অর্ঘ্য মণ্ডল


অর্ঘ্য মণ্ডল
রাত্রি নিজেকে লিখছে’র বিভাব কবিতা

যদি এই নিচু মেঘ, ওই নিচু অন্ধ শ্রবণে
হা-অন্ন বশত আলো মোছা প্রদীপের ঠোঁট গোনে

যদি উপ-পাতালের তুমি ঝড়, রাত্তির সমান
চৌদিকে নুপুর বাজে, আর মরুচোখে অর্গান

যদি আরো জলছোঁয়া, ঠোঁট দিচ্ছে অন্য ঠোঁটে আলো
সারা-বিশ্বে না, আমার হাতেই ভ্রমর চমকালো

জ্বেলেছে সবুজ শাড়ী পাহাড়ের করতল দেশে
যুদ্ধে যাব না আজ, ঘুমোলাম যোদ্ধার বেশে

মাঝির বন্দুক

ঝড়ের নাম ঝর্ণা রেখো
ধূসর রেখো নদীর নাম

তীরের মনে দাঁড়িয়ে আমি
আগের মতো বধির না

শুনতে পাই - তোমার রাগ
ফুলের চেয়ে স্পর্ধিত

বর্ষমান মানুষ-জন
মধুর স্বরে দোষ দিত

দোষ পেয়েছে ক’পাদ তোমার
আলয় ভেজা মুখখানা!

-আকাশ পথে আটকে থাকা
চিঠির নাম ‘শুকতারা’

মাঝির বন্দুক ২

আমাদের ছোটো নদী এখন আর ছোটো নয় ঠিক
নৌকা ভাসাতে পারে এক সাথে বিভিন্ন প্রেমিক
কখনও উথলে ছোঁয় গাছে গাছে ঘুমানো কোকিল
হাটু জল না, এখন পার হয়ে যাওয়া মুশকিল

একদিন যাকে আমি কোলে নিয়ে এখানে- ওখানে
ঘুরেছি নানান ভাষা নানা-মত নানা পরিধানে
এখন তার যা স্রোত, বাব্বারে! নিকটে যাওয়ার
আমার সাহস নেই- ভেসে যেতে পারে সংসার

নিকটে যাওয়া তো দূর, ভাবলেই আমি ভেসে যাই-
ভেচাল, ভেরীর বাঁধা, মনে থাকে নদী ধারণাতে
তাই বহুদূর থেকে সামলাতে পারি মোতামুটি
বহু দূরভাষে বলি,- ‘তুই না ভীষণ হিংসুটি!’

বড় হতে থাকে রোজ আমাদের ছোটো-ছোটো নদী
পাগলনৌকা থেকে পাগলার দুয়ার অবধি

তোমাকে উৎসর্গীকৃত কুকাব্য

চেয়েছিলাম একটা কমলালেবু গাছ
এই জল হাওয়া মাটি শুশ্রূষাতে সে রাজি হয়নি, অগত্যা
পরিত্যক্ত হারমোনিয়ামের স্মৃতি হয়ে মিলিয়ে নিচ্ছি
দূরের রবীন্দ্রসঙ্গীত, আর আমার সংক্রমিত অসুখের চামর
ছুঁয়ে দিচ্ছে আগামী জন্মের স্বরলিপি

স্পর্ধা থেকে হারিয়ে যাওয়া মল্লযুদ্ধ
পানসি থেকে হারিয়ে যাওয়া তলোয়ার
ফেরত চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দিনের পর দিন
লন্ঠন এগিয়ে দিয়েছি মৃত্যুর দিকে, এখন আর
চিরহরিৎ পরিচয় দেওয়া! তবুও একটি গাছ-
শরীর ভর্তি পাখি নিয়ে ব্রিজের মুখে অপেক্ষা করে সারারাত
ব্রিজের অপার থেকে সকাল এগিয়ে এসে বুঝবে তাকে,
তার বিবর্ণ বসতির মধ্যে নষ্ট সন্তান-সম্ভাবনা
কসাইখানার আক্রোশে জেগে উঠবে আগামী দিনগুলোয়, অভিমানে
ডিম ভরা জননী মাছের অন্তর
বেরিয়ে চলে যাচ্ছে ঘুম থেকে, অসহায় আমি আবার তোমাকে
ভাবতে শুরু করেছি-

এক জেলখানার ভেতরকার শিমুল গাছের নীরব বিস্ফোরণগুলো
তুলো হয়ে উড়ে যাচ্ছে
তোমার মুখে

নদী পেরোনোর কবিতা

সিধু পাগলের কাছে কেউ কারও পরিচিত নয়
অসম যাত্রাপথে রোলটি হাস্যের নাকি শীতকারপ্রসূত
গাছের সমাজে গিয়ে সেভাবে জানতে চাইছে না
ঝোলায় লুকোনো ডাইরিতে
দেবতার গোঁফদাড়ি এঁকে
চেষ্টা করছে কামানোর, আর পারছে না বলে
দেবতার কষ্ট দেখে চীৎকার করে কাঁদা সে খুব জরুরী মনে করে

সিধু পাগলের কাছে মানুষ আসলে রঙ খেলা, স্নান-বিরতির পরে পুনরায় জেগে ওঠে
রঙে আর জড়জগতের অনুভূতি জীবদেহে সঞ্চালিত হলে
বেজে ওঠে তার হাতে তালি

শতছিন্ন মশারির ডাকনাম কম্যুনিস্ট রেখে টাঙিয়েছে শনি মন্দিরে
সে বোঝে অন্যের চেয়ে তার এই উচ্চতাটুকু
স্বভাব-বন্যতা ফেলে পোষ মানা নানা কুকুর
সে ধরে পেটাতে চায়... থুতু দেয় ছুটে-ছুটে গিয়ে

সে জনসভার দিকে তেড়ে যায় শিশ্ন বাগিয়ে।

মন্তব্যসমূহ