সেনেটি ঘরামি যেবার প্রথম ভোট দিল
রূপাই পান্তি
ভোট মানেই যেন রাজনীতির গন্ধ পেয়ে
যাচ্ছেন। দাঁড়ান, দাঁড়ান। গল্পটা মোটেও তেমন
নয়। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার এসেছে ফরাসি বিপ্লবের দৌলতে। ক্ষমতার সাধারণীকরণ
এসেছে। এসেছে মানুষের কাছাকাছি। আজকের গল্পটা সেই কাছাকাছি আসার গল্প। প্রেমের। আর
সেই প্রেমের অনুষঙ্গে এসেছে ভোট। ব্যাস। গল্পটা এমন হতে পারত, কিন্তু... সেই...
আমাদের ঘুরে ঘুরে ঘোলা জলে মাছ ধরার সেই অভ্যেস... বলছি, সব চরিত্র কাল্পনিক,
ঘটনাও, স্থান-পাত্রের কাকতলীয়
মিল খুঁজে কেউ আবার স্মৃতি হাতড়াতে বসবেন না। আপনার মনে পড়ে গেলে, সে আপনার স্মৃতির দোষ...
পরিচ্ছদঃ ১১
তো, এইভাবে শুরু হয়েই গেল
ভোট। সেবারের লোকসভা নির্বাচন। সেইবার, মানে, যেবার সেনেটি ঘরামি প্রথম ভোট দিল।
মক-পোলের সময় মোট পাঁচজন
এজেন্ট এসেছে। ভিডিও ফটোগ্রাফারের সামনে মক পোল হল যখন, সারা ঘর থমথমে। সেক্টর
আসেনি। মক পোলের পর গুছিয়ে যখন বসা গেল, হুড়মুড়িয়ে সেক্টর হাজির। সঙ্গে একটা ভিডিও
ফটোগ্রাফার। কী ব্যাপার? না নতুন ক্যামেরাম্যান ডেপ্লয়েড হয়েছে। নতুন করে মক পোল
করুন। একেবারে লাফিয়ে উঠেছে পেঁচাপার্টির লোকেরা। হ্যাঁ, হ্যাঁ। নতুন করে।
সম্বর মাথায় ঢুকছে না এই নতুন
খেলাটা। সাতটায় যেখানে ভোট শুরু করতে হবে, সেখানে নতুন করে মক পোল! সেক্টরের দিকে
তাকাল সম্ব। কিছু তো লুকোচ্ছে লোকটা। মেশিন খুলতে যাবে যখন সেক্টর, সম্ব এগিয়ে
গেল, “নতুন ফটোগ্রাফারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা আগে দিন। নতুন করে মক পোল করার
অর্ডারটাও।”
সারা ঘরে যেন কীসের এক
নিস্তব্ধতা। সেক্টরের মুখ ফ্যাকাশে। ও তাকাচ্ছে এদিক সেদিক। পেঁচাপার্টির এজেন্ট
কী একটা বলতে যাচ্ছিল। সম্ব হাত তুলে থামায়। সেক্টর গুছিয়ে নিচ্ছে। “না, মানে,
অর্ডার কেন? আমি সেক্টর, আমি বলছি...”
“আমি এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং। আমি
চাইছি।”
“না, মানে, ভার্বালি পাঠানো
হয়েছে ওকে...”
“ভোটে ভার্বালি কিচ্ছু হয় না,
সেটা আপনিও জানেন, আমিও জানি। আই বিলিভ অনলি ইন রিটেন পেপার অর্ডারস। অ্যাম আই
ক্লিয়ার?”
বাইরে খবর চলে গেছে। দরজায় একদল
লোক। সম্ব দেখে, শান্তিরাম... ও সোজা দাঁড়ায়। পেঁচাপার্টির এজেন্ট কখন বসে পড়েছে
ওদের নির্দিষ্ট জায়গায়। সেক্টর তাকিয়ে দেখছে, আশে পাশে কেউ নেই। সম্ব জোর গলায়
ডাকল, “দত্তবাবু, লাইন থেকে প্রথমজনকে আসতে বলুন। আমি মেসেজ পাঠাব।”
মোবাইল হাতে নিল সম্ব। ১৮২
নম্বর ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার। মেসেজ লিখল, পি এস। সেন্ড হল। সারাটা সময়
সেক্টর ঘরের মধ্যে হাঁ। সম্ব নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বলে, “মক পোলের
সার্টিফিকেটটা নিয়ে যাবেন। মনে করে।”
******
ভোট আসলে এক রহস্য। আর রহস্য
মানেই তাকে জানার এক আকূলতা... সম্ব বেশ বুঝতে পারে... এই যে যাদের জয়ের জন্য এত
আকূলতা, তাদের সব স্বপ্ন তো পূরণ হয় না। হয় না তা বুঝেও ওরা আপ্রাণ চেষ্টা করে,
কীসের এক নেশা, কীসের এক প্রত্যাশায়...
সেক্টর চলে গেছে। প্রথম
ঘন্টার টার্ন আউট দেওয়ার পর সম্ব ভাবল, যাক, শুরুটা ভালোই হয়েছে, আশা করা যায়,
ভালোয় ভালোয় কেটে যাবে। ওয়াটার ক্যারিয়ার বাইরে বসে আছে, পুলিশের সাথে, ভোটের লাইন
ঠিক করতে। দু-একজন ভোটার আসছে অন্ধ সেজে, যাদের আদৌ অন্ধ বলে মনে হচ্ছে না। সম্ব
আপত্তি করেছে, কিন্তু পোলিং অফিসারদের আপত্তি নেই। “সার, উরা লিখতি পারেনায়ি?
ইউএসবি ফরমটরম রাকেন্দ্যি...”
সম্বর অভিজ্ঞতা আছে। সব
পক্ষেরই এরকম কিছু শিওর ভোট থাকে। সবাই মিলে এই বিলিবন্টন করে রেখেছে এই দেশে।
তুমিও খাও, আমিও খাই... শুধু মুর্খ সাধারণ মানুষদের কিছু খাওয়ানোর দরকার নেই...
সম্ব তখন একটা একটা ফর্মের
কাজ এগিয়ে রাখছে। পিএসও-০৫... এই এক নতুন আমদানি... আরও কত কিছু যে করতে হয়, যার
কোনও মানেই হয় না। কাজ করতে করতে নজর রাখছে। বাইরে একটা গুঞ্জন... আবার... সম্ব
মুখ তোলে। বারান্দার কাছে কারা দল বেঁধে এসেছে।
“হেইইইইইইই... আমাদ্যে ভোটির
ছবিতুলি নেযাচ্চ্যে...”
জটলা থেকে কে আওয়াজ দিতেই এক
দল লোক ছুটে এল বারান্দার কাছে। নিমেষে ভোটের লাইন থেকে সবাই ছুটে পালাচ্ছে। সম্ব
দেখল, হাঁড়িয়ার পসরা সাজানো খেজুর তলা থেকে আসছে লোক, এদিক থেকে, ওদিক থেকে...
পুলিশকাকু বসে ঝিমুচ্ছিলো, হঠাৎ এই কলরবে সোজা দাঁড়িয়েছে। ডিউটি... বন্দুক হাতে
টানটান। চোখ দুটো তীক্ষ্ণ। সম্ব শক্ত হয়ে দাঁড়ায়।
“কী ভেবিয়েন? যাখুশিতাই
করিন্যএ যাবেন?”
“আমরা কী কিচুইবুজতি
পারিন্যে?”
“হেইইইইইই... চদিনি, ক্যামিরা
ভেঙিফ্যালায়ে দিতিহয়ে... ”
সম্ব হাত তোলে। ডানহাত। সোজা
তাকায়। “কী সমস্যা সেটা বলুন।”
“ভিতুরি ছবিত্যুলত্যিইয়েন
কেন? কে কারি ভোটদেচ্চে সব দেখিনেচ্চেন?”
“ছবি কীসের তোলা হচ্ছে, তা কি
জানেন?” সম্ব জোর গলায় বলে।
“কেন? আমরা কী কিচুইবুজতি
পারিন্যে নায়ি?”
“ক্যামেরা কি আগের ভোটে কখনও
ছিল না? নতুন তো দেখছেন না। একজন তবু এসে দেখে যান ভেতরে...”
“নতুন্তো আপ্নারেও দেখচি...
তাইলি?”
“তাহলে একজন ভেতরে আসুন...”
সম্বর বেশ হাসিই পাচ্ছিল। দূরে খেজুরগাছের
আড়ালে যে কার ছায়া দেখা যাচ্ছে, অসহিষ্ণু, কিছুতেই তাঁর কোনও প্ল্যান কাজে না আসার
অসন্তোষ...
কেউ আসছে না দেখে সম্ব আবার
বলল, “কই? আসুন একজন?”
ততক্ষণে জটলা কেটে যাচ্ছে,
ভেতরে নিজের চোখে সত্যি ঘটনাটা দেখার হিম্মত হারিয়েছে প্রায় সবাই। সম্ব যখন দূরে
তাকাল আরএকবার, ভেতরে স্বপনবাবুর চিৎকার আচমকা ভেঙে দিল সাময়িকের নেমে আসা নীরবতা।
সম্ব একলাফে ভোটিং কম্পার্টমেন্টের কাছে। আর ভেতরের লোকটা তখনও নিড়ানির মাথাটা
ব্যালট ইউনিটের ভেতর ঢুকিয়ে হাঁ হয়ে দাঁড়িয়ে। সম্ব চেপে ধরেছে ওর হাত।
ব্যাপারটা এমন মুহূর্তে ঘটে গেছে, সম্বও বুঝতে পারছিল না, ও কী করে এক ঝটকায় ঘরে ঢুকেই এই প্রান্তে ভোটিং কম্পার্টমেন্টের
সামনে এসে চেপে ধরেছে লোকটার হাত। পোলিং এজেন্টরা তখন ওর আশেপাশে। পুলিশকাকু।
জানালায় জটলা, শান্তিরাম, গ্রামের মেয়েবউরা।
তাহলে ক্যামেরা নিয়ে ওই
জটিলতাটা ওকে বাইরে আনার জন্য ছিল। ততক্ষণে দু-একটা
পার্টির ব্যালট ইউনিট যদি ভেঙেচুরে দেওয়া যায়... স্বপনবাবু বলল, ওর ভোট হয়ে গেছে
আগেই। কন্ট্রোল ইউনিটের আলো আগেই নিভে গেছে। থেমে গেছে শব্দও।
বাইরে ভোটারদের লাইন আবার
দাঁড়িয়েছে। সবাই তখন চাইছে লোকটাকে তাদের হাতে তুলে দিতে। এজেন্টরা মাথা বাঁচাতে
বলে দিয়েছে, পুলিশে দিতে। আর সেই নিড়ানি হাতে লোকটাকে তাকে এই মেশিন অকেজো করার
নির্দেশ দিয়েছিল, সে-কথা বলেই দিয়েছে সম্বর কানেকানে,
তাকে কে বা কারা পাঁচশো টাকা দিয়েছে এই ভোটের আগাছা উপড়ে ফেলার জন্যে, সে কি করে
জানবে কীসে কী হয়...
তখন অদূরে শালিখপার্টি,
ময়নাপার্টির এমনকি পেঁচাপার্টির লোকেরাও একজোট। “আমাদের
হাতে তুলেদ্দেন্দি... পুলিশি কাজ হবেন্ন্যে...” সম্ব তাকায় ওদের মুখের দিকে। তারপর
লোকটাকে। মুখে হাঁড়িয়ার গন্ধ ভুরভুর... ফোনটা বের করেও আবার পকেটে রেখে দেয়।
শান্তিরামের মুখের দিকে তাকাল। বাইরে গ্রিল
ধরে দাঁড়িয়ে আছে শান্তিরাম।
যাও। আমাদের গণতন্ত্রের এই
আগাছা উপড়ে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টার কথা আর সবাইকে নাই বা জানালাম। কত জঞ্জালই তো
রয়েছে। সে-সব কে কবে সাফ করে... এই তো ভারি
একটা আগাছাসমৃদ্ধ
মাটি... তাও সমস্ত ব্যর্থ... একটা হাহাকার-সংকুল
গ্রামের কথা, একটা ইতিহাসহীন আবেগের কথা, একটা ভুলের কথা আর নাই বা বলে বেড়ালাম...
কার কাছে মহান হতে পারতাম এত করে?
পরিচ্ছদঃ ১২
সেনেটি চলে গেছে। তার প্রথম
ভোট দিয়ে, স্বপ্নের দেশ গড়ার ইচ্ছে নিয়ে গেছে আঙুলের কালিতে... কলঙ্কের কালি যতটা
মেখেছিল, সবটুকু না হোক, কিছুটা মনে হয় ধুয়ে গেল আজ সারা দিনে। সারাদিন আজ উৎসব
শুরুর আগেই কেমন ভাঙা সুরে সবার মনভার। মাঠে লোক কমে এসেছে। ধূধূ দুপুরের দিকে
তাকিয়ে তেষ্টা পায় সম্বর। ঘরে লোক নেই। ভোটের লাইনেও। পোলিং
অফিসাররা হাত-পা ছড়িয়ে বসে।
সম্ব জল খেল। ১৭ এ খাতাটা
খুলে দেখার ইচ্ছেটা একবার চাপতে পারে না। পাতা জুড়ে জ্বলজ্বলে
টিপছাপ, নিত্যবাবুর লেখা এপিক নাম্বারের চারটে ডিজিট... কে কাকে খুঁজে বেড়াবে
এখানে? কে কোন চিহ্নের কাছে নিজেকে প্রমাণ দিতে যাবে? কে কাকে খুঁজে পাবে এই
লেপ্টে দেওয়া কালির দাগের সমুদ্রে?
তখন প্রায় চারটে বাজে, শান্তিরাম জানালা দিয়ে ডাকল। মাঠে লোক
নেই বললেই চলে। যে দু-চারজন আছে, তাঁরা মাঠের দূরে দূরে নিতান্ত কাজ না-থাকায় ঘুরছে। তেমন অসুবিধের কিছু করবে না।
শান্তিরামের ভয় কেটে গেছে।
আরও একবার ভোটে গলমাল হল না। আশেপাশের গ্রাম থেকে খবর আসছে, অশান্তির। ১৮৩, ১৮৪
বুথে বাইরে থেকে পুলিশ আসার খবর ছড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। কারা যেন বুথের চারপাশে
ঘুরঘুর করছিল, পুলিশ এসে আচমকা লাঠির ঘা বসিয়ে দিয়েছে কালো কালো শক্ত মাটি ভাঙা
পিঠের ওপর... বেচারা... সারাবছর তো সেই মাঠের কাজ করেই খেতে হবে, একদিনের জন্য
রাজা সাজতে গিয়ে... রাজা সাজার এই উৎসবে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাজ কি? শান্তি
জোরে প্যাডেল চালায়।
প্যাডেল ঘুরে ঘুরে এবড়োখেবড়ো
রাস্তা পেরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে একটা স্বপ্নের দেশ। একটা ইতিহাসের হাতছানি। ধূধূ পথের
বাঁকে সাইকেলের মুখ ঘুরতে চায় না। কে যেন টেনে ধরেছে চাকা... শান্তিরাম দামাল
ঘোড়ার রাশ টেনে পেরিয়ে যাচ্ছিল তেপান্তর, তাঁর এই সামান্য রাস্তার সাদা ধুলো,
ইঁটের টুকরোর আনাড়ি মাথা তোলা থামাতে পারে?
প্যাডেলে জোরে চাপ দিয়ে
হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে নিয়েছে শান্তিরাম।
সামনের বাঁক পেরোলেই...
এমন কত কত বাঁক পেরিয়ে আসতে
হল আজ... কত অজানা বাঁক পেরিয়ে আজ অবশেষে এই বিকেলের রোদ পিঠে নিয়ে ঘরে যাচ্ছে ও।
এই ঘর, এই উঁচুনিচু অসমান জীবনের রাস্তার ধারে এক উঠোন জলের সীমায় একটা ঘর...
আনমনা করে দেয় ওকে। ঘর, মানে এক আশ্রয়...
আনমনে রাস্তার বাঁক পেরিয়ে
গেছে শান্তিরাম। খেজুর গাছের দীর্ঘ ছায়ার কাছে না-রাখা অভিমানের হিসেবে ওর সাইকেলটা
যেন লাফিয়ে ওঠে।
ছায়ার আড়াল থেকে কেউ কি ডেকে
উঠল ওর নাম ধরে? শান্তি আনমনা হয়। একটা বাতাস কানে কানে কি বলে যাচ্ছে, বলেই
যাচ্ছে... শান্তিরাম হাঁসদা কান পাতবে বলে ডানদিকের খেজুর গাছের দিকে তাকাল।
আর আচমকা বিদ্যুতের মতো কি
একটা ছুটে এসে লাগল ওর কাঁধের কাছে।
তখন যেন আলো নিভে গেছে।
শান্তিরাম তাকায়। সাইকেলটা কাছেই দাপাচ্ছে। ওর চালিয়ে রাখা
প্যাডেলের জোরে তখনও ঘুরে যাচ্ছে চাকাদুটো... অবিরাম। আর সামনের মাঠঘাট, গাছপালা
সব কেন যে দাপাচ্ছে, দাপাতে দাপাতে উলটে পড়ছে শান্তিরামের গায়ের ওপর... আর চোখের
কোণা দিয়ে ও দেখছে কালো টলটলে জল পুকুরের বুক থেকে ছিটে আসছে ওর গায়ের উপরে। ঢেউ
আসছে, একটু একটু করে কালো জলের ঢেউ ছুঁয়ে যেতে যেতে শান্তি কান পাতে... কে যেন
বলছে দূরে... মরেনি, মরেনি...পালা, পালা...
আর শান্তির ঘুম পাচ্ছে।
সারাদিনের অবিশ্রাম হাহাকারের পর এই ঘুম। শুধু গলাটা...
দূরে একটা বাইকে স্টার্ট
দেওয়ার শব্দ শোনা যায়। তারপর আরও একটা একটা করে চারটে বাইকের পালিয়ে যাওয়ার শব্দ।
মাথায় একটা শূন্যতা নিয়েও শান্তির মনভার হচ্ছে না। ও জানে, একটা ইতিহাসের গড়ে ওঠার
পিছনে এই অনিঃশেষ পতনের কিছু মূল্যতো আছেই...
তখন ভোটকেন্দ্রে একটাও লোক
নেই। মাঠে যে সামান্য দু-চারজনের দেখা পাওয়া যাচ্ছে, তারা সবাই অপেক্ষার আছে কখন
ভোট শেষ হবে। অপেক্ষায় আছে তাদের স্বপ্নের দেশ তৈরির বার্তা নিয়ে এই সন্ধ্যায় দূর
শহরে ফিরে যাবে ভোটবাবুরা... তাদের হাতেই সব... শহরের হাতেই সব। ওরাই বলে দেবে।
তোমরা তো ওদের হাতে তুলে দিয়েছ দেশের ভার, ওর হাতে তো দাওনি...
শহরই তাহলে শেষ কথা। তাদের
স্বপ্ন গড়ে দেবে এই শহরের বাবুরা। তাই এই পাহারার ক্ষণ শেষ হতে থাকে, মন চায় না।
আর দূরে এক ছায়ার কাছে একটা
সাইকেল তার মাথা তুলে পড়ে থাকে এবড়োখেবড়ো রাস্তায়। তার চাকাদুটো শেষবারের মতো পাক
খেয়ে যেন পৌঁছুতে চাইছে স্কুল অবধি, ভোটকেন্দ্র অবধি... ছুঁতে চাইছে সেই ছিপছিপে
তরুণ ছেলেটিকে যে ওদের আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে বলেছে... শান্তি এত তাড়াতাড়ি ভাঙে
না... এত...
মন্তব্যসমূহ