আইরিন সুলতানা


আইরিন সুলতানা
ঈশ্বরের অপঘাতে মৃত্যু এবং শোক প্রকাশ

আর একবার বিশ্বাস রাখি ঈশ্বরে!
যিনি বলেন হও,
আর মৃত্তিকা হয়ে যায় আদম,
অগ্নিগোলক  বসুন্ধরা।
মিহিন সুতো হাতে পুতুল নাচান যিনি,
জন্ম দিয়েছেন, মৃত্যু দিয়েছেন  তিনি।
বিশ্বাস তো তাতেই,
বিশ্বাস তো তাকেই।

অবিশ্বাসীরা দুতিয়ালিতে মুখিয়ে-
তিনি নেই! নেই! নেই!
ঈশ্বর মুচকি হেসে বলেন,
রে পামর! আমি তো সেই!

মূর্খরা বলে, কী প্রমাণ তার?
ঈশ্বর অহং অবিচল, সর্বত্র বিচরণ আমার।
মূর্খরা বলে ফের, কী প্রমাণ তার?
ঐশ্বরিক খেলা শুরু হয় এবার।

ঈশ্বর বিভাজিত হয়ে মিশে যান
স্যাঁত স্যাঁত দেয়ালে,
ঘরমুখো মানবের যাত্রাকালে,
ভাঙ্গা রাস্তায়,
বাহনের চাকায় চাকায়,
বৈঠার ডগায়,
পাহাড়ের ধূলিকনায়,
বারুদের আস্তানায়।

কেবল ঈশ্বর জানেন সময় কখন-কবে ঘনাবে কার!
মানবের আগামির দিনরাত্রিলিপি কার্যত বেকার।

আড়ালে ওঁত পেতে থাকা ঈশ্বর পুন: পুন: বলে ওঠেন, ’হও’,
আর তারপর পথভ্রষ্ট চাকা,
দেয়ালের ধ্বস,
নৌকা ডুবি,
পাহাড়ে ঢল,
রক্তস্নাত হোলি...
হয়ে যায়!

কী এক ক্রুর পৈশাচিকতায় ঈশ্বর হন উল্লসিত
দেখো! দেখো! আমি আছি, এ কথা আবারো প্রমাণিত!

আমরা অক্ষম মানবেরা তাকাই নিষ্পলকে,
হায়! আমাদের ঈশ্বর অপঘাতে মরে পড়ে আছে!
মূর্খরা ফের জয়ধ্বনি তোলে, তিনি নেই! নেই! নেই!

আর আমরা,
শোকাহত সৃষ্টির সেরা মানবেরা
হাতড়ে হাতড়ে ঈশ্বর চলেছি খুঁজে -
প্রতিটি সদ্যজাত শবে ...!


উইজার্ড অফ ওজ

ঈশ্বর বিমুখ ছিলাম না কোনকালে,
বরং কারো অবিশ্বাসে সস্নেহে হেসেছি,
চোখ বন্ধ করে কারো প্রার্থনায় করেছি নীরব যোগদান।
আমি ওই পূজারির চেয়েও দু’বার বেশি জপি ঈশ্বরকে।
কারো মোনাজাত তোলা হাতে আমিও জমা রাখি
সকল পবিত্র নাম একে একে।
আমাকে ভুল বুঝো না মানুষ,
আমি ঈশ্বর বিমুখ ছিলাম না কোনকালে;
আমি কেবল ’তার’ সাথে পদযাত্রায় চলতে চেয়েছি।

মেঘপথে হেঁটে হেঁটে আমি আর ঈশ্বর।
আমি। আমি কে? আমি তুচ্ছ মানব, তবু সৃষ্টি সেরা।
আমি বিনীত,
আমি উদ্ধত।
আমাকে ভুল বুঝো না ঈশ্বর।
পুরো মানবজন্ম ধরে আমার কেবল জানার ছিল যৎসামান্য  কিছু কথা।
এই যেমন, যখন পাঁচ দিন মৃত্যুপুরিতে ধুকপুক প্রাণে বেঁচে থাকা মেয়েটা
জীবনের হাত ছুঁয়ে দুম করে মারা যায়...,
ঈশ্বর, তখন কি নিজেকে অক্ষম লাগে?
একটা বেঁচে থাকার আকুতির মৃত্যুতে আরেকটা মানুষ যখন ছুটে এসে কাঁদে,
ঈশ্বর, তখন কি নিজেকে পরাজিত লাগে?
যখন অপার্থিব ক্ষমতা অকেজো হয়ে যায় মানব অনুভূতির কাছে,
ঈশ্বর..., তারপর কি মনে হয় এবার মানব হয়ে উঠি?

আমি আর ঈশ্বর- অসম সত্বা, অসম অনুভূতি।
আমি আর ঈশ্বর- মেঘপথে হেঁটে হেঁটে।
আমি মেঘের গায়ে গায়ে এঁকে যাই মানব অনুভূতি;
ওগুলো পেঁজামেঘ হয়ে ঘিরে ধরে ঈশ্বরকে।
আমাকে ভুল বুঝো না ঈশ্বর,
আমি ’তুমি’ বিমুখ ছিলাম না কোনকালে।
পুরো মানবজন্ম ধরে আমার কেবল জানাবার ছিল যতসামান্য কিছু কথা;
যতবার অক্ষম হয়েছো, মানুষ ধরেছিল হাত জীবনের...।
যতবার পরাজিত হয়েছো, মানুষ বলেছিল ’আছি’।

আমাকে ভুল বুঝো না ঈশ্বর,
তবে আমি মানবমুখী ছিলাম চিরকাল।

মন্তব্যসমূহ