মলয় গোস্বামী



মলয় গোস্বামী
ডোবারম্যান

কে বলে ছন্দে লিখি? পশুর মতন গন্ধে লিখি।
গন্ধে ধন্দে পরমানন্দে ভালই আছি , কয়েন দাদা?
যেখানেই রক্ত দেখি -- নাক দিয়ে হই গোয়েন্দা-দা
তারপর তীক্ষ্ণপায়ে উৎসমুখে ছুটতে থাকি।

আমার এই পা উড়ে যাক, উড়ুক মাজা, নাকটা থাকুক
পুড়ে যাক চোখের মণি , হাত বেঁকে যাক , নাকটা থাকুক
পুড়ে যাক চুল, দূরে যাক দন্তরাজি , নাকটা থাকুক।

এবার তো হাত-পা ঝাড়া? বলুক এবার নিন্দুকেরা
কীভাবে ব'লবে? হাওয়ায় হাওয়ায় ব;অলবে নাকি লক্ষ্মীছাড়া?
রক্তের সড়ক ধ'রে নাক-টা ভীষণ উৎসগামী।

কে ব'লে ছন্দে লিখি? গন্ধে লিখি। ভুল ভাঙছে?
দেখে  যাও ডোবারম্যানের নাকের ফুটোও হার মানছে।

 ভাসপক্ষী

প্রেমিকের প্রতি প্রেমিকার লক্ষ্যভেদের  প্রয়োজন বর্ণনা
"চাকরী কোথায় ? চাকরী কোথায়?" প্রেমিকা লাথি মারে
কুসুম কুসুম  ঢিসুম ঢাসুম ঝাঁপ দেয় অঞগারে।
হাতের বাঁধন পিছনে ঢলে চম্পাকলিকা
মুদ্রাহীনা বাঁচবেই নাঃ এই তো কলিকাল।

অঙ্গশীতল যায় রসাতল স্বপ্ন -কোমল চূড়া
স্বপ্নে ভাসে সোনার থালা , বৃহৎ মাছের মুড়া।
রসাতলের কলের তলায় মুন্ডু ঠোকে  খোকা
রক্ত মেখে দাপিয়ে বেড়ায় স্বপ্ন- প্রেমের পোকা।
ভাসমান সেই মাছের মুড়ো কামড়ে ধরে কলি
ঝুরো ঝুরো ছিবড়ে পড়ে, ঝুলন্ত হয় নলি।

প্রেমিক কতৃক ঐকান্তিক শর যোজনা
অঙ্গচিন্তা , গন্ধচিন্তা , ওষ্ঠচিন্তা ছেড়ে
ভাসপক্ষী সম্মুখে তারঃ ভোট্ দেরে,  ভোট্ দেরে।

লক্ষ্যভেদান্তে উপঢৌকন প্রাপ্তি
জীবন যতই ক্ষতের পাহাড়, চন্দ্রালোকও আসে--
এইভাবে এক সন্ধ্যাকালে জীবন-টা উদ্ভাসে।
একটুকরো চাঁদ মেখেছে বিছানার এক কোণ
লাথির মাঝেও দোদুল্যমান অলীক টেলিফোন।
ছায়া ভেঙেছে , মায়া এসেছে, নাড়িয়ে দিলো কায়া
থির থির থির কাঁপতে থাকে তক্তপোশের পায়া।
হায় প্রেমিকা মরীচিকা মাগুর মাছের ঝোল
শিঙা, ভেঁপু, নাকাড়া বাজে , জগঝম্প খোল
তবু যে তার  অঙ্গশীতল হায় রসাতলে দেহ
বরফ সমান স্থৈর্য  হাঃ হাঃ ! জীবন্ত ? সন্দেহ!
চূর্ণ অলক যতই ওড়াও, পোড়াও যতই ঠোঁট
ভাসপক্ষী সম্মুখে তারঃ ভোট্ দেরে,  ভোট্ ভোট্ !

অনিঃশেষে জীবন  নির্বাহ
 "চাকরী কোথায় ? চাকরী কোথায়?" প্রেমিকা লাথি হাঁকায়
শরীর যতই ঘনিষ্ঠ হোকঃ হৃদয় থাকে ফাঁকায়!




চিরখরা

আমি তোমাদের দিকে পিঠ ফিরিয়ে রয়েছি অভিমানে । সামনে
পাতাখসা গাছ। ... কত হাত দিয়ে ডাকছে পাখিকে! মরা আঙুলগুচ্ছের
ওপর দিয়ে গুনগুন করে মেঘ চলে যাচ্ছে। বাংলার মেঘ।

তোমরা আমার পিঠ দেখতে পাচ্ছো?... মাঝখান দিয়ে দ্যাখো
অলস আর ভারী, দুঃখী হয়ে নেমে গেছে  শিরদাঁড়া।
শিরদাঁড়ার দুইপাশে দুটি বাঙ্গালাদেশ। একটার গহ্বরে রয়েছে হৃৎপিন্ড ।
আর একতার ওপর কান দিয়ে শোনো  ফুসফুসের কথা।

যে যা-ই বলুক, আমি জানি শিরদাঁড়া তুলে ফেলে দিতে কোনো দিন
পারব না। তাই, পাতাখসা গাছের দিকে তাকিয়ে থাকি। মা ব'লে
ডাকি। মা-র রোগা আর গিঁটময় আঙুলগুলো
মেঘ-কে আয় আয় করে। কবে যে বৃষ্টি নামবে আমাদের জন্যে।

পথ গিয়েছে

ভোর হলো । আজ সকাল সকাল ওঠো। ঘর কত নোংরা।
দু'টো আরশোলা -কে প্রদীপের ওপর মরে থাকতে দেখছি।
একটু পরেই তো সবিতাদিদি চলে আসবে। ওর জন্যে মাটির  ভাঁড়ে
সার্ফ রেখো। ওমা! চেয়ে দ্যাখো তোমার মুখে কত ময়লা!
বুকেও ময়লা দেখছি। কাল রাআতেও তো স্নান করে শুয়েছ।
তবু অত ময়লা কী ক'রে এলো! কেঁদো না । কেঁদো না ।
এবার ভেতর দিক থেকে পরিস্কার করো। আর পরিস্কার
করো ওই প্রদীপকে। দেখবে একটি সলিতার পথ কেমন
জীবন জুড়ে, কীভাবে জেগে ওঠে।

জামা

নিজেকে  হ্যাঙ্গারে রেখে জামাটাকে পথে বের কোরি।
বেশ লাগে চতুরালি, বেশ লাগে চিটিং বিলাস

সব দেখে রাজপথে হেঁটে যায় মলয়, সব চেনে মলয় গোস্বামী,
আসোলে জামা-ই হাঁটে জামাই কেতায়; হাওয়া এসে ঢেউ দেয় তারে।
কোনো নারী পাশে এলে জামাটা সরল ভাবে চায়, যেন কিছু বুঝিতে পারে না,
কিন্তু ভিতরে নাচে আদিম কামনা। বাসে যদি বিমলের সাথে দেখা হয়
হাসে জামা, বলে তাকেঃ "তোর কথা প্রতিদিনই ভাবি।" অথচ প্রকৃত কথা
কোনো দিন-ই ভাবে না তাহাকে; পদবি-ই ভুলে গেছে জামা।

 হ্যাঙ্গারের দাঁড়ে বোসে আশেপাশে দেখি, সবাই -ই  হ্যাঙ্গারে ঝুলিতেছেঃ
গ্রামে, পথে, শহরে, আকাশে-- মৌমাছির ঝাঁকে ঝাঁকে-- অফিসে, বৃক্ষে, নভে
                                                                         মন্ত্রী পরিষদে
সর্বত্র হেঁটে চলে নরহীন জামা; শুধু জামা নড়ে চড়ে মানুষের মতো
জামা যাদের নেই, তারা শুধু ভিক্ষে চায় জামাদের কাছে, আর হায় প্রতারিত
                                                                                   হয়

বেশ চলে চতুরালি  : বেশ চলে   চিটিং-বিলাস!!

মন্তব্যসমূহ