১
পশ্চিম বিকালে মশুরির-ডাল যখন তুমি খেয়ে নাও, ফর্সা হয়ে ওঠে আমাদের ঝুলন্ত
পেণ্ডুলাম
ডিম ফুটে ধেয়ে আসে
তখন শিশু কচ্ছপেরা
অথচ প্রকৃত রাস্তাগুলি
ডিগবাজি খায়... পর্যটক হয়ে ওঠে ঢেউ। নির্জন গুহায় পোড়া কাঠ এঁকে চলে আমাদের অবস্থান
কতটুকু জরুরি...কতটুকু আলো পুষলে আদিম তাম্রলিপি পড়া হয়ে ওঠে। যেন বাজারের থলি হাতে মেয়েটিকে দোকানিও দেখে
নেয় আড়চোখে, গণেশ ভাণ্ডার রহস্য! তার অদৃশ্য
আঁঠালো মোয়া!
এই মহাকাল পাহাড়ি
রাতে তোমাকেও আতশকাচে রাখি... দেখি ত্বক ও জননবিদ্যায় প্রস্ফুটিত রেণু...
অথচ আমাদের কোনো রেণু নেই... প্রিয় গোল সাদা
কাগজ আছে, যা আকাশে টাঙিয়ে রেখে পালিয়ে গেছেন শিল্পী!
আমরা ভাবি চাঁদ... তাকে ঘিরে প্রত্নদেবাশিস, আবিষ্কার করে অতি উজ্জ্বল দেবতাগুচ্ছ!
গুহার ভিতরে তখনও
কাঠকয়লা আঁকে মাছশিকারির বাহাদুরি... আর একটু পানীয় আর জালের
সমস্যায় জড়িয়ে যাওয়া বাঁচার জীবনী
আমাদের জন্ম হেসে
ওঠে,
আমরা আব্বুলিশ বলে
থমকে দাঁড়াই পৃথিবীর প্রতিটি মোড়ে... অনন্তকাল!
জেব্রার শরীর টপকে
পৌঁছে যাচ্ছি যাত্রায়
তার কোনো ক্রসিং
নেই,
লাইফজোন বলে আদতে কিছু কি ছিল? এই বনজঙ্গল
দিনের টি-শার্ট খুলে বাস্তুতন্ত্র শেখাচ্ছে--- তারও অধিকার বংশবৃদ্ধি---
টাওয়ালে মুখ মুছে
মাদাগাস্কার সি-বীচে জ্যান্ত লাফানো
কুঠার দেবতা কেন
যে জল থেকে তুলে দিয়ে গেল কুঠার!
ভাঙা মাস্তুলের মতো
এইসব ভেবে যাচ্ছি, জানি লক্ষাধিক ডিমের ভিতর একটি জেগে উঠে
লুটে খাবে বনজসম্পদ! তখন আমাদের কোনো পশ্চিম থাকবে না...
দিক ভুল করে জন্মাবে না নতুন বন্দর!
এইসব তুমি জানো, বিকেল গড়িয়ে গেলে পুবে এসে ওঠে-- এই আমাদের চিরহরিৎ
সূর্য...
অথচ প্রথম প্রেমের
মতো অসমাপ্ত রুটম্যাপগুলি ফেলে রেখে গেছে মিতকিশোরী... আর আমরা ডাইভ
দিচ্ছি শূন্যতায়। অনন্তের
অলিগলিতে ঝুলে রয়েছে পেণ্ডুলাম ; তার কৌণিক সতর্কতায় মোটর ভ্যান রাস্তা
পাড় হচ্ছে, তাতে সয়াবিনের বীজ ভাস্কর্য... তার গন্ধে কেউ কি আছো জেগে? এইদিনে আমারও অনেক
কথা মনে পড়ে... সুদূর প্রত্নকাল থেকে হুহু আকাশ তাঁবু টাঙায়
--- আমরা তার নীচে পোড়া মাংস আর দেশি ভালোবাসায় উচ্ছিন্নে যাই। অথচ কেউ কারোর নই... কেউ কারোর গুহায় ঢুকে আলো রেখে আসছি না। এই তুষারঝড়ে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না গাছেদের
বাকল...
অনাথ মোমবাতি জ্বলে
ওঠে...
সে-ই একমাত্র প্রতিবাদী, বুনো বীজ কুড়িয়ে রেখে জল আনে -- সে-ই প্রথম আবিষ্কার করে, সিন্ধু সভ্যতা কখনো ঘোড়ার
ব্যাবহার জানত না।
আমরা কি কখনো ভালোবাসতে
শিখিনি?
আটার দলাগুলো পাউডার
মাখছে...
বেলোনের ডলাতে শেপ নিচ্ছে খাদ্যগুণ। তোমার রোগা হাত এইসমস্ত সম্পর্কের বাইরে থেকে
দোকান খুলেছে...
কুকুরের পুঁজের যন্ত্রণায়
ভরা মেঘ ছড়িয়ে যাচ্ছে। নীল-আঁচ পুড়ে ওঠে, দুপুর জীবন... কোথাও সিগন্যাল আবহসঙ্গীত, যেন কাঁপা কাঁপা বিজ্ঞানভিত্তিক।
এই যে তোমাদের তুলে
আনছি শুনশান পকেট থেকে, আমিও খেপমারি অবিরাম---মাঠের নির্জনতায় বাঙ্গিদের কথকতা... কতটা বালি
পুষলে জীবন বেঁচে যায়? অথচ পৃথিবী ফুলে উঠলে কারোর কোনো যায়
আসে না... ভরা জোয়ার-মরা জোয়ার কাকে
বলে জানে না। আমিও
জানি না,
বনাঞ্চল কেন হাওয়ায় নড়ে... হাওয়ামোরগ ঘুরে
চলে
এখানে ম্যামথ প্রজাতি
দেহবদল করতে চায়... মরুভূমির সাম্রাজ্যে কে কার সম্রাট?
কিছু সুগন্ধি উত্তোলন পিরামিড জড়ো করছে---জীবনবিজ্ঞান লেসন। আমরা
শুয়ে আছি ভররাতে, খুঁজছি সেই নক্ষত্রটিকে... যে আমাদের কোনদিন দিকনির্নয় শিখিয়েছিল। তবু পুরোনো দূরবিন ফেলে রেখে পালিয়ে গেছি
আমরা,
তবে থেকে অনতিদূর চোখেই পড়ছে না। তবু পৃথিবীর ভারী নিতম্ব কোলে তুলে বাজারে
গেছি...
তরতাজা মেটে আলু পুড়িয়ে খেয়েছি। এখন জীবনবিজ্ঞান ভাবলে মৃত্যুকেও জিবীত মনে
হয়। অর্থাৎ, আর কোনো কথা নয়, বাতিল কোলাব্যাঙের ডাক পুষতে পুষতে
আদিমযুগের বর্ষা নামুক... ঝরে পড়ুক বাড়ি থেকে বিতাড়িত ঠাকুমাদের
কোলে--কসাই এর দোকানে নির্জন পড়ে থাকা মাথাহীন সমাজে!
আমরা ঠিক হয়ে গেলে শুকোতে দেওয়া পেণ্ডুলাম ঘরে তুলে রাখব...
সারাজীবন
২
এমন সতর্কদিনে শ্বেতী
মাখা শরীরে
পাকা চুল বেছে দিচ্ছে
হাবরা স্টেশন... মানুষের ঢল নামে, বেলুন ফুলিয়ে
কেউ দীর্ঘশ্বাস উড়িয়ে দেয়। অথচ নির্দিষ্ট
দূরত্বে গেলে স্থির হয়ে যায় সব। যেন কোনো
নতুন দোকানের কচুরির গন্ধ পেয়ে যাচ্ছি।
এও হচ্ছে সিরিয়াল
শুরুর আগে বানিজ্যিক বিজ্ঞাপন...
তুমি মনে করো, দম দেওয়া গলির শরীর... অথচ স্টিমার ছেড়ে গেলে কলমির
ডগাগুলি ভেঙে যায়।
মনে করো, সেই পরিস্থিতি, যখন পাথর ঠুকতে গিয়ে ভালোবাসা কষ্ট
পেয়েছিল... তারপর হাত ধরে এঁকেছিলাম পশু-পাখি-গাছপালা, শিকারির
কৌশল...
আমাদের বজ্রদেবতা
গো,
তোমাকে বুনো সবেদা চড়াবো। আমাদের পাঠ দাও পৃথিবীর মাধ্যাকার্ষণ শক্তি... কেন্দ্রে যাওয়ার শূন্যতা---এইসব কুয়ো থেকে সংসার
তুলে আনা। তুমি
সেখানেই ঝুঁকে দেখো, গর্ভবতী মহিলার যোনি থেকে বীজ বেড়িয়ে আসছে। আমরা সঙ্গম ভেবে নিচ্ছি কেউ কেউ... চিৎসাঁতারে প্রিয়তম দারুচিনির স্বাদ পেয়ে যাচ্ছে মানুষসকল।
এভাবেই আমাদের চলাচলগুলি
পর্যটক হয়ে যায়... কেউ ভাবে ধর্মের জাল কতটা হিসেবি। আমি কিন্তু শোল মাছের বাচ্চা দেখে এই প্রথম
অনুভব করলাম, যিনি বাবা তিনি আটকে আছেন মশারির জালে। তুমি সন্ধ্যায় চায়না-টর্চ জ্বেলে কী খোঁজ শিকারি? আমরা বিড়ালযাজক,
গোঁফগুলি দয়াময় হচ্ছে না। বরং এই মুহুর্তে সিগারেট ফুঁকি, নীল যন্ত্রণায় গাছেদের ছায়াসকল কুড়িয়ে এনে ফ্রি-স্ট্রিটে বিলোই।
এইমাত্র যে ডাহুক
তোমাদের চমকে দিলো, তারও লোভ হয় গুহামানব সেজে বৃষ্টিকে উপভোগ
করার...
তবুও তো অদৃশ্য নাবিক, মাথা ভর্তি সাদা বীজ তার,
নোঙোর চিন্হটিকে
ফেলে রেখে পালিয়ে এসেছে। একদিন
জীবাশ্ম-কম্পাস খোঁজ দেবে পাহাড়ি সন্ধ্যার... পেণ্ডুলাম
ঝুলবে কোনো পৃথিবীর প্রাচীন গ্রামে। এবং আমরা
তার পকেট হাতড়ে পেয়ে যাবো হারমোনিয়াম, একটি গান, ডলফিন ও আমোদিত নদীগুলির সাগর। তখন সেই ইনকা সভ্যতা থেকে কুড়িয়ে আনা প্রজাপতি
প্রতিটি গোলাপবাগান চোষে বেড়াবে... আমরা ছোট শিশুটির মতো চিত্রল ছুঁয়ে
হাততালি দিয়ে উঠবো ভরা সভ্যতায়...
মিত-এর পরিবর্তে মিতকেই ভাবছি
১
তোমার কথা মনে পড়লে
কে যেন জাগলিং করে
সার্কাস থেকে পালিয়ে
আসে সাদা পেঙ্গুইন... কোথাও অন্ধকার নেই তার। সমস্ত শরীর নিয়ে অলিগলি-বাদামতলায় আড্ডা মারে... তুমি তাকে জানালা খুলে দেখাও অসুস্থ কোমড়...
চিরকরুন সাইকেল চেপে
বেড়িয়ে পড়ে তখন পাম্প-হাউস থেকে হৃদয়পুরের
অগভীর জঙ্গলে... যেখানে শীতল মাফলার ভিজে উঠছে, ভারী হচ্ছে পাকা সূর্য!
অথচ বরফের কথা ভাবলে
তোমার নামে প্ল্যাকার্ড সাজাই। স্টেশন
ছাড়ালে ভ্যান-এর গোজামিল। এই সমস্ত তোয়াক্কা না করে সেভেন-আপ হয়ে ওঠে শীত!
বরং নাচ শুরু হোক...
হেডফোন কানে গুঁজে
উত্তাল হিটসং-এ দেদার নাচ...
তারপর তোমার হৃদয়ের
চোরাকারবারে বাজাও আমাকে... আমি সরল শিশুটির শোয়া নকল করে তোমার প্রসারিত
ফুলের স্কার্টে শুয়ে থাকবো চিরকাল--- অথচ চুমু দেবো না কোত্থাও...
কতকাল যে নকল করিনি আমায়...
২
দেখছি কাটা খাল অতিক্রম
করছে লাভ-সাইন! কিংকর্তব্যবিমূঢ় এই সিগন্যালের নীচে দাঁড়িয়ে,
মোজার দোকানে গেলে কি মজা হতে পারে? কী কী
হলে গলিতে পাড়াতুতো-অন্ধকার জ্যোৎস্না ছড়াবে? বরং নিজেকে ডিসেম্বর-এর দেবতা ভাবি। শহরের একাকি নারকেল গাছ হয়ে উঠুক ঝাউ... প্রিয় কিছু আঙুলের প্রতিনিধি ছুঁয়ে মানচিত্র গঠিত হোক নতুন পৃথিবীর---আমাদের দোনামোনা ভালোবাসা।
কিন্তু দেখো তোমার
তুলোর মিস্তিরি তার যন্ত্রণা ফাটাচ্ছে যন্ত্রে... 'ট্যাং' শব্দে জানান দিচ্ছে এখন শীতকাল। তখনই অক্টোবারের আবহাওয়ায় কলোনী মোড় ঘুরে
এসে দেখি তুমি ন্যাশপাতির মতো সর্বক্ষণ হয়ে উঠছ... আর, ছোঁচা বিড়ালের মতো লাফ দিচ্ছ আমারই ভিতর থেকে।
যেসব কবিতা বোঝা যায় না
এখানে এলে নিভে যায়
রেলগাড়ি। কলোনির
এখানেই রেলব্রিজ পুরোনো হয়ে গেছে। অথচ কিছু
শামুক বিক্রেতা ফুল ফুল হাতাকাটা জামায় আমাদের দেখছে। তাদের মুখে 'পিক'এর রাজনীতি। তাদের বলিরেখা ধরে হেঁটে যাচ্ছে উদ্বাস্তু
শিবির রোগা-সোগা পেন্টুল সমাবেশ... প্রতিটি ঝুপরির তিরপোলে লেগে আছে শেষতম হুইসেল...
আমি তোমাকেই সেইসব
অর্জিত আবিষ্কার বোঝানোর ঢঙে চমকে উঠছি। অথচ মানুষের পাড়াতে এলে মানুষ
ক্রমশ বড় হয়ে যায়।
পেড়িয়ে কালবার্ট
পেড়িয়ে কালবার্ট
একাকি চলে যাই সমাজবিরোধীরর আহতপুর--
কোথাও থামে গান রেডিও
যানজট পেতেছে ইস্কুল রাস্তাঘাট
শেখানো দরকার একটি
কবিতাও লিখি না আমি তবু, নোটিশঘর--
যে পথ নেমে গেলে, শালিখ পালকেরা অটুট মেঘেদের তেজ কমায়।
প্রথম প্রেমিকার
কথাটি পড়ে মনে প্রভাত চুম্বন ধুপকাঠির
অথচ গাছেদের শরীর
ভিজে গেলে ক্লান্তি মোছানোর থাকে না কেউ
বাড়িতে পোষ মানা, হঠাৎ ছিঁড়ে যায় জবার মনছাল পুংকেশর
এ পথ ধানিজমি মাঠের
বিয়োগিনী জীবন এক লিটার--দেখি না আর
তবুও দেখে যায় ভূতের
ভায়োলিন বাজায় বাতাসের অলীক কেউ
এসো তো একদিন মাঠের
মাঝখানে পটল ফুল ছোঁবো পরাগমিল
হায় সে কৃষিজল পড়ে
না একটুও তালের দেহভার মরচে যায়
আমার গোপনতা ছড়ায়
সন্দেহ ছড়ায় সত্যতা মেহগিনির --
![]() |
ছবিঃ মনোজিৎ |
মন্তব্যসমূহ