অণুগল্প ।। ভোটবন্দি খেলা ।। দেবাশিস রায়চৌধুরী ।।

                     ভোটবন্দি খেলা
                     দেবাশিস রায়চৌধুরী

             লোকটা দুবলা পাতলা। একটা বউ। দুটো বাচ্চা। ভ্যান চালায়। সেটা মালিকের। নেশা লিকার চা। পার্টি করে। শ্রমিক ইউনিয়ান। ভোট দেয়। কাউন্সিলার সোমনাথ বাবু। তাঁর কাছের লোক। ওর ভ্যানে তাঁর যাতায়াত। কুড়ি বছর এক ভাবে। হঠাৎ কী হল। সোমনাথবাবু পার্টি ছাড়লেন। লোকটাকে ছাড়লেন না। আগের মতো তার ভ্যানে চলাচল।
              আবার ভোট। এবার সোমনাথবাবুর অন্য চিহ্ন। একদিন কথায় কথায় ভোট প্রসঙ্গ। লোকটা সপাট বলে নতুন চিহ্নে ভোট দেবে না। সে পুরোনো লোক। তাঁর পুরোনো চিহ্ন।
              ভোটের আগের রাত। তাঁর বাড়ি এল বটা। এলাকার ডন। লোকটাকে বাইরে ডাকল। বাইরে বসে বসে কথা বলে। কাল কেউ যেন বাড়ি থেকে না বের হয়। লোকটা দেখল বটার তর্জনী। সেখানে চক্রের মতো ঘুরছে পিস্তল।
             পরদিন ইউনিয়ানের নেতারা এল। পুরোনো চিহ্নের মানুষজন। তবু লোকটা ভয়ে বের হল না। কিছুক্ষণ পর তারা ফিরে এল। সঙ্গে দুজন পুলিশ। নেতারা বোঝালেন। লোকোটা বুঝল। এবারের ভোট ভাইটাল।
             অগত্যা ভোটঘরে। হঠাৎ মনে পড়ে কালীপুজোর রাত। পাঁঠাবলি। ছেলেবেলায় দেখা দৃশ্য। সদ্য স্নান করানো পাঁঠা। থরথর কাঁপছে। কপালে সিঁদুরের টিপ। প্রথমজন লোকটার ভোটার কার্ড দেখলেন। দ্বিতীয়জন লিস্ট দেখে নাম পড়লেন। এজেন্টরা মিলিয়ে নিল। তৃতীয়জন আঙুলে কালো টিপ দিলেন। তারপর পরামর্শ। বোতাম টিপে পিঁ-ই-ই শব্দ শোনার। ঘেরাটোপে ঢোকার আগে চোখ যায় এজেন্ট টেবিলে। বটা বসে। রক্ত হিম করা চোখ।
             টেবিলের কাছে গিয়ে লোকটা অবাক। ভোটযন্ত্র উধাও। আশ্চর্য, টেবিলে একটা কালোপাঁঠা। কপালে লাল টিপ। লোকটা শুনল একটানা পিঁ-ই-ই শব্দ। অবশ্য বোতাম টেপার আগেই। তারপর অন্ধকার।


মন্তব্যসমূহ