নাজনীন খলিল


নাজনীন খলিল
চিঠি

ঘুড়ির কাগজে লিখা চিঠি, দূর মেঘের উজানে হারিয়ে গেলে
মনে পড়ল; ঠিকানা লিখা হয়নি।

লোডশেডিংয়ের রাতে ঘর জুড়ে নেমে আসে মন ভার করা অন্ধকার।
পোর্সিলিন মোমদানে সান্তাক্লজ;
কাঁপাম্লান আলোর বরাভয় রেখে চলে যান ছায়ার আড়ালে।

আয়ানা আছড়ে ফেলে বাতাসের পরী।হাতের তালুতে
ভাংগা কাঁচের টুকরা, দীর্ঘশ্বাস এবং এক বিন্দু রক্তের দাগ।

মোমের আলোয় লিখি স্বপ্ন এবং স্বপ্নভঙ্গের কথা।রূপকথার ভুলে যাওয়া গল্পগাঁথা
আবার পড়ছে মনে। জিগস পাজলের মতো সব জুড়ে দিতে গেলে দেখি,
কিছু টুকরো হারিয়ে গেছে ;কিছু বিসদৃশ বেমানান ফাঁক।
বাইরে বৃষ্টির গান। ডম্বরুমৃদঙ্গের তালে ঝরছে আকাশ।শব্দ লিখি।
শব্দের ভেতরে বাজে 'মিয়াঁ কি মল্লার' ।

স্মৃতির বুদবুদ থেকে রংধনুর সাত রং মেখে নেয় যে বর্ণমালা
তার ঘ্রাণ অবিকল বেলীফুলের মতো।অক্ষরের চিবুকে হাত রেখে
সাজাই স্বপ্ন এবং রূপকথার চিঠি। দীর্ঘশ্বাস লিখি।
ছবি আঁকি কড়ি ও কোমলের।

যে প্রবলসত্য বারবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে;
নিজেকে গড়েছি যত, তার চেয়ে ঢের বেশী বিচূর্ণ করেছি।



নিঃসঙ্গ শালিখ

কোন একদিন ঠিকই খুঁজে পাবো আকাশের ভাঁজে লুকানো রং পেন্সিলের গোপন পকেট।
জানা যাবে বাতাসের মীড়ে মীড়ে মিশে থাকা শিতিগন্ধা সুরের রহস্য।

আনন্দেবিষাদে প্রতিটি বিকেল পান করি দ্রাক্ষারসের মতো।
অবকাশে দস্যিবালকের ক্রিকেটের ভেন্যু হয়ে যাওয়া গলি,
কার্নিশে ঝগড়াটে কাকের সালিশ,
বাঘের ভাবগরিমায় ঘাপটি মেরে বসা বেড়াল,
বৈকালিন চায়ের পেয়ালা এবং স্মৃতিমেদুরতা;
পায়ের পাতায় এখনো সর্ষে ফুলের ঘ্রাণ।  
চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা দৃশ্যের মতো;
দেখা না দেখার দ্বিধা-দ্বন্ধে ফেলে আসা দিন।
কী যে তীব্র জীবনের গতি!

অজানা দুঃখের সংকেত দিয়ে করমচার ডাল থেকে একটি নিঃসঙ্গ শালিখ উড়ে গেলে
সবুজ পাতায় ফিকে রোদের মতো এক টুকরো বিষাদ লেপ্টে থাকে সারাটা বিকেল।

এই বিকেলটা হতে পারতো অন্যরকম;আকাশ দোলের আবীর মেখেছিল।

ঘুম অথবা ঘুমহীনতায়

কষ্টগুলো সোনালী র‍্যাপিংপেপারে মুড়ে রাখি সুস্বাদু চকোলেটের মতো।

রাত পুড়ছে জোনাকধরা হাতের মুঠোয় ।ঘরময় এই শীতলতা----- এক  পশলা বৃষ্টির পরে।
দীর্ঘশ্বাসের দাগগুলো ধারাজলে মুছে গেলে চারপাশ ঘিরে থাকে নিঃসীম স্থবিরতা।স্থবিরতা?
নাকি মুমূর্ষার গন্ধ ভেসে আসে মাঝরাতের বেহালার মতো ক্লান্ত; বিধ্বস্ত !

নীলঅন্ধকারের বুক জুড়ে 'কুব', 'কুব' করে খুব ডেকে যায় নাম না জানা রাতজাগা পাখি।কে জানে কি যে ব্যাথার বৃষ্টি ঝরে তার পাখসাটে!স্রোতে ভেসে যায় তার কয়টা পালক

কি আশ্চর্য সমাসঙ্গ  পাখি ও মানুষের!যেখানেসেখানে অগোচরে মায়ার পালক ছড়ানো

ধু-ধু তেপান্তরের মাঠে টগবগটগবগ সাদা ঘোড়া
পালিয়ে যাচ্ছে রূপকথার গল্প-কাহিনী।আর কোন ঠাকুরমার ঝুলি নেই।জিয়ন-কাঠি?নেই।
জীবন গুটিয়ে আছে কেন্নোর মতো; কুন্ঠিত।ম্রিয়মাণ।
কেন যে আধোঘুমের ভেতরে আচমকা ফালিজ্যোৎস্নার মতো এক চিলতে স্বপ্ন ঢুকে পড়ে!

মন্তব্যসমূহ

নামহীন বলেছেন…
bikale