অণুগল্প দেবাশিস রায়চৌধুরী
চুম্বন
কলেজ ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলছিল। তখন মধ্যরাত। খবর এল ক্যাম্পাসে পুলিশ
ঢুকবে। হাতে হাতে ব্যারিকেড, তীব্র হল স্লোগান। হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল কিছু উর্দিপরা
মানুষ, সঙ্গে উর্দিহীন গেঞ্জিপরা অনেকে। শুরু হল মার। নির্বিচারে বেধড়ক মার। লাথি
ঘুষি চড় থাপ্পড়। দিশেহারা ছাত্রছাত্রীরা ছত্রভঙ্গ। চুলের মুঠি ধরে এক ছাত্রীকে
টেনে আনা হচ্ছে। টানাহ্যাঁচড়ায় ছিঁড়ে গেল পোশাকের কাঁধের কাছ থেকে পেট বরাবর। এক
ছাত্রকে মাটিতে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছাত্রটির কষ থেকে গড়িয়ে
পড়ছে রক্ত, একটা গেঞ্জিপরা লোক সমানে লাথি মেরে যেচ্ছে ছাত্রটির বুকে পিঠে।
আচমকা পুলিশের হাত ছাড়িয়ে পোশাক ছেঁড়া
মেয়েটি ঝাঁপিয়ে পড়ল ওই ছেলেটির বুকের উপর। তার খোলা শরীর ঢাকা পড়ল ছেলেটির বুকে।
ছেলেটিও দু’হাতে জাপটে রেখেছে মেয়েটিকে। পুলিশের বেপরোয়া টানে দুজনেই এগিয়ে
যাচ্ছে, তবু কেউ কাউকে ছাড়ছে না। লাথি পড়তে থাকল মেয়েটির পিঠে। একজন মেয়েটির চুলের
মুঠি ধরে টেনে তুলতে গেল। পারল না। মেয়েটির ঠোঁট তখন শুষে নিচ্ছে ছেলেটির ঠোঁট
থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত। দুজনের ঠোঁট আলাদা করা গেল না কিছুতেই।
সব শিয়ালের এক...
ইন্টার্ভিউ ঘর থেকে বেরিয়ে সজল বুঝেছিল
চাকরিটা হচ্ছে না। পুলিশের চাকরি। বন্ধুরা, যারা আগে চাকরি পেয়েছিল, তারা বলেছিল,
ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই। উলটো-পালটা প্রশ্ন করলে বুঝে নিতে হবে, চাকরি হবে না। উলটো-পালটা
মানেটা সে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি। অবশেষে বন্ধুরাই বুঝিয়েছিল—‘কী পছন্দ কর, চা না
কোল্ডড্রিংস? কোন ব্র্যান্ডের টুথপেস্ট ব্যবহার কর? কে বেশি টিভি দেখেন, বাবা না
মা?’ – এই ধরনের প্রশ্ন করলে বুঝতে হবে কাটিয়ে দিচ্ছে। ক্যান্ডিডেট ঠিক করা আছে।
চেয়ারে বসার পর তার কাছে প্রথম প্রশ্ন
ছিল, ‘তবলা বাজাতে পার?’ সে বিনীত ভাবে জানায়, ‘না’। ‘স্কুল-কলেজে কখনও টেবিল
বাজাওনি?’ তাকে আমতা আমতা করতে দেখে একজন বলেন, ‘বুঝেছি’। অন্যজনের প্রশ্ন, ‘শিস্
দিতে পার?’ এবারেও সে ভ্যাবাচাকা। তার এই অবস্থা দেখে তিনজনই সমস্বরে হেসে ওঠে। আর
একজন প্রশ্ন করে, ‘আচ্ছা বাড়ি তো গ্রামের দিকে, তা শিয়ালের ডাক ডাকতে পার?’ অপমানে কান লাল হয়ে
যাচ্ছিল। বহুদিন মেয়েদের আওয়াজ দিয়েছে সে।
ইচ্ছে হচ্ছিল গলা ফাটিয়ে একবার শিয়ালের ডাক দেয়। কিন্তু পুলিশ বলে ভয়ে পারল না।
শুধু চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে বেশ আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে বলেছিল, ‘এই তিনটে বিষয়ের সব
কটাই ভাল পারি’। কোনও দিকে না তাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
দুই
সজলের ধারণা মিথ্যে প্রমাণ করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট
লেটার এল। ট্রেনিং পিরিয়ড শেষ। কিন্তু
পোস্টিং হয় না। পুলিশ লাইনে সকাল বিকেল প্যারেড, তাদের ব্যাচের বিশেষ
তালিম। এই ভাবে দিন গড়ায়। কাজের ডাক আসে না।
তিন
অবশেষে ডাক এল। স্পেশাল ফোর্স হিসেবে
কোর্ট ডিউটি। সে টিম লিডার। ভাল করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হল। কোর্ট গেটের সামনে
লাইন দিয়ে তারা দাঁড়াল, উলটোদিকে মিডিয়া। প্রিজন ভ্যান এল। যিনি নামলেন, তিনি ভি.আই.পি.।
দুর্নীতির কারণে বিচারাধীন বন্দি। মিডিয়া ঝাঁপিয়ে পড়ল, ‘দাদা, এই দুর্নীতিতে
সরকারের কেউ জড়িত আছেন কি? কারো নাম বলবেন?’ তিনি উত্তর দেওয়ার আগেই সজলের ইশারায়
কয়েকজন প্রিজন ভ্যানে তবলা বাজানো শুরু করল। বন্দি গলা চড়িয়ে কিছু বলতে যেতেই সজল
গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে উঠল, ‘ হুক্কা হুয়া’, সঙ্গে সঙ্গে তার সাথীরাও গলা মেলাল।
---------------------------------------------------------------------------------------
না। পড়ে চলে যাবেন না। মতামত রেখে যান। এখানে পোস্ট করার সময় আপনার ই-মেল পাসওয়ার্ড চাইতে পারে। দিন। ওটা আপনি গুগলকে দিচ্ছেন। একবারই দিতে হবে। আর যদি প্রযুক্তিগত কারণে বার বার মতামত পোস্ট করা সত্বেও মতামত যদি পোস্ট না হয় তাহলে সম্পাদকের ফেসবুকের ইনবক্সে পোস্ট করুন। পরে এখানে পোস্ট করে দেওয়া হবে। নাহলে achenayatri@gmail.com-এ মেল করুন। অনেক আন্তরিকতার সাথে আমরা এই কাজটা করি। তাই এই লোভটা সামলাতে পারি না। সমালোচনা করেই লিখুন। কিন্তু লিখুন। আশায় আছি। ধন্যবাদ।
মন্তব্যসমূহ