অনুবাদঃরুপাই
পান্তি
জাপানের
কবিতা
শনতারো তানিকাওয়া
নদী
মা,
এই নদী কাঁদছে
কেন বলো?
সূর্যের
তাপে শরীর যে পুড়ে গেল
মা,
এই নদী গাইছে
কেন গান?
পাখিরা শুনবে ,পেতে আছে দুই কান।
মা,
এই নদী এমন
শীতল কেন?
ওর বন্ধুরা
তুষারের সাথে ছিল।
মা,
এই নদীর
বয়স হয়েছে কত?
নদীর বয়স? চির বসন্তের যত।
মা,
এই নদী থামছে
না কেন,
কেন বলো ,একবার
আসলে যে
ওকে ডাকছে অতল,
মায়ের আঁচল, সমুদ্র সংসার।
পাথর ও আলো
পাথর কখনো
আলো ছড়ায় না।
পাথরে কখনও
হারিয়ে যায় না আলো।
পাথরের দেহে
কত প্রজাপতি বসে
আর আলো চুঁইয়ে
পড়ে তার গা বেয়ে।
যে আলো সবে
মাত্র পৃথিবীতে এল।
আমেরিকার
কবিতা
রবার্ট ক্রিলি
এমন একটা
চেনা মুখ
কেননা, আমি বেশি কথা বলি,
তাই , তোমাকে দেখামাত্র,
ডাকলাম,চেনা
মনে হল।
মানে, নাম ধরে ডাকলাম।
যে নাম কখনো
তোমার ছিল কি-না কে যানে.....
আর পথপাশে
অন্ধকার নেমে এলে
এখন আর কি
করার থাকে
আর , মানে , কী করব,
চলোনা একটা
বড়ো গাড়িতে
যেমন তুমি
বললে ,চলো চড়ে বসি
আর ,ভগবানের
দোহাই,
দেখো, কোন দিকে যাই, কোন অন্ধকারে...
রোমানিয়ার
কবিতা
পিটার ঘেলমেজ
আমার ভাই
এরা
১
সামান্য
কয়েকটা কথা
এইতো বলার
আছে আর।
এই অসামান্য
ভাতৃত্ব জুড়েথাকা
রক্তের ক্ষুরের
কাছে মৃত্যুও
কত তুচ্ছ
মনে হয়...
মনে হয় ঠক-ঠিক
কেউই মরে না!
২
দয়া করে
আমার এই সুখী ভাইদের বিরক্ত করবেন না
ওদের টেবিল
ভরা সুখ,
সুখ ভরা পানীয়
আর ছায়াপথ
ভরা অসংখ্য গ্রহ-তারা.....
৩
প্রত্যেক
তারার নীচের অন্ধ সিঁড়িগুলো
কেঁপেউঠে
ভেঙেদেয় শব্দের নীরবতা
আকাশের এক
কোন থেকে অন্য-অন্য দিকে
আর আমাদের
পিঠ,
বেঁকে যাওয়া শিরদাঁড়া
বেয়ে ওঠা
ভারী ব্যাগ মেপে নেয় আকাশের সব অলিগলি
৪
তোমাদের
রাতগুলো এই চির অপেক্ষার শেষে
বিলি হয়ে
যায় আর তার ফাঁকে একটা আহত পাখি
উড়তে উড়তে
কখন যে থেমে যায়!
৫
ছাই ,ছাই,
আর ছাইচাপা আগুন....
৬
কে যে খোঁজে
তন্ন তন্ন
করে খোঁজে
পৃথিবীর
হারানো ভাষার ভেতর,হাতড়ে বেড়ায়
৭
আমার ভাইয়েরা
বাক্যের বন্ধনী সাজায়
স্বরবর্ণ
,ব্যঞ্জনবর্ণের সমস্ত অক্ষর,
সুখের বাসার
ভেতর,সোনার কাঠি দিয়ে সাজায়
সমস্ত ছেঁড়া-ফাটা
আত্মার-পূনর্জন্মকে--
৮
এই দমবন্ধ
চারপাশে
হঠাৎ সৌরভ
নিয়ে
কালো অন্ধকারের
ভেতর সমস্ত নীরবতা ভেঙে কে এল
ধূমকেতুর
উজ্জ্বল পাখার মতো সাজে!
কবি: দিয়েগো দামিয়েন ওইয়েরো
দেশ: আর্হেন্তিনা
ভাষা: স্প্যানিশ
অনুবাদ: মৈনাক আদক
কবি-পরিচিতি:
শূন্য দশকের আর্হেন্তিনীয় কবি দিয়েগো দামিয়েন ওইয়েরোর জন্ম ১৯৮১ সালে
রাজধানী বুয়েনোস আইরেসে। পেশায় অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, পরিচালক,গল্পকার
এবং ভাস্কর। 'এল দোক্তোর ক্লোক' ছদ্মনামে ইতিমধ্যে আর্হেন্তিনীয় কল্পবিজ্ঞান
আর রহস্যরোমাঞ্চমূলক ছবিতে অভিনয় করেছেন, কাজ করছেন নাটকেও। আর্হেন্তিনায় বিভিন্ন সাহিত্যসভায় কবিতাপাঠ
করেন। আন্তর্জাতিক
আন্তর্জাল পত্রিকা 'লাকবেরনা'র সম্পাদক,
বর্তমানে 'লা কাসা দে মুন্দো ক্লোক' নামক রহস্যরোমাঞ্চমূলক সাহিত্যপত্রের সম্পাদনা করেন।
ক্রাকেন
প্রবেশপথ
এই অন্ধকার
ক্ষুধা
যে ক্ষইয়ে
দেয় মন
সমুদ্রের গভীরে
চাঁদ ডাকাডাকি
করে তোমার দরজায়
ওখানে সে
ভেসে যায় মৃতদেহের স্তূপ পেরিয়ে
অনন্তকালকে
টেনে নিয়ে আসে
জাহান্নাম থেকে তোমার দিকে
তরঙ্গ
থাবায় আলিঙ্গনাবদ্ধ
সময়
যখন
তোমার দৃষ্টিতে
পাচিত হয়ে যায় ওরা
সেই দিন
বেঁচে থাক
তোমার অ্যালার্মঘড়ি
ঢেকে ফালো
আগুনের আদ্রতায়
কেননা, এখন খাবার সময়
(ক্রাকেন
এক কাল্পনিক পশু, আর্হেন্তিনীয় পুরাণ মতে, ক্রাকেন সমুদ্রের নরকে রাজত্ব করত)
দড়ি
দড়ি, রক্তের ব্রার অস্তিত্বের শস্য
কে যেন বলেছিল, অন্ধকার আমার ছাত্রী
মেঘ আর রাস্তা
আমাকে টেনে আনে তোমার মৃত্যুর দিকে
আমার খাদ্য
পরিবর্তনের জন্য
শিরার শিশিরপুঞ্জ
হঠাৎ বিস্ফোরিত
যখন টর্চের
আলোয় ক্রমবর্ধমান বিশৃঙ্খলা
যখন এই ধারালো
হিমশৈল হাড়পাঁজরা ভেদ করে যায়
ভেঙে দেয়
আমার নীরবতা পাহাড়িয়া প্রতিধ্বনিতে
শেষের এই
শব্দমালা
ওরাই আমার
মনের রাস্তা
আর আমার
শরীর নিঃসঙ্গতাকে শূন্য করে চলে যায়
রয়ে যায়
হাতের ভাঁজে
আনন্দ
পরিষ্কার
করা হচ্ছে
জানালার ঘাম
অস্তিত্বের মলিন মুখ দিয়ে
যখন
তুমি নাচো শয়তানের সাথে
আধো অন্ধকারে
সাইউমব্রের
অনাসৃষ্টি
শব্দের গন্ধ
জেগে ওঠে অন্ধকারের নৈঃশব্দ
যেখানে শব্দ
অতিক্রম করে ক্লাইম্যাক্স
মৃত্যুর
উদরে
ঈশ্বর ভার্চুয়াল পুরুষ
স্পর্শ করে রক্ত
সৃষ্টি করে
বিস্ফোরণের অ্যান্ড্রয়েড
তারপর
চিন্তনকে সংযুক্ত করে
মহাশূন্য বিভাজনে
দৃষ্টি
চোখ
ভেঙেচুরে
যায় জানালা থেকে জানালায়
আনত
বাচ্চা মেয়েটাকে
মেপে নেয় আপাদমস্তক
জলের ফোঁটা
পিছলে যায়
পাখির
মার্বেলসম
ডানায়
সুবাস ছড়ায়
তোর চুলে
আর আমি অন্ধকারের
ভিড়ে হারিয়ে যাই
উড্ডীয়মান মন
নীরব মৃত্যুর
পুনরুত্থান
বেঁচে আছে
কণ্ঠহীন মানুষ
খুঁজে বেড়ায় ছাত্রদের হাড়গোড়
পার্থিব
যন্ত্রপাতির মাঝে
বিষ প্রয়োগ করে
শয়তানের হাতে সমাধিস্ত
আলো
যখন শুরু হয়
ডাইনিদের বহ্ন্যুৎসব
কে যেন বলল
সময়ের বর্মে সজ্জিত রক্ত
গিলে খায় অন্ধকার
ঝড়ের অবয়ব
যেখানে
আর্তনাদ পূতিগন্ধময়
তড়িতাহত জীবকোষ
রাতের বিষদাঁতে
তাঙ্কা
নদীর পাপড়ি
চাঁদ জাগিয়ে
তোলে
সুবাসহীন
গ্রীষ্মের
শয়তানকে
হাইকু
আত্মা
ঠান্ডা মহাসাগর
দেখায় সূর্য
চিনের কবিতা
পাথরে পচে
যায় বাঁট
মেং চিয়াও
অনুবাদঃ গৌরাঙ্গ মোহান্ত
অনুবাদঃ গৌরাঙ্গ মোহান্ত
(চিন
রাজবংশের (২৬৫-৪১৯) ওয়াং চিহ্ জ্বালানি সংগ্রহের জন্য পাথর সেতু পাহাড়ে ঢুকে দুটি ছেলেকে দাবা
খেলতে দেখেন। ছেলেরা তাকে
খেজুরের বিচির মতো কিছু খেতে দেয় এবং এতে তার ক্ষুধা নিবৃত্ত হয়। খেলা শেষে ছেলেরা আঙুল তুলে বলে , “দেখুন! আপনার কুড়ালের হাতল পচে গেছে।” যখন চিহ্ গ্রামে ফিরলেন তখন তার বয়স একশত বছর।)
স্বর্গে
এক দিনের কম,
এবং মানুষের
মাঝে এক হাজার বছর হয়েছে অতিক্রান্ত।
যখন ঘুঁটিগুলো
ছড়ানোই রয়েছে ছকে
সমস্ত জিনিস
শূন্যতায় হয়েছে রূপান্তরিত।
কাঠুরে পথ
ধরে বাড়ি ফেরে,
বাতাসে পচে
গেছে তার কুড়ালের বাঁট :
পাথর সেতু
ছাড়া যা ছিল তা কিছুই না
এখনও তা
রচনা করে রংধনু,সিঁদুর-লাল।
মন্তব্যসমূহ