বিষ্ণু বিশ্বাসের কিছু কবিতা


বিষ্ণু বিশ্বাসের  কিছু কবিতা 
কালো মেয়ে

শুধু মৃতদের গল্প কত আর কাঁধে ঝুলে যাবে
এবার নিষ্কৃতি পেলে, শান্তি অন্বেষণে মহাকাশে
গিয়ে, দু’টুকরো লোহা ঠুকে আগুন জ্বালিয়ে দেব
অসহ অসীম শব পুড়ে হোক ছাই পুড়ে ছাই।

তারপর আমাদের নিমগাছটির পাশে নদী
কদমগাছটি আছে অন্যদের মুঘলের ঘাটে
তুমি আছো কালো মেয়ে সন্ধ্যা স্নানের ঝংকৃত দূরে
আমি ভালোবেসে ভুলে তোমাকে জ্বালিয়ে দিই নাই।



বলবার ছিল

জায়গা ছিল না কোনো কথা বলবার, শুনবার।
সমুদ্রের ধারে যেতে পথের বাদাম গাছগুলি
মিহি কথার কৌতুকে পাথর ফুলের ধাক্কা দিল
আমি কী বলেছিলাম, তোমরা যারা শুনেছো বেশি
 শোনাবে--একটু খানি। আমি ভুলে গেছি জন্ম আছে।
কিছু যন্ত্রণার কথা যেভাবে বলেছি মনে নেই
একটু আনন্দ কথা, গোলাপি স্তম্ভে স্থির রয়েছে
অন্ধ থেকে চোখে জেগে সমুদ্র দেখি বালির স্তূপে।


গল্পের কুমার

ধরাতলে একদিন পৃথিবী এনেছে ধারাজল
দেবতা-চোখের আলো ক্রমে নিভে হয়েছে সকাল।
বেড়াতে এসেছে এক গল্পের কুমার অসময়ে
তার অবসর ছিল। স্রোস্বতী কিনারে দেখেছে
নীল বাঁদরের হাট। দীর্ঘক্ষণ পলক পড়েনি
দেবতা-চোখের আলো ক্রমে নিভে হয়েছে সকাল।
এমন গল্পের কবি অন্ধ হলে সৃষ্টি স্থিতি লয়
নিশ্চিহ্ন আলোর সখা, তোমাদের শোনা কোন গান
পাথরে স্থির হয়েছে। জ্যোতিষ্কের পরশ পাথর
সীমাহীন ঘটমানে, নিয়তির চুল ছিঁড়ে ছিঁড়ে
নীল পশমি ছাগল। হাটবারে হাটে বাঁধা থাকে।
পাইকারি কথামালা। শোরগোল গন্ডোলায় ভেসে
চলে যায় চলে যায় তারাদের পৈশুন্য আঁধার
ধরাতলে একদিন পৃথিবী এনেছে ধারাজল
দেবতা-চোখের আলো ক্রমে নিভে হয়েছে সকাল।


রাতের সঙ্গীত
(রুকু ও কমলকে)

গভীর সমুদ্রের নোনা হাড় নোনা দাঁতে তৃষ্ণা আমার
জল দেবে একটু আমাকে শীতল জলের প্রাণ?
শ্যাওলা শাড়ির বহু বহু নারী
তোমাদের ঝর্ণাধারা
শত শত পতাকার মতো হলদে সঙ্গীত হবে
যখন ভোর হবে, ভোরের আকাশের নীল চোখে
গান বন্ধ হোক, আপাতত থেমে যাক
কোলাহল কলস্বরে কাটে দুপুর বিকাল
গভীর রাতে আদ্য জলের তৃষ্ণা
আমার নোনা হাড় নোনা দাঁতের।

থেমে থাক, লাল লাল বোতলে সৌগন্ধ স্থির
জলভারে
অপূর্ব অন্তর উৎসারিত শান্ত কান্ত জল
তোমাদের
আর নোনা হাড়ের আঘাতে ঝরুক আদর?
নোনা দাঁতে নোনা হাড়ে।
তারপরে
সাগরের অজানা গুহায় মানব আমি দাঁড়াব এসে
সম্মুখে তোমার তোমাদের
ঝর্ণাধারা
শাদা শাদা পতাকার মতো হলদে সঙ্গীত হবে
যখন ভোর হবে ভোরের আকাশের নীল চোখে।


ঈশ্বরের জন্মজন্মান্তর

আমাকে পেরিয়ে গেলে তুমি পাবে এক ধূলিপথ
ডানে বাঁয়ে সবখানে শিলীভূত পাখিদের শব
মৃত্যু যেখানে অমর অমেয় জলের স্বপ্ন ধোয়া
বাঁশপাতা খড়খড়ি ঊষর দানোর লোহাগড়।
হয়ত থামতে হবে, বহুবার অনাত্মীয় শোকে
তোমার সোনালি জামা, হলুদ গন্ধের শাড়িখানা
উড়িয়ে নিয়েছে ঝড়। শুধু স্বপ্নের আঁধার-গান
তারাদের নীল জলে তোমাকে দিয়েছে কামরতি
তোমাকে বিয়োতে পারো আদি ঊষা, প্রথম বাগান?
দ্বিতীয় ঈশ্বর তবে তৃতীয় ঈশ্বর জন্মদানে
আবার মিলিত হবে সোনালি জামা হলুদ গন্ধে।
এই অনুবর্তনের গল্পে যে পথে গিয়েছে ধূলিপথ
ডানে বাঁয়ে সবখানে জাম আম সবুজ কথক
আমাকে পেরিয়ে গেলে নিশ্চিন্ত কল্পতরুর গাছ।

নীল কৈ 

গল্পের শেষ ওরকমটি ছিল না মোটেই, তোমার মনে নেই।
সেদিন ছিল রাত্তির— জ্যোৎস্নার। শোনো, আবার বলি,
সেদিন ছিল জ্যোৎস্নার রাত্তির— জোনাকিরা কেন যে
হঠাৎ আন্দোলনের মতন কেঁদেছিল উথালপাথাল,
যদিও আমারও আজ মনে পড়ে না। তাদের কান্নার জলে
চৈত্রের মাঠ গেল ডুবে। ভেসে এল কোথা থেকে
শত-শত নীল কৈ—
তাদের নীল জামা আর লাল দৃষ্টি জ্বলে, জলের ভিতরে।
তুমি আমি আর আরও বহু কথা কই নি কোনো,
সেদিন গেয়েছি গান— সমুদ্রের আকাশের আগুনের।
অন্তত তুমি এবং আমি, না জেনে
কী সম্পর্ক সমুদ্রের আকাশের এবং আগুনের।
তারপর থেমে গেল জল— কান্নার— জোনাকির
নীল ডানা ও লাল দৃষ্টির জল নেমে গেল—
জেগে উঠল ভূমি।
তারপর বহুদিন আমরা গান গাই নে কোনো,

শুধু গল্প করি নীল কৈ— নীল কৈয়ের।





মন্তব্যসমূহ

Sabyasachi বলেছেন…
নিজের জগতে ভাবের ঘোরে আচ্ছন্ন কবি।