শিমুল মাহমুদ



চারটি অণুগল্প
শিমুল মাহমুদ


গৃহপালিত কুকুরজীবন

ঘুমের ভেতর শিশুর কান্না। জলাভূমে সাতটা সাদাবক। তাজা মাছের সন্ধানে দাঁড়িয়ে তিমিরা মাথা ঠুকে মরে যায়। আর এদিকে শিশু রহমানের হাতের মার্বেল পৃথিবী গড়িয়ে হারিয়ে যায়। আজ সাতটা জোছনারাত্রির পর বাবা আজিজ সমদ্দার মোহনা থেকে ফিরেছে গাঁয়ে। বাবার সাথে পাড়ার পাশ ঘেঁষে রাত দুপুরে দুষ্ট জিন হেঁটে যায়। ভয়ে রহমানের মায়ের বুক কাঁপে।  রহমানের হাতের মাদুলিটাতে চুমু খায়। রহমানকে ঠেসে ধরে বুকে। খোকা, চোখ বুজে থাক। চোখ বুজে থাক খোকা।

মেঘশিমুল ছাড়িয়ে আরও দূরে নারকেল গাছগুলোর মাথায় মেঘ ঝুলে আছে। উজ্জ্বল গম্ভীর মেঘ। আরও দূরে পাহাড় উঠে গেছে আকাশের গায়ে। তেপান্তরের মাঠ। আরও দূরে রূপকথার মায়াবী পুরী। শিশু রহমান ভুলে যায় দিন আর রাত্রির কথা। বাবার কথা। তার দাদার দাদা ছিলেন যিনি সেই ইদ্রিস জাহাজির গল্প শিশু রহমানকে কেউ বলেনি আজো। মাঠের পাশে একলা একা গাছ। একটামাত্র শকুন বসে আছে গাছের ডালে। একটা মরা গরু পড়ে আছে নদীর তীরে। কারা যেন চামড়া খুলে নিয়ে গেছে। শকুনটা গাছের ডাল থেকে গম্ভীর পাখায় নেমে আসে। শকুনটার শরীর থেকে ভয়ের গন্ধ ভেসে আসে। আরও দূরে শ্মশান। লোকালয়ে গোরস্থান। রাতে লোকালয়ে শেয়াল ঢুকে যায় আর গৃহপালিত কুকুরেরা কাঁদতে থাকে। রাত গভীর হলে কুকুরগুলো অযথাই কাঁদে। হয়তো মেঘশিমুল গাঁয়ের মানুষগুলোর ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়ে কাঁদে।

আমরা তখন শিশু রহমানের মতো ভবিষ্যৎবিহীন জলজনৌকা ডাঙায় টেনে তুলে নদীতীরে বসে থাকি আদিগন্ত অথবা অন্তহীন এইভাবে চোখবুজে।




ভ্যালেনটাইন ডে অথবা লোডশেডিং

সেইদিন বিশ্বভালোবাসা দিবস। কেবলি বিশ্বের জাঙ্গিয়ার ভিতরে, বিশ্বের পেটিকোটের ভিতরে, বিশ্বের লুঙ্গি, চাদর, খ্যাতা, কম্বল, শাড়ি, স্কাট, বেলাউজ, অথবা হইবার পারে বিশ্বের বগলতলার নিচে, কুচকির নিচে, ট্রেনে, বাসে, ইসটিমারে, বিমান অথবা নৌকা, শপিংমল, সিএনজি স্টেশন, পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন অথবা জুতার ভিতরে, শুটকিমাছ আর গরুছাগলের হাঁটের মইদ্দে, মনে লয় চিনির মিলের মইদ্দেও হইবার পারে,  নাইলে মনে লয় বিলাতি দুধের বস্তার ভিতরে ভালোবাসা ফাইট্টা বাড়াইবার লাগছে। আর তহন স্টুডেন্ট ইসহাক মোহাম্মদ তার ডারলিংরে নিয়া সইঞ্জার পরও ঘুরবার লাগছে। এই সুময় আতকা রাম-দাও উঁচাইয়া ধইরা দুইজন গাট্টামার্কা গোয়াখাওজানো মানুষ রিক্সার উপড়ে আইসা পড়লে, হুই হুই, নরিস না কইলাম, নরিস না, দিমু? কোপ দিমু, দে তারাতারি কর, মানিব্যাগ দে, তারাতারি কর কোপ দিমু, দিলাম কইলাম। আর তখন রিকসাআলা সুরসুর কইরা হাইটা যায় গিয়া রাস্তা থেইকা নাইমা মাঠ ধইরা।

স্টুডেন্ট ইসহাক মোহাম্মদের ভ্যাবলাচোদার লাহান গলা দিয়া কথা বাইর হয় না। ডারলিং রমা সাহা চিক্কুর দিবার গেলে লোকটা বাও হাত দিয়া, সেই হাতের মইদ্দে মনে লয় গাঞ্জার গন্ধ অথবা শুয়োরের গুয়ার সেন্ট লাইগা আছিল; সেই শুয়ারের গোয়ার সেন্ট লাগানো হাত রমা সাহার গলা খামচাইয়া ধইরা, ওই, ওই মাগি তোর নাঙের কল্লা নামাইয়া দিমু, খানকি দে কইলাম, দেরি করলে জংলায় নিয়া যামু; গুয়ার মইদ্দে হান্দাইয়া দিমু কইলাম। আর তখন হেচকা টান মাইরা রমা সাহাকে রিকসা থাইকা নামাইয়া লইতে লেগে রমা সাহা হাটু ভাইঙ্গা রাস্তার উপড়ে পইড়া যায়। স্টুডেন্ট ইসহাক মোহাম্মদের মাথায় তখন লোডশেডিং, বিরতিহীন।

পাঠক! সেইদিন ইসহাক স্টুডেন্ট আর রমা সাহা কোনো ছিনতাইকারীর পাল্লায় পড়ে নাই। প্রকৃত প্রস্তাবে, তাহারা একজন আরেকজনকে কী প্রকারে ছিনতাই করিবে সেই মতলবে তালগোল পাকাইতেছিল।



সিজার অথবা প্রসব-যন্ত্রণাকালীন চিত্রকল্প

আমরা যারা আমাদের পোয়াতি বউদের নিয়ে ডাক্তার জোবায়দা গুলশানারার জন্য পেরেশান এবং আমরা ঈশ্বরকে এ অবস্থায় কোনোক্রমেই হারিয়ে ফেলতে প্রস্তুত নই। আমরা জিভের নিচে ঈশ্বরকে আকড়ে ধরে রাখি; আর এই কাজে আমাদেরকে সাহায্য করে একদল ভিক্ষুক, যাদের কণ্ঠে ঈশ্বর বিষয়ক কোরাসের চিৎকার এমনভাবে আমাদের দিকে ছুটে এসে আমাদের ভীত-বিহ্বল করে তোলে যেন বা আমরা আমাদের যাবতীয় বাণিজ্যিক বোধ-বুদ্ধি হারিয়ে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে আথবা যে কোন শর্তে ঈশ্বরের বাগানে প্রবেশে প্রস্তুত এবং যখন ‘আমার আল্লা রসুলের নাম, সব বালা দূর অইবো দুইডা টাকা দিয়া যান, আমার আল্লা রসুলের নাম’- ধ্বনিসমষ্টি আমাদের করণীয় কাণ্ডজ্ঞানকে নিস্ক্রিয় করে তুলতে শুরু করেছে তখন আমরা কেউই গাইনি ডাক্তার জোবায়দা গুলশানারাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

আমার স্ত্রী-র নিম্নাঙ্গ মৃত রাজহাঁসের মত নিষ্প্রাণ। অথচ সেখানে ঠিক কী প্রকারের যন্ত্রণা তা হইজাগতিক কিছুর সাথে তুলনা করতে ব্যর্থ হলে আমার  স্ত্রী শিপ্রার কাছে তখন অর্থহীনভাবেই মনে হতে থাকে, হয়তো জীবজগতে একমাত্র মহিলাদেরই নিম্নাঙ্গ মরে যেতে পারে। শিপ্রার মাথায় ভেসে ওঠে ডিসকভারিতে দেখা অন্ধ্র প্রদেশের জনৈক মহিলা আজীবন তার শরীরের সাথে অতিরিক্ত একটা অর্ধশরীর বহন করে আসছে, যে অতিরিক্ত অধর্শরীরের কোন অনুভূতি নেই; সেটি মৃত; যেমন আমাদের পার্লামেন্টকে বহন করতে হয় মৃত অধিমাংস আজীবন।

এমনতর ভাবনার ভেতর, অবচেতনে অথবা শিপ্রা কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখতে পায়, সে মরে গেছে; তার স্বামীর বিয়ে হচ্ছে; সেই বিয়েতে শিপ্রা বরযাত্রী; শিপ্রা এমন উগ্রভাবে সেজেছে যে বিয়ে বাড়ির সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে; একটা বুড়িমতো মহিলা, যার শরীর থেকে ভেসে আসা মরা মানুষের গন্ধ শিপ্রার সাজসজ্জাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে; সেই মহিলা এগিয়ে এসে শিপ্রাকে তার স্বামীর বিয়ের সংবাদ দিলো; আর তখন শিপ্রা দেখতে পেলো  তার শরীরের উগ্র সাজসজ্জাগুলো সব সাদা রঙে পালটে  গিয়েছে; শিপ্রা শুয়ে আছে কাফনে মোড়ানো মৃতের খাটিয়ায়।
তখনো ভিখেরিদের কোরাসের ভেতর থেকে ঈশ্বরের ব্যর্থতা ভেসে আসছিল।


সরকার যেইভাবে আমাগের রেপ করবার লাগছে

এই সমুয় সুরভি উদ্যানের ভিতরে একখান লোক একখান নিচু বয়েসি মাইয়ালোককে নিয়া হান্দাইতে থাকলে আমার ভিতরে পানি খাওনের ইচ্ছা এক ধরনের দোনামনা ছড়াইতে থাকে। তখন সইন্ধার ভেদামার্কা অন্ধকারকে মনে হইতে থাকে কয়লার খনিতে ডুইব্বা থাকা বুইড়া অন্ধকার। আর সেই ভূতের ভোদার গন্ধআলা অন্ধকারের ভেতর লোডশেডিঙের মইদ্দে সুরভি উদ্যানের পানিবিহীন লেকের গোয়াতে শেয়ালের গর্তের ভিতরে মাঝ বয়েসি ভূমি অপিসের সরকারি ড্রাইভার যখন উঠতি বয়েসি ছেমড়ির পাছায় হাত ঠাইসা, ‘ইস, এক্কারে কিচ্ছু নাইক্কা’। তখন, ‘থাকলে নি তোমরার মুতুন বেডার লগে হুইতাম’?

এই রকম যখন আন্দাগুন্দা বাকচিত চলতে আছিল তখন সরকারি ড্রাইভারের সিগারেটের আগুনে পুড়তে থাকা খসখসে গোঁফের নিচে, পাকা কলা শুকাইলে কালো হইলে যেমন চেহারা লয় তেমন চেহারার ঠোঁট দুইটা দিয়া ছেমড়ির বুকের বোটার উপড়ে কামড়াইবার জইন্যে মাথা আউগাইয়া দিলে, একটুক পর ওই দুইজনার ভিতরে হোলে মরিচ মাখা পাঠার লাহান গুতাগুতির আয়োজন দেখা দেয়। ঠিক এই সমুয়, হাচাই এই সমুয়, সুলক কইরা কইবার পারি সাইঞ্জাবেলার ঠিক এই সমুয় জলবিহীন লেকের ওইপাড়কার একখান গর্ত থাইকা একখান লিঙ্গ-আক্রান্ত শিয়াল ডাইকা উঠল। সরকারি অফিসের সরকারি ড্রাইভর চমকাইয়া উঠবার গিয়াও থানিকটা জলাতঙ্ক রোগির মতন, এই অবস্থায় উয়াদেরকে দেখলে মনে হইবার পারে ডেরাইভর মিয়া ভ্যাবলাচোদামার্কা আরাম পাইবার লাগছে; আর তখন ছেমড়িডা সিটকা লাইগা গেলে আতকা উইঠা বসে। মনে লয় মাইয়াটা বিগড়াইয়া গেছে। ছেমড়িডা ট্যাকার জইন্যে চেঁচাইয়া উঠলে, আর তখন মাঝ বয়েসি সরকারি ড্রাইভরের মেজাজ ঠিক থাকে না। মনে লয় এই অবস্থায় কোন সরকারেরই মেজাজ ঠিক থাকনের কথা না। একটা থপ্পাত ফাঁপড়া থাপ্পড়ের শব্দের সাথে সাথেই ছেমড়ির হাত দুইখানা সরকারি ড্রাইভরের দখলে এমনভাবে আটকাইয়া থাকলো যে, বিউটি রানি সম্ভবত ছেমড়ির নাম আছিল কল্পনা কুজুর; যাউগগা মাইয়াটা শেষমেস সুরভি উদ্যানের গোয়ার ভিতরে চিৎ হইয়া রইলে উয়ারা মনে লয় আউলাইয়া গেল। মনে লয় মাইয়াটা বইলবার লাগছিল, মনে লয় গাইল পারবার লাগছিল, ভেড়াচ্চোদা, মাইনষের জন্ম লয়, হিয়ালের পুটকির মইদ্দে ঢুকাইবার লাগছোস? হারামি শেষ করোস না ক্যান?

মন্তব্যসমূহ

Unknown বলেছেন…
ভাল লেগেছে।