অচেনা যাত্রী ১০/পৃষ্ঠাঃ৭


কবিতাঃ~
নৌকো জীবন
সুনীল সোনা
এই হাঁটার মধ্যে আছে
            আমাদের সব সমর্পণ

বাঁচার আনন্দে  জ্বলন্ত শরীরে
নদীমন ভেসে যাচ্ছে নৌকো জীবনে

ধুলোয় নিঃস্ব হবে বলে
জগতকে সাক্ষী রেখে
মহাকাশ ছুটে যাচ্ছে মৃত্যু পর্যন্ত



চতুর দশপদী
শঙ্কর দেবনাথ

তোমার হা-এর মধ্যে মহাকাশ ডানা মেলে থাকে
পরমাণু দেহ নিয়ে পরাপ্রেমে আমি ধরা পড়ে
চক্রাকারে ঘুরে মরি তোমার চোখের বাঁকে বাঁকে
সৌরহাসি মেখে মন পোড়ে আর ওড়ে সৌর ঝড়ে

দৃশ্যাতীত বিন্দু আমি মহাকাল সিন্ধু  দেহে-হীন
একরত্তি প্রাণ বয়ে বাসর সাজাই শূন্যে আর
বাজাই বগল স্বর্গসুখ পুষে- সারাঘরে  ঋণ
ঘর্মাক্ত ঘুমের ঘোরে লিখে রাখে তীব্র হাহাকার

তবুও যখন রাতে ছেলেটা ঘুমের মধ্যে ভয়ে
বাবা বলে ডেকে ওঠে -নিজেকে ঈশ্বর মনে হয়


শব্দেরা সবই শবদেহ বয়ে আগুনের আঁচে জ্বলে পোড়ে
ধোঁয়ার ছোঁয়ায় 'দোহার পিরিতি' তবু জমে থির জলে পড়ে
সুরগুলো সব চুরমুর করে ভেঙেচুরে হয় সুরহীন
নীলের নিঃসীম ছন্দ ও মিলে তবু খোঁজে প্রিয় দূরবীণ

জানা পথগুলো নানা ধূলো মাখে -তবু ডানামেলে ইশারায়
বন্ধুর পথে বন্ধুর মতো সমতল প্রেম দিশা দেয়
হাল ভেঙে আর পাল ছেঁড়ে ঝড়ে--কেড়ে নেয় নদী দুইকুল
চোখের গভীরে ছবির শরীরে ফুটে থাকে তবু জুঁই ফুল

আমাদের হাতে কিছু নেই পাতে কুকুরেরা দেয় লালামুখ
রুখো-শুখো বুকে তবু জাগে সুখে স্বপ্নগিরির জ্বালামুখ


ঘর
অলক বিশ্বাস
নিরিবিলি কতক্ষণ থাকা যায়
একা একা ফাঁকা ফাঁকা শব্দহীন ঘরে
এভাবে জেগে থাকা সম্ভব নয়।
অথচ নিরিবিলি সকলেই চাই।
সারা ঘর হৈ চৈ, দাপায় যে মেয়ে
নেচে, গেয়ে ঘরময় তুলকালাম
খেলা শেষে পুতুলেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে
তুমুল চিৎকারে তোলে হাই।
তুমি বলো দস্যিপনা আমার আদরে
কম তো কেউই নয়
মাঝে মধ্যে কেঁপে উঠে ঘর মরে জ্বরে।


হুজাইফা মাহমুদ-এর  কবিতা

দীর্ঘকেশের ক্বাসিদা
তারও চেয়ে অধীক দূরত্বে আছে কোন নিবিড় বৃক্ষপল্লী
প্রায়স পথভুলে যাই সেই সাজানো অগ্নিপরীক্ষায়
তারও চেয়ে অধীক লাস্য আছে এক নিরাকার কাঠখন্ড
আমাদের হৃদয় যেন ডুবে আছে কোন লোবান-পাত্রে

তারওচেয়ে অধীক কোন ঘ্রাণবহুল ফসল-সন্ধ্যায়
ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে বিকল ডানার রূপসীরা,
কাঁকনে শব্দ তুলে যারা নাচাতো ক্লান্ত রথের ঘোড়া
দীর্ঘকেশের ক্বাসিদায় তারা সীবন করে নক্ষত্রবিহীন আকাশ
আধো্নীদ্রার ভেতর এসে ফের মিলায় তারা কোন চন্দ্র-দ্রাঘীমায়

আকুল হয়ে ডাকি হে উড্ডীন পারাবত,পথ ভুলেগেছি।

ডানা পোড়ার দিনে

যেন  সোনালী এক সেফটিপিনে প্রতিধ্বনিত

ফোঁটা ফোঁটা রোদ

হাওয়ার গুঞ্জরিত ঘন্টাধ্বনি মিলিয়া যায় গহীন দুপুরে

শিশুরা ফিরে আসছে লোহার ব্রীজ পেরিয়ে

বায়োস্কোপের ধূসর কাঁচে থেমে থাকে এমন দৃশ্য

মানে এক চূর্ণ আয়নার ভেতর

তারা কো্রাসে ক্রন্দন গাইছে হারানো ঘুড়ির স্মরণে

এই সূর্যগ্রস্ত দিনে আমার ভালোলাগে

যেন এক কার্পাসনির্মিত সোপান বেয়ে

নেমে যাচ্ছি ব্রহ্মান্ডের গভীর জলমগ্নতায়


এক নিভন্ত উনুনের নিচে এখন বনোৎসব

আর সেখানে যাবার মতো কোন রেলপথ নেই

আপাতত এই আলো-ছায়ার কোলাজে

ঝরে ঝরে পড়ছি নিলীমার ব্রীজ ভেঙ্গে

আর যেহেতো আমার আত্নাকে হরণ করেছে

এক দূরন্ত কাঠের ঘোড়া



এই ঠা...ঠা রোদের অট্রহাসির নিচে

সংকোচিত হয়ে আছে গন্ধম বাগান


মাসুদার রহমান
বড়োবাবুর ফ্ল্যাটে ঋতুবতী কামরাঙা গাছ

বৃষ্টির গণ্ডার তেড়ে এলে বড়োবাবু কুণ্ডলি পাকিয়ে
ফাইল কেবিনেটের মধ্যে ঘুম যাবেন
শূন্য অফিস তার। সুন্দরী পি এ-র হাতে কফির পেয়ালা
খোঁপা খুলে ছড়িয়েছে এক আকাশ মেঘ; ঠোঁটে বিদ্যুৎ
                                        দূরের দীগন্তে ভ্রুভঙ্গি
বড়োবাবু সবে তো বিবাহদিনে ছড়িয়েছেন
মুঠো মুঠো কামরাঙা বিচি। মেঘের ছায়ায়
চারা ফুটে নির্জন ফ্ল্যাটের পাশে ঋতুবতী হলো

দোষ কি ধ্বস্ত হতে; বয় বুনো হাওয়ার প্ররোচনা

পাঠা

গ্রামীণ হাটের দিন; গৃহস্থের হাতে দড়ি
পাঠা যাচ্ছে পাঠাবিক্রি হাটে

এদিকে খোঁয়াড় শূন্য হল ঠিকই
কিন্তু গৃহস্থ-মাতা জানে ঠিকই পাঠার দাপট

সুমন মল্লিক
শীতের কুয়াশামাখা কিছু রুদ্র সাক্ষাৎ
চোখের ঘুম কেড়ে নিয়ে
রাত্রির অন্ধকারে দেয় ঘৃণার রসদ ৷
একবুক চিৎকার ভরা কলম
তখন খোঁজে কাগজের আশ্রয় ৷

উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া অলসতা
কখনও কখনও
অস্তিত্বের চরম বিপন্নতার মধ্যেও
রচনা করে কবিতার বিষাণ ৷
আর রাত্রি দীর্ঘতম হয় তীব্র অভিমানে ৷

রাতঘরে বিষাদ মিলিয়ে যায় নিমেষে ৷
চোখের জল আর শরীরের ঘাম
একাকার হয়ে ডোবায় আদরবিছানায় ৷
আর আমি অর্ধাঙ্গিনীর অন্তর্দেশে কবর দিই


লুব্ধক কবিতার আসর(নতুন বিভাগ)
এই সংখ্যার তরুণ কবি শূদ্রক উপাধ্যায়

পৃথিবী সংক্রান্ত কবিতা
 ১
জানালা পর্যন্ত ইকুয়েস্ট্রিয়ান সাক্ষ্যাৎ ;
রাজনীতি ঘনীভুত হচ্ছে রামধনুতে!

অশোক কল্পনাশ্রয়ী; বৌদ্ধ ভিক্ষু...


পৃথিবীর না বলা যন্ত্রণাগুলো
নতুন জামাই এলে বলা হবে;

নো ম্যানস ল্যান্ডে সন্তান জন্মাবে
ডাবের জল থেকে ...!

শরীরের উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে ;
আমায় লাশ ঘরে শুইয়ে দাও...

এক ভাবে তাকিয়ে আছে মোনালিসা ;
আমার শরীর হিম হয়ে আসছে...

গ্রীক উপকথা

আফ্রোদিতি; সমুদ্রের ফেনা থেকে
উঠে আসছে ঝিনুকের খোলসে !

ইউরেনাস তুমি নপুংশিত ক্রোনিকের হাতে ...


শতাব্দীর শেষ সূর্যোদয়ে ডিওনিসুস
একান্ত হয়ে ওঠে ক্রীতদাসের সাথে;
তোমার তো পৃথিবী নেই !
শ্লীল-অশ্লীল জন্মসূত্রে
পরিপূরক এই গ্রহে ...

শীতের কবিতা
 ১
 কুয়াশা নেই শরীরে –
একটু পরে রোদ উঠবে;
চা-পাত্রের গা বেঁয়ে
যৌনতার ভাপ উঠছে...!

শীত আসলে রোজ
বনগাঁ লোকালে চড়ি ;
উষ্ণতা মাখি ভীড়ে

কমলা লেবুর দাম কমছে ...!


বরফের মতো শক্ত হয়ে যাচ্ছে কান্না;
পেয়ারা গাছ জামা পরিবর্তন করে নেয়
সমস্ত শরীর মসৃণ হয়ে উঠে,
কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে কান্না...


চাঁদ আস্তে আস্তে নেমে যায় জলে
আমার বিছানায় ফিস ফিস আদিমতা;
তরুণ পাতার মতো কবিও
ফেরি করে শীতের কবিতা...

 ৫
রোজ রাতে ব্যালকনি ঘেঁষে
ঢুকে পরে কয়েকটি শামুক;
বাইরে প্রচণ্ড শীত উঁকি মারে
ঘরের দেয়ালে; টিকটিকি স্থির...

ফেসবুক/নিজস্ব ব্লগ থেকে বেছে নেওয়া কবিতা (নতুন বিভাগ)
এই সংখ্যায়ঃ সুব্রত মণ্ডল

শিশুপাল বধ 

চলো বন্ধু শিশুপাল বধ করি।

রক্ত না আমি চাইছি
বধ পর্বের পর কবিতা ছড়িয়ে পড়ুক সভায়

তাই হল

বক্তের বদলে কবিতা বইছে
আমরা কবিতা দেখতে চাই


আমাদের প্রিয় ঠাকুর নামতা পড়ছে
একে চন্দ্র,দুইয়ে পক্ষ.....

দর্শক ভাবছে এখনি শেষ হবে

কিন্তু দশক ঘুরে গেল
একশো একে আর পৌঁছয় না

পড়াশুনার এই হাল হকিকৎ বলে
টিপসই ধারী মাল
সুপ্রিম পাওয়ার কে.....

কেউ বড়ো আঙুল দেখালে....

চলো নতুন ভাবে পড়াই ও পড়ি


রাজার পিছনে ছুটছে শিশুপাল

দূরথেকে দৌড় প্রতিযোগিতা ভেবে
আমরা ঘর সংসারের দিকে....

আজও চলছে প্রতিযোগিতা
ভালোলাগেনা

এক বারের জন্যও কি পারে না

সবাই বলছে চিটিংবাজ

একপাক কম দৌড়ে.....

দূর থেকে মনে হয়....

সাবাস আগে খড়ম পেটা কর।

  পৃষ্ঠাঃ৮- এ যাবার জন্য  'পুরাতন পোস্টসমূহ' -এ ক্লিক করুন  ।                                    

মন্তব্যসমূহ