আলী এহসান

আলী এহসান
কথাকয় মধ্যরাত


মাঝরাত! ঘুম ভাঙে হঠাৎ। প্রচণ্ড তেষ্টা। বরফ জলেও ঠাণ্ডা হয় না বুক। আসে না তৃপ্তি। শিরা-উপশিরায়  দুরন্ত ছুটছে রক্তকণা। লাগামহীন। মানছে না নিয়ন্ত্রণ। মানস আবার বিছানায়। অনেকটা ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাশবালিশ জড়িয়ে উন্মত্ত আদর। আভ্যন্তরীণ বিস্ফোরণ।

এখন সে নিজেকে বুঝতে পারে না। অনুভবে উলটপালট। ভেতরে আসন গেড়েছে অন্য কেউ। চেনে না! অথচ স্থায়ী করছে ঘর-বসতি।
আরেকটি সত্ত্বা দখলে নিয়েছে তার প্রতি ইঞ্চি মনোভূমি। দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অস্থিরতা থেকে সে মুক্তি চায়। ছুঁড়ে ফেলতে চায় সকল বৈপরিত্য। কিন্ত পারে না। দানবটা শরীর ছাড়ছে না কিছুতেই। কাজে বসছে না মন। 

কৈশোর না পেরোতেই শরীরে যৌবনের উঁকিঝুঁকি। মনে ইচ্ছের রঙিন বাগান। স্বপ্নের আকাশভ্রমণ। ছায়াপথে ছুটোছুটি। যা খুশি করার উসখুসে নাচে রক্তকণা। এ বয়স অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে। রুখে দাঁড়ায়। আদর্শ খোঁজে ঝাঁপিয়ে পড়ার। আবার বিপথে হাঁটে অনেকেই। আসক্ত হয় মাদকে। বাবা-মা'র গাঁট চুরি। ছিনতাই-রাহাজানি। ইশারায় ডাকে অপরাধ। পথ দেখায় অপরাজনীতি।

-- মানস, কী করতাছোস? তৃপ্তিদির কণ্ঠ! খুবই সুন্দরী। রাস্তায় বেরোলে সবাই অবাক হয়ে দেখে। যুবকেরা শিস  দেয়। বাতাসে ছোঁড়ে অশ্লীল মন্তব্য। দুজনের পাঠতীর্থ পাশাপাশি। একই ক্যাম্পাস। ব্যবধান শুধু বয়স আর শ্রেণির। তৃপ্তি প্রথমবর্ষ অনার্স। মানস সপ্তম শ্রেণি। পথ-ঘাটের বিপদ এড়াতে তৃপ্তি প্রতিদিন তাকে সঙ্গী করে। পাশে যেন দেহরক্ষী! এ কায়দায় এড়ানো যায় অনেক উটকো ঝামলা। প্রতিদিনের মতো আজো এসেছে ইস্কুলে  যাওয়ার তাগাদা দিতে। মানস নড়েচড়ে বসে। যেন লুকোতে চায় গোপন কিছু।

- কিরে, এখনো ঘাঁপটি মেরে আছিস? তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে!   
- আজ স্কুলে যাবো না।
- ও মা! কেন?
- শরীরটা ভালো নেই।
- বলিস কী? তৃপ্তি ঘন হয়ে আসে। মানসের মাথা-কপালে হাত বুলায়। গাল টিপে আদর করে। কই, তেমন  কিছুতো মনে হচ্ছে না! আলসেমী করিসনে বোকা! আজ আমার ইম্পোর্টেন্ট ক্লাস! বাইরে বেরোলেই দেখবি শরীর-মন কেমন ঝরঝরে! এক্কেবারে সতেজ হয়ে গেছে। লক্ষ্মী ভাইটি আমার! জলদি তৈরি হয়ে নে।
 মানসের শরীরে বিলি কাটে আবারো স্নেহের নরম হাত।

তৃপ্তির শরীরে অচেনা ফুলের ঘ্রাণ! ঘরের বাতাসে অদ্ভুত মাদকতা। ছোঁয়ায় অন্যরকম শিহরণ। মুখ তোলে মানস। তাকায় তৃপ্তির দিকে। ওর চোখে বুনো দৃষ্টি। নিঃশ্বাসে উষ্ণতা। উগ্রতা। শরীরে কথাকয় মধ্যরাত।



ছবিঃ সৌরদীপ্ত চৌধুরী 

মন্তব্যসমূহ