কাঁটাতার
'অচেনা যাত্রী’ ও 'দ্বৈপায়ন' সাহিত্য পত্রিকার যৌথ উদ্যোগ
বনগ্রাম-৭৪৩২৩৫
Basanter Gharbari
A collection of Bengali Flash Fictions by
Amit Kumar Biswas
গ্রন্থস্বত্বঃ সুমনা বৈরাগী বিশ্বাস
প্রথম প্রকাশঃশ্রাবণ ১৫,১৪২১ (আগস্ট,২০১৪)
প্রকাশিকাঃ সুমনা বৈরাগী বিশ্বাস
অখিল -স্মৃতি গ্রন্থাগার ও পাঠকক্ষ
নিত্যানন্দ মনোরমা ভবন
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস সরণি
সুভাষ নগর,বনগ্রাম,উত্তর ২৪ পরগনা,
পশ্চিমবঙ্গ,ভারত,পিনকোড-৭৪৩২৩৫ ইমেলঃachenayatri@gmail.com
মুঠোফোনঃ+৯১ ৮১৫৯০৯৩৭১০
প্রচ্ছদঃতমাল বন্দ্যোপাধ্যায়
অক্ষর বিন্যাসঃ কুমারেশ পাত্র ও রূপাই পান্তি
লেখকের অন্যান্য বইঃ রাত্রির হৃদয়ে এখন নীল শুঁয়োপোকা(গল্পগ্রন্থ/ধানসিরি,কলকাতা-৫০),ম্যাকবেথের বিবি(কাব্যগ্রন্থ/বাংলার ই-বই,ঢাকা)
উৎসর্গ
তীর্থংকর মৈত্র
শিমুল মাহমুদ
বিভাস রায়চৌধুরি
অর্ঘ্য মণ্ডল
তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়
ঝরঝরে বাইসাইকেল নিয়ে অদূরে দাঁড়িয়ে উৎসব...
‘বসন্তের ঘরবাড়ি’। অমিত কুমার বিশ্বাসের অণুগল্পের ছোটো একটি পুস্তক। অমিত পেশায় শিক্ষক। কবি। গদ্যকার।ওয়েব ও ছোটো কাগজের সম্পাদনা করেন। সুপ্রচুর ঘুরে বেড়ান।স্বপ্নময় মানুষ। নাটকে উৎসাহী এই তরুণ অসম্ভব পরিশ্রমী ও বহুবর্ণিল এক ব্যাক্তিত্ব। তার এই বইটিতে মূলত কোনো অণুগল্পই নেই। যা আছে তা আদ্যন্ত জীবনের আলোছায়াহর্ষবিষাদময় এক জায়মানতা। জীবন থেকে বারবার চলে যাওয়া জীবনেই বুঝি! অমিত জানেন মনখারাপের পাখি ঘুমিয়ে পড়লে ‘মাধবীলতা’ গল্পের ‘নাসির’ তুমুল রক্ত মেখে গড়িয়ে পড়বে নদীর জলে! তার গল্প জুড়ে তীব্র স্মার্টনেস। হালকা বৃষ্টি ও মৃদুমন্দ মেঘের নিচে যেন বাঁশি বাজে। আর আমাদের ভিতর এগিয়ে আসতে থাকে, ঢুকে পড়তে থাকে 'স্বপ্নে ডোবানো বিস্কুট'! এক লোকলোকত্তরতায় আবিষ্ট হতেই হয় ‘বসন্তের ঘরবাড়ি’ পাঠ করতে করতে। আমিত কুমার বিশ্বাসকে হুড খোলা অভিবাদন জানাই।
সুবীর সরকার
২৪/০৩/১৪
সূচি
বসন্তের ঘরবাড়ি
ওয়েটিং ফর...
অন্তঃসত্বা
মেঘ আর একলা রোদ্দুর
দ্য পেট
জানালায় বৃষ্টি
অলৌকিক নীল হাত এবং...
মাধবীলতা
স্বপ্নের লুকোচুরি
রাধা
বাঁশি
রাধাচূড়া
লেফাফার অশ্রুডানা
রঙ
রিজারেকশান
কমিটমেন্ট
আড়ালে যিশুর শব
খোককস
ডুব
কবি ও কবিতা
মার্চ ইন দ্য হেল
দাড়াঁশ
কফিনের ’পরে নীল মোম
রাত
উৎসব
খতম
প্রকল্প
তৃতীয় সন্তান
হে রাম !
সামুরাই
মেঘ বৃষ্টির উপাখ্যান
ফসিল
পিচবোর্ড
একটি প্রেমের মৃত্যু
মৃত্যু ও কুকুর বিষয়ক
যাপন
তৃষ্ণা
লিটিল বয়
ফ্যাট ম্যান
পথ
সাক্ষাৎকার
কোলাজ
বেডকভার
ডিভোর্স
উড়ন্ত স্বপ্নের ছাই

বসন্তের ঘরবাড়ি
তাঁর চোখে ছিল জোছনার মায়াভরা মেঘপুঞ্জ। ঠোঁটে মৃদু ঢেউ। সে হেসে উঠলেই ভোর হত । আর হাঁটলে ঝাউবনে বইত ঝোড়ো বাতাস। সে বাতাসে পাল ছিঁড়ে যায় আচম্বিতে। অগত্যা আমার নৌকাখানি টলমল।
সেদিন ডাকল সে। গোপনে। কম্পিত স্বপ্নিল হৃদয়ে এগিয়ে যাই । যেন অনেক অনেক দিন পর কাঁচা ফলের অম্লতা ঘুচে যায় কাঁচামিঠে রোদের আদরে। অবশেষে ভিখারির মতো হাত উপুড় করে দিই, আর তাতে এসে বসে করেকটি বাসী লেফাফা। বলে,ভাইকে দেবেন ।
ঝড়ের পর চোখ মেলে চাই। দেখি ঝরঝরে বাইসাইকেল নিয়ে অদূরে দাঁড়িয়ে উৎসব। মাঝে এক নির্বাক নদী। আর তার এপারওপারে নিঃশব্দে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছে বসন্তের সকল ঘরবাড়ি ।
ওয়েটিং ফর...
সে নেই । আসবে ।কুহু তো তাই বলে গেল। আরো বলল, থেকে যান। আসবে। আজ বা কাল। বা পরশু। স্নান সেরে খেয়ে নিন।
বাথটাবে বসে সাবানের দিকে চোখ রাখে অভিধান। ব্যবহৃত। এক বা দু'বার। এটা তাঁর। সে জানে। স্নানাগার অদ্ভুত এক মায়াময় ঘ্রাণে আচ্ছন্ন। সে ঘ্রাণে পাকা ধানের মতো ঘুম আসে। হাত বাড়ায় সে। অজান্তে। ছোঁয়। ছুঁয়েফেলে হৃৎকুসুম। যেন পুলক লেগেছে ইডেনে। যেন গাঢ় শীতে জোনাকির পালকে লেগেছে মেঠোআগুন। এভাবে আজ কাল পরশু। কাটে। কেটে যায়। তবু অপেক্ষা। কাল আসবে। হয়তো। আর কত? কত দিন? কত রাত? কত পথ? এদিকে যে ক্রমশ ক্ষয়ে আসে স্বপ্নের শরীর!
অন্তঃসত্ত্বা
কী যেন নাম তাঁর? চাঁদচাঁদ? হয়তো। সে এল। কয়েক দিনের জন্য। ক'টা মাস হবে। ক'টা বছর বা যুগও হতে পারে। তাকে ঘিরেই আমাদের কাজ। অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক। স্বপ্নও। সেটা অবশ্য....!
ঋজু,নিলয় আর আমি। সে তখন অন্তঃসত্ত্বা। আরো কয়েকদিন। এভাবেই । কাজ চলে। স্বপ্নও। চাঁদ আসে। চাঁদ যায়। আমরা জোছনায় যে যার মতো ডুবে যাই। স্নান করি। সাঁতার দিই। পেঁজা পেঁজা তুলোর মতো সে জোছনা! তারপর সময় হল। কৃষ্ণপক্ষের। সে যায়। দেখি আমরাই অন্তঃসত্ত্বা ।
মেঘ আর একলা রোদ্দুর
কালো মেয়ের পাত্র হলনা আজও। তাঁর স্বপ্নে ডোবানো বিস্কুট একটু একটু করে ক্ষয়ে আসে। নীল নীল স্বপ্ন। মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থেকে ফুলের সাথে খেলা করার সুদীর্ঘ স্বপ্ন।
সে সুন্দর। মেঘ আর কাঁচা মাটির মতোই। স্বপ্নও । সে এলেই গাছে গাছে ফুল আসে। ডালে ডালে পাখি। নৌকায় পাল তুলে দিলে যেমন রূপসী হয় রূপসা! তেমনই সে। আর তাঁর কিশোরী মেঘের মতো অভিমান। যেন কামরাঙা হয়ে আছে সারাটা বিকেল। তবু...
সে আজও বসে আছে। দাওয়ায়। একা একা। একদিন ভীষণ মেঘ করবে। একদিন মেঘ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামবে। একদিন। হয়তো। তখন ভিজে যাবে স্বপ্নের অগোছালো রোদ্দুর !
দ্য পেট
সাইকেলটা পড়েই ছিল। পাশে। অনেকক্ষণ। ঠিক মনে নেই--আধও হতে পারে, আবার হতে পারে আট। কেবল ধোঁয়া উড়ছে। একটার পর একটা। মোবাইলটাও নির্বাক। ঘুম ঘুম ভাব। ঘুমে জেগে ওঠে সাইকেলের হৃদয়। ঘোড়ার মতো ছোটে। সৈকত বরাবর। টগবগ টগবগ। নৌকা এখনও দাঁড়িয়ে। ঝড় উঠেছে। খুব। টলমল তরী। তবু ...
না। সে এলনা। অগত্যা ফেরার পালা। ডানাছেঁড়া ফড়িংয়ের মতোই। সাইকেলটাও চলে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। পোশা কুকুর কিংবা বিশ্বস্ত হতাশার মতোই।
জানালায় বৃষ্টি
হঠাৎ বৃষ্টি। এমনটা আশা করেনি সাগ্নিক। বন্ধ জানলার পাশে আশ্রয়ে কিছুক্ষণ। সামনে মাঠ। খেলার। সেথা কচিকাঁচাদের লাফালাফি।
এক সময় জানলাটা খুলে গেল ।
--সো-ম- মু- মু- মু -মু- মু- উ- উ- উ !
চোখ গেল সেদিকেই । চোখাচোখি। চোখে হারিয়ে যাওয়া। অনেক অনেক দিন পর। আবার। এভাবেই। পুকুরের রাজহাঁসগুলো কেমন লাফিয়ে উঠল জলে। ডানায় তখন অজানা পালকের পুলক।
সুমন দৌড়ে ঘরে ঢোকে। বৃষ্টিও থেমে আসে। বন্ধ হয় জানালা কিংবা দরজা ।
অলৌকিক নীল হাত এবং....
মোবাইলটা কানে রাখতেই ট্রেন ঢুকে গেল। সেও। আচমকা মনে হল একটা পরিচিত হাত তাঁর কাঁধ ছুঁয়ে দিল! মাঝে মাঝেই এমনটা হয়। কেন? ছাই থেকে কি উঠে আসে আত্মার পোশাক? গলাটা কেমন শুকিয়ে আসে তাঁর। ঢক ঢক করে জল ঢালে। তারপর হাঁপাতে থাকে। এদিক ওদিক চায়। কিছু দৃষ্টি তাঁর দিকেই ।
গন্তব্য এসে গেল। একটা রিক্সা ধরে বাড়ি ফেরা। আজ একটু রাত হল। ঘরে ঢুকতেই দেখে শোফায় এলিয়ে পড়েছে মানব। চোখ খোলে।হাসে ।
--এত দেরি?
--হয়ে গেল। সরি।
- না না ,ইটস্ ওকে!
তারপর এগিয়ে আসে। খুব খুব কাছে। ঠোঁটের আলপনা নদীর মোহনায় মোহনায়। হালকা বৃষ্টি নামে। মৃদুমন্দ মেঘও ডাকে। নৌকাও দুলে ওঠে মায়াঘেরা অনিবার্য ইশারায়। আরো আরোও!
--ওহ্ নীল !
আবার! অকস্মাৎ অসহায় বোধ করে মানব। শীতে কুঁকড়ে যায় শরীর। উঠে পড়ে । সম্বিৎ ফেরে শারিকার। পিঠের নরম আঙুল গুলোও আলগা হয়ে আসে ক্রমশ। কিছুক্ষণ নীরবতা পালন। অবশেষে ভাঙন। দরজায় শব্দ হয়। আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়। কেবল নীল মোহনায় পড়ে থাকে বিপন্ন প্রজাপতির লাশ !
![]() |
ছবিঃ জাহাঙ্গীর ভাই এর সৌজন্যে |
মাধবীলতা
প্রবল বৃষ্টি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে যুবকটি। হাওয়ায় প্রায় উলটে যাচ্ছে ছাতাটা। মাধবী সেদিকেই চেয়ে । তাঁর কাছে বৃষ্টি এক অবসেশন। মাটিতে যেন টপটপ করে রক্ত ঝরে আজও। আজও কাঁচামাটির গন্ধ লেগে তাঁর দু'হাতে। অকস্মাৎ তোয়ার ডাকে সম্বিৎ ফেরে তাঁর।
--ছোটঠাম্মা আসি!
তোয়ার পলাতকা পথের দিকে তাকিয়ে ছিল সত্তরের মাধবী। অনেক অনেক দিন পর বৃষ্টিকে বড়ো বেশি ভালো লাগে তাঁর ।
তখন সতেরো। সাদা থান পরে পুকুর ঘাটে নিত্য আসা-যাওয়া। সেথা নাসিরের সাথে আলাপ। কালো পেটানো শরীর। চোখে চোখ পড়ে। হাতে হাত। কথাটা কানে যেতেই উঠবস করতে হল বেচারাকে ।
--কী করে সাহস হল হিঁদুর মেয়েকে চোরের মতো নৌকা চড়ানোর,তাও আবার চৌধুরী বাড়ির বিধবাকে !
তবু ফুলের সুবাশে এক বৃষ্টির দিনে চুপিচুপি এল সে, বলল, চলো বৌঠান!
--কোথায়?
--যেদিক দু'চোখ যায়!
--তাই চলো।
নাসিরকে তীব্র আলিঙ্গনে বাঁধে। ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে যায়। অমনি 'দুম্ দুম্'। জলে ছিটকে পড়ে নাসির, যেন আস্ত একটা পাহাড় ভেঙে পড়ে জলে। রক্তে লাল। আর্তনাদ করে মাধবী। তাঁর পা'দুটি কারা টেনে নিয়ে যাবার সময় ভীষণ এক মায়ায় সে আঁকড়ে ধরতে চায় নরম কাঁদামাটির শরীর। পারে না। হাতে লেগে থাকে কেবল মাটির তাজা রক্ত।
আজ হঠাৎ কম্পিত হাতে আঁকড়ে ধরতে চায় একমুঠো নীল শূন্যতা। আজও ঠোঁট কাঁপে। আর সে কম্পনের ফাঁকে ফাঁকেই ছড়িরে পড়ে মাধবীলতার ঘ্রাণ। সে ঘ্রাণ পৃথিবী ছাড়িয়ে চলে যায় আলোকবর্ষ দূরে ।
স্বপ্নের লুকোচুরি
আমার মৃত্যু হেঁটে আসছে। জীবনও। এভাবে। একা একা।পায়ে নূপুর। এই ভর দুপুরে? কী আশ্চর্য!
আমি কি ডুবে যাবো? বনানী? শুনতে পাচ্ছো? মেঘের থেকেও সুন্দর এখনও কি কেউ একজন ভীষণ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে! এপারে? ওপারে? তবে কি তুমিই? এত বছর পরে? না না। এ আমার ভুল। তুমি তো পায়ে কখনো নুপুর পরো না! তবে ?
মন খারাপের পাখি ঘুমিয়ে পড়ল। চুপিচুপি। নুপুরের শব্দও মিশে গেল গাঢ় নীল রঙা দুপুরে। আমিও ।
রাধা
তুই এলেই আমার ঘরে শিমুল-পলাশেরা কথাবলে। চুপি চুপি এ ওর দিকে চায়। একটা মায়াবী ঘ্রাণ খেলা করে ঘরময়। তুই চোখ তুলে চাস। দেবীর মতো। অকস্মাৎ। আমি নির্বাক ।
সেই কবে থেকে। এরকম। কুড়ি বা তিরিশ। কিংবা...... ।
তখন থেকেই। আমি। নির্বাক ছবি। এখনও তাঁর চুলে জোছনার তুলতুলে ঘ্রাণ। ঠোঁটে প্রাচীন ভালোবাসার মতো আলোছায়া। ঘটি থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। সারাটা ঘর ভেসে যায়। কার খেয়াল আছে সেদিকে?
কেন তুই আসিস? কার কাছে আসিস? এসব তো ভাবিনি! শুধু ভাবি তুই আসিস। বাতাসের মতো রঙ নিয়ে। আবার চলেও যাস। কোথায় ? সেখানেও কি আমার মতো আমি ঘুরে বেড়াই? নিজেকে না বলে? তোর ঘ্রাণমাখা পথে? আমি আমি আর আমি! একা একা!
সময়ের চুলে পাক ধরে। তবু তুই আসিস। চলে যাস। রোজকারের মতো।
বাঁশি
ঝরা পাতার আবেগের মতো তোয়া পাশ ফিরল। থামল। হঠাৎ। একটা দীর্ঘ হতাশ্বাস এসে ঠেকল পিঠে। অগত্যা পাশবালিশকে আরো একটু আদর করে জড়িয়ে ধরা। এরপর উঠে পড়া । জানালার ধারে। জোছনার নীল শ্রাবণে একটা অসম্পূর্ণ গান নদীর মতো ভেসে যায় একাকী। পাশে এক মৃতপ্রায় নগরী। হারিয়ে যায়। অসহায় বাতাসের মতো। বালুকণায় লেগে থাকে লাল-নীল-হলুদের উপাখ্যান। চিকচিক করে। অন্তঃসত্ত্বা মেঘের মতো। বাঁশি বাজে। দূরে। বহুদূরে। বাঁশির বিছানায়। তোয়া কান পাতে। আরো। আরো । আরো ।
ভোর হয়ে আসে। তোয়া ফিরে যায়। পাশবালিশের নরম শরীরে ডুবে যায় একটা নৌকার হৃদয় ।
রাধাচূড়া
কালো মেয়ের বুকেও প্রেম আসে জানা ছিলনা। তুই আসলেই মেয়েটা গুন গুন করে গান ধরত, যেন বলতে চাইত আমি তো তোমার রাধাগো, আর তুমি আমার কৃষ্ণ। গত জন্মের বিপরীতে হাঁটছি এখন। মেয়েটা গেয়েই চলত। গুনগুন গুনগুন। বর্ষার তালে তালে। শরতের শিউলি ঝরার ফাঁকে ফাঁকে। শিতের কুয়াশা ভেজা সকালে। বসন্তের অরণ্যে। গুনগুন গুনগুন। তবু তুই মৌন। বাঁশি ধরিস না। পুকুর পাড়ে যাস না। চোখের দিকেও ঠিকঠাক চেয়ে দেখিস কিনা সন্দেহ। তবু প্রেম থেমে থাকেনা। চোখে মুখে বুকে। ফল্গুনদীর মতো বয়ে চলে।
তুই বিয়ে করলি। চাঁদের মতো এক পরী এল ঘরে। আর মেয়েটা সারারাত খুব কাঁদল জানিস। খুব ।খুব ।খুব।
সেই শেষ। তারপর আর কোনোদিন শোনা যায়নি তার গান। তার কান্নাও। জানা যায়নি কিছুই। জানার যে প্রয়োজন পড়েনি কারো!
লেফাফার অশ্রুডানা
চললাম । ভালো থেকো। মরতে নয়। গড়তে। নিজেকে। কী লাভ? লোকে হাসবে! তুমি বরং ভালো থেকো। নতুন পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে। আমিও থাকবো। আধভাঙা চাঁদ আর বুজে আসা ডোবা নিয়ে। স্মৃতির পাখিদের দানা দিতে দিতেই কাটিয়ে দেবো সারাটা বিকেল!
২
উত্তর পেলাম না। পাবো না জানতাম। আজও আছো। এটাই সুখের। আমিও। আমাদের জীবনে দ্বিতীয় থেকে তৃতীয়রা দোল খাচ্ছে হাওয়ায় হাওয়ায়। তবু স্মৃতিতে লুডো খেলে যায় কামরাঙার মতো ভালোবাসা। তাই...
৩
এখনও আছো। আছি আমিও।তৃতীয়-প্রজন্ম নিয়ে। আহা,চুলে একটু রঙ দিও! আজও যে চেয়ে থাকি কাঁচামিঠে রোদের দিকে !

রঙ
সে আর ফেরে নি। যদিও অনেক দিন হল। ছোটু এখন হাঁটতে পারে। মা মা বলতে পারে । বাতাসে শিমুল-পলাশের মায়া এল। তবুও...
তবু অপেক্ষা। হয়তো গ্রামের পথের ধুলো ওড়াতে ওড়াতে আসবে সে। আবিরে আবিরে ভরে যাবে গোটা এলাকা। লোকজন ছুটে আসবে ঘরবাড়ি থেকে।
নুনি দাওয়ায় বসে। রঙ এল। চলে গেল। পান্নার পড়ে থাকা পিচকারি হাতে নিয়ে ছোটু খেলছিল। সামান্য গোলা রঙ পড়ে আছে। নিষ্পাপ হাতের চাপে বেরিয়ে আসে। একটু খানি রঙ লেগে যায় নুনির মুখে। ঠোঁটে। অমনি ছোটুকে জড়িয়ে ধরে। তুমুল ভাবে। মেঘ করে ছিল । এবারে বৃষ্টি ঝরতে থাকে অঝোরে।
রিজারেকশান
অনির্বাণ রতনপুর ফিরে এল প্রায় দু-দশক পর। যশোদার চোখে ছানি । তবু স্নেহের ঘ্রাণে বৃষ্টি নেমে এল দু-চোখে। বহুদিন পর।
পাশের বাড়িতেও ছানি। পা রাখতেই নেপথ্যে বাঁশি বেজে ওঠে। ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকা সুখ-অসুখের অতীত উঠে এল। শ্রাবণ এল। ঝুলন এল। রাধাকৃষ্ণ সাজা এল। গোপিনীরা এল। যমুনা এল। ঢেউ এল। সব সব উঠে এল এক করে। যেন করোটীর গভীর গহিনে নেমে ইতঃস্তত হামাগুড়ি দিচ্ছে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।
হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। ছানিপড়া বাড়ির আশ্রয়ে অনির্বাণ। শ্রাবণসুরে ভিজে গেল ঝোপঝাড়। দোলনা। রাধাকৃষ্ণ। গোপিনীরা। যমুনার কিশোরী বুকে নামছে জলের ধারা। অবিরাম।
বৃষ্টি থামে। নৈশঃব্দ্যের মধ্যে হেঁটে যায় রাধা। পেছনে কৃষ্ণ। নেপথ্যে বাঁশি।
কমিটমেন্ট
মোবাইলটা টেবিলে রেখেই বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিল সুদীপ্তা। ফিরে এল মিনিট দশেক পর । এর মধ্যেই সাত সাতটা মিসড কল। তিনটে মেসেজ। ‘Happy Anniversary Mrs Som’, ‘Coming in the afternoon darling’ ও ‘Why late?’ শেষেরটা সুজিতের। রাতে পার্টি।খুব চাপ।কল ব্যাক করল।
-হ্যালো।
অপর প্রান্তে কোনো কথা নেই। মুখে একটা বিরক্তি ভাব। ‘Coming within an hour.’ সেন্ট হল। তোয়ালে সরিয়ে নাইটিটা গলিয়ে নেয়। এসময় নীরবে ঘরখানি খোলা বাতাসের মতো চোখ মেলে দেখে নেয় গহীন পলাশের গহনে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়েআসা পাখিদের আদরে লেখা এলোমেলো পান্ডুলিপির অবিরাম সন্তরণ।
নিজেকে এলিয়ে দিল সোফায়। হাতে রিমোট । টিভিতে ঠান্ডা পানীয়র বিজ্ঞাপনে এক নব্য ভারতরত্ন । চেঞ্জ। সিরিয়াল। সিনেমা । ক্রিকেট। ফিক্সড । সব ফিক্সড। পাতা ওলটানোর মতো এগিয়ে যায়। ডোরবেল বাজে। দরজা খোলে। একজন ঢোকে। বসে। চা খায়। হাত দুটো এগিয়ে দেয়। পিছিয়ে নেয়। আবার চলেও যায়। সুদীপ্তা আবার ফ্রেশ হতে ছোটে। টেবিলে ফোনটা কেঁপে ওঠে । দু’বার। একাকী।
আড়ালে যিশুর শব
ভালোলাগেনা কিছুই।এই নদীনালা গাছপালা ঝাউবন। বাউল মরে গেছে কবে । এখন কেবল ভূতের চিৎকারে বেসামাল ঘাসবন। তবু হাততালি। তুমিও এসেছো উত্তরীও পরাতে। তুমিও ববচুল করেছো। তুমিও ক্লিভেজে শাসাচ্ছ গোটাদেশ। অথবা রাতদুপুরে উড়ে যাচ্ছো ভোকাট্টা ঘুড়ির মতো এপাশ থেকে ওপাশ। তুমিও...তুমিও..তুমিও...
আসলে এভাবে ভাবিনি। ভেবেছি যুদ্ধের শেষে আমাদের একটা জমি হবে। ঘর হবে। স্লোগান ছেড়ে শুতে যাবো মাঝরাতে একসাথে। আমাদের ছেলেটা হামা দিতে দিতে শুয়ে পড়বে মাঝখানে। তবু জেগে থাকবো। ঢের কথা এখনও যে বাকি। সূর্য উঠলেই একটা দিনের শব পড়ে থাকে অবহেলায়। তার আগে। তার ঢের আগে আর একটুখানি বেশি বাঁচা। একটুখানি ছুটে যাওয়া পাখিদের দেশে। নদী মরে ভূত। ঝাউবন মরে ভূত। আমাদের ছোটোগ্রাম একেঁবেকে চলা ছোটোগ্রাম সব সব! চারিদিকে কেবল মানুষ। ঝান্ডা হাতে ডান্ডা হাতে কিলবিল করা মানুষ। তারাও মরে। তবু হয় না ভূত কখনও। ভয় পাই। কাঁপতে থাকি। নিজ হৃদয় উপড়ে নিয়ে বেণেরা বসে আছে রাজপথে। আত্মাও। নিজ কঙ্কাল ঝুলিয়ে রেখে শিখছে যোগবিয়োগ ধারাপাত। কখনও কবন্ধ জীবনে বাসা বাঁধে স্বপ্নের পাখি। লাফাই। ঝাপাই। পাখিরাও ভয় পায়। উড়ে যার মহাকাশের বাইরে।জীবন এক অদ্ভুত জাগলার! হাততালির নেশায় আবারও নেমে পড়ে ঘাসবনে। ছানিপড়া চোখের মতো উঁইয়ের ঢিবি মাথায় নিয়ে একা একা এগোতে থাকে । এদিকে কেবলই অনন্ত বসে থাকা। বসে থাকি। আমি। আমরা। কেউ উঠে আসবে শেষ মহাভোজের আসরে । কেউ । কেউ ভীষণ একজন। আর কফিন থেকে সহসা সটান লাফিয়ে উঠবো আমি থেকে আমরা।
খোককস
একটা চুম্বন।একটা ঝোড়ো চুম্বন। সবচেয়ে উঁচু গম্বুজের উপর দিয়ে ভেসে যাওয়া একটা চুম্বন। শুধু তোমার জন্য। শুধু...শুধু...। তোমারই জন্য দেখো এতদূর হেঁটে আসা। একটা বন একটা রাত একটা ঝড়ের রাত হেঁটে আসা। শুধু...
সহসা হাত থেকে পড়ে গেল! একটা কবিতা? একটা আত্মা? একটা চুম্বন? একটা...একটা...? কী ? কী?
তোমায় দেখি। নৃত্যরত। ময়ূরের সাথে। এ নববর্ষায়। আর তোমার বিশাল চুম্বন ক্রমশ ঢুকে যাচ্ছে বৃষ্টির পেটে।
ডুব
চাঁদ ডুবে গেল।তবু চাঁদ জেগে । একা । ব্যালকনিতে। বড্ড একা।
২
রোহিতের নম্বরটা ডিলিট করে দেয়। কী হবে রেখে? তার আগে একটা মেসেজ। ভালো থেকো। চলি। ইত্যাদি।
৩
আবার একা। এবারে সেও ডুব দেয়।ডু-উ-উ-উ-উ-উ-উ-উ-উ-উ--উ-ব!
কবি ও কবিতা
ফড়িংটা উড়তে উড়তে হারিয়ে গেল বাতাসের শরীরে। কচিঘাসের মতো চেয়ে ছিল শুভ। সেদিকেই। হারিয়ে যাওয়া পথটা খুঁজে বেরায়।খুঁজতে খুঁজতে সেও নিরুদ্দেশ। বসন্তের অরণ্যে। সেথা ফড়িং-যাপন অন্য ফড়িংদের সাথে। ওড়ে। উড়তে উড়তে কবিতা হয়ে যায় শুভ। একটা সুদীর্ঘ কবিতা। পাকা আমের মতো টস টস তার শরীর। টপ টপ করে রস পড়ে। খেজুর রস। এখন ফড়িং শুভো আর কবিতা সেন্ট্রাল পার্কে।চুমু খাচ্ছে।
মার্চ ইন দ্য হেল
প্রেমিকা বলল,তোমার মুখে থুঃ !
মা বলল,তোর মুখে থুঃ !
দেশবাসী বলল,তোদের মুখে থুঃ!
২
আসামী এগিয়ে এল ফাঁসিমঞ্চে। কালোকাপড় মুখে। হাত বাঁধা। ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি। মনে পড়ে সব। শিশুটিকে ছিনিয়ে নিচ্ছে লাল কুকুরগুলো। মায়ের ফসলি স্তনে এখনও তাঁর মুখ। ঝাঁপিয়ে পড়ল। ভাদরের চড়া রোদে পুড়ে গেল মোসানি। মাড়িহীন চোয়ালে লেগে থাকা দুধের সাথে মিশে যাওয়া কান্না ও লালার মতো চিৎকার ওজোনস্ফিয়ার ভেদ করে ছুঁয়ে গেল চাঁদের বক্ষদেশ । তবু..। এমন সময় অ্যালবার্ট গর্জে অঠে। উর্দিতে কেবলই রক্ত। পড়ে থাকে কুকুরগুলো। দুগ্ধদাত্রী ততসময়ে শেষ। আর শিশুটি লালায় লালায় ভরে গেছে। বুকে তুলে নেয়। জড়িয়ে ধরে। শিশুর মতো শিশুকেই।
রুমাল নড়ে। আর শেষমেশ নিজেকেই নিজে জড়িয়ে থাকে মহাশূন্যে। শান্ত ধ্যানস্থ মুনির মতো।
৩
কিছুদিন আগে আগুন্ডার ফাঁসি হয়। এক নৃশংস ধর্ষক। মোসানির পথে পথে জ্বলে উঠেছিল মোমবাতি। খুনি রাষ্ট্র নিপাত যাও। বুদ্ধিজীবী শ্রমজীবী সব । আজ পথ সুনসান। সবার মুখে ‘থুঃ’ !
৪
মর্গে এগারো বছর পড়ে থাকে। অবশেষে কিছু কালো কুকুর একদিন অকস্মাৎ ঢুকে পড়ে। টেনে নিয়ে যায় একটা একটা করে। চিবিয়ে খায়।
৫
অবশেষে পাসপোর্ট পেয়ে অ্যালবার্ট চলে আসে। দ্যাখে লাল কুকুর তিনটে বসে আছে। ল্যাজ নাড়ছে। পাশে স্বয়ং ঈশ্বর ।
--আরে আসুন আসুন অ্যালবার্ট সাহেব। আপনাকে আমরা সম্বর্ধনা দেবো, আসুন!
অ্যালবার্ট ডানে তাকায়। বায়ে তাকায়। অবশেষে বলে, ‘থুঃ’ !
দাড়াঁশ
শরৎ এসে গেল। অথচ চড়া রোদ ভুলুকে কিছুতেই ছুঁতে পারেনা। সারাদিন বেচারা কুই কুই করে কেঁদে বেড়ায়। এ কৃতিত্ব নির্মলের। প্রকৃতপক্ষে বোস বাড়ির নির্মল পরিবেশের জন্য তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবু এক গোপন হাহাকার ভেসে বেড়ায় অন্দরমহলে। শ্রীলেখা আজ সাফ জানিয়ে দিল,ডাক্তার দেখাও নয় আমাকে মুক্তি দাও, সুমিকে নিয়ে আমি কোথাও চলে যাই। এভাবে আর কত দিন! অতএব চেম্বারে। ডাক্তার অনেক চেক-আপের পর এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ইরেকশান ডিসফাংশান! কিউরেবেল। বাট টেক আ টাইম। এ ওঁর মুখ চায়। ফিরিয়ে নেয়। পরাজিত সৈনিকের মতো ফেরা।
২
গভীর রাত। চাঁদ আজ বড়ো বেশি একা। ভুলু শুয়ে একপাশে। শুয়ে শুয়েই কুই কুই। ভুলুর কান্নাটা সমস্থ হৃদয়কে তছনছ করে দেয়। নেমে আসে। ধীরে ধীরে। জড়িয়ে ধরে। অবশেষে বাধ ভাঙে। জলের তোড়ে ভেসে যায় সব।
কফিনের ’পরে নীল মোম
যেন দু-জনমের মাঝে আটকে থাকা এসকেলেটরে দাঁড়িয়ে বিলকিস। মুখের রোদ সরে সরে যাচ্ছে। ক্রমশ। এই অবেলায়। বিকল বাতাসে নৌকার পালের মতো নিষ্পলক তার দৃষ্টি। শরীর নুইয়ে পড়ছে বটের শাখার মতো। স্মার্টফোনে আঙুল বুলিয়ে দেখে নিল অবস্থান। কী আশ্চর্য। ভুল।ভুল ভুল। সে ভুলের উপর দাঁড়িয়ে। এতক্ষণ। অথচ সমীরণই বলেছিল MARK HOTEL –এর সামনেই। তার মানে সে ‘Unmarked’ ! রোদ চশমাটা খুললেই এক ঝাঁক ঝাঁঝালো তেতো রোদ এসে লাগে। এ রোদের বুক চিড়ে এক রহস্যময় মানুষের মতো কেউ একজন এগিয়ে আসে।বলে,
--আপনিই বিলকিস?
--হ্যাঁ! কেন?
--সমীরণ পাঠালেন। নিন।
লোকটা উধাহ। আর সে দাঁড়িয়ে বিলম্বিত বিষ্ময়ে। পা’দুটো ডুবে যাচ্ছিল চোরাবালির ক্ষুধার্ত পেটে। কেবলই চেয়ে রইল। ফ্যাল ফ্যাল করে। এক ফোঁটা তরল মুক্তোর শরীর এসে ছুঁয়ে যায়। আর গলে পড়ে বসন্তের ঘরবাড়ি।
রাত
চাঁদ আমাদের দেখে লুকিয়েছিল মুখ। পাতার পিছনে। আর আমিও তাকে দেখছি। লুকিয়ে। সে ওড়না মুখে দিয়ে মুচকি হেসে বলল, কেন আসেন এই অবেলায়?
কেন আসি? সেতো জানি না। ভাবিনি কখনও ! শুধু জানি আসি আর আসবো। এভাবেই । আর তাকিয়ে থাকবো তোমার নীল চোখ দুটির দিকে । অনন্ত কাল। অনন্ত তারার আলো মেখে।
উৎসব
ভোটের আঙুল না থাকলে পাশের আঙুলে রঙ দাও। বেশ উত্তেজনা অনুভব করছো, তাই না? সেটা না থাকলে চলে যাও পরের আঙুলে। না হলে ডান হাতে । আঙুল না থাকলে কনুই। সেটা না থাকলে কাঁধের কাছে। না থাকলে কপালে ফোঁটা দাও। বলো ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা । আর লোকটা না থাকলে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে যমদূত স্বয়ং আসবেন।
খতম
একটা পতাকার কথা বললাম। লোকটা ভাবল আমি লালের। আর একটা লোক ছিল, সে ভাবল আমি নীলের । আর একজন ভাবল, আমি সবুজের। কেউবা গেরুয়া। যদিও পতাকার রঙ ছিল আমার ছোট্ট ছেলের মুখের মতোই । তবে তা ছিল ছেঁড়া। লোকগুলো কেড়ে নিতে আমার দিকে এগোতে লাগল। খিস্তি মারল। পতাকাটা নিয়ে ছিঁড়েভুড়ে ফেলল নিমেষে। শেষে বলল, কাজ শেষ। এবার কাজে লাগতে হবে!
প্রকল্প
ভোট শেষ। বাচ্চাটা হাফ প্যাডেলে সাইকেল চালানো অবস্থায় একটা পতাকা হাতে ধরে আছে। শূন্যে উড়ছে বিজয় আনন্দ। যদিও ঢের বাকি। তার শুকনো কালো চামড়ার মধ্যে মিড-ডে মিল ঢুকে যাচ্ছিল কিনা জানি না। তবে খাতাটা মিলেছিল ঠিকঠাক। তবু সে ছুটছে। ভাঙাচোরা সাইকেলে। পালতোলা নৌকার মতোই।
তৃতীয় সন্তান
একজোড়া ছাগল দম্পতি অকস্মাৎ কন্ট্রোল ইউনিট আর ব্যালট ইউনিট নিয়ে পালাল। ভাবলো ওগুলো নতুন প্রজাতির কলাপাতা । ছ'মাস পর খোঁজ নিয়ে জানলাম ,ওদের তিনটি সন্তান হয়েছে। প্রথম জনকে দেখতে অবিকল লালুর মতো, আর দ্বিতীয়জন মুলায়ম সিং। কিন্তু তৃতীয় জনকে দেখে আমি হকচকিয়ে গেলাম! সেটি অবিকল আমার মতো!
হে রাম !
ইদ্রিস আলি, রাম সরদার আর জোসেফ মণ্ডল যাচ্ছিল। ইতিমধ্যে গণনা শুরু হয়ে গেছে। দুপুর। হঠাৎ রাম সরদার রেডিও অন করল। কান পাতল। কী মনে হল, তড়াক করে একটা বড়ো গাছে উঠে গেল। বাকি দুজন অবাক। নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। রাম এদিকে কখন নেমে এসেছে ওদের খেয়াল নেই। হাতে তার বিশাল এক তলোয়ার। দুজন তো ভয়ে বনের দিকে পালাতে লাগল এবং হারিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ওরাও বড়ো বড়ো তলোয়ার নিয়ে এল। পাশের গ্রামেও নাকি একই ছবি। খেলা শুরু করার আগে আবার কান পাতল । কিন্তু রেডিও থেকে আওয়াজ এল, 'হে রাম' !
সামুরাই
জিতেছে। তাই খুব আনন্দ। আবির উড়ছে আকাশে। লোকগুলো পঙ্গপালের মতো আসছে। এদিকে। রোজ লাথি খায়। ঝাঁটা খায়। আজ আসছে বীর পুরুষের মতো। আর যাকে পাচ্ছে তাকেই আবির লাগাচ্ছে ইচ্ছেমতো। কেউ নেই তাদেরকে রোখার । মেয়েদের স্কার্টের নিচে ছুঁড়ে দিচ্ছে চকোলেট বোম। খুব মজা পাচ্ছে।
মেঘ বৃষ্টির উপাখ্যান
কালো । অথচ দু'চোখ মেললেই জোছনা ছড়িয়ে পড়ে ঘাসবনে। ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসিতেই পাখি ডেকে ওঠে একসাথে। নিটোল হাতের ছোঁয়ায় নদীতে ঢেউ খেলে যায়। বাতাসের ঘ্রাণে ভেসে বেড়ায় বসন্তের ঘরবাড়ি। এমন রূপ থেকে মুক্ত হতে চেয়েছি বার বার। কিন্তু শেষমেশ ধরা পড়ে গেছি হাতেনাতেই।
একদিন আমাকে না বলেই চলে গেলে। রাগ হল। খুব। হয়তো বলতে চেয়েছিলে অনেক কিছুই। পারো নি । ভেবেছিলে কোনো লাভ নেই। তাই...
ফিরে এলে । কোলে কাকে যেন নিয়ে। তারপর আবার। এবং আবার। এভাবে কিশোরী কখন যে বড়ো হয়ে গেল! টের পেলাম কই?
একদিন চোখে চোখ। বললে- কেমন আছো? বললাম, গাছেদের মতো, মেঘেদের মতো , বৃষ্টির মতো , হাওয়ার মতো, শিশিরের মতো। খুব হাসলে । খুব। খুব। খুব। যেন অনেক অনেক দিন পর হেসে উঠলে সজিনা ফুলের মতো। মেঘের উপর সবচেয়ে উঁচু মেঘের মতো । আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। একা একা। পথগুলো ভাঙছিল। একে একে। টুকরো টুকরো হয়ে হারিয়ে যাচ্ছিল বাতাসে।
একটা চিরুনি কারখানায় কাজ পেলাম। হাম্বুর পেটানোর । সারাদিনে দেড়শো। আগুনের পাশে থেকে থেকে আগুন ভুলে গেলাম। একটু একটু করে।
সেদিন বাড়ি ফিরলাম। শুনলাম, আর নেই! খুব কান্না পেল। অথচ একটুও কাঁদতে পারলাম না। মনে পড়ল ওই ঠোঁট ওই বুক ওই চুল ওই হাত এখন আগুন মাখা। ওই পা ওই নগ্ন পা এখন নূপুরহীন দুপুরহীন পথে একলা একলা হেঁটে যাবে বৈতরণীর তীরে। ভাবছি ভাবছি আর ভাবছি । অথচ এক ফোঁটা জল এল না। তবে কি স্বার্থপর হয়ে গেলাম? এতটাই?
এরকম করে কেটে গেল দিন। বছর। যুগ। একদিন দেখলাম সব চুল সাদা। ঘর ভরতি কচিকাঁচারা । উঠোন ছোটো হতে হতে তুলসীবেদীর থেকে একটু ছোটো হয়ে এল। কাঁটাতারের শরীর জুরে কেবল পাণ্ডুলিপি। ঘাসবনে প্রোমোটারের পরিত্যক্ত বিয়ারবোতল আর চানাচুরের প্যাকেট। পাশে বালির ঢিবি। তবু চিলেকোঠায় মেঘ করলেই গম্ভীর হয়ে যাই আজও। ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি ছাদে। একা একা। চেয়ে থাকি। দেখি জোছনা আবার ছেয়ে গেছে আমাদের ঘাসবনে। ভিজে গেছে উঠোন। বাবলাদের উঁচু উঁচু আমগাছগুলো। ঘাসবনে তখন রাজহাঁস। উড়ছে। ছুটছে । আর ওপাশে দাঁড়িয়ে আমার কালো মেঘ। বৃষ্টির নিচে । একা ! ভীষণ একা!
ফসিল
অনেক চেষ্টা করছি, অথচ পারছি না কিছুতেই। মুখটা ভুলেই গেছি, অথচ কতনা চুম্বনের শরীর সেখানে ভেসে বেড়ায় আজও। আর কী কী---সে-সব ভাববার চেষ্টা শুরু করি পুনরায়। প্রথমত...দ্বিতীয়ত...তৃতীয়ত...
অনুভবের ট্রাম ঘটাং ঘটাং করে বেলাইন হয়ে পড়ে বার বার। কেউ কি চাপা পড়ছে? নিজের লাশ ছাড়া? নিজের আত্মার চিৎকার ছাড়া কেউ কি এত করুণ আর্তনাদ করতে পারে?
নিজের প্রতি রাগ হয় । ঘৃণাও । নিজের গালেই একটা চড় কষিয়ে দিতে ইচ্ছে করে খুব। কিংবা থুতু ছেটাতেও। কিন্তু আমি যে অসহায়! কে বোঝে!
ইতিমধ্যে মধ্যে দেখা হয়ে গেল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে লাল নাইটিটা এক হাতে ডান হাঁটু পর্যন্ত তুলে সে-ই। বাপের বাড়ির গলিতে। যেমন হয় আর কি! চকচকে হাঁটু। একটু উপড়ে সেই লাল জড়ুল, আর একটু উপরে সেই লাল প্যান্টি। কী আশ্চর্য! এত দিন পর সেটাই তার কি মানে আছে?
অন্য হাঁটু ঢাকা। স্কুটারের আলোতে আমাকে দেখতেই পায় নি সে। কিংবা আমার শিসটাই শোনেনি হয়তো। মুখটা দেখলাম। বেশ মেদ জমেছে। আগের থেকে ফর্সা। ডানদিকের চোয়ালে একটা দাঁত ফাঁকা। কোলে মেয়ে নিয়ে গপ্পো করছে দিব্বি।
আবার চেষ্টা করলাম। নাঃ। একদম ভুলে গেছি। পুরোনো চিঠিগুলো নেড়েচেড়ে দেখলাম। পড়লাম। তাও!
সহসা দেখলাম একটা চিঠির গা বেয়ে ছুটছে এক কিশোরী। যেমনটা আমাদের ধান ক্ষেতের আল ধরে দেখি মাঝে মাঝেই। ছুটতে ছুটতে হাতদুটি ডানা হয়ে গেল । তারপর উড়তে লাগল সে। উড়তে উড়তে হারিয়ে গেল নীলাকাশে । খুঁজলাম। এদিক -ওদিক। অনেক। অবশেষে বুঝলাম, আকাশই তাকে লুকিয়ে রেখেছে।
এদিকে পড়ে থাকে হতাশ্বাস। সোনার ধান ক্ষেত। পাগল বাতাস। ঘাসবন। আর আলের পাশে এক জোড়া জুতো। সে-দুটোও কি লাল?
পিচবোর্ড
লোকগুলো সারি সারি দাঁড়িয়ে ছিল। বলা হল ওদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মারা হবে, কারণ ওদের বাপ-ঠাকুরদারাই গুলি চালিয়েছিল। কেউ কেউ বলল, না, টাইম বোমা বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হোক সমুদ্রে অথবা মরুভূমিতে, কেউ আবার বলল, না, কাঠের গুঁড়ির উপর রেখেই কচুকাটা করা হোক আর ছড়িয়ে দেওয়া হোক ঘাসবনে । কেউ বুলেট বা ঝোলানোর পক্ষপাতী। কেউ আবার বলল, তার আগে এদেশের ভাষাটা শেখানো হোক। তিনমাস লাগবে। কিছু খরচ হবে ঠিকই। কিন্তু এতে একটা মানবিক আবেদন ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময় ।
লোকগুলো দাঁড়িয়েই ছিল। ওদের মা-বৌ-মেয়েদেরকে আলাদা নিয়ে যাওয়া হল। শিশুদেরকেও।
ইতিমধ্যে ঘোষণাপত্র এল, আরো একশো বছর উদ্বাস্তু শিবিরে রেখে দেওয়া হোক । এই শুনেও লোকগুলো যখন নড়ছেনা, তখন বেয়নেট দিয়ে একটাকে সামান্য টোকা দিতেই অবিকল পিচবোর্ডের মতো পড়ে গেল মাটিতে । দেখাদেখি বাকিরাও। দেখতে দেখতে সেখানে এক বিশাল পিচবোর্ডের ঢিবি! একটা শিশু হামাগুড়ি দিয়ে উঠে এল ঢিবি থেকে। উঠেই সে পিচবোর্ড শুষে খায়। পুরোটা খেতে বোধহয় তার একশো বছর লেগে যাবে।
একটি প্রেম অথবা নিটোল অবসেশন
এখানে এলেই পৌলমি চুপ হয়ে যায় ।এখান দিয়ে সে আসতে চায় না । অথচ সৃজাকে ইস্কুলে দিতে গেলে তাকে লাইনটা টপকাতেই হয়। নইলে অনেকটা পথ ঘুরে আসা।
সেদিন গোধূলির ছায়ার নিচে লুকিয়ে রমিত আসবে । সদ্য রেলের গ্রুপ ডি-তে জয়েন করেছে। পৌলমীর বাড়ি থেকে আপত্তি। ভীষণ। তাই দুজনের হারিয়ে যাবার একটা কঠিন সিদ্ধান্ত। একসাথে ।
লোকাল ট্রেনে উড়ছিল রমিত। এবার দুজনে । একসাথে উড়বে। আকাশে। মহাকাশে। চাঁদের চুমু নিয়ে ভেসে বেড়াবে এসপার ওসপার। আর একটু পর ।
হলনা । পাখির সকল ওড়াউড়ি থেমে গেল । একেবারে।
দ্রুত হাঁটে পৌলমি। খুঁটিটাকে ছুঁয়ে ফেললে আজ নিজেকে সামলানো কঠিন!
মৃত্যু ও কুকুর বিষয়ক
লোকটা মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। ছেলে-পুলে গুলোও। মাঝপথে একটা মাঠে কাঠুরিয়ারা মড়া রেখে বিড়ি ফুঁকছে।কেউ কেউ দাঁত বের করে... !! না না ,কাঁদবার কেউ নেই। শীতে সব জবু-থবু। সাত-আট জন বড়োজোর। এখন বেশি আসে না । সবই প্রায় বিনি পয়সায় আকণ্ঠ ডোবাতে আসে। এছাড়া বাড়ির দু-চারজন। ধূপে একটা মড়া মড়া গন্ধ, ফুলেও! পাশ দিয়ে ছুটছে সভ্যতা । কুকুরটা তবু পায়ের কাছেই বসে। এতদূর এসে । কী সাহস! বেপাড়ার কুকুদের চোখরাঙানি টপকে!
যাপন
সুনসান রাস্তার একপাশে গাড়ি রেখে ঝুপড়ির মধ্যে ঢুকে গেল লোকটা। সন্ধ্যায় আর একজন। রাতে আর একজন। এভাবে দূরের লোকটা খুঁজে পায় প্লাস্টিকের গোলাপ ও কুচো পেঁয়াজ মেশানো মুড়ির মুচমুচে স্বাদ। ভোরবেলা গাড়ি নড়েচড়ে বসে। হারিয়ে যায়। ছুটন্ত গাড়ি বা রাতের সুতীব্র নেশা। ঝুপড়িতে তিনটে কাচ্চাবাচ্চা ন্যাংটো হয়ে খেলে বেড়ায় সারাদিন। একজন রান্না করে। ক্ষেত থেকে তুলে আনে সব্জি। ইতিমধ্যে একটা নীল রঙের গাড়ি এসে দাঁড়ায়। নতুনই। তাঁর চোখ ছলছল করে ওঠে। একটু দ্রুত এগিয়ে যায় সেদিকেই।
তৃষ্ণা
আসলে সে সন্ধ্যায় সেখানে চারটে মেয়েই দাঁড়িয়েছিল, যাঁর মধ্যে একজন আমাদের দিকে ফিরে, পাশ থেকেই মিনারেল ওয়াটার নিয়ে বেরিয়ে এলাম আর অমনি হাত থেকে দশ টাকার কয়েনটা টুক করে একজনের হাইহিলের সামনে পড়ে গেল, ওঁরা একটুও চেয়ে দেখল না, টাকাটা তুলে নেবার সময় আমার কনুই একজনের পিঠ স্পর্শ করলে সরে গেল, আসলে রোজকারের মতো ওঁরা খুব ব্যস্ত ছিল, সরে এলাম, পাশে এসে তড়িঘড়ি গলায় কয়েক ঢোক জল ঢাললাম আর ভাবলাম, এইটুকু জলে তৃষ্ণা মিটবে তো?
লিটিল বয়
দুম করে একটা চিঠি এসে টেবিলে পড়ল। রেজিস্ট্রি ডাকে। সবাই ভয়ে কাঠ !
চিঠিটি স্টাফ কাউন্সিলের সেক্রেটারির নামে। ফ্রম রাবেয়া বিবি। সবাই বাকহারা। প্রবীর বাবু তখনও ক্লাসরুমে। ঘণ্টা পড়তে তখনও তেরো মিনিট। প্রধান সিরিয়াস মুখে একটা সিগারেট ধরালেন।
অবশেষে খোলা হল। সবার সে কী ক্লোজ আপ হাসি! অপু কিন্তু শুকিয়েই গিয়েছিল। ছেলেটির তাহলে কিছু হয়নি।
ফ্যাট ম্যান
চুলবুল পাণ্ডে এলাকার থানেদার হবার পর থেকে একটা পরিবর্তন দেখা গেছে, কেউ আর নীল ছবি দেখছে না।
মেয়েটা হেঁটে আসছিল। কয়েকটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করল। পিছু পিছু এল। কামড়ে দিল।
মেয়েটা হাসপাতালে। পর্যাপ্ত ইঞ্জেকশান নেই।
পাণ্ডেজির নাম এবার নোবেল শান্তি কমিটিতে গেছে।
পথ
রাস্তাটা তিনদিকে চলে গেছে। এবার? একটু দাঁড়িয়েই হন হন করে এগিয়ে যায়। ফিরে আসে। এবার অন্যপথে। আবারও আসা। এবার শেষটায়। ঢোকার আগে একটু থামে। সিগারেট ধরায়। ধোঁয়ায় ঢেকে যায় সমস্থ পথ।
সাক্ষাৎকার
তাকে জানি বলেই দিয়েছি। জানি ফেরত দেবে। একদিন না একদিন।
২
না। দেয়নি।
৩
গলাটা শুকিয়ে গেল। কতগুলো কালোমাখা হাত এগিয়ে আসছে ।
কোলাজ
পার্লার
-রেডি?
-হ্যাঁ। কন্ডোম হবে?
-হুম! বিশ টাকা এক্সট্রা।
২
ড্রয়িংরুম
-বাপি আমাকে কলেজগেটে ছেড়ে আসবে!
৩
বেডরুম
ধুর,বলেছিনা মেয়ে বড়ো হয়ে গেছে!
বেডকভার
যে দুজন প্রথমে শুয়েছিল তার একজন আবার আসে আর একজন কে নিয়ে ,আর আমিও এভাবে ঢুকে পড়ি, দেখি একজোড়া পেঁপে নিয়ে অপেক্ষা করছে একজন, যেমনটা হয় আর কি!
ডিভোর্স
পাখি ডাকে। জানালায়। রোজ। ভোরে। কাচ ঠোকরায়। আমি দেখি। বসে। একা। রোজ। রোজ পাখি পাখির খঁজে। আর আমি...!
সে তো আজও একা। কাচের ঘরে।
উড়ন্ত স্বপ্নের ছাই
রোজ সেখানে যাই। দরজাই ঠোঁট রাখি। আলতো করে। তারপর শেষ। এভাবেই বিশ বছর। আরোও হয়তো কাটবে। এভাবেই। তুমি সাজো রোজ। হয়তো আমার জন্য। আমিও...
আমাদের ঘর ছিল মাঠে এপাশ আর ওপাশে। ঠিক রূপাই- সাজুদের মতো।
ভাবি, এত কঠোর তবে স্বপ্নও। ওই চুমু খাওয়া পর্যন্ত। আজও তুমি কিশোরী। আমি কিশোর। টসটসে চেহারায় । তুমি কিংবা আমি। কোনও দিন সময় এগোবে না। ঠোঁটের ছোঁয়া লেগে থাকবে দরজায়। চিরকাল। আর আমি জেগে উঠবো প্রতিরাতে। ঠাণ্ডা ঘামে।
পাশের জন তখন ঘুমিয়ে কাদা!

মন্তব্যসমূহ