এক বিষ্ণুর জন্মজন্মান্তরের গল্প// আইরিন সুলতানা

এক বিষ্ণুর জন্মজন্মান্তরের গল্প
আইরিন সুলতানা

           কবি বিষ্ণু বিশ্বাস আমার কাছে এমন এক অপঠিত কাব্যগ্রন্থ  যার নাম,দাম, পৃষ্ঠা সংখ্যা জানি বটে, ভেতরের যাপন অজানা। একজন নবীশের অগ্রজ দর্শনের মত বিষ্ণু বিশ্বাসের ভাবনার মুখোমুখি হই আমি; তাও এমন এক সময়ে যখন একজন বিষ্ণু বিশ্বাস একটি হারানো নগরী। পঞ্চাশোর্ধ বিষ্ণুর মনবাড়ির দুয়ার কড়ায় জং ধরেছে। বিষ্ণুর পাঁজরের দেয়ালে পুরনো থান থান খোলস ছাড়া ইট দেখা যায়। দৃষ্টিতে কৃষ্ণগহ্বরের শূণ্যতা। বিষ্ণুর নাম ধরে ডাকলে কখনো সে সাড়াহীন, কখনো সে চমকে ওঠে। বিষ্ণু বিশ্বাস, এক হারিয়ে যাওয়া কবি। বিষ্ণু বিশ্বাস কি একজন পলাতক কবি? নাকি বিষ্ণু বিশ্বাসকে দ্বিতীয়বার হারাতে হবে?
কবি সুনীল সোনা , কবি বিষ্ণু বিশ্বাস , কবি বিষ্ণু বিশ্বাসের মা 


            বিষ্ণু বিশ্বাসকে নিয়ে অনলাইন সাহিত্যজগতে গুটিকয়েক আলোচনা, প্রতিবেদন কবির প্রতি সুবিচার নয়। তার রচিত অল্প কিছু কবিতা অনলাইনে খুঁজেপেতে পাওয়া যায়। আপাতত ওইটুকুই সম্বল বিষ্ণুর জগতবাড়িকে জানতে। বিষ্ণু বিশ্বাস কে ছিলেন? কেমন ছিলেন? কী লিখতেন?  আজকের গর্ত চোয়ালের শুশ্রুমণ্ডিত বিষ্ণু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কেতাদুরস্ত ছিলেন। প্রেমিক ছিলেন। নারীমহলে ছিল তার ভিনি-ভিডি-ভিসি ব্যক্তিত্ব।  মানা কষ্টকর, সত্য হলো সেই বিষ্ণুর আজকের ব্যক্তিত্ব স্কিটজোফ্রিনিয়া আক্রান্ত।

            ৯২ সালে বিষ্ণু যখন 'এক বৃদ্ধের গল্প' লিখেছিলেন, তিনি কি জানতেন এরপর তিনি নিজেই কোথাও ডুব দেবেন, আর আমরা আনমনে বলে উঠব তারই রচিত পংক্তি, "কোনদিন, তারপরে, তাকে আমরা আর দেখি নি"। ২০১১ সালে হঠাৎ খবর হলো বিষ্ণু বিশ্বাসকে খুঁজে পাওয়া গেছে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয়। কবি বেঁচে আছেন এখনো। তবে তিনি বর্তমানে থেকেও অতীত যেন। যোগাযোগ অপ্রতুল বলেই কিনা, তার আশেপাশে হুমড়ি খাচ্ছে না গণমাধ্যম, টিভি চ্যানেল, সাহিত্যপাড়ার মহারথিরা। সুচিকিৎসার জন্য যথেষ্ট অর্থকড়ির অভাব আছে তার । কেবল কিছু খ্যাপাটে কবির দল বিষ্ণু বিশ্বাসের ডুবন্ত তরীর গুলুই আঁকড়ে লগি টেনে যাচ্ছে প্রাণপণে।

             কবি বিষ্ণু বিশ্বাসের প্রথম কবিতা ছাপা হয়েছিল ছোট কাগজ পেঁচাতে। আশির দশকের এই কবির বেশ কিছু কবিতা বিভিন্ন ছোট পত্রিকায় ছাপা হত নব্বই দশক পর্যন্ত। তারপর কবি উধাও হয়ে গেলেন। বন্ধুদের উদ্যোগে প্রকাশিত কাব্যসংকলন 'ভোরের মন্দির' এখন অব্দি তার একমাত্র কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থের কিছু কবিতা অনলাইনে পাওয়া যায়। এরপরেও কাব্যপ্রেমিক অসংখ্য পাঠকদের কাছে বিষ্ণু বিশ্বাস অচেনা কবি, অথচ বিষ্ণু বিশ্বাসের কবিতা মূর্তিমান বর্তমান। মহাকালের আগামি।

            দৈর্ঘ্যে মধ্যম গড়নের ছিল বিষ্ণুর কবিতার শরীর। শব্দে জটিলতা কম। ভাবনায় ছিল বিমূর্ত চিত্রকল্প। তার অনেক কিছু 'বলবার ছিল', কিন্তু আজকের দিনে "জায়গা ছিল না কোনো কথা বলবার, শুনবার।" বিষ্ণু বিশ্বাসের ভগ্ন শরীরকে কতদিন বাঁচিয়ে রাখা যাবে, তাকে কতদিন দেখে রাখা যাবে কে জানে! তবে তার কবিতাকে হারালে বিষ্ণুর মূল অস্তিত্ব বিলোপ হবে। ছোটকাগজ পেঁচা'র সাথে বিষ্ণুর অন্তরটান ছিল। এই পত্রিকার কোন সংখ্যা কোন কবিপাঠকের কাছে থাকলে তা জোগাড় করার বন্দোবস্ত করা যেতে পারে। বিষ্ণুর পুরনো যত কবিতা আছে তা সংকলিত করে বিষ্ণুর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হতে পারে। 'ভোরের মন্দির' পুনর্মুদ্রিত হতে পারে। বিষ্ণুর কবিতাগুলো একাধিক আবৃত্তিকারের মুখে মুখে ফিরতে পারে। পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তো কিছু হয় না এ ভবের হাটে। কারো পৃষ্ঠপোষকতায় একটা কবিতার এ্যালবাম প্রকাশ করা গেলে বিষ্ণু বিশ্বাসের কবিতার অনুরণন ছড়িয়ে দেয়া যেত। তাও যদি না হয় তো, আজকাল ইউটিউবে আবৃত্তি ভিডিও যোগ করা যায়। কেবল পাঠকের কাছে জানান দেয়াই তো নয়, কবি বিষ্ণু বিশ্বাসকে তার আপন জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে তারই কবিতার সৌগন্ধে।

আর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, বিষ্ণু জাতিস্বর হয়ে জন্ম নিক মহাকালের গর্ভে!

মন্তব্যসমূহ

নাজনীন খলিল বলেছেন…
আর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, বিষ্ণু জাতিস্বর হয়ে জন্ম নিক মহাকালের গর্ভে!


হ্যাঁ বিষ্ণু আবার ফিরুন তাঁর চেনা পৃথিবীতে।
নিরন্তর এই শুভকামনা।
আইরিন সুলতানা বলেছেন…
কবি বিষ্ণু বিশ্বাসকে জানার সুযোগ হল অচেনা যাত্রীর কারণে। আর এই ক্ষুদ্র লেখাটা শুরু করার পর শেষ করা হচ্ছিল না, সে পর্যন্ত শেষ করতে পেরেছি কবি নাজনীন খলিল এর উৎসাহে।
আইরিন সুলতানা বলেছেন…
এই লেখাটা ফেসবুকে লিংক করেছিলাম। একটা মন্তব্য এসেছে সেখানে, যেটা কপিপেস্ট করছি -

Raj Mondol Payel:
1982, Ruku handed over Bishnu Biswas to me ! He had been on RU campus for admission purpose ! He wanted to be admitted in English department. He had a deep vibrant voice so suitable for recitation. An extremely sensitive mind ! That was the start ... ! However, he got admission in the History Department. We started spending time together. He loved cricket! He used to bring a tiny radio set for cricket commentary ! In thick December fog, with hot singara and tea we used to listen the commentary. I insisted him to join Shonon for recitation ! Introduced to our gang and Guru Ashim Kumar Das !
That was another start..
We used to say one day we will leave all and will take the shelter of the peace of in the region of Himalayans! We will commit suicide. How knew Bishnu Kept his word leaving us ! After two decades he was discovered again by our another friend Jobon Roy!