এবং অন্যান্য গদ্য-৪// সৌমজিৎ আচার্য

                                                 


                                                             সৌমজিৎ আচার্য
                            স্বামী বিবেকানন্দের গৃহীচেতনা 
                                 

            নরেন্দ্রনাথ দত্ত থেকে স্বামী বিবেকানন্দ-এ এক সুদীর্ঘ যাত্রাপথ। একজন বুদ্ধিদীপ্ত, বিজ্ঞানমনস্ক গৃহী যুবকের বিশ্ববন্দিত সন্ন্যাসী, সুদক্ষ সংগঠকে উত্তরণের গল্প। এ গল্প এক আধুনিক মানুষের দেবতা হয়ে ওঠার, এক বেকার যুবকের আধ্যাত্মিক সুনামী ঘটানোর এবং তাতে অবগাহনের সত্যি জীবন কথা।
             যাত্রা সুদূরপ্রসারী, যাত্রীও তেজস্বী সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল যাত্রী কি সত্যিই এ যাত্রা করতে চেয়েছিলেন ? কলম্বাসের মতো যাত্রী কি সত্যিই প্রস্তুত ছিলেন? যে ভূখন্ড আবিষ্কার করার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত কি সেখানে পৌঁছে ছিলেন? নাকি চলে গিয়েছিলেন অন্য ভূখন্ডে? ফিরতে চেয়েছিলেন কি নিজ ভূমে, “নিজ নিকেতনে” ?
বিবেকানন্দের মা
             স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে যত সুললিত কাহিনি আমরা জেনেছি, যে তথ্য জীবনীকাররা আমাদের দিয়েছেন, সবেতেই ঈশ্বর-বিজ্ঞানী,  সংসার-ত্যাগী এক বীর সন্ন্যাসীর অনুকরণীয় চরিত্র ও  আদর্শবোধকে তুলে ধরা হয়েছে। সমসাময়ীকদের ব্যঞ্জনায়, ভক্তদের অন্ধ আবেগে, উত্তরসুরীদের আরাধনায় বিবেকানন্দ শুধু সমৃদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু মানুষ বিবেকানন্দের প্রকৃত মনঃস্তত্ব, সত্যিকারের জীবন-ইতিহাস আজও লেখা হয়েছে কি ? একটু অন্বেষণ করলে  উপলব্ধি করা যায়।

সন্ন্যাসীর গৃহটান:

 নরেন্দ্রনাথ দত্ত নন,স্বামী বিবেকানন্দের সন্ন্যাসী জীবন আদর্শই আমাদের অনুকরণীয়,আমাদের প্রেরণা। সন্ন্যাসী বিবেকানন্দকে দেবত্বে উন্নীত করতেই আমরা উদ্‌গ্রীব। কিন্তু বিশ্বজয়ী, যশস্বী সন্যাসীর মনস্তত্ত্ব,মানসিক সঙ্কট, একাকীত্ব আমরা ক’জন জানতে আগ্রহী? আমাদের কি আদৌ ভালো লাগবে, যদি শুনি, সন্ন্যাসজীবন থেকেও বিবেকানন্দ সরে যেতে চেয়েছিলেন!
                  নরেন্দ্রনাথ গৃহ ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হলেও শেষ জীবনে তিনি গৃহজীবনে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। মানসিক সঙ্কটে ভোগা স্বামী বিবেকানন্দ বর্ষীয়সী মহিলা বুল-কে যে-সব চিঠি  লেখেন ,সে সব চিঠি থেকে তার ধারণা পাওয়া যায়। এই বিত্তশালী মহিলা স্বামীজীর বিশেষ শুভাকাঙ্খি ছিলেন এবং বিবেকানন্দ তাঁকে ‘ধীরা মাতা’ বলে সম্বোধন করতেন। ১৯০০ সালের ১৭ই জানুয়ারী এক পত্রে স্বামীজী তাঁকে লেখেন,'উচ্চাশা, নেতৃত্ব ও যশ'  ত্যাগ করে তিনি কিছু দিনের জন্য মায়ের কাছে ফিরে যেতে চান। কেননা “ তিনি আমার জন্য বহু কষ্ট সহ্য করেছেন এবং শেষ বয়সে তাঁকে শান্তিতে রাখার জন্য আমার নিশ্চয়ই সচেষ্ট হওয়া উচিত।” সন্ন্যাস গ্রহণের পর পূর্বাশ্রমের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদের রীতিটি কি বিবেকানন্দ জানতেন না ? জানতেন, সারা জীবন ধরেই বিবেকানন্দের পূর্ব আশ্রমের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংযোগ ছিল। মা ও ভাইদের জন্য নতুন বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা, ভাইদের বিয়ে দিয়ে বংশরক্ষার ব্যবস্থা প্রভৃতি তাঁর মাথায় ঘুরতো। প্রথম থেকেই বিবেকানন্দর ইচ্ছে ছিল, শেষ জীবনে, জীবনের ব্যস্ততা, সংগঠনের কাজ থেকে ছুটি নিয়ে মায়ের সঙ্গে , মায়ের স্পর্শে জীবন কাটানোর।

                ১৯০০ সালের ৬-ই মার্চের চিঠিতে স্বামীজী মিসেস বুল-কে আবার লেখেন,“ আমার ও মায়ের শেষ জীবনে আমি মায়ের কাছে ফিরে যেতে চাই। নিউইয়র্কে আমার যে এক হাজার ডলার আছে তা থেকে আমি মাসে নয় টাকা করে পাবো; তখন আমি তাঁর জন্য এক খন্ড জমি কিনবো যা থেকে ছয় টাকা আয় হবে এবং তাঁর পুরাতন বাড়িটি থেকেও ছয় টাকা পাওয়া যাবে। আমি আমার মা,আমার দিদিমা ও আমার ভাই, মাসিক মোট কুড়ি টাকা আয়ের ওপর নির্ভর করে আমাদের স্বচ্ছন্দে চলে যাবে।” বস্তুত গৃহী নরেন গৃহজীবন ছেড়ে স্বামী বিবেকানন্দ হয়েছিলেন, আর মৃত্যুর আগে, জীবন সন্ধ্যায়, সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ আবার সেই গৃহজীবনেই ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। এই প্রবণতা তাঁর সন্ন্যাস জীবনকে , তাঁর চলার পথকে বারবার বিঘ্নিত করে তুলেছিল। সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের এই গৃহী মানসিকতা বারবার প্রতিফলিত হয়েছিল তাঁর জীবনে।

                 হয়তো এই আশঙ্কাতেই বিবেকানন্দ যখন অসুস্থ ও দুর্বল , শরীরের অবস্থা ভালো করার জন্য  দ্বিতীয়বার আমেরিকা যান এবং তাৎক্ষণিক সুফল না হওয়ায় দেশে ফিরতে চান তখন, সারদানন্দ তাঁদের আমেরিকাবাসী বন্ধুদের এই মর্মে চিঠি লিখে পাঠান যে, বিবেকানন্দ যেন তাড়াতাড়ি দেশে ফিরতে না পারেন, কেননা তবে তিনি আবার হয়তো তাঁর পারিবারিক ব্যাপারে জড়িয়ে পরতে পারেন।

মনুর বচনঃ

১৮৯৫ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি মিসেস বুল-কে স্বামীজী লেখেন, “ মনুর মতে, সন্ন্যাসীর পক্ষে সৎকর্মের জন্য ও অর্থসংগ্রহ ভালো নয়। আমি প্রাণে প্রাণে বুঝেছি, প্রাচীন ঋষিরা যা বলে গেছেন তা অতি যথার্থ।” আবার ২১ শে মার্চ অন্য একটি চিঠিতে লেখেন, “ মস্তিষ্ক ও হৃদয় দ্বারাই যা কিছু বৃহৎ কাজ সম্পন্ন হয়েছে, অর্থ দ্বারা নয়।” কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, তাঁর লিখিত আদর্শ বাস্তবে তিনি নিজেই পালন করতে পারেন নি।শেষ জীবন পর্যন্ত তিনি নিজেই অর্থ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন।

         ম্যাকলাউডের ‘Reminiscences of Swami Vivekananda’(পৃষ্ঠা ২৪৮-২৪৯) গ্রন্থ থেকে জানা যায় ১৯০২ সালে মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগেও স্বামীজী নিজের আর্থিক দৈনতার কথা জানান এবং শ্রীমতি ম্যালাউড তাৎক্ষণিক ভাবে তাঁকে ২০০ ডলার দেন। তিনি প্রতি মাসে ৫০ ডলার করে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করে দেন। স্বামীজীর অনুরোধে মা ভুবনেশ্বরী দেবীকে আমৃত্যু খেতরির মহারাজার মঞ্জুরীকৃত একশো  টাকা ভাতা প্রতি মাসে ডাক যোগে পাঠানো হত। ১৯০৩ সালে অজিত সিং-এর মৃত্যুর পরও খেতরির রাজকোষ থেকে এই টাকা নিয়ম করে পাঠানো হত, কারণ স্বামীজীর অনুরোধে মহারাজা এই অনুদান স্থায়ী করে দিয়েছিলেন। তবে স্বামীজীর নিজের জন্য যে মাসিক একশো টাকার ভাতা মঞ্জুর করেছিলেন তা পরবর্তি সময়ে কোনো অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এ সব দান ছাড়াও আমেরিকাবাসী শিষ্য শ্রীসোভিয়ার 'পরিবারের জন্য' স্বামীজীকে এককালীন ছ’হাজার টাকা দান করেন। সোভিয়ার স্বামীজীর খুড়তুতো ভাইকে যে নিয়মিত অনুদান দিতেন এই ছ’হাজার টাকা ছিল তার অতিরিক্ত। মিসেস বুল-কে ও স্বামীজী 'এক হাজার ডলার' দেবার প্রার্থনা জানান।

           বিবেকানন্দের অনেক গুলি স্বত্তা ছিল। তার মধ্যে অন্যতম স্বত্তা হল তাঁর গৃহী- স্বত্তা। মামলায় জিতে বিবেকানন্দের ভাইরা পৈত্রিক বাড়ির একটা অংশ পান, সঙ্গে পান মাতামহীর রামতনু বসু লেনের বাড়িটাও। কিন্তু তা স্বত্বেও বিবেকানন্দ কলকাতায় গঙ্গাতীরবর্তী এক নতুন বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নিলেন মা ও ভাইদের জন্য। এই উদ্দেশ্যে আমেরিকা থেকে ফিরে ১৮৯৮ সালে খেতরির মহারাজের কাছে দশ হাজার টাকা অনুদানের জন্য আবেদন জানান। ১৮৯৮ সালের ২২ শে নভেম্বর ও ১ লা মার্চ তারিখের স্বামীজীর চিঠি থেকে জানা যায় যে, চিঠি পাওয়া মাত্রই মহারাজা তাঁর অনুদানের প্রথম কিস্তি হিসাবে পাঁচশো টাকা স্বামীজীকে পাঠিয়েছিলেন। বেলুড়মঠের কোষাগার থেকেও স্বামীজী তাঁর পরিকল্পিত বাড়ির জন্য কয়েক হাজার টাকা ধার হিসাবে নেন।

পান – সুপারী – দোক্তাঃ

 বিবেকানন্দ স্বভাব–বৈরাগী ছিলেন না। তথাকথিত হিন্দু সন্ন্যাসীর লক্ষ্যণরেখা তিনি বহু ক্ষেত্রেই লঙ্ঘন করেছেন। তাঁর মানবতাবাদী স্বত্তাকে লালন করেছিলেন সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ নয়, গৃহী নরেন্দ্রনাথ। তাই বারবার সন্ন্যাসীর বৈরাগ্য সর্বস্ব জীবনবোধের থেকে মানুষ বিবেকানন্দকে বড়ো হয়ে উঠতে দেখা যায়।

           বিদেশ যাবার আগে প্রস্তুতি পর্বে জয়পুর, খেতরি, আজমীর, জুনাগ, আহমেদাবাদ, দ্বারাকা , পোরবন্দর, বরোদা, পুনা, বোম্বাই, ব্যাঙ্গালোর, কোচিন, মাদুরাই, ত্রিবেন্দম, রামেশ্বরম, কন্যাকুমারী প্রভৃতি বিভিন্নস্থান ও দেশীয় রাজ্য ভ্রমণ করেছিলেন। দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজা বা রাজ্যের দেওয়ানদের আতিথ্য গ্রহন করেছেন। এখানেও স্বামীজীর গৃহী-মনের এক প্রচ্ছন্ন বিস্তার লক্ষ্য করা যায়। একবার ভাবগড়ের মহারাজার পরিচয়পত্র নিয়ে স্বামীজী কোলাহ পুরে যান এবং বেলগাঁওয়ের এক মহারাষ্ট্রীয় ভদ্রলোকের বাড়িতে উপস্থিত হন। ভদ্রলোক স্বামীজীর খাওয়া- দাওয়ার যথাযোগ্য ব্যবস্থা করেন। খাওয়া শেষ হলে স্বামীজী পান –  সুপারী চাইলেন। তারপর চাইলেন দোক্তা। বেনীশঙ্কর শর্মা লিখিত “Swami Vivekananda : A Forgetten Chapter of His Life” গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, স্বামীজী এই আবদার দেখে  ভদ্রলোকের পুত্র মন্তব্য করেছিলেন, “ ... সন্ন্যাসী হয়েও তিনি এমন সব জিনিসের জন্য লালায়িত যা শুধু গৃহস্থের বেলা শোভা পায়।”

         দেশের বিত্তশালী ব্যক্তি ও রাজা- মহারাজাদের সঙ্গে স্বামীজীর ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। বহু ক্ষেত্রেই স্বামীজী তাঁদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। এ বিষয়টি শ্রীরামকৃষ্ণের গৃহী ভক্তরা ততটা ভালো ভাবে মেনে নিতে পারেন নি। পরবর্তীকালে এই অসন্তোষ বিরোধের মাত্রা পায়। ১৮৯৯ সালে এই অসন্তুষ্ট গৃহী ভক্তরা বিবেকানন্দ ও বেলুড়মঠের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করে  'গরীব রামকৃষ্ণ সভা' নামে নতুন এক সংস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। এই বিরোধীতার কারণেই শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মবার্ষিকীতে বেলুর মঠের অনুষ্ঠান বয়কট করে বিদ্রোহী ভক্তরা আলাদা ভাবে তা পালন করেন। মহিষাদল রাজ এস্টেটের ম্যানেজার শচীন্দ্রনাথ বসু তখন হতাশ হয়ে বলেছিলেন, এর ফলে হয়তো-বা রামকৃষ্ণ শিবির দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়বে। যদিও বাস্তবে জল অতখানি গড়ায়নি।

সঙ্‌ এবং সারঃ

এ সমস্ত তথ্য থেকে বিবেকানন্দের এক অন্য স্বত্তা উদ্ভাসিত হয়, যেটি তাঁর সন্ন্যাসী জীবনকে একটু  অন্য খাতে প্রবাহিত করেছিল। গৃহী মন তাঁকে পূর্বাশ্রমের সদস্যদের জন্য উৎকন্ঠা দিয়েছিল, নতুন বাড়ি তৈরির প্রেরণা দিয়েছিল, দিয়েছিল পারিবারিক ও নিজের আর্থিক সুরক্ষার আকুতি। হয়তো তাই বিশ্বখ্যাতি সম্পন্ন সন্ন্যাসী মঠ ও মিশনের রূপকার – যিনি ছিলেন আদতে এক দ্বীপের মতোই একা- শেষ জীবনে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরার ডাক শুনেছিলেন।
  এই প্রবণতার কারণ কী? শেকড় খুঁজলে দেখা যায় যে প্রথম জীবনে ব্রাক্ষ্মসমাজের প্রভাব এক সূক্ষ আবেশ তৈরি করেছিল বিবেকানন্দের মানসতটে। ব্রাক্ষ্মসমাজে গৃহস্থের ধর্ম স্বীকৃত ছিল। বৈষয়িক কাজকর্মে প্রবেশকে   ব্রাক্ষ্মসমাজ স্বীকৃতি দিতো। তবে নরেন্দ্রনাথ ধর্মীয় পিপাসা নয়, মূলত সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা থেকেই  ব্রাক্ষ্মসমাজে যোগ দিয়েছিলেন। একই রকম ভাবে ধর্মীয় পিপাসা নয়, সঙ্গীতস্পৃহাই প্রথম তাঁকে শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শে আসতে সাহায্য করে। শ্রীরামকৃষ্ণের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও তাঁর প্রথম দিকে দক্ষিণেশ্বরে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা ছিল, কারণ তখনো তাঁর মনে ছিল গৃহী জীবনযাপনের ইচ্ছা। এজন্যই তিনি বি.এ. পাশ করে আইনের ক্লাসে ভরতি হন। বিয়ের ব্যাপারেও তাঁর প্রবল অনিচ্ছার কথা জানা যায় না। তবে কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে যখন বাবার বন্ধুর এক অসুন্দর মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ের পরিকল্পনা হয়, তখন তিনি ঘোর আপত্তি জানান। লীলাপ্রসঙ্গ থেকে জানা যায়, “ ছোটো খাটো মতভেদের ফলে” অন্য কোথাও পাকা কথা দিতে দেরি হচ্ছিল।
            কিন্তু বাবার মৃত্যু এক প্রকান্ড কৃষ্ণগহ্বর তৈরি করল নরেন্দ্রনাথের জীবনে। সংসারের সব দায়িত্ব কাঁধে চাপল জোয়ালের মতো। অর্থ নেই , কর্মসংস্থান নেই- কী করবেন নরেন্দ্রনাথ ? সংস্কারবশে অসৎ উপায় গ্রহন করতে পারলেন না।সারাজীবন চাকরীর জন্য ব্যর্থ ভাবে ঘোরা ঘুরি করতে করতে , খিদেতে , তৃষ্ণায় ছটফট করতে করতে দিন কাটতে লাগল। কিন্তু রাত কাটল না। সংসারে কি সত্যিই স্বস্তি আছে? শান্তি আছে ?  ভাবতে ভাবতে সংসারের অনিত্যতার প্রতি তাঁর ধারণা সুস্পষ্ট করতে একদিন ছুটে গেলেন শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে। যদিও পরিবারের সদস্যদের 'ভাত–কাপড়ের' সংস্থানের চিন্তাটাও মন থেকে গেলনা। ক্রমে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছ থেকে তা যাতে আদায় করা যায় তারও ব্যবস্থা করলেন। তারপর শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর কয়েকজন সমভাবাপন্ন যুবকের সঙ্গে মিলিত হয়ে বিরজা হোম অনুষ্ঠান করে আনুষ্ঠানিক ভাবে সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন।

          কিন্তু সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ বারবার সম্মুখীন হলেন গৃহী নরেন্দ্রনাথের। যিনি বাবার মৃত্যুর পর অভাবে না পরলে হয়তো বা সন্ন্যাসী হতেন না। থেকে যেতেন সমাজ সচেতক নরেন্দ্রনাথ হয়েই। কিন্তু তা হল না। নরেন্দ্রনাথ সন্ন্যাসী হলেন। শুরু হল সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের জনকল্যাণকারী কর্মোৎসব। আড়ালে সরে  গেলেন গৃহি নরেন্দ্রনাথ। কিন্তু একা দ্বীপের মতো তাকিয়ে থাকলেন সেই বেলাভূমির দিকে, সেখানে বালি দিয়ে বানানো গৃহস্থলি দাঁড়িয়ে থাকে সমুদ্রের মুখোমুখি।



মন্তব্যসমূহ