সৌমিত্র চক্রবর্তী


সৌমিত্র চক্রবর্তী
এই টেবিলে কোথাও

এখানে সন্ধ্যে নামছে,
কমলালেবু শরীর গোলচে টেবিলে
রাত্রির নিস্তব্ধ আঁচড়।

এক মাঠ সোনালী ধানের মত,
উপোসী থালায় হঠাৎ পায়েসের মত,
কোথাও উচ্ছাস একে অন্যের গলা জড়ায়।

কোথাও বিষন্ন বাসে
দুই যাত্রীর বিষাদচারণ-

-আমরা এখানে কেন?
-জানি না, হয়তো চালক জানে।
-এই পার্ক নিয়ে একদিন
 আমি কবিতা লিখেছিলাম।
-আজ…!
-টেবিলে কোথাও যেন
 একটা এবং একটাই ভাস্কর্য ছিল,
 আজ দুটুকরো হয়েছে।
         
সন্ধান

ফিরে আসি সে দেউলে
বর্ষণমুখর গজলের দিনে
দু অঞ্জলি
সাহস ও সংকোচ
সম্বল,
অর্পণের সুতপ্ত আশ্লেষে
ভিজিয়ে
তোমার অন্বেষায়।

দিনকাল
আজকাল রক্তে জলের পরিমান কমছে
আশেপাশে দ্বিপদ মানুষেরা
ক্রমশ অষ্টাবক্র ভাবনায়
ব্যস্ত অনুক্ষণ,
এখন কবিতা সাঁতার কাটে
খোলা পয়ঃপ্রনালীর দূর্গন্ধ পাঁকে।
যে কোনো একটা আগাছা ধরেই
চটজলদি খ্যাতির নেশায় মত্ত পরিপাশ,
বড় ঘুম পায়
নৈশর্গিক ভাবনারা পালাতে চায় আঙুল ছাড়িয়ে,
তবুও সমস্ত ভুল ভাবনারা
এখনো ঘিরে চক্রব্যুহ পারেনি গড়তে,
এখনো সূচ্যগ্র রন্ধ্র অবশিষ্ট,
এখনো বাঁচার চেষ্টায়
জল ঢালি রোজ রক্তের কেন্দ্রস্থলে।

মানুষ সোজা হও হে-

       
ভারতবর্ষ
আজ চৌরাস্তার মোড়ে
আমার সাপ্তাহিক সব্জীবাজারের অর্দ্ধেকেরও কম
ছেঁড়াখোঁড়া ফেলে দেওয়া দৈনিকের পাতায় সাজিয়ে
এককোনে গুটিশুটি দুটি আর্তচোখ।
চতুর্দিকে হট্টগোল,ব্যস্ত পায়ের আনাগোনা
গাড়ীর হর্ণ,বাইকের ধমকানি,সাইকেলের টিং টিং
পুলিশের চোখ দেখেও না দেখা;
পুলিশেরও দয়া হয়…

ভাঙা তোবরানো গাল,একমাথা বরফ চুল
ফরসা ঝুলে পড়া চামড়ার নীচে লিকলিকে হাত পা
এককালে ভারী সুন্দরী ছিলেন।
হয়তো বাড়ীতে কেউ নেই
হয়তো বাড়ীই নেই
হয়তো বা…

চারিদিকে ভয়ংকর শব্দস্রোতে একমাত্র বাক্যহীন
কতদিন ভাতের মুখ না দেখা
আমার ভারতবর্ষ, ভারতবর্ষ মা আমার।
                     
         
আজ দিনের প্রান্তে
বিস্তীর্ণ মালভূমির মাঝে
ঝাঁকড়া ফুলে ভরা কৃষ্ণচূড়া হয়ে
মন দুলছে দোদুল,
আজ এবং হ্যাঁ আজই
আমার প্রস্তাবে মাথা হেলিয়েছো তুমি।

রাত্রিকে সতীন করে নেবে?
উত্তর নেতিবাচক হতেই হবে,
কিন্তু তুমি এবং শুধু তুমি
আমার কথায় মাথা হেলিয়েছো।

দুপুরকে যদি দিনের সাক্ষী হতে বলি
রাত্রি ফুঁসে উঠে মামলা রুজু করে,
আর পাঁচটা আঙুল মাপে একই
শুধু তুমি ছাড়া,
কারণ তুমি এবং শুধু তুমি
আমার প্রস্তাবে মাথা হেলিয়েছো।

দীর্ঘ কত মাস কিম্বা বছর
সম্পর্কে কত ঝড় জল
কত টানাপোড়েন উথালপাথাল-
আমি তো কতবার চলেই গেছিলাম,
কিভাবে যেন ফিরিয়ে এনেছো তুমি
ঝাঁকড়াচুলো পাগলকে
সাহস-বকুনি-অভিমান দিয়ে।

আজ সমুদ্র শান্ত-
চরাচর নির্বিঘ্ন বিশ্রামে ঢলেছে,
কোথাও উত্তাপের লেশমাত্র নেই,
কারণ আজ যে তুমি
আমার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছো।

আজ তুমি এবং শুধু তুমি  রাজী হয়েছো
বাকী জীবণ একান্ত মালভূমিতে
আমার পাশে রাধাচূড়া হতে।

ছায়া ছায়া আবছায়া

ইউনিকর্নের সন্ধান? সে অবসর কোথায়?
দুবেলা দুমুঠোর সংস্থান
করতেই সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত উধাও আলোকগতিতে।
অন্ধকার ঘনাতেই সম্পূর্ণ অবয়ব ছায়া,
ধার করা ফাবরার হাতলে রাখা সকাল হাত ছায়া-
ঘাম মোছা ছেঁড়া গামছায় বাঁধা খালি পেট ছায়া-
সুগন্ধী আইনসভার নিয়মে অনন্ত অপেক্ষায় দাঁড়ানো
কেঠো ভূতুরে সরু সরু পায়ের দল ছায়া-
ছায়ার আবছায়া নেশায় ভবিষ্যত শব্দটা অজানাই এখনো।
সুবেশ গল্পের ছমছম বুকে আঁকা
ভূত পেত্নীর দলও মায়াময় স্পর্শ দেয়,
কড়া অনুশাসনে বর্তমানের এস্ক্যালেটর ব্রাত্য করে ভূতকাল;
পঞ্চবার্ষিক মদের হুড়ুমে আসল ভূতের কূল
থেকে যায় দামী প্যাডে লেখা বক্তৃতার ছায়ার আড়ালে।

(* অলচিকি ভাষা থেকে গৃহীত ফাবরা = কোদাল, হুড়ুম = উৎসব)

মন্তব্যসমূহ

Soumitra Chakraborty বলেছেন…
ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানালাম।