অরুণেশ ঘোষ

পমি আয়নায়
 সঙ্গমের প্রায় শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ শুক্রপাতের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে পমি আমাকে তার দু-হাত ও পা দিয়ে অসম্ভব ঠেলে দেয় আমি কাৎ হয়ে তার শরীর থেকে ঝুকে পড়ি সে পাশ ফেরে উপুর হয় চিৎ হয় গড়িয়ে চলে যায় দেয়াল জোড়া বিশাল আয়নার মধ্যে পমির প্রিয় আয়নায় ভ্যাবলার মতন তাকিয়ে দেখছিলাম গোটা ব্যাপারটা হটাৎ সারা শরীর নড়ে ওঠে আমার, টের পাই তৎক্ষণাৎ হাত বাড়িয়ে ধরতে যাই তাকে চকচকে ধারালো ঠাণ্ডা আমার আঙুল কামড়ে দেয় শক্‌ পাওয়ার মতন হাত ছিটকে আসে আয়নার মধ্যে থেকে হাসে পমি অলস  হাসি সারা ঘর জুড়ে নীল আলো, নীল আলোটা পমিই অল্পক্ষণ আগে জ্বালিয়ে দিয়েছিল ঘরের একপাশে ওই খাট, ওপরে সাদা মশারি নীল আলোর মধ্যে হাড়ের মতো সাদা ভাসছে ঘর লাগোয়া বাথরুম আর হা-খোলা দরোজা ভেতরে অন্ধকার টেবিল আলনা ও আলমারি একপাশে, এখানে মেঝের প্রায় মধ্যখানে দুটো সোফা ও দুটো সেন্টার টেবিল বেশ সাজানো গোছানো পমির ঘর আমি সোফায় গা এলিয়ে পকেটে হাত ঢোকাতে গিয়ে টের পাই শরীরে কোনো কাপড়চোপর নেই আমার, আয়নায় পমিও আমার মতন হাতের কাছে সিগারেট না পেয়ে আরও বিতিকিছরি লাগে, একি মাইরি, পমিকে বলি,কোনো মানে হয়!
পমির মুখ সামান্য হাঁ হয় মনে হয় সে কিছু বলছে, কিন্তু কোনো আওয়াজ  ভেসে আসছে না শুধু আয়নায় সে হাসে তার নিঃশব্দ অচল প্রবল হাসিতে সারা ঘর লাল হয়ে ওঠে কিছুক্ষণের জন্য আমি ডাকি , এই পমি  তৎক্ষণাৎ  মনে পড়ে সে শুনবে না হাত নেড়ে তাকে বেরিয়ে আসতে বলি উপুর হয়ে পড়ে আছে তার শরীর সে মাথা তোলে, সাপের ফণার মতন আদ্দেক শরীর আয়নায় উঠে যায় ফণার মতনই দুলে ওঠে বুক থেকে স্তন দুটি ঝুলতে থাকে পাকা দুটি ফলের মতন
কি আসবে না? আমি তাকে ইশারায় বলি,   আমি চলছি মাইরি সে আমাকে জিভ বের করে দেখায় আমি আমার পাজামা পাঞ্জাবি পরে ফেলি; হাত তুলে দেখাই তাকে, অর্থাৎ এবার বিদায় নিচ্ছি ঠিক এ সময়ে দরোজায় খট্‌খট্‌খট্‌ এ নিয়ে চার বার পমির আরেকজন খদ্দের এসে বাইরে অপক্ষা করছে অনেকক্ষণ নিশ্চয়ই রেগে গেছে লোকটা খুব সম্ভব টেনে এসেছে এগিয়ে গিয়ে আস্তে দরোজা খুলি দুহাতে দুই মদের বোতল মাথায় তালপাতার টুপি সে ঢুকেই বলে, এ কি!
ঠিক আছে আমি যাচ্ছি!
না না আমাকে বিপদে ফেলেবসুন মশাইবোতল খুলুন দেখি, দুজনে মিলে পমিকে বের করা যায় কিনা
আমি এ-পাশ ও-পাশ তাকিয়ে কাজ ছিল বলি
অসম্ভব! সে মাথা নাড়ে, হবে না মশাই আমাকে বিপদে ফেলে
কয়েদির মতন আমি নিরুপায়, সোফায় বসে লোকটার দেওয়া সিগারেট ধরাই বাথরুম থেকে একাই কলাই করা মগ জোগাড় করে সে বোতলের মুখ থেকে শোলার  ছিপিটা খুলে মগে ঢালতে ঢালতে সে গুণ গুণ গায় পা দোলায়
কখন এই ব্যাপার? জিগ্যেস করে সে
আর বলবেন না, ঠিক সেই সময়ে
তাই নাকি হাঃ হাঃ
পুরো এক মগ সে কমুণ্ডল থেকে জল   ঢালার মতন করে গলায় ঢেলে দেয় ঢেঁকুর তোলে লোকটা  যেন মৃদু গেলবার জন্যই এখানে ছুটে এসেছে আমাকে সে পুরো এক মগ দেয় না, কম করে দেয় খুবই নীচু জাতের মদখোর তৃতীয় মগ মদ আয়নার দিকে তুলে ধরে ঘর ফাটানো চিৎকার করে, পমি--- ডাকে পমিকে
            পমি এতক্ষণে উপুর হয়েছিল ঘাড় অব্দি ছাঁটা লালচে চুলগুলো গালের উপর পড়ে ছিল এখন সে ধীরে ধীরে চিৎ হয় স্তন যুগল তার নড়ে ওঠে একবার, পরে স্থির হয় পা-দুটোকে প্রথমে সে ছড়িয়ে দেয়, আবার জড়ো করে আনে লজ্জা, টজ্জা ওর কোনো কালেই ছিল না, তবুও বুকের উপর একটা হাত রাখে সে, অন্য হাত চলে যায় নীচে তল পেটের উপর এরকম ভাবে সে শুয়ে থাকে
নাঃ এ কি ব্যাপার মাইরি! লোকটা বিরক্ত মুখে পান করে
আমি চলে যাব বুঝলেন, কাজ আছে আপনি চেষ্টা করে দেখুন
না না বসুন বসুন, আপনারইতো হয়নি মশাই
বসে থাকতে হয় ড্রেসিং টেবিল জোড়া প্রসাধনের নানারকম শিশি কৌটো ছোট্ট তেপায়ার উপর কাপড়ঢাকা ট্রানজিস্টর সেট আলনায় শায়া শাড়ি ব্রা সোয়েটার, খাটের নীচে গ্রামোফোনের বিশাল বাক্স দেয়ালে হাওয়ার্ডসএর ক্যালেন্ডার--বিচালির উপর নগ্ন নিতম্ব রূপসী বিদেশিনী চোখ আবার আয়নায়  যায় আমার পমি চোখের কোণা দিয়ে দেখছে আমাদের, মিচকে শয়তানীর মতন হাসে সে একটু একটু
এই দ্যাখ দ্যাখ, লোকটা একশো টাকার একটা নোট দেখায় পমি হাসে শুধু লোকটা অশ্লীল গাল দেয় পমি  হাসে
আমাদের উপর এত যদি ঘেন্না হয় তাহলে নটীপাড়ায় নাম লিখিয়েছিস কেনখানকি মাগিকে দেখাব আজকে, বেলুনের মতো ফাটাব মাইরি লোকটা হঠাৎ ক্ষেপে যায়, দাঁড়া তোর ছেনালি ছোটাব
পমি হাসতে হাসতে কাৎ হয় উপুর হয় লোকটা কাপড় জামা খুলতে শুরু করে ধরুন এগুলো দাঁড়ান দেখাচ্ছি হারামজাদীকে মনে হয় সে নদীতে ঝাঁপ  দেবে, সে রকম ভাবে তৈরি হয়ে নেয়  সহসা পমি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায় সারা শরীর আমার হিম হয়ে যায় তার ওই বিপুল উঠে দাঁড়ানো দেখে আমি দেখি তার জানু নাভি পেট স্তন ও চুলের বিপুল উত্থান উঠে দাঁড়ায় ও অল্প কোমর দোলায় লোকটা আরও ভীষণ ক্ষেপে গেছে লোহার রডের মতন তার লিঙ্গ, সোজা ও শক্ত পমি বেশ জোরে শরীরটা দুলিয়ে দেয়, মানে সে নাচ শুরু করল এক লাফে লোকটা বিছানায় ওঠে বিছানা থেকে আয়নায় একটা প্রচণ্ড ঝাঁপ খুব স্বাভাবিক ভাবে সে ছিটকে পড়ে বিছানায় কিন্তু দমে না সে আবার  উঠে দাঁড়ায় ও তার ক্ষিপ্ত লিঙ্গ চেপে ধরে আয়নায় আয়নার গা বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে শুক্রধারা পমি তখন আয়নায় নির্বিকার ভাবে নেচে যাচ্ছে, ঘন ঘন কেঁপে উঠছে তার দুই স্তন ও নিতম্ব
...তার মুখের দিকে তাকাই আর সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠি দেখি সেই মুখ, যে মুখ আত্মহত্যার এক মুহূর্ত আগে দেখেছিলাম

( গল্পটির রচনাকাল ১৯৬৭ এটি অব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে বানান ও ছেদ-যতি সম্পাদিত  

  

মন্তব্যসমূহ