মৌসুমী রায়ঘোষ



মৌসুমী রায়ঘোষ
মা 

ট্রেনটা ঢুকল বেশ রাতে। পলাশপুর গভর্নমেন্ট হাসপাতালের নতুন শহুরে  ডাক্তার কমল গুহ নামল ব্যাগ কাঁধে। যাবে কি করে? হাসপাতালের লোক নিতে এসে ফিরে গেছে। এতো রাতে  গাড়ি নেই। অবশেষে স্টেশন মাস্টারের  সহায়তায় এক রিক্সাওয়ালাকে বেশি টাকা দিয়ে অনেক কষ্টে রাজি করাল। তাও গ্রামের খানিকটা দূরে নামাবে। বাকিটা হাঁটতে হবে।

অগত্যা কমল উঠল রিক্সায়। জায়গামতো নেমে হাঁটতে হাঁটতে দূর থেকে  আবছা নজরে এল নিদ্রামগ্ন গ্রাম। গ্রামের অনেকটা বাইরে একটা ছোট্ট কুঁড়ে  দেখে কমল এগিয়ে গেল।

বেশ কয়েকবার কড়া নাড়তে এক কন্ঠস্বর জিগ্যেস করল, কে?
-একটু দরজাটা খুলবেন খুব বিপদে পড়েই বিরক্ত করছি। শহুরে ভদ্রতা।
এক লোলচর্মা বৃদ্ধা দরজা খুললেন। সব শুনে ফোকলা দাঁতে সরল হাসি।  ভেতরে নিয়ে গেলেন। ধড়ে প্রাণ এল কমলের। কুঁড়ের মধ্যে একটা ভাঙা  তক্তপোষ, মাটির উনান-বাসন।

জিগ্যেস করলেন,বাবা, কিছু খাইসো? কমলের শত আপত্তি সত্ত্বেও ঐ রাত্রে  বসিয়ে দিলেন আলুসিদ্ধ-ভাত। এক পুরনো ছবি দেখে কৌতূহলী হতে বৃদ্ধা  চোখ মুছতে মুছতে বললেন, আমার ছেলে। মরি গেইসে।  

খেয়ে-দেয়ে কমল শুয়ে পড়ল। বৃদ্ধা বিছানা করে দিলেন যত্নে। নামালেন  হাতে সেলাই করা পরিস্কার কাঁথা।

এক ঘুমে রাত কাবার। সকালে চা খেয়ে তরতাজা হয়ে কমল বেরিয়ে  পরল। পরে জেনেছিল ডাইনী অপবাদে বৃদ্ধা গ্রামের বাইরে। স্বার্থের হানাহানিতে  এক অসহায় মা বিতাড়িত। পাশে কেউ নেই। তবু ঋণী করে গেছেন।


মন্তব্যসমূহ