দুঃসময়ের ডানা
পুরোনো বাগান ঘেঁষে মউ মউ করছে সুদখোর দুপুরের রোদ আর
তার ছোঁয়া লেগে ফারাক্কা-প্রযোজিত
চৈতী-পদ্মা ডালে বাঁধা ছায়া
এসব দেখেশুনে এক সবুজ তাড়নায় তোমার কাছে এসেছি;
আমি জানি--এই অজগর সময়ে তুমি
কোনো ওয়েলফেয়ার স্টেট নও
তবু শ্যামল-উঠোনের ঐতিহ্যসূত্রে
প্রত্যাশা এই যে-
বোশেখী বাগানের এক বিকেল ছায়া বাড়িয়ে কাছে নেবে তুমি;
আমার চেতনায় স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে দেখো--হাঙরের অনিদ্রার মতো
সময়ের অভিশাপ জেগে আছে সারাক্ষণ--ছুটো..ছুটো..ছুটো..
আমি বসে থাকতে গেলে ডানাগুলো ভাঁজ হতে চায় না;
তো শুয়ে থেকেই কাটিয়ে দাও না ভাই!
শুয়ে থাকতে গেলেও যে ভূমিকম্পের দুলুনি লাগে পিঠে!
তো বুঝতেই পারো--এই ঝুলন্ত নিয়তি
নিয়েই তোমার কাছে এসেছি
একবার আন্তঃমহাদেশীয় ফ্লাইটের মতো রিফুয়েলিং করে নিতে চাই।
মহাবিশ্ব
(পৃথিবীরঙের এক মানবীকে)
অথচ তোমার জন্য বসে থাকি অজুহাতের স্টেশনে-- ইচ্ছাকৃত ফেল করে
আহ্নিকগতির ট্রেন ! তুমি আসতে চেয়েছো
অথবা চাও--এর বেশি কোনো
কিছুই তো ঘটেনি; তোমার আসতে চাওয়াটা
কেন এত ব্যঞ্জনা রচে আমার
এলোমেলো ভাবনায়- আমি সেও বুঝি না!
তুমি যদিবা আসোই--সেও তো
নিজ কক্ষপথে ফিরে যাওয়ার জন্যই আসবে--এতটুকুও রয়ে যাবে ন--রেখে
যাওয়ার মতো কিছুই আনবে না সাথে,--তারপরও তোমার জন্য কেন এই
অদ্ভুত অপেক্ষা ?
আমি তো গ্রহ-নক্ষত্রের ভিড়ের
মধ্যেই থাকি যে ভিড়ে অংশ রয়েছে
আমারও;এমনিতেই ঝালাপালা কান;
তো কীসের আবার নতুন ডাক !
অথচ তোমার কণ্ঠ শোনামাত্র কানদুটো ভারকেন্দ্র হয়ে ওঠে! মনে হয়--
মেঘলাকণ্ঠের সিক্তমাধুরী বাড়িয়ে দেয় তোমার মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের
পরিধি--
যা ছুঁয়ে ফেলে আমার অন্তরঙ্গ অস্তিত্বের আঙিনা,--বাকি সারাটা সময়
যা রাষ্ট্রীয় ভূগোলের মতো স্থির থাকে বেড়াহীন সীমান্তে ও
সীমানায়!
আমি স্বতঃসিদ্ধের হৃদয় নিয়ে ভেবে দেখি--নিপাতনে সিদ্ধির টিকেট নিয়ে
যদিবা তুমি এসেও যাও, আমার কোনো শূন্যতাই
ভরে দিতে আসবে না,
আর আমার তো কোনো শূন্যতাই নেই; সবখানেই থই থই জল; ভদ্র বাতাসের
টোকাও সয় না! তারপরও ভরা নদীটি
নিয়ে কেন আমি অপেক্ষায় থাকি--
একখানা মেঘলা আকাশের, কিংবা উজান-উপচানো নবীন ঢলের? আমি কি
নিজের পাড় ভেঙ্গে ছড়িয়ে যেতে চাই--অগন্তব্যের বিস্তারে,--যেখানে যুক্তি-
হীনতার অবাধপ্রান্তর,--অসংসারের হরিণ-উপবন? আমার মধ্যে কে সঞ্চার
করছে এই অগন্তব্যগামী মুক্তির বেগ? আমি তো চাই না এ উড়াল; অথচ
আমার এ প্রার্থনাতেও খাদ রয়ে যায়- হে পৃথিবী, হে আমার ডাঙা ও জলের
সবখানি ভালোবাসা, আমাকে ধরে রাখো--বাড়িয়ে দিয়ে তোমার অভিকর্ষীয় টান!
মন্তব্যসমূহ