নাজনীন খলিল




নাজনীন খলিল
শূন্য দুপুর

ঝিম ধরা একটি দুপুর
ভরা রৌদ্রের বুকে গাঢ়শূন্যতার ছবি আঁকে ;
আমি তাকে পান করি বরফশীতল জলের মতো,
গ্লাসের নিচে জমছে বরফের কুচি।


একটি পথভোলা প্রজাপতি উড়ে এসে
বসেছে ফ্লাওয়ারভাসে
ফুলের উপরে দিচ্ছে ছড়িয়ে তার মায়ার পরাগ ;
যেই--- দেয়ালে পড়লো তার ছায়া,
শূন্যদেয়াল এঁকে নিল এক অপূর্ব ছবি।

ভালবাসি ক্যানভাসের ফুল, প্রজাপতি এবং শূন্যতা।

হাতের তালুতে লেগে আছে জন্মদাগের মতো বিষাদ ;
কি করে মুছবো তাকে !
মুঠোয় আবীর মেখে রেখেছি লুকিয়ে।

দরোজার বাইরে একটি বাদামী খাম
দীর্ঘশ্বাসের মতো  লম্বালম্বি পড়ে আছে ;
কি যেন জরুরী চিঠি পাঠিয়েছে কেউ।
ধুলোয় যাচ্ছে ঢেকে।

অবহেলার বারান্দায় পড়ে আছে খামবন্দি কথা ;
ঘরের ভেতরে জমে  প্রগাঢ়নিস্তব্দতা ;
 বরফের কুচি।




এ্যাকুরিয়ামের প্রতিবেশী 


কোথাও একটুখানি বাধে ;
কাচের মৎসঘরে মাছপোষানিষ্ঠুরতা এখনো শিখিনি।

এ্যাকুরিয়ামে-----------
জলের সমতলে ভাসছে মৃতমৎস । মরাচোখ জ্বলজ্বল করে ;
ফ্লুরোসেন্ট আলোর মাহাত্ম্য ।

কেন যে মানুষের এত প্রবল দখলদারিত্বলোভ ;
অর্থবিত্ত
নামযশ
ঘর ভরতি সৌখিন আসবাব
এ্যান্টিক ডেকোরেশন পিস্‌।
আরো চাই। আরো আরো বেশি

খাঁচাবন্দি পাখি ।
কচ্ছপ।
খরগোশ।
জলে সাঁতরানো মীন চায় ডাঙ্গার ঘরে।


এ্যাকুরিয়ামে প্রতিবেশী ;
মরামাছ
জ্যান্ত মানুষ।




এক মাঠ বৃষ্টির ভেতর 

দীর্ঘশ্বাসের অবশেষটুকু রেখে, দূরদিগন্তে ছায়াটা মিলিয়ে যায় ;
কুয়াশার মতো অস্পস্ট ধারাজলের ভেতরে।


কী যে প্রখর ফুটেছে জারুলসোনালু ! পাতাগুলো লাজনম্র আবছা হয়ে আছে।
তীব্র কৃষ্ণচূড়া ; আকাশের নিচে শামিয়ানা পেতে অপেক্ষায় আছে
যেন এক্ষুণি শুরু হবে বর্ষামাঙ্গলিক
মেঘমল্লারের তালে তালে, নেচে যাবে একশ ময়ূর;
লালমখমলে
মেঘের অশ্রুগুলো টুপটাপ মুক্তোর মতো ঝরে গেছে আজ সারাদিন।

ফিরে আসে বৃষ্টিদিন,
কদমকেতকীর রাত ।

প্রবল উল্টেপাল্টে যায়,
খুলে যায় স্মৃতির সোনালিপাতাগুলো।
গভীরগোপন খামগুলো চন্দনসুগন্ধী কুঠরিতে অস্ফুটে কথা বলে ওঠে।

একটা যতিহীন সুদীর্ঘপথ হেঁটেছি কেবল ছায়ামগ্নতার ভেতরে ;
দরোজার বাইরে ছিল সূর্যশিখার পথ ;
স্বপ্নের ঘোরে কেউতো খোঁজেনা রোদতপ্ত দিন !

আজ কি দুঃখদিন?
অঝোরধারা চিরে উড়ে গেল একটি শালিখ ;
জুড়িটা কোথায় গেল কোথাও পাইনি খুঁজে।
চিলেকোঠার পাশে জড়োসড় ভিজেকাক।

আজকে নাহয়
এক মাঠ বৃষ্টির ভেতরেই ছড়িয়ে দিলাম রোজনামচার ছেঁড়াপাতাগুলো।

মন্তব্যসমূহ


শূন্য দুপুরের দীর্ঘশ্বাস ছুঁয়ে এ্যাকুরিয়ামের প্রতিবেশীতে খাচাবন্দি জীবন। আর শেষটায় বৃষ্টির কাছে সমর্পন।
তিনটি কবিতাই অনবদ্য, শান্তি পাওয়া গেলো।
নাজনীন খলিল বলেছেন…
ধন্যবাদ দূর্জয়।
পড়ায় এবং মন্তব্যে অনেক ভাললাগা।
শুভেচ্ছা নিরন্তর ।
নামহীন বলেছেন…
ভালো লেগেছে খুব, দিদি।
"লালমখমলে
মেঘের অশ্রুগুলো টুপটাপ মুক্তোর মতো ঝরে গেছে আজ সারাদিন।"
নাজনীন খলিল বলেছেন…
ধন্যবাদ মাইদুল।

ভালবাসা এবং শুভেচ্ছা অনেক।

নাজনীন খলিল বলেছেন…
ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।
জয়দেব কর বলেছেন…
হাতের তালুতে লেগে আছে জন্মদাগের মতো বিষাদ ; চমৎকার!
নামহীন বলেছেন…
ভালবাসি ক্যানভাসের ফুল, প্রজাপতি এবং শূন্যতা
নাজনীন খলিল বলেছেন…
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জয়দেব কর।
নাজনীন খলিল বলেছেন…
ধন্যবাদ নামহীন। শুভেচ্ছা রইল।