আগেই জেনে নাও, কেননা শুরুতে কী হবে, ইতিমধ্যেই তোমার জানা হয়ে গেছে যে সমাধানসূত্রটা আমার মাথায় এসেছে, সেটা প্রয়োগ করার আগে যেন তোমার হাতে যথেষ্ট সময় থাকে:
মায়েরা প্রত্যেকেই যেন তাদের লম্বা চুলের গোছা বাচ্চাদের দিকে বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আকাশে ভাসমান সব বাচ্চাদের কাছেই কিছুটা করে চুল এসে যাবে যখন এভাবে বেশ কিছুটা চুল জড়ো হয়ে যাবে, ওরা একা-একা বা সবাই মিলে একটু একটু করে ছোট একটা প্যারাশুট তৈরি করে নেবে, যাতে অন্তত একটা বাচ্চাও নিরাপদে মাটিতে নেমে আসতে পারে তারপর চারদিক খোলা মাঠে খেলতে পারে আর আদিগন্তহীন সেই মাঠে বিশাল আকারে একটা বার্তা লিখতে পারে যেটা আকাশ থেকেও  দেখা যাবে...

- সময়


মন্তব্যসমূহ