হে অনন্য, কথা দাও
১
ধরো
একদিন আমিই অজস্র পাথর দিয়ে ঢেকে রাখা গুহামুখ যুগান্তের অবসানে পাহারায় বসে আছি
একা, অমলিন।
ধরো
একদিন তুমিও অবিরাম ভেঙে চুরে নতজানু বসে বসে প্রচুর রক্তের দাগে বেঁধে দিচ্ছ
শুশ্রূষার পরম যতন।
ধর
এভাবেই যদি আদিগন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের অনাগত অভিমান সামনে
দাঁড়িয়ে দেখে দুজন –দুজনে...
তবে
একবার যেন চোখ তুলে তাকানোর মহামিলনের কাছাকাছি থেমে যায় অসময়, কথা দাও, হে অনন্য,
কথা দাও আজ...
২
ঈশ্বর
আহত হলে তাঁর বেদনার ভার দিনে দিনে গলে পড়ে অনেক আকাশ থেকে আমাদের বসবাসে, জেহাদের
সুরে...
ঈশ্বর
কাতর হলে অবিরাম যাপনের ফেলে আসা গ্রহরাশি আমাদের রাত-পথে নেমে যায় একা একা...
সহাস্যকরণে...
আজ
সেই রবিবারে, আহত ঈশ্বর এসে দাঁড়ালেন আঙিনার ইতঃস্তত ফেলে রাখা জেহাদের বীণারবে,
ভাঙা মোহনায়।
আর
আজ, সেই সুর শুশ্রূষার অভিলাশে একা একা হেঁটে চলে ঈশ্বরের দেখাদেখি... শুধু তাঁকে
পাশ ফিরে ছোঁয়ার বাসনা!
৩
বেঁধে কি রেখেছ ঘোড়া দিগন্তের গাছে গাছে দ্বাদশ রাশির পায়ে লগ্নপথ যাপনের আলো-জল-পথ হীন কোনও করুণায়?
বেঁধে কি রেখেছ ঘোড়া দিগন্তের গাছে গাছে দ্বাদশ রাশির পায়ে লগ্নপথ যাপনের আলো-জল-পথ হীন কোনও করুণায়?
তবে
কেন ছলনাকে এত গ্রন্থিযাপনের ছায়া- ছায়া দিবালোকে লিখেছ অদৃশ্য হাতে, বিরহস্যকরনের
অবিরাম স্রোতে?
দিয়েছ
যে আলো, জল, মুঠোভরা আকাশের, ধিকিধিকি আগুনের অবাক বদলে যাওয়া, সকল করুণামাখা দিবস
স্ফটিক...
তবে
তাকে ছেড়ে দিও আপন লাগাম হাতে যেন এই ছায়াপথে, দ্বাদশ রাশির পায়ে একদিন বেঁধে যায়
বিশ্বাসী শিকল...
৪
নিমেষ
তাকিয়ে দেখি যেন এই অবেলায় তোমার ফেরত পথ দুয়ার আড়াল করে সমুখে দাঁড়াল।
যেন
আরও আঘাতের, আরও আরও অবজ্ঞার একাকী পথের কোণে মাথা নীচু, হাত পেতে এগিয়েছে
দিন
তাঁর
সব সীমানায় ভুলে যাওয়া কথালাপ আমিই ধরিয়ে দেব ছলোছলো আকাশের অনেক নিমেষে
শুধু
এই অবসর, অপলক দেখে যাওয়া, শুনে যাওয়া দিনে, রাতে, ‘আমাকে স্বীকার করো’... অবিরাম
সুরে...
৫
বাসনা
অধীর হলে পথ চিনে চিনে তুমি কবে যেন ফিরে গেছ এলোচুলে বাতাসের চেনা ঢঙে বিবস্বান
সন্ধ্যায় নীরবে...
বধির
জলধি জুড়ে শুধু তাঁর অবসরে কথা চয়নের ভার আমিই নামিয়ে দিই অনেক আকাশ শেষে বিষণ্ণ
বেলায়...
এতো
শব্দ-উপকূলে ... তুমি কিছু বলিছ না, আমিও শুনিনি কিছু... এরকম মনে হলে দাউ দাউ
জ্বলে ওঠে পৌষের বিষাদ।
কাছাকাছি
বসে থাকা পথের সীমানা ভেঙে নীরব সন্ধ্যায় ভিজে জ্বলে ওঠে বাসনার অধিক
উপান্তভূমি... বাড়ায় দুহাত...
৬
আমি তার কাছে বসে চিনেছি বনান্ত পথে কীরকম দূর থেকে প্রণামের ছায়া জুড়ে
এসেছে সকাল।
শিখেছি কেমন লাগে বিকেল পেরিয়ে আসা অচেনার ব্যবধানে বিশ্বাস সাজিয়ে রেখে
আকাশ-রচনা...
শুধু এক অঙ্গীকার, প্রত্যাশার অতি দূর, যা একবার জানাতেই ফোঁটা ফোঁটা জল
ভেঙে গর্জে ওঠে ভয়...
অবাধ্য-সীমায় কেউ হাহাকার সাজানোয় দেখি সেই কাছে আসা, হাওয়ায়, বাতাসে
দূর... ভেসে চলে যায়।
৭
মুগ্ধতার উচ্চারণে তুমি যে বসন্ত-পথ চিনিয়ে চিনিয়ে এত নীরবতা শিখিয়েছ মুখর
শহরে,
যে তুমি সহজ অশ্রু প্রতিবার অপমানে বেসামাল জীবনের প্রত্যেক অধ্যায় শেষে
লিখেছ সহজ,
আমি তারে মহাকাশে ফুলের বাগান থেকে তুলে আনা শিশিরের অবাক ঘ্রাণের কাছে
একাকার দেখি।
তুমি যাকে প্রিয় বল, বধির- সাহসে তার না- আসা চিহ্নের কাছে আজীবন রেখে যাই
বসন্ত আমার!
মন্তব্যসমূহ