অনুবাদ কবিতা- ২// কবি: লুইস রাউল কালভো //দেশ: আর্হেন্তিনা



অনুবাদ কবিতা- ২
কবি: লুইস রাউল কালভো
দেশ: আর্হেন্তিনা
ভাষা: স্প্যানিশ

লুইস রাউল কালভোঃ লুইস রাউল কালভো একজন কবি, গীতিকার ও প্রাবন্ধিক।  জন্ম ১৯৫৫য় আর্হেন্তিনার রাজধানী বুয়েনোস আইরেসে। ১৯৮৮তে 'খেনেরাসিয়ন আবিয়ের্তা' পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। ২০০০ থেকে 'দেক্লারাদা দে ইন্তেরেস কুলতুরাল দে লা সিউদাদ দে বুয়েনোস আইরেস' পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। তাঁর কবিতা লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত তাঁর কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ: 'যন্ত্রণাবিদ্ধ পরিত্যক্ত সময়' ( তিয়েম্পো দোলোরোসামেন্তে রেসিগ্নাদো, ১৯৮৯), 'ধাত্রীর ঘোষণা' (লা আনুনসিয়াসিয়ন দে লা পার্তেরা, ১৯৯২ ), 'এশিয়ার পথপ্রান্তর' ( কাইয়েস আসিয়াতিকোস, ১৯৯৬), 'আত্মার গভীর পটভূমি' ( বাহোস ফোন্দোস দে আল্মা, ২০০২), 'যাযাবর সৌন্দর্য' (বেইয়েসা নোমাদে,২০০৭), 'অবগাহন, এখানে-ওখানে' ( নাদা পোর আকি, নাদা পোর আয়িই, ২০০৯), 'অপবিত্র অনিশ্চয়তা' ( প্রোফানা ইনসের্তিদুম্ব্রে, ২০১০) ।
অনুবাদক: মৈনাক আদক


সৃষ্টিছাড়া 
( মূল কবিতা: লা গ্রোতেস্কা )

সৃষ্টিছাড়াটা সায়ানাইডের পাথরে মাথা কুটে মরে
আগুনে নিক্ষিপ্ত, উচ্ছন্ন বোধের
উন্মত্ততায় হতাশ
যেন কুজ্জ্ঝোটিকা।
নম্রতার আলিঙ্গনে দেবদূতের কেশদাম
চুম্বন করে তার সুডৌল ডানাজোড়ায়, জিরিয়ে নেয়
দৈত্যের পাঁজরে।
কখনোসখনো আমরা মুখোমুখি হই
ছুরির ডগায়, বাস্তুহারা হই
বৈমাত্রেয় নিষ্ঠুরতায়।

দয়িত
( মূল কবিতা: লো আমান্তেস )

সুখ ও সূর্যাস্ত, আচারবিচারের গর্ভঘর
পর্যটকের সুটকেসে ভালবাসার তেরছা পথ।
কবরীতে ঝুলে থাকা তার যন্ত্রণা কুকুরের চিৎকারে দুমড়েমুচড়ে যায়।
ফাঁপা বিদ্বেষ, প্রাচীন অভিশাপ।
কারা তুলে নিয়ে গেছে অন্ধ কুকুরটাকে
যে অন্ধকারে হাতড়াচ্ছিল আলো ?
কেউই আমাদের অস্তিত্বকে মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে না।
কিন্তু দয়িতেরা তৃষ্ণা নিবারণের স্বনির্বাচিত পরিক্রমার
উত্তেজনার জন্যও অপেক্ষা করে না।

[এই দুটি কবিতা 'ধাত্রীর ঘোষণা' (লা আনুনসিয়াসিয়ন দে লা পার্তেরা, ১৯৯২) কাব্যগ্রন্থে সংকলিত]

অমরত্বএক মুহূর্তের জন্য তার বসবাস আমাদের মাঝে।
ধর্মশালায় জীবনের বহমানতা, যেন স্থির। কখনোসখনো উতল  হাওয়া, ধর্মশালার বাইরে।
কুকর্ম আর অশুভ সময় কবিতার পিছু ধাওয়া করে।
জনারণ্যে হারিয়ে যাওয়া। এই সূক্ষ্ম ফাঁদে আমরা মাথা গলাই আর জীবনের লেনদেন থেকে সরে যাই বহুদূর।
আগুন... পবিত্র হৃদয় যা খুশি করতে পারে... সৃষ্টি বা ধ্বংস
জানি, তোমায় দিতে পারব না প্রত্যাশিত রীতিনীতি। তাই ভাবি, আমার গ্লানি থেকে তোমায় মুক্ত করে দেবো।
এই কর্মকান্ডে তোমায় চিনতে পারিনি। স্বীকার করি, তোমায় ঠিকঠাক চিনতে পারিনি কখনো।
কতগুলো হাত তাদের অপাপবিদ্ধতা খুঁজে পায় তোমার স্তনযুগলে ?
বাস্তবতার রহস্য উন্মোচনের জন্য মেয়েটা মাঝরাতে বেরিয়ে পড়ে। সবসময়ই পথের শেষে অপেক্ষায় থাকে এক পুরুষ। থাকবেও।

[কবিতাটি ' যাযাবর সৌন্দর্য' (বেইয়েসা নোমাদে ২০০৭) বইয়ে সংকলিত। মূল কবিতাটিও শিরোনামহীন]

বাস্তব জীবন 
( মূল কবিতা: লা ভিদা রেয়াল )

আসলে জীবন যেন এক অনুরক্ত
পৌরোহিত্য।
পাহাড়িয়া নগরে, সহস্র
ভক্ত তাদের আত্মা নিমগ্ন রাখে
দেহাগ্নি প্রশমনে
বিশ্বপ্রেমের সোনালি উদারতায়,
প্রাত্যহিক ধর্মাচার আদেশ আগমনের
অপেক্ষায়।
আমরা সবকিছুই সমর্পণ করেছি
ঈশ্বরের হাতে,
ড্যাফোডিলের দেবতায় ও পবিত্র গসপেলে।
আমরা সুন্দর ও পবিত্রই ছিলাম, আমাদের স্বর্গের
মাটিও ছিল ততোধিক  পবিত্র।
কিন্তু তুমি এসব ধ্যানধারণা আর আচারবিচার
পরিত্যাগ করেছিলে, বেছে নিয়েছিলে
জ্ঞানান্ধ আর প্রতিশ্রুত রাজাদের স্বাধীনতা,
নতমস্তকে  বিচরণ করো আজ
সূর্যাস্তের পুরু কুয়াশায়
হাত বাঁধা তোমার অভিশঙ্কী ভোজসভায়।

[ কবিতাটি 'এশিয়ার পথপ্রান্তর' ( কাইয়েস আসিয়াতিকোস, ১৯৯৬) বইয়ে সংকলিত]

মন্তব্যসমূহ

নাজনীন খলিল বলেছেন…
খুব ভালো লাগলো কবিতাগুলো। চমৎকার অনুবাদ।

অনেক শুভেচ্ছা মৈনাক।