তুমি নির্মল করো...
প্রসন্ন আসিয়া দাওয়ায় ধপ্ করিয়া
বসিল। তাহার
উদ্বিগ্ন মুখমণ্ডল কহিতেছে, বিষয়
গুরুতর। দাঠাকুর কেবল আরাম কেদারায় দেহ এলাইয়া হুকায় ফুড়ুক ফুড়ুক সুখটান থামাইলেন।
প্রসন্ন কহিল – তুমি কি আমারে
রাক্চো?
-না রাখার কী হল আবার?
-ক্যানে শোনোনি? বাবুরা সব ঝাড়ু
হাতে রাস্তা ঝাটাচ্ছেন। নিম্মল ভারত গত্তে চলেচেন সক্কলে!
-সে আবার কী র্যাআ?
-অমাআআআআ... প্রসন্ন বিশ্বরূপ
দর্শনার্থে দাঠাকুরএর সম্মুখে তাহার প্রশস্ত মুখগহ্বর আগাইলে দাঠাকুর হাসিলেন। তাহার
হা-মুখের অভ্যন্তরে দেখা গেল সম্প্রতি দেশপ্রধানের এই আহ্বান কেমন হাবুডুবু খাইয়া আকূল
পথের দিশা দেখিতে অস্থির...
উদ্যোগটি মন্দ নয়। কিন্তু হুজুগে,
তা দাঠাকুরের বর্ষান্তের অভিজ্ঞতা বহুপুর্বেই ব্যক্ত করিয়াছে। সেই কবে পরাধীন দেশে
ক্ষুদ্রকায় এক্মহামানব তাঁহার নিজ আশ্রম হইতে আপন গৃহ স্বচ্ছ রাখার ডাক দিয়াছিলেন,
তাঁহার স্বপ্ন ছিল এক নির্মল দেশের পরিবেশ গড়তে এক নির্মল জাতি একে অপরএর স্কন্ধে স্কন্ধ
রাখিয়া ভবিষ্যতের নিমিত্ত যত জঞ্জাল সাফ করিয়া দিবে। তাঁহার সে স্বপ্ন স্বপ্নেই রাখিয়া
‘এখানে থুতু ফেলিবেন না’-লিখিত প্রাচীরের গাত্রে, পথঘাটে, যত্রতত্র, এমনকি হাসপাতালের
করুণ মৃত্যুপথযাত্রীর শয্যাপার্শ্বে সর্বত্র কী নিষ্ঠায় জনগণ থুতু ও নানান উৎকৃষ্ট
আবর্জনা জাতির উদ্দ্যেশে দান করিতেছে- তাহা কে না অন্ধ দৃষ্টিতে দেখিয়াছে!
এ বয়েসে আসিয়া তিনি বোঝেন, ডাকিয়া
যে জাতির নিদ্রা ভাঙাইতে হয়, তাঁহার নিদ্রাভাব কখনও কাটে না। এখন সময়ের অপেক্ষা। আপনার
নিক্ষিপ্ত আবর্জনা আপনার চাঁদবদনে পতিত হইলে তবে না আমরা বলিব,- ছি ছি, এত্তা জঞ্জাল!
মন্তব্যসমূহ