নভলেট ।। সেনেটি ঘরামি যেবার প্রথম ভোট দিল ।। রূপাই পান্তি ।।

নভলেট
সেনেটি ঘরামি যেবার প্রথম ভোট দিল 
রূপাই পান্তি


ভোট মানেই যেন রাজনীতির গন্ধ পেয়ে যাচ্ছেন। দাঁড়ান, দাঁড়ান। গল্পটা মোটেও  তেমন নয়। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার এসেছে ফরাসি বিপ্লবের দৌলতে। ক্ষমতার সাধারণীকরণ এসেছে। এসেছে মানুষের কাছাকাছি। আজকের গল্পটা সেই কাছাকাছি আসার গল্প। প্রেমের। আর সেই প্রেমের অনুষঙ্গে এসেছে ভোট। ব্যাস। গল্পটা এমন হতে পারতো, কিন্তু... সেই... আমাদের ঘুরে ঘুরে ঘোলা জলে মাছ ধরার সেই অভ্যেস... বলছি, সব চরিত্র কাল্পনিক, ঘটনাও, স্থান-পাত্রের কাকতলীয় মিল খুঁজে কেউ আবার স্মৃতি হাতড়াতে বসবেন না। আপনার মনে পড়ে গেলে, সে আপনার স্মৃতির দোষ...


                       পরিচ্ছদঃ ৯

       প্রত্যেক দুপুরের পর বিকেল ছায়া এসে এত রোদ্দুরের মলিনতা মুছে দেয়। আজ বিকেলটা কেমন ছন্নছাড়া। আজ মাঠে মাঠে গরু-বাছুরের দল বেঁধে ঘরে ফেরার তাগিদ নেই। পাখিদের দল বেঁধে ফিরে আসার তাগিদ নেই। মাঠে মাঠে কখনও সখনও একটা-দুটো কালো ছায়া দেখে মনে হল, আজ সব হিসেব মিলছে না।
     মাঠে একজন দুজন করে লোক জমছে। পেঁচাপার্টির ওরা, সেই সাজুগুজু, আরও কয়েকজন, এদিকে-ওদিকে। স্বপনবাবু আর দত্তবাবু সিড়ির মুখে। সম্ব দোতলায় দাঁড়িয়ে দেখছে মাঠের কাজকর্ম। সেক্টর অভিজিৎ দুজন লোক নিয়ে স্কুলের কাছের একটা পোস্টের গাঁয়ে লেখা পেঁচাপার্টির প্রচার, ওদের সিম্বল চুন দিয়ে মুছে দিচ্ছে। মুছছে আর সাজুগুজুর দিকে কেমন তাকাচ্ছে।
         কেমন সে তাকানো? যে-ভাবে গোপন সব কথা চোখে চোখে বলা যায়? সম্ব ভাবছে। হয়ত সেক্টর বলছে, সাজুগুজু, সাজুগুজু, তোমরা চুপ কেন? তোমাদের সেই হইচই করার প্ল্যান, তার কী হল? ব, চেঁচাও, চেঁচাও, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ব, এই প্রিসাইডিং অফিসার ভোট নিতে এসে আমাদের গ্রেমের মেয়ে সেনেটির সাথে যাচ্ছেতাই করেছে, ব, সেনেটির ইচ্ছের বিরুদ্ধে ওকে মাঠে নিয়ে গিয়ে...
         স্বপনবাবুর সাথে খেজুরে আলাপ জুড়েছে এক মাঝবয়সী মানুষআর তাদের ভেসে আসা সেই একই কথালাপের মধ্যে সম্ব শুধু শুনছে, আমাদের গ্রামে ভোট নিয়ে শান্তি আছে, দেখে নেবেন, ইত্যাদি, ইত্যাদি...
        আর এ-সবের ফাঁকে মন পড়ে থাকা সেই ছায়ার সাথে ভেসে যাচ্ছে ও। ভেসে ভেসে মেঘেদের কাছাকাছি, সেনেটি বলবে, ঐ যে বাঁকানো বঁড়শির মত নদীর বাঁক, ওদিকে দলদলি, আর ঐ-ঐ দেখছেন সাহেবখালি, বাঁধের পাড়ে কেমন পলি জমেছে দেখুন, ড্রেজিং করার কথা, কিন্তু...এত হইচই...এত মানুষের অসন্তোষ... ভাবুন...ভাবতে ভাবতে সম্বর্ত্তক বিকেলের কমে আসা আলো দেখে, দেখে ঐ সাজুগুজু এগিয়ে আসছে।
            তখন, ভ্যানো থেকে তিনটে বড় জলের সিল করা ড্রাম পাঠিয়েছে বিডিও অফিস থেকে, ওদের ওয়াটার ক্যারিয়ার সেগুলো তুলে আনতে থাকে উপরে। তখন, কিছু একটা হবে, কিছু একটা যেন এগিয়ে আসছে, ভাবতে ভাবতে সম্ব সিড়ি বেয়ে নিচে এসে দাঁড়াচ্ছে আনমনে।
           আর ওকে নামতে দেখে কীসের আশঙ্কায় দত্তবাবু, স্বপনবাবুর হাত ধরে একটানে সম্বর সামনে দাঁড় করিয়ে সিঁড়ির গেটে তালা আটকে দিচ্ছেতখন, সেক্টরকে ঘিরে ধরেছে জনা কয়েক সাজুগুজু। সম্ব শুনতে পাচ্ছে হইচই। আর অপেক্ষার সরিয়ে দাঁড়াচ্ছে, কখন ঝড় আসে।
তো ঝড় এল। মানে সাজুগুজু। আর পেছন পেছন আরও জনা কুড়ি লোক। কমবয়েসি একজন গেট ধরে ঝাঁকাচ্ছে আচমকা। স্বপনবাবু টানছে হাত ধরে। “বুইলেন, সার, পুলিশের খবরদিতি হচ্ছে। এ কী ঝামেলায় পড়া গেল... ”
        সম্ব জানে ঝামেলা শুরু হয়নি এখনও। ভেতরে ভেতরে ভয় গ্রাস করছে ওকে। কী হয় কী হয়...
        কিচ্ছু শোনা যায় না। শুধু হইহই... ঝন ঝন...  সম্ব সোজা দাড়াল। ঐ তো কঞ্চির মত শরীর। তবু চাবুকের মত সোজা। হাত তুলে থামার ইশারা।  
“এইডে কী হইল্য? আমাদ্দে পুস্টার মুচিদেচ্চেনক্যা? ”
“ভোটকেন্দ্রের একশ মিটারের ভেতরে যে পার্টির প্রচার থাকবে না, সেটা কতবার করে বলা হয়েছিল, মনে পড়ে?”
“আমাদ্যট্টা অনিক দূরি আচে। মেপিদ্যাকেন।”
“ওরাই তো মাপল। আপনাদের গ্রামেরই তো লোক, সেক্টর, না? ওকেও বিশ্বাস করেন না?”
“আমাদ্যে মেপি দ্যাকাতিব্ব্যে” সাজুগুজুর আবদার। সম্ব ভাবে, না মেটালে আবার যদি মাঠে পা ছড়িয়ে কান্না জুড়ে দেয়! আর ভাবতেই দৃশ্যটা যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে সাজুগুজু, পরনে কিচ্ছু নেই, কোমরে একটা ঘুনশি, মাঠে পা ছড়িয়ে কাঁদছে। শরীরটা শিশুর, কিন্তু মুখের দিকে তাকাতেই...আপনমনে হেসে ওঠে ও।
“সার, আমারে তো মোটেও বিশ্বাস করছে না এরা। আপনিই মেপি দ্যান।” সেক্টর তখনও পোস্টের সামনে কোমরে হাত। সঙ্গের লোকরা চুনের বালতি হাতে, চুনকাম করার বুরুশ হাতে থ।
         স্বপনবাবু তখন ফিতে হাতে গেট খুলে দরজায়ফিতে এগিয়ে যায়। এগিয়ে চলে জমে ওঠা অসন্তোষ।  পোস্টের কাছাকাছি এসে এক দীর্ঘশ্বাসে থেমে যায় সাজুগুজু। আশি মিটার। সম্ব তাকাল। সাজুগুজু বিড়ি বের করেছে। দু-আঙুলের মাঝে বিড়ি নিয়ে ডলতে ডলতে কানের কাছে নিয়ে যায় বিড়িটা। আশেপাশে তাকায়। কে একজন দেশলাই দিল ওকে।  সম্ব দেখছে ওর বিড়ি ধরানোর সমস্ত অভ্যেস। দেখছে আর ভাবছে, আবার কি হয়।
      আবার গুঞ্জন ওঠে। আবার কী হল? এবার মনে হল ময়নাপার্টির জনা কয়েক ছেলে। সোজা অভিজিতের সামনে।
“এটা কি ছেলিখ্যালা পেইছ? হাআআআআ? ছেলিখ্যালা?” 
কী হল? আবার কী?
“ইডা কি ছাউ হইছ্যে?”
সম্ব খেয়াল করেনি। মাঠে ভোটকেন্দ্রের দরজার সামনে কিছুটা অংশ ত্রিপল টাঙানো হয়েছে। দুটো লাইনে জনা পঞ্চাশেক লোক যাতে দাঁড়াতে পারে।
           সেক্টর কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু ওরা সুযোগ দিচ্ছে না দেখে সাজুগুজু এগিয়ে গেল এবার। স্বপনবাবু আর দত্তবাবু সম্বকে একরকম জড়িয়ে ধরে নিয়ে এসেছে সিঁড়ির মুখে। ওদের দলের বাকি সকলে একসাথে দাঁড়িয়ে দেখছে। কথা কাটাকাটি কেমন হঠাৎ হাতাহাতিতে পালটে গেল। সাজুগুজুর হাত চলছে, মুখ, কে কাকে মারছে, দেখা যাচ্ছে না।
           -তো আর সিনেমায় দেখানো সাজানো মারামারি নয়, যে যেমন পারে, যাকে পারে মেরে নিচ্ছে, ঘুশি, লাথি, খিস্তি...সম্ব দেখছে, অভিজিৎ কখন ওর বাইকে চড়ে রাস্তা ধরে চলে যাচ্ছে দূরে। যেন কীসের খবর দিতে যাচ্ছে অজানা কমান্ডারকে।
           আর ততক্ষণে একটা টহলদার পুলিশের গাড়ি এসে থেমে গেলে মুহূর্তে যে যার মতো পালিয়ে গেছে মাঠ ভেঙে। সম্ব ভাবে, পুলিশ আসে সব গোলমাল শেষ হয়ে গেলে, এই মিথটা তাহলে আজ সত্যি হল না।
       তখন পুলিশের গাড়ি থেকে বুথের ইন-চার্জ এগিয়ে এসে খোঁজ করেন প্রিসাইডিং অফিসারের। কথা হয় ভোটার সংখ্যা নিয়ে। কথা হয়, যে-কোনও সমস্যায়   খবর দিতে। কথা হয় জটলা নিয়েও... 
        স্কুলবাড়ির পেছনের পায়ে চলা পথে ততক্ষণে কারা এসে দাঁড়িয়েছে। পায়ের শব্দে সে-খবর জেনেছে সম্ব। জেনেছে, দূরে টলটলে একপৃথিবী কান্না নিয়ে কেউ রয়েছে আজ। কাল থাকবে কি না কেউ জানে না।

                                   ********
       রান্না করতে এসে আজ সবাই কেমন জড়সড়। দিব্যেন্দুদা বলল,“গাঙ্গুলি, আজ মুরগী রান্না হোক। চলো...”
            সম্ব নেমে এসে দেখে রান্নার জোগাড় চলছে তখনও। সামনের পথ দিয়ে কে একজন যেতে যেতে নেশা জড়ানো গলায় একভাবে বলে চলেছে, “হুউউ... এডা এড্ডা ছাউ হইয়্যে? হুউউউউ? ভেঙ্গি দিব্ব্য... কাইলি...” সম্ব রান্নাঘরে মুরগী রান্নায় হাত দিয়েছে। কুটে বেটে রেখে রান্নার দিদিরা তখন শহুরে বাবুর রান্নার তোড়জোর দেখে মুখ টিপে হাসে। সেনেটি হাতে হাতে মশলাটা, হাতমোছার গামছাটা এগিয়ে দিচ্ছে। বলছে,“বাবু, আপনি এত ঘন ঘন হাত ধুচ্ছেন কেন? আচ্ছা, ছাড়ুন, আমি কষে দিচ্ছি।” আর বৌদি হেসে যাচ্ছে একটানা।
         রান্না যখন প্রায় শেষ, মাঠে তখন জ্যোৎস্না ভাসছে। মাঠদুয়ারী স্কুলের বারান্দায় এসে বসে সম্ব। মাংস রান্না শেষ করে। ভাত চাপিয়ে দিয়েছে ওরা। দিব্যেন্দুদা উপরে গেলসেনেটি এসে বসেছে ওর পাশে। সম্ব আকাশের দিকে তাকায়। চাঁদের দিকে। বলে, “আর মাত্র একটা দিন। কালকে আর গোলমাল না হলেই বাঁচি। যা সব অভিজ্ঞতা হচ্ছে...”
আর ফুঁপিয়ে উঠছে একটা ছায়া।

 

                       পরিচ্ছদঃ ১০

           আজ তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া দরকার। কাল ছটায় মক পোল, মানে পাঁচটার আগেই ঘর গোছানো হয়ে যাওয়া দরকার। তারপর তো সারাদিন যুদ্ধ। জারি জনযুদ্ধ।
সন্ধ্যের আগে, রান্নার ফাঁকে সকলে মিলে নিচের ঘরে, যেখানে ভোট হবে, সাজিয়ে রেখে এসেছে। হাতে হাতে গুছিয়ে রেখেছে সব কাগজপত্তর। একটু আগে ভোটবাবুদের সাথে বসে খেয়েছে রান্নার দলের সকলে। আগে মেয়েরা খেয়েছে আজ। তাই নিয়ে ওদের কী হাসাহাসি। সম্ব বলল, আজ একটু স্বাদ বদল হয়েই যাক...
          তখন নটা বাজে। দূরে কোথাও একদল মোটরবাইক নিস্তব্ধ রাত্রির বুক চিরে একটানা গর্জায়সম্ব কান পেতে থাকে। পুলিশগাড়ির শব্দ। হইচই। নিচ থেকে পুলিশের গলা পাওয়া গেলে ওরা বোঝে, নিচে কারা এসেছিল। দৌড়াদৌড়ির হুটোপুটিতে ঘরের সবাই তখন উঠে বসেছে।
          জোরালো টর্চের আলো ঘোরা ফেরা করে মাঠ পেরিয়ে, খেজুরের সারসার অপেক্ষা পেরিয়ে যতদূর অভিমান...
          একটু পরে সব থেমে গেলে দত্তবাবু কেশে ওঠেন। সে এক ভয় ধরানো কাশি। দুবার ইনহেলার নিয়েও থামে না সে দমক। উত্তেজনায় সবাই কাছাকাছি এসে বসে থাকে। দত্তবাবু দেওয়ালে পিঠ দিয়ে বসে পড়েছেন। সম্ব ওর পাশে বসে। বাবার কথা মনে পড়ে হঠাৎ। কান্না জড়িয়ে আসে...
           অবশ্য সে বেশিক্ষণের জন্য না। খানিক পরে আবার সবাই শোবার জোগাড় করে। নিচ থেকে কার আকূল ডাকে আবার উঠে বসে সকলে।
দিব্যেন্দুদা বলল, “গাঙ্গুলি, বাদ দাও। যেতে হবে না। কী দরকার ঝামেলায় জড়িয়ে?”
স্বপনবাবুও বারণ করেন। সুধীরকাকুই শুধু বলল, “না সার, আমাদের যাওয়া উচিত। আমি যাচ্ছি। চলেন।”
নীচে শান্তিরাম। শান্তিরাম হাঁসদা। হাতে একটা টর্চ নিয়ে স্কুলবাড়ির গেটে। “এত রাতে?”
“আপনার একবার যেতিই হবে, সার।”
“কেন? কোথায়?”
“ওরা বাইক ন্যে গুণ্ডা পাঠায়ে বাড়িবাড়ি ধমকাচ্চে। কতা বল্লিই মাইর। এ-চোখি দ্যাখা যায়, আপ্নিই বলেন?”
“কারা ওরা?”
“আরকারা, সার? পেচাপাট্টির উরা।”
সুধীরকাকু পাশ থেকে বললেন, “আমাদের যাওয়া কী ঠিক হবে?”
“আপ্নাদ্যে সাথি পুলিশ আচে। একবার চলেন, সার...”
“দেখুন শান্তিবাবু, আমাদের কাজ ভোটের সময়, ভোটকেন্দ্রের একশ মিটারের মধ্যে। তার বাইরে আমাদের কিছু করাটা অনধিকার চর্চা।”
“আপনি দাঁড়ালি উরা ভয়প্যেযাবে। সার উরা আপ্ননারি বিরাট ভয়পাচ্চে একুন।”
“ভয় না হয় পেল, তারপর? আমি তো কাল বিকেলে চলে যাবআপনাদের যে সারাজীবন থাকতে হবে, শান্তিবাবু। আমি অচেনা লোক, আর আমি ভোটের কাজে এসেছি মানে, আমি রাজনীতির বাইরের লোক। আমার যাওয়াটা ঠিক হবে না।”
শান্তিরাম ধপ্‌ করে বসে পড়ে সিঁড়ির উপরেই। “আমাদের গিরামে এরোম তো আগে হইনি...” বলছে, আর ভাবছে, তবে কি মানুষ চিনতে ভুল হল তার? ভুল লোকের কাছে এসেছে শান্তিরাম?
          বিড়বিড় করে বলছে শান্তিরাম, “বারবার আমাদ্যেসাথি এরম কেন হবে বলেন্তো? রাজা আস্পে, রাজা যাবে, আমাদেত্তো কুনও ঝামিলা ছেল না...”
“আমি একটা কথা বলি, শান্তিবাবু, এ-লড়াই আপনার একার। আপনার গ্রামের। সেনেটি বলছিল, আপনাদের গ্রামে দুটো শান্তি আছে, এক শান্তিরাম হাঁসদা, আর দুই, যে, এ-গ্রামে যাই হোক, রাজনীতির গোলমাল নেই... এখন, একটা শান্তি বজায় রাখার দায় অন্য শান্তির হাতে। শক্ত হোন।”
“সাআআআর...” শান্তি হাঁ করে তাকায়... মানুষ চিনতে...
“ওরা বাইরেই লোক। তাদের হাতে এভাবে মার খাবেন? একবার উঠে পালটা মারবেন না? যদি না মারতে পারেন, আপনাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কী গল্প রেখে যেবেন আপনি?”
           সম্ব দেখল, শান্তিরামের চোখ এই অন্ধকারেও জ্বলছে, জোনাকির মতো... আগুনের মতো...শান্তিরাম সোজা উঠে দাড়াচ্ছে। যেতে যেতে বলে যাচ্ছে, “সার, আপনার বইস কম, কিন্তু আপনার্ত্তে শিখার আছে...অনিক কিচু শিকার আচে।”
          তারপর সে এক হইচই... রাস্তায় নেমে গেছে মানুষ। তখন সম্ব দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে জ্যোৎস্নাপ্লাবিত দিগন্তের দিকে দেখছে। চাঁদ। ক্ষয়ে যাচ্ছে। তার সাদা আলোয় ভেসে যাচ্ছে বেলেমাটির দেশ... খেজুর গাছের মিছিল, ইউক্যালিপটাস। ওদিকে একটা হইচই...তারপর অনেকক্ষণ চুপচাপ।
           স্বপনবাবু পাশে এসে দাঁড়ালেন। স্কুলের পাশের রাস্তা দিয়ে কয়েকটা ছেলেকে ঘিরে ধরে ঐ দূরে এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামের মেয়ে বউদের দল। ছেলেরাও সামিল হয়েছে। সেই ছেলেদের রঙিন চুল, রোখা মেজাজ, চোখা জুতো, মেজাজি মোটর বাইক, কোমরে গোঁজা টর্চ, পাইপগান পেরিয়ে একটা স্বপ্নের মিছিল এগিয়ে যেতে দেখছে সম্ব। ওদের মুখে টর্চের আলো পড়েছে। 
          গ্রামের সবাই দেখেছে ওদের। আর মুখোশ হারিয়ে ওরা দৌড়ে পালিয়েছে যে যার মতো। স্বপনবাবু বললেন, “বুইলেন সার, শান্তিরামেরে আপনি পাশ করায়ে দেলেন। একদম একশোয় একশো...”



----------------------------------------------------------------------------------------
না পড়ে চলে যাবেন না মতামত রেখে যান এখানে পোস্ট করার সময় আপনার ই-মেল পাসওয়ার্ড চাইতে পারে দিন ওটা আপনি গুগলকে দিচ্ছেন একবারই দিতে হবে আর যদি প্রযুক্তিগত কারণে বার বার মতামত পোস্ট করা সত্বেও মতামত যদি পোস্ট না হয় তাহলে সম্পাদকের ফেসবুকের ইনবক্সে পোস্ট করুন পরে এখানে পোস্ট করে দেওয়া হবে নাহলে achenayatri@gmail.com-এ মেল করুন অনেক আন্তরিকতার সাথে আমরা এই কাজটা করি তাই এই লোভটা সামলাতে পারি না সমালোচনা করেই লিখুন কিন্তু লিখুন আশায় আছি ধন্যবাদ


মন্তব্যসমূহ