অনুবাদ কবিতা/অচেনা যাত্রী-১১/পাতা-

ছবিঃ সৌরদীপ্ত চৌধুরী
অনুবাদ কবিতা

কবিঃ-ওটিএনো আমিসি
দেশঃ কেনিয়া
মূল ভাষাঃ ইংরেজি
অনুবাদকঃ রুপাই পান্তি

(ওটিএনো আমিসির জন্ম কেনিয়ার ন্যাঞ্জা প্রদেশে। ১৯৮৭ সালে কেনিয়াট্টা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক হন।তিনি 'নিউ এজ' নামে একটি পত্রিকার জন্ম দেন ও সেটিকে সম্পাদনা করতে থাকেন ,যদিও এর আয়ু বেশি দিন ছিল না। পেশায় শিক্ষক আমিসি এখন ডেভিড মেইল্লু-র উপর গবেষণায় মগ্ন। তিনি কেনিয়ার শক্তিমান কবিদের মধ্যে একজন।)

ছবিঃ সৌরদীপ্ত চৌধুরী

ভয়ংকর ভাবে....

ভয়ংকর ভাবে বেঁচেছিলেন সেই শিল্পী
নিজেকে দুমড়ে মুচড়ে, ভেঙ্গেচুরে, শাপশাপান্ত করে, কেঁদে
ভয়ংকর ভাবে বেঁচে ছিলেন
অগ্রাহ্য করেছিলেন সব পাথর ছোঁড়া,
সব ধারালো অস্ত্রের আঘাত,
সমালোচক আর রাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

ভয়ংকর ভাবে  বেঁচেছিলেন সেই শিল্পী
খালিপেটে, শ্রোতাহীন প্রেক্ষাগৃহে
কবিতা পাঠ করতে করতে,
কঠিন  রাস্তা ধরে একা যেতে যেতে
অবজ্ঞা করেছেন অশিক্ষিত চটুল মেয়েদের
হিল-জুতোর খট্ মট্
যারা কোনও দিন কোনও ভাবেই
ফুটপাথের পাশে দাঁড়ানো
শিল্পীর রঙতুলি অথবা
কোনও কবির দিকে ফিরেও তাকায় না

এই ভাবে চরম ক্ষুধার্ত এক জীবনযাপন করতেন
সেই শিল্পী, একটি ছোটো আস্তানায়,
একটা কাচের দোকানের পাশে
যেখানে তাঁর হাতের কাজ বিক্রি হত,
আর গ্রন্থাগার গুলোয়
অবহেলায় সাজানো থাকতো তাঁর বই,
রাস্তার ওপারের
জাতীর প্রদশর্নশালায়
অধিকর্তা বিখ্যাত শিল্পীদের জন্য হামলে পড়তো।
ঠিক স্থানীয় নেতারা যেমন,
এমনকি নিজেদের কাজটুকু করতেও
ক্রমাগত ঘুষ নেয়

ভীষণ ভয়ানক এক জীবন সেই  শিল্পীর,
কেঁপে -কেঁপে যাওয়া রেখাচিত্র,
ক্ষয়ে যাওয়া তুলি,
দুমড়ে,
মুচড়ে,
কেঁদে-কঁকিয়ে,
রক্তাক্ত হতে হতে
আবার কখনও প্রশংসায় ,
সেই শিল্পী বেঁচে ছিলেন ভয়ানক ভাবে,
একজন অসাধারণ শ্রমিকের মতো, যার কোনও সংগঠনের নেতা ছিলনা....



ছবিঃ সৌরদীপ্ত চৌধুরী




এখন ঘণ্টা  বাজে

এখন ঘণ্টা বেজে উঠে বলে
আমাদের বিদায়ের  সময় হল।
যদিও অন্তরে অন্তরে আমি জানলাম
যা কিছু সুন্দর , তা অবশ্যই
চিরদিন , চিরস্থায়ী থাকবে।

কোমল , সংবেদনশীলতার কত অনুভব
মনের কানায় কানায়  ভরে ওঠে,
তখনও ঘণ্টা বাজে অবিরাম
আর প্রেমিকের হৃদকম্প বেড়েই চলে, বেড়েই চলে।

গনগনে দুপুরের বিমর্ষ সূর্য ,
ক্লান্ত কপালের ওপর দাউদাউ জ্বলে।
পথিকের দীর্ঘশ্বাস মিশে যায় ধুলোয় ,থুতুতে ,
পথ তখন ও অনেকটা বাকি
তবু ঘরে ফেরাও বিশেষ জরুরি ।

এমন মুহূর্ত শুধুমাত্র কয়েকটা
শব্দে প্রকাশ করা যায় না
যে মুহূর্তে মন ভরে যায়, আনন্দে,
ফলে সেই মুহূর্তকে ধন্যবাদ জানাতে
আমাদের এইসব অবসাদে
এখন ঘণ্টা বেজে ওঠে।

ছবিঃ সৌরদীপ্ত চৌধুরী


সেই পদযাত্রা


শান্ত পদযাত্রা এগিয়ে চলেছে

সামনের দিকে , একটা
মেরুদণ্ডহীন সাপের মতো,
আইনমেনে
বা না মেনেই এগিয়ে চলেছে।
কিন্তু কোন দিকে,
কেউ জানেনা ।

তারা  রাষ্ট্রভবনের সামনেও
থেমে যেতে পার, আবার
যেতে পারে সেই গণকবরের দিকে
যেখানে উজ্জ্বল ফেস্টুন ,
ভাঙাচোরা হাড় , ফেটে যাওয়া মাথা জমে আছে।
যাদের সোচ্চার স্লোগান থেমে গেছে
যাদের সমাধির পাশে বেড়ে ওঠা মহীরুহ
ধ্বসে পড়েছে কতকাল আগে।

পুলিশ! পুলিশ!
পুলিশকে ডাকুন কেউ!
না , না , আরে এটা তো বিশ্বকাপের সময়
তাহলে নিশ্চয় কেউ এই শান্তিপ্রিয়
মানুষদেরকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে

যখন দমকলের আসার
একটু আগে পুলিশ এল,
তারা এই পদযাত্রা থামিয়ে দিল
কিন্তু তারপর?
কী? কোঠায়?
কীভাবে এমন...?
আমরা সেই  ষড়যন্ত্রকারীকে চিনি।
কে একজন বলল , এই ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোর
একজন বিদেশী নেতা আছে
যে কেবল পরিবর্তন চায়, বুঝলেন,
সারা পৃথিবীতে ঐ একই সমস্যা।

দেখুন , ওরা কোথায় যায়।
একটা বিরাট ক্রুশ ওদের পথ  দেখাচ্ছে,
ঝলমল করছে তরবারির মতো,
যেন মনে হচ্ছে এই পৃথিবী ছাড়া
ওদের আর কোনও স্বর্গ নেই ।
এই পদযাত্রায় কত আইনজীবি,
কত ছাত্র সামিল হয়েছে
আগামীকাল ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা ঝোলাবে,
দেরিতে হলেও ওদের ঘুম ভেঙেছে,
সিংহের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পালটা গর্জন করছে ওরাও!
কেউ বলবেন পরিবর্তনের হাওয়া,
হুঃ ! দেখা যাক কে থাকে আর কে মুছে যায় ।
বাঁশি বেজে ওঠে,
বৃদ্ধ পদাতিকের ক্লান্ত পা
পথের পাশে থেমে যায় ,
তাদের বদলে দ্রুত ঢুকে পড়ে অসংখ্য
রক্ত-চক্ষু , আগুন-মুখো ছেলেরা।

কিন্তু তারাও ক্লান্ত হয়
গর্জে ওঠে মাঝে মাঝে
পদযাত্রা থেকে সরে যায় , গেয়ে ওঠে গান
আর দলা পাকিয়ে ওঠে ধ্বংস।

নেতারা বলতে থাকেন , এতবড় , মুখরিত
পদযাত্রা আসলে কোথাও পৌঁছয় না। 

মন্তব্যসমূহ