'অচেনা
যাত্রী সাহিত্য সম্মাননা-১৪২১' -এর প্রাপক কবি মাসুদার রহমানের সাক্ষাৎকার
২০১৩-এর
১ অক্টোবর থেকে ২০১৫-এর ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা দু-বছর উত্তর ২৪ পরগনার প্রথম অনলাইন
পত্রিকা (বাংলা সাহিত্য) 'অচেনা যাত্রী' প্রকাশিত হয় (মোট ২৬ টি সংখ্যা)। পরে আমাদের মুদ্রিত পত্রিকা 'দ্বৈপায়ন' নামে পরিবর্তিত করা হয় 'অচেনা যাত্রী'-কে।
অচেনা যাত্রীঃ মাসুদারদা, প্রথমেই জানিয়ে রাখি এই ‘অচেনা যাত্রী সাহিত্য
সন্মাননা-১৪২১’ আপনাকে প্রদান করতে পেরে আমরাই যারপরনাই সন্মানিত। আনন্দিত। এবং
উৎফুল্লও বটে। আপনি বাংলাদেশের নব্বই দশকের এক শক্তিমান কবি। তা আপনার এই কবিতা লেখার যাত্রা কবে থেকে শুরু
হল?
মাসুদার রহমানঃ 'অচেনা যাত্রী সাহিত্য সন্মাননা-১৪২১' প্রাপ্তিতে
আমিও সন্মানিত। দেখ অমিত, আমি অচেনা যাত্রী’র প্রথম সংখ্যায় লেখা দিয়েই যুক্ত হয়েছিলাম তার সঙ্গে। আমার লেখালেখি
বা কবিতা লেখার যাত্রা নিয়ে যে
প্রশ্ন করেছ সে প্রসঙ্গে বলি, আসলে তেমন কোনো পরিকল্পনা বা ছক কষে লেখালেখি শুরু
করিনি। সেভাবে কেউ করে বলেও ধারণা করি না। তাহলে বিষয়টি কেমন? এমন প্রশ্ন হতেই পারে। আমি ৬ষ্ঠ বা ৭ম শ্রেণিতে তখন, অবিভাবক ও শিক্ষকদের লুকিয়ে অংক খাতায় নাটক জাতীয় কিছু লেখার চেষ্টা
করেছিলাম। যদিও তা কিছু হয়েছিল বলে মনে হয় না। সে সময় থেকেই কবিতা লেখার
প্রাণন্তকর চেষ্টা। ৯ম শ্রেণিতে যখন অধ্যয়নে তখন একটি সাহিত্য পত্রিকায় আমার কবিতা
প্রথম প্রকাশিত হল। পর পর আরও কয়েকটি পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত হয় আমার। কবিতা নিয়ে
এতোটায় উজ্জিবিত ও তাড়িত হলাম, মাধ্যমিকের প্রথম বাংলা
পরীক্ষার রাতেও পাঠ্য বইয়ের মধ্যে শামসুর রাহমানের ‘বন্দীশিবির
থেকে’ কাব্যগ্রন্থটি লুকিয়ে পড়েছিলাম। পুরোরাত।
অচেনা যাত্রীঃ কবিতা প্রকৃত অর্থে আপনার কাছে কী? কেমন করেই হয়
একটি কবিতার নির্মাণ?
মাসুদার রহমানঃ কবিতা কী, এ প্রশ্নের কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর হয় কি? কবিতাকে যতবার সংজ্ঞায়ন করার চেষ্টা হয়েছে, সেই সংজ্ঞার বৃত্ত ও পরিধি ভেঙ্গে কবিতা বিস্তৃত হয়েছে। আসলে কোনো শিল্পকেই সংজ্ঞায় ধরা যায় না, কবিতাকে তো নয়ই। অনেকটা তরল
পারদকে খুব চিমটিয়ে হাতে তোলার মতো, তুলতে চাইলেও তোলা
সহজ নয়। আবার দেখ, একজনের কবিতা হতে অন্যজনের কবিতা কত
আলাদা। জীবনানন্দ দাশ হতে বুদ্ধদেব বসু, বারীন ঘোষাল হতে
প্রভাত চৌধুরী, মুজিব মেহদী হতে সুবীর সরকার, তুহিন দাস হতে সোনালি বেগম কখনো একগাছ পাতার মতো রাইজোমেটিক নয়। আর
কবিতার নিমার্ণের বিষয়টি কি সব সময় একভাবে হয়? আমার
ক্ষেত্রে তো তা হয় না, এক এক সময় এক
এক ভাবে তা হয়ে থাকে। এর কোনো সুনির্দিষ্ট গতিপথ নেই।
অচেনা যাত্রীঃ একজন খাঁটি কবির কী কী গুণ থাকা দরকার বলে আপনার মনে হয়?
মাসুদার রহমানঃ খাঁটি কবি বলতে কী বোঝাতে চাইছো আমার কাছে স্পষ্ট নয়। একজন
কবির খুব বেশি যা দরকার তা হল কবিতা সম্পর্কিত আপডেট চিন্তা-চেতনা, মগ্নতা যাপন
ইত্যাবধি বিষয় আশয়।
অচেনা যাত্রীঃ আপনার কয়েকজন প্রিয় কবির নাম জানতে পারি কি?
মাসুদার রহমানঃ প্রিয় কবি বলে তেমন কিছু হয় কিনা ভেবে দেখি নি। আমার ভালো
লাগার কবি এবং কবিতা অজস্র ও অনেক।
মাসুদার রহমানঃ কবিমাত্র তার অভিজ্ঞতা এবং অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞানকে অবলম্বণ
করে বাস্তব কল্পনা বা প্রতীকের জগতে তার অন্তহীন ভাষাযাত্রা যাপন করেন। আমিও আমার
নিঃসঙ্গতা আমার শ্বাসকষ্ট আমার ভালো থাকতে চাওয়া আমার শীত গ্রীষ্ম ও কুয়াশা যাপন
আমার ভালোবাসার গান সবকিছুই যেন আমার কবিতা একাকার হয়ে যেতে চেয়েছে। হু হু মাঠে
হাওয়া আর বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছে। শারীরিক অক্ষমতার কারণে জীবনে একটা আইসক্রিম খাবার
ইচ্ছেও পূরণ হবার নয়। এই অপূর্ণতাকে একমাত্র কবিতায় ভরিয়ে দেয় জীবনে। যা
প্রত্যাশিত নয় বা সচরাচার ঘটে না তাকেও কবিতায় ঘটিয়ে দিতে বাঁধা নেই। সামান্য
কৃষকের ছেলে;আমার যাপনের মধ্যে একজন রাষ্ট্রপতিকে টেনে এনে তাঁকে ধানক্ষেতের ডোবায়
শ্রাবণমুগ্ধ মুখ দেখে হাসাতেও পারি, কবিতাতেই তো।

অচেনা যাত্রীঃ শূন্য দশকের কবিরা কি দিকভ্রান্ত? তাঁরা কি কবিতার নান্দনিকতা থেকে সরে আসছে না? আপনার কী মনে হয়?
মাসুদার রহমানঃ শূন্য দশকের কবিতা নিয়ে একথা উঠছে কেন আমি বুঝি না। বলতে
দ্বিধা নেই, এই সময়ে লিখতে আসা অনেক তরুণের কবিতা পড়েই আমি উজ্জিবিত। অনেকের সঙ্গেই
আমার ব্যক্তিগত মতবিনিময় ও যোগাযোগ আছে। তবে একথা সত্যি যে তাদের যাপন পূর্বতন
কবিদের থেকে অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর। এসবের প্রভাব তো তাদের কবিতায় থাকবেই।
আছেও।আর নান্দনিকতা থেকে সরে আসার যে অভিযোগ আসছে সে প্রসঙ্গে বলা যায়, আসলে নান্দনিক বিষয়টিও সময়ের সঙ্গে পরিবর্ধন ও
পরিবর্তন সাপেক্ষ,নতুন নতুন নান্দনিকতার দিক উন্মেচিত করে
তার জগৎ বিস্তৃত হতেও পারে। নতুন
নন্দনচিন্তা যুক্ত করার চেষ্টাতো সকল কালখণ্ডের কবিরাই করে যেতে থাকেন।শূন্য দশকের
কবিরাও সে প্রচেষ্টা অনেক বেশি চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কবিতায়( অনুপম মুখোপধ্যায় সহ
আরও কয়েকজনের কবিতা পড়ে আমার তো তাই মনে হয়েছে)। তাদের অনেকের মধ্যে কবিতার
গতানুগতিকতা ভেঙে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা আছে। তাকে পজেটিভ বলেই ধরে নিতে হবে। এদের
কেউ কেউ সফলতা পেতে পারে আশা করতেই পারি। অচিন্ত্য চয়ন, অরবিন্দ
চক্রবর্তী, আমজাদ সুজন,তমাল
বন্দ্যোপধ্যায়,ইমতিয়াজ মাহমুদ,জফির
সেতু,জুয়েল মোস্তাফিজ, তারিখ
টুকু, তুষার কবির,নির্লিপ্ত নয়ন,
নিতু পূর্ণা,পিয়াস মজিদ, ফেরদৌস মাহমুদ, বিজয় আহমেদ, বিধান সাহা,মাজুল হাসান, মনিরুল মনির,মিজানুর রহমান বেলাল, মিঠুন রাকসাম,মাহমুদ সীমান্ত, রবু শেঠ, যুবক অনার্য,রহমান মাসুদ, রাহেল রাজিব, রিসি দলাই, রুদ্র শায়ক,
শামীম হোসেন, শামীম নওরোজ,শিশির আজম,সজল সমুদ্র, সফেদ ফরাজী,স্বপন সৌমিত্র, সোহেল হাসান গালিব, তুহিন দাস, সোমেশ্বর অলি, অনুপম মুখোপধ্যায়, অমিত কুমার বিশ্বাস,অনিমিখ পাত্র, অরিত্র সান্যাল, অরুণ পাঠক, অভিমন্যু মাহাত, উৎস রায়চৌধুরী, ঋপণ আর্য, গৌতম রায়, পলাশ
দে, প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত,দেবাশিস
সাহা, দেবাশিস মুখোপধ্যায়, মানিক
সাহা, মুজিবর আনসারী, রঙ্গীত
মিত্র, রমিত দে, রাজদীপ পুরী,
রাজীব ঘোষাল, শামীক ষন্নিগ্রাহী,
শ্যামল হালদার, শ্রীজিৎ,সঞ্জয় ঋষি, সূরজ দাশ, সঙ্ঘমিত্রা হালদার, স্নেহাশিস পাল, সোমনাথ ঘোষাল, সৌম্য চক্রবর্তী, হিমালয় জানা, শূন্য দশকেলিখতে আসা এরা ভালো
কবিতা লিখছে, আমি এরকম আরও অনেক অনেক নাম বলতে পারি।
অচেনা যাত্রীঃ আপনি কি নিজেকে কারো দ্বারা প্রভাবিত মনে করেন?
মাসুদার রহমানঃ প্রতিটি প্রাণীই তার পরিবেশ প্রকৃতি পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা কত ভাবেই প্রভাবিত। আমি তা থেকে বাদ
যাব কেন! তবে তুমি যে অর্থে প্রশ্নটি করছো তা যদি আমি ঠিক বুঝতে পারি তার উত্তরে
বলব,বাংলা কবিতার আদি নির্দশন চর্যাপদ থেকে শুরু করে সদ্য লিখতে আসা তরুণ
কবিতা-কর্মীটির দ্বারাও কোনো না কোনো ভাবে আমি
ঋদ্ধ হয়ে উঠি। আর নিজের কবিতাটি নিজের মতো করে লেখার চেষ্টা চালিয়ে যাই।
অচেনা যাত্রীঃ আপনার কবিতা সর্ম্পকে নিজের কিছু ধারণা জানাবেন।
মাসুদার রহমানঃ নিজের কবিতা নিয়ে আমার অতৃপ্তি আছে। আবার এটাও ঠিক জানি না, কেমন একটি
কবিতা লিখতে পারলে নিজেকে খুব পরিপূর্ণ মনে হবে। এই অতৃপ্তিবোধ থেকেই কবিতার সঙ্গে
নিরন্তর পথচলা। কখনো যদি তেমন পরিতৃপ্তিবোধ করি হয়তো থেমে যেতে হবে।
অচেনা যাত্রীঃ সাম্প্রতিকালের কবিদের মধ্যে আপনার কাদের লেখা ভালো লাগে?
মাসুদার রহমানঃ সাম্প্রতিকালের অনেক কবির কবিতা আমার ভালোলাগার। এই তালিকা
অনেক দীর্ঘ হবে। আবার তাৎক্ষণিকভাবে হয়তো তা সম্পূর্ণ হবে না। তারচেয়ে নাম করে
এখানে না বলা ঠিক মনে করছি।
অচেনা যাত্রীঃ রবীন্দ্রনাথ এই যুগে ঠিক কতটা প্রসঙ্গিক?
মাসুদার রহমানঃ রবীন্দ্রনাথ আজও প্রাসঙ্গিক, ব্যাপক অর্থে।
অচেনা যাত্রীঃ বলা হয়ে থাকে নজরুল এখন বড় বেশি ফিকে। আপনার কী মনে হয়?
মাসুদার রহমানঃ নতুন কবিতা করতে আসা একজন তরুণের কাছে নজরুল আর সে ভাবে
পাঠ্য হয়ে আসবে না। তাই বলে নজরুলের প্রসঙ্গিকতা ফুরিয়ে যায় নি। নজরুল একটি স্পিরিট
ও চেতনার উৎস, যা আজও মানুষ ও সমাজকে উজ্জিবিত করতে পারে। দেশে দেশে আজ ধর্মান্ধদের
দাপিয়ে বেড়ানো, ধর্মীয়কূপমুণ্ডকতা, শোষণ ও বঞ্চনার বিপরীতে নজরুলের মানবতাবোধ অসাম্প্রদায়িকতা শ্রেণিচেতনা
সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতা আজকের এই দিনেও সমান অর্থময়।
অচেনা যাত্রীঃ এপার-ওপার এর কী ব্যাখ্যা করবেন?
মাসুদার রহমানঃ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো রাষ্ট্রীয় বিধিব্যবস্থার মধ্যে
বসবাস করে। সেক্ষেত্রে সে কোনো রাজনৈতিক বিধিব্যবস্থার বাইরে নয়। এই দৃষ্টিবোধ
নিয়ে দেখলে আজ এই এপার-ওপার এর ধারণাকে অস্বীকার করা যায় না। পৃথক রাষ্ট্র পৃথক
বিধিব্যবস্থা কাঁটাতার তাকে দুখণ্ড করে রেখেছে। কিন্তু বাঙালির চেতনায় তার অবস্থান
কোথায়? ভাষাকে কি কাঁটাতার দিয়ে খণ্ডিত করা সম্ভব! তুমি বনগাঁ বসে 'অচেনা যাত্রী' সম্পাদনা করছো কিন্তু 'অচেনা যাত্রী' বনগাঁর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে নেই,
তা ছড়িয়ে গেছে পৃথিবীর সেখানেই, যেখানে
বাংলা ভাষাভাষি কবিতা-কর্মী ও পাঠক রয়েছেন। যে কারণে কানাডায় বসে কবি মাসুদ খান
লিখছেন, লিখছেন বাংলাদেশের শিমুল মাহমুদ পিন্টু রহমান আরও
অনেকেই। 'অচেনা যাত্রী' যাদের
লেখা ধারণ করছে। সেখানে এপার ওপার কোথায়?
অচেনা যাত্রীঃ কয়েকজন সর্ম্পকে অল্প কথাব জানতে চাইবো। সুনীল গঙ্গোপধ্যায়, শক্তি চট্টোপধ্যায়, জয় গোস্বামী, বিনয় মজুমদার, জীবনানন্দ দাশ, আল মাহমুদ, শঙ্খ ঘোষ।
মাসুদার রহমানঃ তুমি যাদের কথা বলছো তারা প্রত্যেকেই নিজ আলোয় উজ্জ্বল। অল্পকথায় তাঁদের সর্ম্পকে বলতে যাওয়া বেশ কঠিন। তবু
এঁদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সর্ম্পকের অবস্থানটি স্পষ্ট করি। কেবল যখন লেখালেখি
শুরু করেছি , সে সময় সুনীল গঙ্গোপধ্যায়ের কবিতা আমার তুমুল পাঠ্য ছিল। শক্তি
চট্টোপধ্যায়কে ঘিরে বন্ধুদের মধ্যে যেভাবে মাতামতি দেখেছি ,কেন জানি আমাকে সেভাবে টানেনি।
নব্বই দশকে একটা সময় জয় গোস্বামীকে পড়েছি প্রচণ্ড ভাবে। বিনয় মজুমদারের যাপন এবং
সৃষ্টি দুই আমার কাছে বিষ্ময়ের।
জীবনানন্দ দাশ বাংলা কবিতায় আকাশের ওপারে আকাশটি দেখিয়েছেন। আল মাহমুদের ‘সোনালী কাবিন’ আমার
প্রচণ্ড ভালো লাগার কবিতার বই। শঙ্খ ঘোষও আমার অনেক ভালো লাগার কবি।
অচেনা যাত্রীঃ তসলিমা কবি না গিমিক, না এক গভীর অসুখ? কী মনে হয় আপনার?
মাসুদার রহমানঃ তসলিমা নাসরিনের লেখা আমাকে সেভাবে টানে না। তবে এটুকু
বুঝতে পারি অনেক ক্ষেত্রে তার অপকট সত্যপ্রকাশ বিশেষ ব্যক্তি বা মহলকে অস্বস্তিতে
ফেলেছে। এই সাহসীকতাকে প্রশ্রয় দিতে চাই আমি। একথাও সত্যি তসলিমা ধর্মন্ধতার
বিরুদ্ধে ও অবহেলিত নারী সমাজের পক্ষে প্রতিবাদী কন্ঠ হয়ে উঠতে চেয়েছেন।
অচেনা যাত্রীঃ সম্প্রতি তথাকথিত এক বড়ো কাগজ ছোট কাগজ সর্ম্পকে বেশ গালমন্দ করেছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
মাসুদার রহমানঃ তথাকথিত ওই সব বড়ো কাগজ কেবল নামেই বড়ো। চরিত্র ও
বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এইসব প্রবণতা ভয়াবহ ভাবে ধারণ করেই তারা তথাকথিত বড়ো কাগজ। বলার
অপেক্ষা রাখে না, ওই টুকু তাদের অবলম্বণ, এরকম কথাবার্তা এ আর নতুন কিছু নয়। সচেতন সবারই জানা এসব। এ বিষয়ে বলতে ইচ্ছে বা রুচি
হয় না এখন।
অচেনা যাত্রীঃ অনলাইন ম্যাগাজিন সর্ম্পকে আপনার কাছে শুনতে চাই।
মাসুদার রহমানঃ যখন ছাপাখানা আবিষ্কার হয় তখন এক অভাবনীয় বিপ্লব সাধিত হয়।
সেই ছাপাখানা থেকেই পরবর্তীতে বেরুতে থাকল সাহিত্য সর্ম্পকীত বই ও পত্রপত্রিকা। আজ
আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে ইন্টারনেট ভিত্তিক অনলাইন ম্যাগাজিন। প্রযুক্তির হাত ধরাধরি
করেই শিল্প-সাহিত্য এভাবেই হেঁটেছে। প্রিন্টেড কাগজ যেখানে দূর্গমতা দূরত্ব
কাঁটাতার সীমান্তে নানা বিধিব্যবস্থায় আটকা পড়ছে অনেক সময়, সেখানে অনলাইন
পত্রিকায় পৃথিবীর এপ্রান্ত ওপ্রান্তের ব্যবধান মুছে গেল। ফলে ঢাকা কলকাতা টরেন্টো
বোস্টন বনগাঁ কিংবা সোনাপাড়ার দূরত্ব বা দূর্গমতা বলে আর কিছু থাকল না। শুধু ওই
প্রযুক্তির ব্যবহার টুকু জানলেই হল। পাঠকের প্রতিক্রিয়াও লেখকের কাছে পৌঁছে যেতে থাকল তাৎক্ষণিক।
অচেনা যাত্রীঃ 'অচেনা যাত্রী’র প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
মাসুদার রহমানঃ কোনো পরামর্শ বা উপদেশ
প্রদানের ধৃষ্টতা আমার নেই। বলতে পারি 'অচেনা যাত্রী'র
আত্মপ্রকাশ সংখ্যা থেকে শুরু করে
এ-পর্যন্ত অনেকগুলো সংখ্যায় লিখতে পারার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। টগবগে তারুণ্যদীপ্ত 'অচেনা যাত্রী'। কবিতার জন্য শিল্পসাহিত্যের জন্য ভালোবাসাপূর্ণ পাগলামী জরুরী,
তোমরা যারা 'অচেনা যাত্রী’-র সঙ্গে আছো তাঁদের এই ভালোবাসা ও পাগলামী স্পষ্ট, এবং তাকে আমি প্রশ্রয় দিই। 'অচেনা যাত্রী’-র অন্তিম সংখ্যা পর্যন্ত লিখে গিয়ে সৌভাগ্যবান হবো এ আশা করি না। 'অচেনা যাত্রী’-র আমার চেয়ে ঢের ঢের জীবনকাল
হোক। আমার কবিতাজীবনের সম্পূর্ণ সময় জুড়ে 'অচেনা যাত্রী'র সঙ্গে চলতে পারার অভিজ্ঞতা নিশ্চয় আনন্দের হবে। প্রিয় অমিত, একই সঙ্গে 'অচেনা যাত্রী' ও তোমার সুন্দর ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
অচেনা যাত্রীঃ অনেক অনেক ভালোবাসা
মাসুদার দা। ভালো থাকুন।ভালো থাকার জন্যই।

মন্তব্যসমূহ
.....Suraj Das