অসিত ঘোষ

অসিত ঘোষ

আনওয়ান্টেড -১

অদিতির এখন যুগপৎ পঞ্চম ও ষষ্ঠ প্রেম চলছে। নবম দশমও বলা যায় যদি প্রথমদিককার উড়ো উড়ো উনিশেরগুলোও ধরা হয়। তার একুশ বয়সের দুপুরে তাথৈ তাতাথৈ ডাকছে দুজন। ডাক ক-তো-টা ঝকাঝম, সেটি বুঝতে অখন তখন তার মাসতুতো দিদি অর্পিতার মোবাইলাপন্ন হয় সে - কী মনে হয় রে তোর ?
সবটা শুনে অর্পিতা মত ও অমত দেয়। অদিতি সেগুলি নিজের ভেতর গভীরভাবে নেড়েচেড়ে কখন বেভুল দিদির নিষেধ-পাখার হাওয়া চুপসিয়ে আপনামর্জিপাড়ায় ঢুকে পড়ে। অল্পদিনবাদেই দিদির মোবাইলে কাঁদুনেপালার পোঁ পোঁ - জানিস অপুদি...পাংচার...জানিস অপুদি... ধপাস্।
অর্পিতার সবই জানা। এখন দুজনের সাথে ইস্কিমিস্কি চলছে।তাদের একজন বলেছে - আলমারি চেহারাটাকে একটু ঝরাও।এন্টেনা করো। নালে সমস্যা অনেক ফিউচারে !
কথাটা শুনে অর্পিতার হাসি পেলেও ভেতরে কষ্ট পেয়েছিল । অদিতিকে বলেছিল - ও কি সত্যিই ভালোবাসে রে! ভালোবাসলে তোর সবটুকুকেই বাসতো। আলমারি চেহারাকেও!
দ্বিতীয়জন আরো চালু। খেয়ে দেয়ে(দেয়াটি চাই-ই) ঢেকুর তুলে পাঁচতলার এক ঘরের জানলার পর্দা সরিয়ে বলে - দ্যাখ্,আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বাবা --- ।
এই ড্যাসটি নিয়েই প্রবলেম।
অর্পিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বোনকে ফোনের এপ্রান্ত থেকে সতর্ক করে - দ্যাখ,আনওয়ান্টেডের অনেক সাইড ইফেক্ট আছে। সাবধান থাকিস !




মুক্তো

একটি ভিকিরির বাচ্চা আমার সামনে হাতটি চাটু করে দাঁড়াল। হাত পকেটে ঢুকল না। উলটে বললাম - সমুদ্র চিনিস ?
বাচ্চটা দাঁত বার করে ক্যাবলায় - কুথায়,যেখানে হাওয়ারা ওঠে?
চমকেও ঠাণ্ডা বলি - হুম্। শোন পেনসিল ব্যাটারি, ওখানে বালির পেটে যে ঝিনুকরা সারাক্ষণ কেত্তন করে তাদের পেটে মুক্তো থাকে। সেগলো কুড়ো- ভাঙ-মুক্তো নে-বেচ-কামা। মাথায় ছাতা বানা।যাঃ, ছাড়!
পেনসিলটা আমাকে কেমন-কেমন চাটতে চাটতে চলে গেল।

বেশ ক'বছর বাদে দিঘার ঘোলা তীরের এক কোণে সবুজ জলের জন্য  দাঁড়িয়েছি। একটি গোঁফ-হবুহবু ছোকরা হাতে ডাব ধরিয়ে আমার পায়ে তার হাতটা ঠুকে দিল।'আহা,কী করিস কী করিস!' বলে পিছিয়ে তাজ্জব তাকাতেই ফেনার কায়দায় হাসল - ভিকিরির বাচ্চাকে মনে নেই বাবু ! সেই  যে সমুদ্র-বালির পেট-ঝিনুক-মুক্তো বলেছিলেন অ-নে-ক বছর আগে !
শালা বলে কী! ব্রেন শর্ট বোধহয়, ভাবলুম। আমার কিছু মনে ঢুকল না। কত কত কতরকম ভিকিরির বাচ্চা। ডাবে চুমু মেরে বললাম - সত্যি সত্যি মুক্তো পেলি নাকি ?
- হুম্। আমি-আমার মা-বোন আর ভিক করিনা। উঈ উদিকে গাঁয়ের দিকে একটা ছোট্ট বাড়ি তুলেছি, মাটির। আসছে বছর সামনেটায় পাকার দুয়োর দেব!
ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে বিড়বিড়ালুম - সত্যি মুক্তো পেলি !
- হুম,সে কাটারি আর টাটকা ডাবের কাঁদিগুলো দেখিয়ে বলল - সবই আপনার জন্য।
আমি ব্যাটারির হাতে ডাবের পয়সা গুঁজে দিয়ে হনহন করে পিছু হাঁটলাম।
- বাবু, একবার আমাদের বাড়িতে পায়ের ধুলো দেবেন না? আপনার কতো কথাই মা-বোন-আমি বলি...
আমার মাথায় পিঠে ছেলেটার আওয়াজের ঝাপটা। ওকে কী করে বোঝাই যে আমি হলে ওর মতো হিম্মত জমত কিনা, নিজের ভেতর এই জিজ্ঞাসায়,মাথাটা নুয়ে আসছে।


মন্তব্যসমূহ