বিষ্ণু বিশ্বাসঃএকজন পরিব্রাজক,সন্নাসী ও সৌনিক // সুবীর সরকার


বিষ্ণু বিশ্বাসঃএকজন পরিব্রাজক,সন্নাসী ও সৌনিক
                                                 সুবীর সরকার

         বিষ্ণু বিশ্বাস। বাংলা ভাষার কবি। জন্ম, বাংলাদেশের ঝিনাইদহর বিষয়খালি গ্রামে ১৯৬২ তে। পড়াশুনো করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকাতে। তুমুল বোহেমিয়ান যাপনের ভিতরে কবির কবিতাভূবনের অত্যাশ্চর্য মিথ ও ম্যাজিক। ২০০১ এ তার কবিতার বই ‘ভোরের মন্দির’ প্রকাশিত হয়েছিল ঢাকা থেকে। একসময় সম্পাদনা করেছেন ছোট কাগজ-‘পেঁচা’। ‘বাবরি মসজিদ’ ধ্বংসের পরে তিনি মনোরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তারপরে একসময় পালিয়ে চলে আসেন ভারতে। বর্তমানে বৃদ্ধা মা কে নিয়ে তার নিজস্ব যাপন।  অসম্ভব শক্তিমান এই কবির কবিতার বইটি আমার ভাই, কবি অমিত কুমার বিশ্বাসের সৌজন্যে আমার পড়বার সুযোগ হয়েছে। আমি তুমুল এক কবিকে আবিষ্কার করতে পেরেছি। যা আদতে বুঝি তেলেনাপোতা আবিষ্কারের মতন।


             

‘অসম্ভব খোলা গলায় বৃদ্ধেরা গান গেয়ে গেছে
ভোরবেলা’।
কি অমোঘ উচ্চারণ।বিষ্ণু বিশ্বাস আদতে এক ঘোর লাগা কবি। অবিরাম পলায়ন করে তিনি যেন দুপুরের রোদের দিকেই চলে যেতে  থাকেন। উদাসী কাব্যভাষায় তিনি বলেন,
     ‘তখন শীত
      ছায়া মিশে গেছে শরীরে’
ইতিহাস ও দেশকাল সচেতন বিষ্ণু একদা যুক্ত হয়েছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। তিনি স্বপ্নময় মানুষ। ভীতিবিচলনের ভিতর থরে থরে সাজিয়ে রাখতে জানেন মৃদু ও প্রতীকি সব বিষাদ ও বিজাণু।


       
    অন্যমনষ্কতার ভিতরে কেমন টেনে আনেন বিষ্ণু অদ্ভুত এক বৈরাগ্য! আর বলেন,
      ‘একটি ভালোবাসার গান হবে,কথা হচ্ছিল।কে গাইবে’?
যেন বা বিষয়কর্মের শব্দ উঠছে। ধানের ওপর শালিক। কিছুতেই হেঁটে শেষ হয় না লম্বা রাস্তাগুলি। জীবন যেন না টানা সিগারেটের ছাই।  আর মেধার লাঙ্গল ছুঁয়ে কবি তার যাপন ও জীবনকেই প্রশ্ন ও প্রতিপ্রশ্নের অসংসয়িত উত্তরণের স্বপ্নের গহীনে ডুবিয়েই দিতে চান,দিতে থাকেন; মজা কিম্বা ম্যাজিকের কুহকটানেলেই বুঝি শেষাবধি!

        ৪
  ‘শীতের অরণ্য চাইবে যথার্থ মৃত্যুর মতো ভিন্ন’?
কবিকে পাঠ করে আমি নিবিড় এক মায়াপৃথিবীর দিকেই চলে গেলাম বুঝি! বিষ্ণু বিশ্বাসঃ একজন পরিব্রাজক,সন্নাসী ও সৌনিক। ঘুমের ভিতর চিলে গিয়ে বারংবার ঘুম ও ঘামের এক আবহমানতাকেই যেন নির্মিত ও বিনির্মিত করে চলেছেন কবি।




 কবিকে শ্রদ্ধা।প্রণাম।

মন্তব্যসমূহ