শিমুল মাহমুদ

শিমুল মাহমুদ


প্রাইমেট


সৌরশূন্যতা ঝুলে আছে জানালার
গ্রিলে। খড়কুটো ঠোঁটে উড়ে আসে
চড়ুই; ডিম ভেঙে উড়ে যায় সৌরডানা।
সৌরচুল্লি ঘিরে নৃত্য করে সৌরমানব।
ওয়েব-পর্দায় ভেসে ওঠে, ডানাওয়ালা
পাখিদের সৌরসংবাদ।

স্মৃতি থেকে মুছে ফেলি ভৌগোলিক 
সীমা। বায়োলজিক্যাল যুদ্ধে টিকে 
আছি আমি, জৈব প্রাইমেট।



শি-প্রাইমেট

ঘাসেদের জৈবদেহে লুকিয়ে রেখেছি
সময়ের ছাপ। ডুবো কোনো জাহাজের
কেবিন বেয়ে ভূমিতে উঠে আসে
সমুদ্রকাছিম। সময়ের ডানা থেকে
নিজেকে বিযুক্ত করে জেগে ওঠে
প্রজন্ম-প্রাইমেট।

আমার জন্মের পর প্রাইমেট পরিবারের
এইসব কথা, বহন করে এনেছিল 
কোনো এক শি-প্রাইমেট।



সুবীর সরকারের সাথে ডুয়ার্সে

মৃত পাতার পাশে পড়ে আছে 
কয়েকটি সবুজ পাতা। কারখানার
সানসেট বেয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে
নগরকুয়াশা। বায়োলজিক্যাল 
ঘড়ির ভেতর দিয়ে হাঁটছে সন্ধ্যার
বনভূমি; চিলাপাতার জঙ্গল থেকে
ভেসে আসছে চিতাবাঘের
বংশবিস্তার-আওয়াজ।

ঘড়ির কাটার ওপর নাম লিখে
ডুয়ার্সের ভেতর হারিয়ে গেল
কয়েকজন বাগানশ্রমিক; মদেশিয়া নারী।


গৌতম গুহ রায়ের সাথে গাজোলডোবায়

আপলচাঁদ ফরেস্ট; গর্ভবতি মহিষের
সাথে সাদ্রি ভাষায় কথা বলছে বউয়া লক্ষী।
গাজোলডোবার আকাশ; ওদলাবাড়ি থেকে
উড়ে আসছে অগ্রীম শীতঋতু। তিস্তা-ব্যারেজ;
আমরা পিহালিমাছ খাচ্ছি আর ভাবছি
শস্যদানার কোষবিভাজনসূত্র।

প্রসব-তীব্রতা নিয়ে চা-বাগানে ঢুকে
গেছে চিতা; ডেঙ্গুয়াঝাড় বাগান।
ভুটানপাহাড় থেকে নেমে আসছে
নীলহাতির পাল। প্রবীণ হয়ে ওঠা
কোন এক প্রাচীন হাতি, ভাটির
দেশের জন্য বহন করে এনেছে
চিতাবাঘের চিৎকার; অথবা 
তিস্তাজল-সংবাদ।



রূপক পালের সাথে 'মায়া রাই' এবং আমরা

ডুয়ার্সের পথে রমেশ রায়ের
শস্যবীজভাণ্ডার। শিশুতীর্থের
আঙিনায় পাখিপাঠ শিখছে শিশু।
আমাদের চোখে ভেসে আছে
এখনো আদিবাসি ডুপপা-জীবন।

বুক্সি ফোর্ট থেকে যখন ফিরছিলাম
আমরা, আমাদের সুজুকির সামনে
ছুটছিল পিগুয়া-স্কুটার। সেই
ছাদখোলা স্কুটারের ওপর 
একঝাঁক ক্লান্তডানার মানুষ
সবুজ কৌতুহল নিয়ে চোখে, 
অথবা শুধুই নীলচোখে তাকিয়েছিল
আমাদের দিকে। আমাদের 
সাদারঙ সুজুকি তখন, আদিবাসি
 চোখের নীলাভ আলোয়, হয়ে
 উঠেছিল ছুটন্ত এক সোনালি প্লানেট।

শান্তালাবাড়িতে মমো পরিবেশন
 করেছিলেন যে নেপালি রমণী
, তার নাম ছিল, 'মায়া রাই'।





উত্তম মোদক, প্রশান্ত দেবনাথ এবং আমরা


হাতির ডানায় চেপে বাতাসের নীলচোখ
তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। 
হারিয়ে ফেলেছি নীলগাই-সঙ্গীত।

ঘড়ির কাটায় ফুটে আছে দুইটা পঁচিশ।
ডুয়ার্সের বনভুমি পিছে ফেলে জয়ন্তি
নদীর পাথুরে জলের ওপারে হারিয়ে
যাচ্ছে আড়াই-দুপুরের কোন এক
বদরাগি বাইসন। নিকট ডুয়ার্সের
দূর-গভীরতা থেকে ভেসে আসছে
গর্ভবতি চিতার দীর্ঘ চীৎকার।
এইসব ছবি! সবই কি সত্যবয়ান?
নাকি সেই আড়াই-দুপুরে আমাদের
মগজে, ডাহুক ডেকেছিল সেইদিন?


চৈত্রসংক্রান্তির দুপুর

মাঠ থেকে ফিরে আসা সাঁওতাল
মেয়েটির ঘরের দেয়ালে কোনো
 জানালা ছিল না। সবুজ মাঠ জুড়ে
 ছড়িয়ে আছে সবুজ জানালা।
 চৈত্রসংক্রান্তির নিচে দাঁড়িয়ে গা
 ধুয়ে নিচ্ছে মেয়েটি। কালো স্তনের
 চূড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে দুপুর।

হয়তো বা এখনি মেঘ করবে আকাশে।


মৃত্যু

বেলাভূমির প্রান্তে একজন বিষণ্ন
 প্রাইমেট বসে আছেন। জলবিদ্যুতের
 আড়ালে মোহগ্রস্থ মাছ, মেটামরফোজড্
 ব্যাঙ অথবা বিকৃত লিযার্ড।

মানুষের জন্ম হতে লেগে গেছে সারে
 চার হাজার কোটি বছর। অথচ মৃত্যুর
 জন্য প্রয়োজন, মাত্র কয়েকটি সেকেন্ড।

মন্তব্যসমূহ