দীর্ঘকবিতা ।। শিমুল মাহমুদ


নারীর দিকে চিরায়ত

আমিও বলতে চেয়েছি সরল চোখে
আর সরলতাই যদি হয় প্রকৃত আরাধনা
তা হলে এ কথাই ঠিক
শয়তান শয়তান
শয়তানের অতিরিক্ত কিছু
দেখি না আমি
আমার ভেতর।
অবলা গর্দভের মতো শিখেছি অভিনয়
ভেতরে লোভের বলক।

বুক খুলে দাঁড়িয়েছি নারীর পায়ে।

আয়েশা
তসবিহ সরিয়ে রাখো
দৃষ্টি ফেরাও
ভিজে যাচ্ছি আমি
তোমার পুত্র
ভিজে যাচ্ছি প্রতিদিন
প্রাত্যহিক ঝড়ে।

ফিরে গেছে পিতা
নৌকা ভাসানের গান
কণ্ঠে নিয়ে।
ফিরে গেছেন তিনি
লজ্জাবতী গাঁয়ের দিকে
ফিরে গেছেন
নারীর দিকে
যে নারী কলস কাঁখে হেঁটে যেতো
ঘাসের ওপর
পায়ের আদর রেখে;
সেই নারী, ফুটে আছে
সন্ধ্যার কুয়াশার গায়ে।

বৃক্ষের শাখায় পাখি
পাখিপরিবার
পাখিবউ
উড়াল উড়াল ভয়
সুখভর্তি বাসনাসহ
উড়াল দাও
সাম্পানের মাঝি।
পায়ের পাতার নীচে
পিষে যাচ্ছে নীরবতার গান।
ফিরে এসেছো
অকস্মাৎ
ডানামেলা ভয়
অনন্ত অনন্তকাল
পড়ে আছি মাঠের কিনারে
অচল তাবিজ।

ফিরে গিয়েছিলে লজ্জাবতী গাঁয়ে
রাখালের বাঁশির ইশারায়
ঘুঙুরবিকেল।
সম্ভ্রম হারিয়েছিল যে নারী
সন্ধ্যেবেলা
নীরব উলঙ্গ মাঠে
সেই নারী, কোথায় থাকেন?
জানে না বদরগঞ্জ
অথবা
হাট থেকে ফিরে আসা পিতা
শুধু শোনা যায়
শীতের পোশাকের ভেতর
লবণাক্ত-মহামারি জেগে আছে।
মহামারির তীব্রতা নিয়ে
বদরগঞ্জের মাটিতে
হেঁটে যাচ্ছে লোভ।
এইভাবে অনন্ত অনন্ত
তারপর কাহ্নপার গান
লালনের কণ্ঠে
ছেউড়িয়ার আকাশ
সঙ্গীতমুগ্ধ নদী
মন্ত্রস্নানে ফিরেছি আবার
কাকভোর
পাখিদের শিস-কোলাহল
ধ্যানমগ্ন পাখিদের মৌনতা পাশ কাটিয়ে
জেগে উঠেছে
পরিত্রাণবিহীন
কামযৌনতা।
আমিও সন্ধানে আছি
যে কোনো নারী,
কামনার একাগ্রতায় ছিড়ে ফেলেছি
ব্যাকরণ-বিশুদ্ধ ফুল
বদরগঞ্জবাসী রাখছে না সংবাদ
যৌনতার তাড়নায়
প্রতিদিন হারিয়ে ফেলছি আমি
স্বাভাবিক স্বভাব।

প্রার্থনায় নত, তসবি হাতে
সফেদ দাড়ি থেকে চুইয়ে নামছে
ওজুর পানি।
বাবা আজ বেঁচে নেই, এগার বছর
বিধবা বোনের হাতে
প্রতিদিন চিনে নেই
বদরগঞ্জের মাঠ
মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে
মহাবিদ্যালয়
যেখানে শেখানো হতো
পাখিদের নামতা
মহাশূন্যতার সবুজ ধারাপাত।

বিষণ্ন মাতা, ছুঁয়ে দিয়ে আমার চিবুক
তুমিই ধর্মের বাতি
পাঠ করো, ধর্মের ছেপারা
তিন পুরুষ ধরে
এই ঘরে কেউ
জ্বালায়নি আগুন
রসুলের দোহাই
দিলের ভেতরে রাখো
বেহেস্তি খোয়াব
কষ্ট ও সুখের সীমাহীন আদর
গর্ভের ভেতর থেকে টেনে তোলো
জন্মের ঋণ
জ্বালাও বংশের বাতি
নারীবিনা গতন্তর নেই
ইহাই নিয়ম।
নারীর ভেতর থেকে জেগে উঠে
বংশ রক্ষার পুরুষ
ফিরে যাচ্ছে নারীর দিকে।

কামে ও যৌনতায়
যৌনপরম্পরায় ফিরে যাচ্ছি আমি
বদরগঞ্জ বরাবর।
শিরা ও ধমনীতে চমকে উঠছে সময়
প্রত্নজল
সময়ের হিজাব।

রাতের নামাজ শেষে
ভেসে উঠলাম আবার
নায়রী মায়াবী মাছ
সোনাঝরা সোনালী দুপুর
জলস্রোত
তোমার দিকেই যাত্রা চিরকাল
অনির্বাণ
জন্ম জন্মান্তর
নারীর আঁচল
মায়াবী হরিণ
বকুল ফুলের ঘ্রাণ নিয়ে
জেগে উঠেছি আমি
জরায়ুশিরায়।

পিতাহীন
অপ-পরিচয়ের ভেতর
কেঁদেছিল যে শিশু
ফিরে গেছে সে
বদরগঞ্জ হয়ে তিস্তার দিকে
জন্ম জন্মান্তর
তীব্র যৌনতার হাঁস ডাকছে
রক্তে।
শিরা ও ধমনীতে আকাঙ্ক্ষা
সাধ ও সাধনা
সেও তো নারী!
তীর্থজলে ভাসছে মানবসংহিতা
কাদামাটিজল
আকাঙ্ক্ষার বীজ।

শূন্যতায় ভেসে উঠেছে
হাসানের হাহাকার
গিরিগুহা করজোড়ে নত;
দোজখের আগুন থেকে
বাঁচাতে আমাকে, মেঘেরা
ছড়িয়েছে ডানা; অবশেষে
নেমে এসেছিল নারী
অঞ্জলীভরাট কাম নিয়ে দেহে
ষড়যন্ত্রের দৈহিক বাহক।

কেনো এতো বাধা ও বন্ধন! মায়া ও রক্তের তীব্রতা!




মন্তব্যসমূহ

সমীর আহমেদ বলেছেন…
শিমুল ভাই,নারী ও সময়ের স্রোতে ভাসিয়েছেন বোধের ডিঙা; কোনো ক্লান্তি নেই মাঝির। ক্লান্তি নেই পাঠকের। বোধের ফুলকুঁড়ি ছড়ায় সুগন্ধি চেতনায়, অনুভবে।