মুক্তগদ্য-২//তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় আহা কী দেখেছি//ফেসবুকের পাতা থেকে

ফেসবুকের পাতা থেকে (ডায়েরি কিংবা...)
তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়
আহা কী দেখেছি

 বাংলা সাহিত্যের শূন্যদশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি । তাঁর কবিতার সাথে যদি পরিচয় না হয়ে থাকে তবে তার জন্য তমালের কোনো দায় নেই। কবিতা ছাড়াও তমাল  ভালোবাসেন অনুবাদ করতে। তাঁর অনুবাদের মান অসামান্য। এছাড়া তমাল লুকিয়ে লুকিয়ে গদ্যসাহিত্যের সাধনা করেন । মাঝে মধ্যে এঁকে ফেলেন বেশ কিছু ভালো ছবি-প্রচ্ছদ ইত্যাদি। তাঁর দেখার চোখ সুতীব্র। প্রায় আড়াই বছর ধরে তিনি ফেসবুকে মাঝে মাঝে 'আহা কী দেখেছি ' লিখতেন।  এছাড়া তাকে ফেসবুকে কবিতা বা অন্য কিছু  প্রকাশিত হতে দেখা যায় নি।এমনকি তাঁর লেখা  অমুক কবিতাটা তমুক পত্রিকাতে বেড়িয়েছে-- এই সব ঢাক-ধোল পেটানো থেকে তিনি বহু যোজন দূরে ছিলেন বা এখনও থাকেন। তিনি মনে করেন এই সব শোরগোল সাধনায় বিঘ্ন ঘটায়। যাইহোক, ফেসবুকে প্রকাশিত তাঁর এইসব মারাত্মক দেখগুলিকে 'অচেনা যাত্রী'তে প্রকাশ করার জন্য অনেক পীড়াপীড়ি করার পর অবশেষে তিনি রাজি হন।তবে সবক'টি পাওয়া যায়নি।বাকিগুলো হয়তো হারিয়ে গেছে।  যেক'টা পেয়েছি এখানে তুলে ধরেছি।আমরা নিশ্চিত কবির এই শাশ্বত দেখা  আপনাদের ভালো লাগবে।








কেউ ভালোবেসে ফেললে মনখারাপ হয় আমার। দেখেছি, ভালোবাসলে কেবল 'ভালো'-চাই। ভালো কথা, ভালো সময়, ভলো পার্ক বা খাবার -দোকান, ভালো গিফট... এইসব  আরও কত ভালো - ভালো... তখন মনে হয় পৃথিবীতে সব ভালো , কিছু মন খারাপ নেই। তারপর 'ভালো' ফুরায়, আলো ফুরায় , দাঁত - নখ বের হয় হঠাৎ । আমার বেকুব , হাঁ মুখের প্রতি ভগ্নাংশের সব 'ভালো'--অতীত হারিয়ে দুম্ করে খারাপ...
  ভালোবেসে ফেললে মনভার হয়...যে কেউ...

ঘষা কাচের মতো রাস্তার ওপারে ধূসর জোয়ার, না চিনতে পারা পুরনো বন্ধু , না -অস্থির বাতাস, না- নড়তে থাকা গাছের পাতা --যার কখনও কোনও নাম ছিল না... দুপুরটা তখন পথের  ধুলোয় লুটিয়েছে আমাদের বাড়ি ফেরার তড়ায় । রাস্তার বাঁক চিনে অকাতরে চলেছি বন্ধ চোখে। আজ কিছু দেখবো না।
আচমকা সেই চেনা অন্ধ গায়কের  সুর... বেদম খঞ্জনী... আর তার অবিশ্বাস্য প্রবল বোঁচকাখানা...

ফুটপাথ জেগে উঠল। লাল ফরাশ পেতে সাজানো তাবিজ-কবচ-মাদুলির হরেক কোটো-বাটার স্তুপ সরিয়ে , ফলের ঝুড়ির আঘাত বাঁচিয়ে, ইস্কুল ছাত্রীর অবাধ্য বেণীর ছোঁয়া এড়িয়ে জেগে উঠল।
অদূরে বেয়াড়া গাড়ির আড়াআড়ি মুখ গুঁজে দাঁড়ানো দেখতে দেখতে বেড়ে গেছে জটলা। কথায় কথায় বেড়ে গেছে দিন । আর থালা বুকে করে ইস্কুলে যেতে যেতে একটা বাচ্চা ছেলে চোখ মেলে দেখছে এই দৃশ্য । ওর কোনো তাড়া নেই ।


কদমতলার নিভৃত অন্ধকার নেই, সাহেবপুকুরের বাঁধানো রেলিং নেই, শিরিষ গাছের গায়ে হেলানো চায়ের দোকানে বসে থাকা আমাদের উতল সন্ধ্যাও কবে ফুরিয়ে গেছে...
আজ দেখলাম আমাদের কদমতলায় আলোকিত পরিসরে  সাজানো হইচই , যেখানে আমাদের বিষণ্ণ সন্ধ্যের নীরবতা কাটাতে জড়ো হতাম। দেখলাম সাহেব পুকুরের অচেনা পাড় জুড়ে কত নতুন বাতিস্তম্ভ , রঙিন পোশাক । দেখলাম বুড়ো শিরিষের গায়ে নতুন চায়ের দোকান, যেখানে নস্টালজিয়া মরে গেছে , স্মৃতির পাতায় ঘষে ঘষে দেখলাম পাতাটাই ক্ষয়ে গেল । মেলাতেই পারলাম না কিছুতে!


আমার মুখোশ হাতড়ে বেড়ানো সারাদিন -রাত্রের এক হাহাকার থেমে গেলে দেখি , নিজেকে অচেনা লাগছে । দেখি , গলির মোড়ে একা একা রঙিন বিকেলগুলো অচেনা সন্ধ্যার বুকে নাক ডুবিয়ে হারাতে আকুল , আর দু'হাত বাড়িয়ে রাত্তির আমাকে ডাকছে। পরিচিত অন্ধ ভিখারির আধবোজা স্বর , ভাঙাভাঙা সুরের আকুল বেজে ওঠার পাশ কাটিয়ে আমি বন্ধু খুঁজছি, চলকে ওঠা চায়ের কাপে , থমকে দাঁড়ানো তরুণীর উড়ে যাওয়া চুলের পাশ কাটিয়ে...

 চশমা হারিয়েছি আজ । বন্ধুকেও। কেবল অস্পষ্ট চোখে দূরে দূরে ক্ষয়ে যাওয়া দিগন্ত , ভেসে চলা মানুষের দল , জলছবির মতো মনে হচ্ছে ; তার উপর এই মেঘলা আকাশ , এই ফাল্গুনের অবাধ্য হাওয়া ... সব মিলে আজ একটা নাজেহাল বেলা। পেনসিলে আঁকা ছবি হাত দিয়ে ঘষে  দিয়েছে আমার পুরোনো বন্ধুরাও । চশমা হারিয়েছি । চোখের পাতা কাছাকাছি এনে ছোটোকরে নিয়েছি দেখার পৃথিবী । আর দেখেছি পথ ভেসে যাচ্ছে । দু'পাশের আকাশ , অচেনা স্বর , অস্পষ্ট বন্ধুরা...

(এখানে কোনো সংখ্যা ছিল না, মনে হয় এটাই নয়।)
আবার শীতকাল । আবার ছোবল এড়ানো । বন্ধুদের কাছে জিজ্ঞেস করলাম , কেমন লাগে শীতকাল। অদিতি জানাল, শীতকালে ও ভীষণ ভালো বাঁচে!  সাপের মতো গুটিয়ে , পাতার মতো ঝলমলে , ফুলের মতো রঙিন , ফলের মতো , শাকসবজীর মতো তরতাজা ... ঠিক কেমন ?
কুয়াশা , চাঁদ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা হল আর এক বন্ধুর সাথে । সবাইতো ভালোই বলল ! আমিও ভালোই বলি । ছোবল এড়াতে পারি , বিষ জমিয়ে রাখা যায় । আর সব অবজ্ঞা , বিরক্তি এড়িয়ে নিভৃতে ঘরের কোণে কম্বলের নিচে  ( কেননা , লেপ এখন প্রায় ব্যবহারই হয় না!) শীতের ওম্ জড়িয়ে ধরি ...আর শুধু বিড়বিড় করি , শীতকাল এসে গেছে সুপর্ণা !
১১
আবার বনধ্ । তুমি দরজা জানালা বন্ধকরে রেখেছ ভোর হওয়ার আগে থেকেই । কেবল ইঞ্জিন ভ্যানের ভট্ ভট্ ...দুধওয়ালার অপ্রতিরোধ্য সাইকেলের ঠংঠং অনিয়মিত  শুনছি । আজ অটোর দৌরাত্ম নেই পথে , হুস্ হাস্  ভিড় ঠাসা বাসের কোন থেকে কন্ডাক্টারের 'সিট খালি- সিট খালি' চিৎকার নেই ... ঘুম জড়ানো  ক্লাসরুমে মিড্ ডে মিলের ম্ ম্ সুবাস থমকে আছে । আর আমাকে একটা লাল পাঞ্জাবি আর নীল জিনস্ পরে রুমালে নাক চেপে ইস্কুলে ঢুকতে দেখে সবার চোখে অবিশ্বাস খেলে গেল...
( গেল বছরের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি বন্ধের সে দিন বাড়ি ফেরার গল্পটা বলব বলব করে আর বলা হলনা । এবারের অভিজ্ঞতাও বেশ । প্রায় ছাত্রছাত্রীহীন ইস্কুলে বনধ্ সমর্থকেরা এসে দাবি করল ক্লাস বন্ধ করতে । ছুটে এল অভিভাবকেরা। একটু  পরে পুলিশের গাড়ি । তারা নাকি আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ।
 যা হোক , শুনশান পথে নেমে দেখি ধুলো - বাতাসেরও  সে কী মনখারাপ !  আমার লম্বা পাঞ্জাবির ঝুলে কেউ হাত ছোঁয়াবে না । আর এমন রাস্তা, ইঞ্জিন ভ্যান থেকে নেমে মনে হল , পায়ের বদলে হাতে ভর দিয়ে হাঁটবো কি না ... তার পর  একটাই অটো । তারপর আবার উদাসী পথ। একটু পরে রাস্তা আটকাল বনধ্ সমর্থকেরা । আমাদের অটোতে লোক একটু বেশিই ছিল!)

১২
ব্যস্ত রাস্তার পাশে আনমনা আলস্য । চায়ের দোকানে দেদার হুল্লোড়ের হাতছানি। বোয়েমে ভরে রাখা হরেক রকমের বিস্কুট , লজেন্সের  ভেতর থেকে ডাক দেওয়া বন্ধুত্ব । আর চলকে পড়া হাসি , পথ চলতি মানুষের ...
আজ ইশারা ছিল না । বন্ধুকে দূর থেকে আড়চোখে পথ পেরুতে দেখলাম। দেখলাম দূরে এক পাগলের তেলচিট গাল বেয়ে  এক ফোঁটা জল  নামতে নামতে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে! পাশের ফাস্টফুডের দোকান থেকে হই হই বের হল এক দল প্রজাপতি , হরিণ ...এইসব , আর আমি লুকিয়ে ময়রার দোকানের বড়ো উনুনের পাশে বসে গনগনে আঁচে একটা কাঠ ঠেলে দিয়ে দেখলাম ফুটন্ত চিনির রসে ফেলার আগে তাল তাল ছানা কী দ্রুত আকার নিচ্ছে এক একটা পৃথিবীর!

১৩
দিগন্তের দিকে অপলক রক্তিম শিমুল ফুলের আভা চিঠি লিখছে বিষণ্ণ কিংশুক আর অভিমানী ভাঁটফুলের কাছে। তোমাকে ভুলিনি আমি। এতদূর এখনও যাইনি বলে , তোমার অসময় ঝরে পড়া আমাকে কাঁদায়, আমি দূর থেকে দেখি , ওই কারা ভেঙে দিচ্ছে নামের  মুকুল। তার গন্ধে মাতাল বাতাসে কোকিলের একঘেয়ে ডেকে চলার বদলে আমি একটু ম্রিয়মাণ থাকি। আমাকে  পাঠিয়ে তুমি ওদেশের একটু বাতাসে ভেজা  শিরিষের খসে পড়া পাতার টুকরো । আমার তো গন্ধ নেই ,   পথে পথে শুধু ঝরে পড়া আছে , আর আছে চঞ্চল কিশোরের নির্ভুল নিশানা হয়ে হাসিমুখে দাঁড়ানোর অনাবিল আনন্দ । অসময় , জানি , তবু  এই  কারও মুখ ভরা হাসি দেখতে আমি  আজও মরে যেতে  রাজি । ওরা আমাকেই হাতে তিলে নিক। দিগন্তে রঙিন হোক তাহাদের হাসি।

১৪
পয়লা বৈশাখের শহরজোড়া  রেড কার্পেট এক বিকেলের মধ্যেই ঢুলুঢুলু । বছরের প্রথম কালবৈশাখীর আনকোরা বাতাসে অনভ্যস্ত গলিগুলো এখন ভিজে চুপচাপ। এবাড়ির জানালার পর্দা ছুঁয়ে যাচ্ছে ওবাড়ির ঝগড়ার মনভার নীরবতা , রাজভোগ আর হালখাতার খালি মিষ্টির বাক্স গড়াগড়ি খাচ্ছে লাড্ডু কর্নেডো আর শনপাপড়ির বাতিল বাতাসে । আজ হা-হুতাশ নেই,  পথে পথে এলোমেলো কিশোরীর চলা সাবধান  লুকোচুরি নেই , শুধু বটতলায় ফেলেরাখা  প্রতিমার  মুখের রঙ গলে পড়ছে  বিবর্ণ জরির কাপড়ে । আর শহরের মাথায় হোর্ডিং থেকে  কেয়াশেঠ আর অ্যারোমা থেরাপির খোলা কৌটোগুলো ঝপাঝপ্ বন্ধ করে দিল।
ইস্কুল ফেরত এক ছাত্র চাপচুপ ব্যাগ মাথায় নিয়ে রাস্তা পার  হবে বলে উঠে পড়েছে বন্ধুর পিঠে। ওঁর পায়ের জুতোয় লাল-নীল কাগজের ছেঁড়া ণ টুকরো গুলো লতপত্ করছে।

১৫
বর্ষা । গাভীর মতো চড়ে বেড়ান মেঘ। আর আকাশলীনতার তরল বেড়ে ওঠার ওপিঠে কাদা-জল ভেঙে ছুটে আশা একটা বেড়াল।
আজ সব ছবি ওলোট - পালোট । আজ অলস বসে থাকলাম জানলায় , একবার উঠে গিয়ে দেখে আসি রুমালটা শুকনো কি না , বারান্দায় জলের ছাট কতখানি ... আজ রাস্তায় লোক কম ,  পৌরসভার টাইমকলে স্নান করবে বলে বিভিন্ন  ফর্সা পা ছড়িয়ে বসে থাকা নেই  তাই গায়ে শুকিয়ে নিতে পারছে না রিনির বোনও ! আজ লেদ মেশিনের  কারখানায় ব্যস্ততাও নেই । সবাই মেঘের পোস্টবক্সে চিঠি ফেলে অপেক্ষায় আছে মনে মনে...
১৭
গণতন্ত্রের তালপাতা সেপাইরা সব ফিরল। ঢালনেই তলোয়ার নেই , বিদ্ধস্ত প্রিসাইডিং হাতকামড়াচ্ছে । ওদিকে পোলিং এজেন্টদের নানাবিধ হুল্লোড় । আর এসবের  মধ্যে আমি পিপাসা বাড়াচ্ছি, পিপাসা মেটাচ্ছি। ভোটার স্লিপ ইস্যু করছি  (রিলিফের চালের ) লাইনে! ওদিকে আকাশের চাঁদ ডাকছে , বটের দু'হাত বাড়ানো  ঝুড়ি ডাকছে গাছতলায় ইফতারের তেলেভাজার ছ্যাঁক - ছ্যোঁক ডাকছে , আমাকে ডাকছে নদী পেরোনোর মাঠ পেরোনোর  হিংসা  পেরোনোর নতুন সকাল , প্রার্থী ডাকছে , খেয়ে নিন , মা ডাকছে , কতক্ষণে শেষ হবে? সি আর পি এফ জাওয়ান ডাকছে , সব ঠিক হ্যাঁয় না , স্যার?
আমি গণতন্ত্রের সেপাই , কাগজ  গুছোচ্ছি , হিসেব , হিসেব , গালা  সিল ... দেখছি শিকড় কবচ - মাদুলির দোকানের ভিড় ঠেলে এক প্রার্থী ছুটে এসে হাত ধরল -- আশীর্বাদ করবেন স্যার ...
 ১৮
ভালোলাগছে এই শ্রাবণ ।  বুঝি এই ঝরে যাওয়ার নামই শ্রাবণ। বুঝি এই ভেসে যাওয়ার নাম ও শ্রাবণ । ফলে , আকাশলীনতার কেঁপে ওঠা , বাতাসের মনভার থেমে থাকা , সব ...সব... পেরিয়ে পথে নামতেই ডুবে যায় দিন । ভাবি , এই মোড় পেরোলেই , ওই যে দাঁড়িয়ে আছে আমার শিশুবয়সের সব খেলার সাথীরা, ঐ ঐ  মোড় ঘুরে...
 ক্যান্টিনে আজ ভিড় নেই। দুটো বেড়ালের এইটুকু ছানা ভিজে কাঁপতে কাঁপতে সাদা টলোমলো চোখে পায়ের কাছে বসেছে । আর শ্রাবণের মাঝপথে ভিজে ভিজে কে এসে আমাকে স্বপ্নের মতো ডেকে বলছে , তুমিই তো... তুমিই না সেই....


১৯
সে সুরও  মলিন হয় তবেঁ! গায়ক এক , প্রতিদিন গেয়ে যাচ্ছে , যে শ্রোতার দল... কেউ শোনে , কেউ কেউ শোনে .... শুধু দূর থেকে তার ভেসে ভেসে চলা ... মানুষের গড়া যতরাজ্যের শব্দ-অশব্দে মাখামাখি... জ্বলতে জ্বলতে...
সুরেরও তো মন আছে ! মন করল , আজ  চুপ থাকি ! আর অন্ধ সেই গায়কের
বুজে আসা গলা , হাঁড় বের হওয়া চোয়াল... ইনিয়ে বিনিয়ে সে শব্দে-অশব্দে তবু গেয়ে চলেছে... কেউ  দেখছে অনভ্যাস , কেউ ভাবছে রেওয়াজ নেই ... কেউবা ধুত্তোর ! কেউ , আরে সেই হারমোনিয়ামটা ...!! আর আমি? আমি কী দেখবো , বলো , ও আমার কখনও না ধরা দেওয়া সুর , কখনও না মেনে নেওয়া পঞ্চম , কড়ি ও কোমল ... তবু আমি দেখছি । মন খারাপ। সুরের।

 ২৬

সচিত্র ভোটার স্লিপে নাম ভুল হয়ে গেছে কার... অদূরে যুদ্ধের মতো, অদূরে স্বপ্নের মতো হই হই ছুটে আসছে দলে দলে আশঙ্কার ভার... ছুটে আসছে, তবু আমাদের সামনে থমকে দাঁড়াতে চাইছে খুব। বাবুরা এয়েচেন! আর ওই দুই তালপাতা সিপাই-এর অনন্ত মরচে ধরা বন্দুক হা-হা সার্কাসের সাজে ঝিম্‌মারছে ভোটার লাইনে। ডাক পড়ছে নীলমণি সোরেণের, ডাক পড়ছে ভক্তদাস হাসঁদার, মেচেদা পাড়ুই, মাখন শীট-এর। ফি-দিনের হাড়ভাঙা খাটুনির শেষে আজ একটু বিনে পয়সায় পচাই, হাড়িয়া হয়েছে যত খুশি, তালশাঁস ডাকছে তখনও ফোক্লা দাঁতের মধ্যে, যতদুর চোখ যায় অনন্তের হাতে চুনকাম করা ধূ ধূ-র মধ্যে আলেয়া সাজানো খেজুরের সারি, ডোবার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়তে চায়... আর কী লজ্জায় দেখি, তার অতল স্মৃতির গুটি কেটে উঠে আসছে বিঊটি ঘরামি। এবার তো ও প্রথম কালি লাগাতে পারবে বাঁহাতে...

মন্তব্যসমূহ