তবু লালনমন //কুমারেশ পাত্র

কুমারেশ পাত্র
তবু লালনমন 

ভোটের আঙুল না থাকলে পাশের আঙুলে রঙ দাও। বেশ উত্তেজনা অনুভব করছো , তাই না? সেটা না থাকলে চলে যাও পরের আঙুলে। না হলে ডান হাতে । আঙুল না থাকলে কনুই। সেটা না থাকলে কাঁধের কাছে। না থাকলে কপালে ফোঁটা দাও। বলো ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা , যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা । আর লোকটা না থাকলে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে যমদূত স্বয়ং আসবেন।

একটা পতাকার কথা বললাম।লোকটা ভাবল আমি লালের।আর একটা লোক ছিল, সে ভাবল আমি নীলের । আর একজন, আমি সবুজের। কেউবা  গেরুয়া। যদিও পতাকার রঙ ছিল আমার ছোট্ট ছেলের মুখের মতোই । তবে তা ছিল ছেঁড়া। লোকগুলো কেড়ে নিতে আমার দিকে এগোতে লাগল। খিস্তি মারল। পতাকাটা নিয়ে ছিঁড়েভুড়ে ফেলল নিমেষে। শেষে বলল, কাজ শেষ। এবার   আসল কাজে লাগতে হবে!

ভোট শেষ। বাচ্চাটা হাফ প্যাডেলে সাইকেল চালানো অবস্থায় একটা পতাকা হাতে ধরে আছে। শূন্যে উড়ছে বিজয় আনন্দ। যদিও তা ঢের বাকি। তার শুকনো কালো চামড়ার মধ্যে মিড-ডে মিল ঢুকেছিল কিনা জানিনা। তবে খাতাটা মিলেছিল ঠিকঠাক। তবু সে ছুটছে। ভাঙাচোরা সাইকেলে। পালতোলা নৌকার মতোই।

একজোড়া ছগল দম্পতি অকস্মাৎ  কন্ট্রোল ইউনিট আর ব্যালট ইউনিট নিয়ে পালাল। ভাবল নতুন প্রজাতির কলাপাতা । ছ'মাস পর খোঁজ নিয়ে জানলাম ওদের  তিনটি সন্তান হয়েছে। প্রথম জনকে দেখতে  লালু প্রসাদের  মতো । দ্বিতীয় জন একদম মুলায়ম  । তৃতীয় জনকে  দেখে আমি হকচকিয়ে গেলাম ।সে  অবিকল আমার মতোই!

ইদ্রিস আলি , রাম সর্দার আর জোসেফ  মণ্ডল যাচ্ছিল। তারিখ ১৬।৫।২০১৪ । দুপুর। হঠাৎ রাম সর্দার রেডিও অন করল । কান পাতল। কী মনে হল , তড়াক করে একটা বড়ো গাছে উঠে গেল। বাকি দু'জন অবাক। নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। রাম এদিকে কখন নেমে এসেছে তাদের খেয়াল নেই।  হাতে তার বিশাল এক তলোয়ার। দু'জন তো ভয়ে  বনের দিকে পালাতে লাগল এবং হারিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ওরাও বড়ো বড়ো তলোয়ার নিয়ে এল। পাশের গ্রামেও নাকি একই  ছবি। খেলা শুরু করার আগে আবার কান পাতল । কিন্তু এবার রেডিও থেকে আওয়াজ এল, হে রাম !

জিতেছে। তাই খুব আনন্দ। আবীর উড়ছে । আকাশে।  পঙ্গপালের মতো  আসছে । এদিকেই। লোকগুলো রোজ লাথি খায়। ঝাঁটা খায়। আজ আসছে। আর যাকে পাচ্ছে তাকেই আবীর লাগাচ্ছে। বীরের মতো। কেউ  তাদের  রোখার নেই । বাজি এর ওর গায়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে। খুব মজা পাচ্ছে।খুব!


মন্তব্যসমূহ