উত্তর সম্পাদকীয় ।। রাজনীতির দড়ি টানাটানি; কণ্ঠরোধ ভাষাপ্রেমিদের ।। রুপাই পান্তি


   রাজনীতির দড়ি টানাটানি; কণ্ঠরোধ ভাষাপ্রেমিদের 

       স্বপ্ন ভেঙে যায়। মানুষের, সাধারণ মানুষের। ওদের চুপিচপি আশার স্বপ্নের ভোর  বদলে গেছে আজ। দুই বাংলা মিলে যাবার অপেক্ষায় বছরান্তের ২১-এর ভোরের জন্য বনগাঁর যেসব তরুণ কবিসাহিত্যিক-ভাষাপ্রেমিরা সুদীর্ঘকাল ধরে স্বপ্ন দেখতেন, তাদেরই আবেগ নিয়ে রাজনীতি চলছে আজ। তাদের আবেগ ছাপিয়ে দলাদলি, দেখনদারির বহর এত বেড়েছে, তাদের সরিয়ে মুখ দেখাতে এত মানুষ ব্যস্ত হয়েছেন, ২১-এর জন্য সেই রাতজাগা আবেগ বুকে চেপে চোখ মুছছেন এপার-ওপার দুইবাংলার প্রকৃত ভাষাপ্রেমিরা।
২০০০-এর ২১-এর ভোরের মুছে যাওয়া সীমান্তের বাঁধন খাতায় কলমে আজও ঐ একদিনের জন্য মুছে যায় ঠিকই, এদেশের মানুষ আজও চোখের জলে ধুয়ে দেয় ওদেশের বন্ধুদের, তবু মেরুকরণের, আড়ম্বরের চোখরাঙানি আর শাসনের কাছে বন্ধ হতে চলেছে ভাষাশহীদস্মরণ। ভাষাস্মরণের কৃতিত্বে ভাগ বসাতে এদল-ওদলের বড় মঞ্চ দখল, প্রতিশ্রুতির ঝড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন। ২০০০-এর ২১- শে ফেব্রুয়ারি দুই বাংলার মানুষের কাছেই ছিল গৌরবের। ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঘোষণার পরের প্রথম ২১-এর ভোরে বনগাঁর ২১-শে কমিটির  ভাষাপ্রেমিরা আজ ১৪ বছর পরের ২১-শে পালনের অনুষ্ঠানে অনেকেই উপেক্ষিত। তাদের সাথে কথায় কথায় উঠে আসে উপেক্ষার এই কাঁটার কথা, যা সীমান্তের কাঁটাতারের চেয়ে কম বেদনার নয়। এখন অনুষ্ঠানে এত ভি আই পি, এত নেতৃবর্গের আনাগোনা, এত মন্ত্রী, এত আড়ম্বরের মধ্যে মনখারাপ হয়। প্রশ্ন জাগে, এরাই কি তবে প্রকৃত ভাষাপ্রেমি? সাধারণ মানুষের এই ক্ষোভ আঁচ করে অবশ্য এই ক্ষতপ্রলেপ দেবার চেষ্টা চলেছিল। যে ভাষাদিবস দুটো দেশকে আজও কাছাকাছি এনে দেয়, কে জানে কবে দেখব, সেই ভাষাদিবসে বক্তৃতা দিচ্ছেন কোনও হিন্দিভাষী নেতা, আর হাততালি দিচ্ছে মাঠভরানো- ভোটভরানো ভাষাহীন, দিশাহীন কিছু মানুষ, যারা বাংলাকে আদৌ ভালোবাসেনি।



মন্তব্যসমূহ