তীর্থঙ্কর মৈত্র


তীর্থঙ্কর মৈত্র
রানু এক জ্বর

বাঁকানো কুলের ডালে একখানা রোদ উড়ে এলো।
আমার অসুখ নেই। ভালো হয়ে গেছি...

কটা দিন হৈ- হোই জ্বর, দুপুরে, বিকেলে , রোদে , গাছে,
পিয়নের চোখে , পথে, অসুখ চড়িয়ে গ্যালো দূরে...
 এই ঘর, এই মাঠ, জল, কোথাও ছিল না কিছু সুখ।
জলপটটি ,  পথ্য - পথ্য-জানলা কপাট ভেসে গ্যালো-
রানু- রানু- রানু জ্বর রৌদ্রের কপালে জড়ালো।
বায়ু- বাতিকের চোখে যে ভাবে জড়ায় নতুন প্রকৃতি,
যে ভাবে সমুদ্র গায়ে মেখে যায় শীতে; ছুটির হুল্লোড়।

এক চোখে নীল এক রানু-রানু নিভে থাকা জ্বর
গানের কলিতে , গ্লাসে, সাবানে স্মৃতিতে শুধু জ্বর
বিছানা, চাদরে, ঘরে, গোলাপে, ছবিতে ঘোর জ্বর
চিঠিতে, বৈয়ামে, হাতে, প্রতি দানা তাপে ও নিঃশ্বাসে

আজ ভালো আছি বেশ। কবিতা, বই-এ, কলমে
জ্বরের গন্ধটি রেখে  জ্বর চলে গেছে।

ভালো কি হয়েছে আমি পেরেছি কি মুছে নিতে সব।
একখানা সাদা বাড়ি, নাম , স্মৃতি, গ্রিল আঁটা ঘর,
ছাদের শীতের ফুল বিকেলের আলোমাখা মুখ
উল্লের চাদর আর কণা মাসী- কণা মাসী ডাক।
এখনও মোছেনি কিছু জ্বলে আছে ওষ্ঠের পর
যে দিকে তাকাই ফের উড়ে বসে রানু রানু জ্বর!

আমাদের অসুখ সেরে গেলে

তোমার অসুখ সেরে গেলে; আমরা বেড়াতে যাবো;
তোমার অসুখ সেরে গেলে চিঠি আসবে
                     নতুন ডাকপিয়ন নীল পোশাক পরা--
তোমার অসুখ আজ। তুমি সেরে উঠলে আমাকে কি দেবে?

আমি সেরে উঠলে বেড়াতে যাবো;- কৃষ্ণ চূড়ায়।
আমি সেরে উঠলে তারা আসবে; নতুন ঘাসের মতো-
আমার অসুখ আজ। আমি সেরে উঠলে
আমরা কি গোলাপ চারার জন্য লালমোজা কিনতে বেরোব?

আমরা সেরে উঠলে তাদের উপহার পাঠাবো লাল ঝুঁটি
তারা সেরে উঠলে চিঠি সবে; নতুন ডাকপিয়ন
             ডাকবাক্সে ভরে যাবে লুডিকাস ফুলে--
তাদের অসুখ এখন। ... তাদের বিছানা পাশে
             আমরা কি রেখে আসবো সবুজ গিটার?

তুমি সেরে উঠলে আমরা একটা খরগোশ পুষবো,
আমরা সেরে উঠলে পিয়নের নীল বোতাম
                ঘাসের ওপর থেকে দুজনে কুড়াবো--

আরোগ্য

রুগ্ন তোমাকে নিয়ে
শেষ হ'তে  বিকেলের কাজ
উলঙ্গ শিশু এক রেখে গ্যালো রাত্রি শ্লেট।
সেইখানে চুপি চাঁদ লেখো কার জ্যোৎস্না পদবী
                                খড়িমাটি চকে ।
তার কিছু গুড়ো উড়ে উড়ে লেগে যায়
ছেঁড়া এক মেঘের চিবুকে। এই দেখে;
তরুময় বাঁকা এক ঠোঁটে
ফিক্ করে হেসে দিলো নিথর- প্রকৃতি।
সমুদ্র  ফিরে এলো সুখ শরতের ঘরে
আরোগ্য এলো পাখির মত আমার ভিতরে।
অথচ এইসব শব্দ লিখে অজস্রবার
ফিরাতে  পারিনি কেন আরোগ্য তোমার।

এখন নির্মল সব

আকাঙ্খার শেষ নেই- তবু পেঁপে ফুল;
সকালের আলো মেখে শরীর ও মনে
জানলার দিকে চেয়ে-- আলো বাঁশ বনে-
ওদিকে ক্ষেতের বুকে টাটকা রোদ্দুর;
আনারস ঝোপে বুঝি সাদা প্রজাপতি
এনেছে কিছুটা সুখ দু'হাজার চয়ে।

 এখনো নির্মল সব এখন যে তাজা।
কে বুশ? সাদ্দাম, পালটে যাওয়া রাজা;
এ সব বোঝার দায় রাখে কি প্রকৃতি?
শুধুতো নির্মল বোধে, ফুল-ফল নিয়ে
কেবল-ই  মুগ্ধ করে-- মুগ্ধ এই নীতি!

মন্তব্যসমূহ