মৈনাক আদক



মৈনাক আদক
জগৎ

ঘুরে ঘুরে বাজার করছে অনিমেষ, অনেকদিন পর। রাতের পর রাত হুইস্কিতে ডুবে থাকা সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অনিমেষ মিত্র মামার জন্য কিনছে সুগন্ধী বাসমতী। বাবা বড় ভালবাসত কালবোশ। মায়ের জন্য বাটা, দাদার পাঁঠার মাংস, দিয়া? অনিমেষের প্রথম পাপ, প্রেম। বকুলগন্ধ শরীরে মেখে আমসত্ত্ব খেতে বড় ভালোবাসত ও। ফুলপিসির জন্য গাওয়া ঘি, দাদুর জন্য চাঁপা কলার মোচা, গন্ধরাজ লেবু, মোচা-চিংড়ি, মাছের ডিমের বড়া গন্ধরাজ লেবুর গন্ধমাখা ভাতের সঙ্গে বড়ো প্রিয় ছিল ওর-ও।
একবোঝা বাজার নিয়ে টানারিকশায় বসে যেতে যেতে ওর মনে পড়ে যাচ্ছে কৈশোরে গ্রামের সেই দিনগুলোর কথা--ট্রেনের ছুটে যাওয়া, দাদুর সঙ্গে মোহনবাগান মাঠে যাওয়া, দিয়ার সঙ্গে বর-বউ খেলা…
ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে সম্বিত ফিরল অনিমেষের।  ফিরতে দেরি হয়ে গেছে অনেক। ডোরবেল বাজাল অনেকবার, অথচ খুলছে না কেউ। পুরোনো দিনের অভ্যেস মতো বোধহয় সন্ধ্যা হতেই ঘুমিয়ে পড়েছে সবাই। নাহ্, সাড়াশব্দ নেই কারো। অগত্যা পকেট থেকে ডুপ্লিকেট চাবি বের করে দরজা খুলল অনিমেষ। ঘর অন্ধকার। দেওয়াল হাতড়ে হাতড়ে  আলো জ্বালল, পাশের ঘরে গেল। তার পাশেরটায়, ব্যালকনিতে। নাহ্, কেউ কোথাও নেই। ক্ষণিকের জন্য  এসে অনিমেষের মৃত আত্মীয়রা আবার ফিরে গেছে । আপাদমস্তক পেশাদারিত্বে মোড়া প্রৌঢ় অনিমেষের জন্য ফিরিয়ে দিয়ে গেছে  মাটি, রোদ্দুর, বৃষ্টি, স্বাদ-বর্ণ আর বকুলের গন্ধমাখা এক হারানো অপার্থিব জগৎ ।

মন্তব্যসমূহ