এই সংখ্যার কবিতাঃ
উৎপল দে–র গুচ্ছ কবিতা
সকাল
নড়ে ওঠে পাতা , ধানশীষ থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে
পা মেলে দেয় মাটির গন্ধে
ধুলোময় পৃথিবীর গানে ।
গ্রাস
কাচের পাহাড়...কাচ বেয়ে উঠে যায় মেয়ে
মসৃণ চূড়ায় ।কাচের পৃথিবী একদিন
গিলে নেয় তাকে ।
পিতা
সামনে দাঁড়িয়েছো আদিগন্তে
পিছনেও মহীরুহ তুমি ।
ছায়াময় সব আজ..
লজ্জা
মাটির ভেতর
মাটি খুঁজে চলি
নিজেকে লুকাবো বলে ।
তর্পণ
তোমার ছবির পাশে
ছবি হয়ে রয়ে যাবো
অমিতাভ দাস
বিষাদ পর্বে রচিত
যেদিন তুমি দেখা দেবে--কাছে এসে
দাঁড়াবে বিনীত ভঙ্গীমায়...বিশ্বাস করো
সেদিন আমি অন্ধ হয়ে যাবো ।ব্যাকুল
ধুলোর মতো উড়তে থাকবো বাতাসে বাতাসে...
বাবলু রায়
নৌকো
একদিন আমিও নৌকো হবো দেখো
উথাল পাথাল স্রোতে
উথাল পাথাল স্রোতে
এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহান্ত্রে ভেসে
যাবো
দিনরাত্রি আলোছায়া থাকবে না কিছুই
যে এক মায়াময় ধোঁয়ার ভিতর
সাঁতরাতে সাঁতরাতে পৌঁছে যাবো আমি
পত্রহীন নিষ্পলক
হিম পালকের ঘরে
একদিন আমিও নৌকো হবো
অর্ঘ্য রায়
বেহিসেবী
প্রশ্ন হয়ে ভীড় জমায় প্রেম,
সাজিয়ে তোলে বেতফলেব় নীল
চোখ এঁকেছি ধ্রুপদী কৌশলে
স্বপ্নগুলো সাজিয়ে তিল তিল ।
অনন্ত এ জীবন-জিজ্ঞাসা,
পথের দেরি ঋনের বোঝা বয়ে,
হঠাৎ যদি ক্লান্ত হয়ে পড়ি,
চাউনি তোর সরাইখানা হয়ে
জুডি়য়ে দেবে জমাট বাঁধা গ্লানি
নামিয়ে এনে শ্রাবণ চোখেমুখে,
একলা রাত নিথর চোখে জাগি,
বালিশ নিয়ে বিষাদ মাখা সুখে–
চমক লেগে ঘুম ভেঙ্গে মাঝরাতে ,
ও মেয়ে তুই ঘুমজড়ানো ছবি।
চোখেতে তোর কবিতা থাক লেগে,
তখন আমি হতেও পারি কবি –
আঁজলা ভরে কবিতা পান করি,
কবিতা বয়ে গড়িয়ে নামে জল,
প্রবেশ করি গভীরতর ঠোঁটে,
হৃদয় জুড়ে গন্ধমুখী ফল ;
সুষুন্মায় আগুন রঙ শিখা,
দহনদাহ উল্কাপাত আনে –
অবশেষে পাথরপোড়া ছাই
পড়ল এসে কে জানে কোনখানে ।
ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সব –
আকাশমাঠে ঝিমিয়ে আসে রাত –
একলা আমি গলদ খুঁজে চলি,
সামনে খুলে জীবন-ধারাপাত ।
বেহিসেবীর হিসেব মেলে না যে,
সেসব কথা কেমন করে বলি !
তুই যখন মগ্ন ঘুমঘোরে,
আমি তখন মৃত্যু খুঁজে চলি ।
সৌম্যজিৎ আচার্য-এর দুটি কবিতা
স্বপ্ন
ম্যাপলিথো কাগজে ছাপানো স্বপ্নে
পারাপার বৃথা হয়ে যায়।
ফিরে যায় আগুনের গান,হাভাতের ঘুম,
হেমলকে ডুব দেওয়া সারাটা বিকেল-
বার বার ডাক দেয় ঘুঁটে দিয়ে সাজানো
বাগান
আর হাসিখুসি দিদিমা আমার....
ভাঙা মেঘ
তোমার নাভিতে কালবৈশাখি ঠেক
গ্লাসে ভরে দাও উল্লাস,
ভাঙা মেঘ....
শঙ্করনাথ প্রামাণিক
কালচিত্র
বাতাসে উড়ছে রঙ
সঙ্গে বারুদের পোড়া গন্ধ
হায়না ঘুরছে সেজে সঙ
হরিণী হারিয়েছে তার ছন্দ
গান্ধারীর মতো চোখ বেঁধে
আমরা সেজেছি সবাই অন্ধ।
শবরী রায়
বসন্ত
বড় হলে অভিমানও বড় হয়ে যায়
হাঁটুর নীচ থেকে বাড়তে থাকে
লম্বা হয় হাতের আঙুল
দৈর্ঘ্যর সঙ্গে বেড়ে ওঠে প্রস্তেও
লোকালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে
অরণ্যের দিকে হাঁটা দেয়
জংলী নিঃশ্বাস ফেলে পাতার চুলে
ছমছম করে ওঠে নদী
দ্বিধান্বিত চাঁদ টুকরো হয়ে ভেঙে যায়
বাঘেরা আসে নুন চাটতে
হরিণেরাও আসে
আঙটির আঙুল ছুঁয়ে দেয় তানপুরার প্রথম
তার
ঋতুর রেওয়াজ শুরু করে বসন্ত
ফিরে এলে অভিমান গাঢ় হয় ।
মামুন মুস্তাফা
বিষাদের আঙুলগুলো
তখনো তুমি ঘুমোছো
অথচ জাগরণে শিথিল হল ঘুমের বালিশ
কোথাও কোনো প্রাণের সাড়া নেই
না ছিল নাইটগার্ডের বাঁশি;
ওরা কি তবে চোলাই মদে চুর!
জানলার কাচ সরিয়ে দেখি- দুর্ধর্ষ
ডাকাতের পায়ের ছাপে শিবরাত্রির
মাটি কাঁপে।ভাঙা দেওয়ালের পাশে
উচ্চকিত মাতাল গণিকা রাত্রি।
এভাবেই নেমে গেছে ঘুমের শহর
ঘুমের ভেতরে তুমিও ক্রমেই হয়ে গেছ
অন্ধকার,
ওই আঁধারের পাশে উঁকি দেয় আমাদের
পরাজয় স্তম্ভ
ও ধুসর রাত্রির
ক্যাম্প,
এখন কীভাবে মেলে ধরবো বিষাদের
আঙুলগুলো?
সুকুমার চৌধুরী
খন্ড
ঘুমের মতো এই যে পালিয়ে যাওয়া
বিষণ্ণ প্রবাস থেকে অজ্ঞাতবাসের হিমে
যে রকম অনর্গল অন্তর্মুখি হাওয়া
হঠাৎ ছড়িয়ে যায় মেঘে মেঘে সবুজ জাজিমে
বিষণ্ণ প্রবাস থেকে অজ্ঞাতবাসের হিমে
যে রকম অনর্গল অন্তর্মুখি হাওয়া
হঠাৎ ছড়িয়ে যায় মেঘে মেঘে সবুজ জাজিমে
পুঞ্জ পুঞ্জ মরুবনে কুয়াশার মতো অভিমান
হরকরাবিহীন শোক ফুটে ওঠে সাহারাশ্মশানে
বোঝে সেও ওই হাওয়া তবু তার বিধুর অর্গান
একা একা বেজে ওঠে জাগে তার নিজস্ব নির্মাণে
হরকরাবিহীন শোক ফুটে ওঠে সাহারাশ্মশানে
বোঝে সেও ওই হাওয়া তবু তার বিধুর অর্গান
একা একা বেজে ওঠে জাগে তার নিজস্ব নির্মাণে
গ্রীক উপকথা
শূদ্রক উপাধ্যায়
মেদুসার রূপ ছড়িয়ে পড়ছে গর্গনে;
পেসিডন , তুমি সাবধান হও প্রেমে !
এ্যাথেনা ক্রমশ ক্রুদ্ধ হয়ে উঠছে ;
পার্সিউস এখন রাম চন্দ্রের সহচর...
সুমন মল্লিক-এর দুটি কবিতা
দুটি
ঈশ্বরকণা
ভালবাসা খোলস ছাড়ছে
রাতঘরের নিরিবিলি আদরে ৷
বিক্ষিপ্ত করছে রোমাঞ্চগুচ্ছ
আর রামধনু রঙা প্রস্ফুটন ৷
লাগামহীন এই জোছনাবিলাসে
অর্ধনিষিক্ত অনুরাগ আর
ফোঁটা ফোঁটা চুমুর বৃষ্টির মাঝে
নিশ্চল হয়ে জ্বলছে
দুটি ঈশ্বরকণা...
নেগেটিভ্ / ১৮
টাটকা যৌনাচারে ভুলে থাকছি
খানিকটা শুকিয়ে আসা ক্ষতগুলির ব্যথা
৷
মাল্টিপার্পাস দূরবীনে বিগত
চুমুসংকলন
আর বিভোর হয়ে দেখি না ৷
ইচ্ছের কোষাগার থেকে টেনে বার করেছি
অতিরঞ্জিত শরীরকলা ৷
বুকের ধূ ধূ প্রান্তরে এখন শত শত
সহনযোগ্য শয়তানির ব্রহ্মযজ্ঞ ৷
অরূপম মাইতি
জীয়নকাঠি
আল ধরে অনেকটা দূর হেঁটে, মাঠের শেষ
কদমের ছায়ার নীচে, একটি বাঁধানো পাড়
একটি রক্তিম ঠোঁট, চুম্বন পিয়াসী
গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে, থেমে যায়
একটি ক্ষণের জন্য
একটি ঝলক, আকাশের মাঝে
একটি প্রবল শব্দ
নেমে আসে আলোর সিঁড়ি
বুকের দুরু দুরু কম্প, সাথীর খোঁজ
চুম্বনের সুরা ভরা পানপাত্র, একটু লক্ষ্যচ্যুত
লাজের দায়ে, চওড়া
কাঁধ, ছুঁয়ে ফেলে কপাল
মানবী আঁকড়ে ধরে, সজোর বেষ্টনী
অন্তরঙ্গতার শেষ
আশ্বস্ত চোখ এবার আশ্রয় খোঁজে
চকিত আলো আর কঠিন পরশ
দুর্বল চিত্তে, জাগিয়েছে প্রাণ
এই হল প্রাণের জীয়নকাঠ
সৈকত ঘোষ
আনবটন মিস্ট্রি
মানুষ যদি ক্রিয়ার বিশেষণ হত
ফেলে আসা স্কুলের ঘন্টা
উড়ন্ত জোনাকি
পৃথিবীতে আগামীকাল রচনা করুক ...
পৃথিবীতে আগামীকাল রচনা করুক ...
বাঁচার পেছনের রহস্যরা আরো গাঢ়
রোদের ঠোঁটে চকিত বৃষ্টি চিহ্ণ
মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়
সংকল্প
প্রতিক্ষায় থাকা দিন বাঁশির করুণ সুরে
লাজুক দৃষ্টিতে স্পৃহার রক্ত উষ্ণ
একান্তে অসমাপ্ত প্রলাপের জপ
ঝিনুক বন্দি হুঁশ
সূঁচের বুননে নকশি কাঁথা সাজায়
অলিখিত কবিতা
চারণ কবির জন্যে তোলা
তবুও অগনিত নক্ষত্রপুঞ্জে
সপ্তর্ষিমন্ডলের দেখা
জ্ঞান পাপের অজ্ঞানতা
মাথায় জমা বিন্দু বিন্দু ঘাম
তবে কি সমগ্র সংকল্প রঙ্গমঞ্চের বিদ্রূপ ......?
প্রতিক্ষায় থাকা দিন বাঁশির করুণ সুরে
লাজুক দৃষ্টিতে স্পৃহার রক্ত উষ্ণ
একান্তে অসমাপ্ত প্রলাপের জপ
ঝিনুক বন্দি হুঁশ
সূঁচের বুননে নকশি কাঁথা সাজায়
অলিখিত কবিতা
চারণ কবির জন্যে তোলা
তবুও অগনিত নক্ষত্রপুঞ্জে
সপ্তর্ষিমন্ডলের দেখা
জ্ঞান পাপের অজ্ঞানতা
মাথায় জমা বিন্দু বিন্দু ঘাম
তবে কি সমগ্র সংকল্প রঙ্গমঞ্চের বিদ্রূপ ......?
অনুবাদ কবিতাঃ১
কবি: গ্লাদিস সেপেদা
দেশ: আর্হেন্তিনা
ভাষা: স্প্যানিশ
কবি-পরিচিতি: নব্বই দশকের আর্হেন্তিনীয় কবি গ্লাদিস
সেপেদা মাদ্রাগোরা ছদ্মনামে স্পেনীয় সাহিত্যজগতে পরিচিত। জন্ম
১৯৬৩ সালে রাজধানী বুয়েনোস আইরেসে । আজন্ম সাহিত্যই জীবনযাপন তাঁর, বিভিন্ন শিল্প ও সাহিত্য কর্মশালার সংগঠক, কবিতাকে
অডিওভিশ্যুয়াল মাধ্যমে প্রকাশ করতে নিজের দেশে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন, কবিতা পাঠ করেছেন মেক্সিকো, চিলি, ইউরোপে এবং আমন্ত্রিত কবি হিসেবে বিভিন্ন দেশের বইমেলায় । বিভিন্ন দেশের
নতুন কবিদের কবিতা মেলে ধরেন আর্হেতিনীয় রেডিও-টিভিতে,
বেশ কিছু সাহিত্যপত্রিকার সম্পাদিকা এবং ‘লাকবেরনা’
সহ তিনটি অনলাইন পত্রিকার পরিচালিকা । পেয়েছেন আর্হেতিনার সাহিত্য
পুরষ্কার আর কলম্বিয়ার সিনে পুরষ্কার । তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই:
‘আভেইয়ানেদার কবি’, ‘ঘুমাও শব্দ’, ‘শান্তির কাব্যগ্রন্হ’ ।
দর্পণে জল
মুখের কোনো বয়স নেই
শুধু বয়ে যায়
মহাবিশ্বের সূক্ষ্ম আঙরাখা
এই অনন্তের
অস্থিরতা ঢেকে দিতে
একটি নিষিদ্ধ
ফল
আর ইডেনের বাগান
আমাদের জন্য কেউ কোথাও অপেক্ষা করে না
একটি লোক এবং তার টুপি
একটি লোক তার টুপি নিয়ে
একটি বেহালা, হাতে তার পদচিহ্ন
রাস্তা তাকে রাতবিদ্ধ করে
ছুরির মত তার সান্ধ্যবাতাসে
প্রতিধ্বনি চিবিয়ে খায় তার গলা
মন
তৃষ্ণা
ক্ষুধা
যে নারীর চেয়ে বেশি ভালোবাসে ভাগ্যকে
যে তার ঘড়ির পালস ছেড়ে বেরিয়ে আসে
জিরিয়ে নেয় আর হামাগুড়ি দেয়
তার আত্মঘাতী পুতলি নিয়ে
তার প্যান্টের পকেটে
কিছু ভালবাসার গান
সে শূন্য করে দেয়
খরচ করে ফেলে তার রক্ত
উরুসন্ধির মাঝে
বইয়ের প্রতিটা পাতা
চাবি খুঁজে পায় না
নাস্তানাবুদ হয় সে
নৌকায় রাখা বোতলে
চাকুরী হারাবার টরেটক্কা
যথারীতি বৃহস্পতিবার চলে যায়
জুতো
আমার বাম জুতোর
গর্তের ফাঁক দিয়ে
দেখি পৃথিবী
মহান গোপনীয়তার মাঝে
যার শুরু
স্বপ্নের ভিতরে
যেমন আমার সারল্যময় দেওয়াল
অন্যের হৃদয়ে
আর আমার হাতে ধরা কবিতায়
ভাবাবেগের প্রতিবেশ যেন
আমার ডান জুতোর গর্তের ফাঁক দিয়ে
দেখি ভবিষ্যৎ
অর্ধনিমিলিত চোখে
আমার ভূতের অসীম যন্ত্রণা
বিপজ্জনক এক স্বাদ যে ছড়িয়ে পড়ে
হাড়েমজ্জায়
নগ্নতা নিয়ে কিভাবে হাঁটা যায়
দু পায়ের পাতায় ?
আর অর্জন করা যায় পদচিহ্ন
যারা নির্মাণ করে গোধূলিবেলায়
রামধনুময় দিগন্তরেখা
নৈঃশব্দের দমবন্ধ অবস্থায় সম্মতির
দৃষ্টিপাত
কিন্তু মানবতা সরে যায় তার
ক্রুশবিদ্ধ গোড়ালি নিয়ে
যখন বৃষ্টি
ধুয়ে দেয় পুরুষের দাগ আর বিস্মৃতি
অনুবাদক: মৈনাক আদক
[ মৈনাক আদক স্প্যানিশ ও ফরাসী
ভাষার শিক্ষক, অনুবাদক এবং দোভাষী । অবসর সময়ে স্প্যানিশ ও
ফরাসী ভাষায় কবিতা লেখেন লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায়,
আর্হেনতিনার লাক-বেরনা পত্রিকায় বাংলা থেকে
স্প্যানিশে অনুবাদ করেছেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দ
দাশের কিছু কবিতা । ]
অনুবাদ কবিতা:২
কবি: হোসে মারিয়া এগুয়েন
দেশ: পেরু
ভাষা: স্প্যানিশ
[ কবির জন্ম রাজধানী লিমায় ১৮৭৪
সালে এবং তিনি মারা যান বারবানকোতে ১৯৪২ এ, যেখানে তিনি
জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন । অর্থনৈতিক অস্বাচ্ছন্দ্য ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী ।
জলরঙে ছবি আঁকতেন । আলোকচিত্ৰশিল্পী হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছিল । ছিলেন অন্তর্মুখী
এবং সংবেদনশীল । তাঁর প্রকাশিত চারটি বই: সিম্বলিকাস,
কানসিয়ন দে লাস ফিগুরাস, সোম্ব্রাস এবং
রোনদিনেলাস । ]
কবিতা:
ঘোড়া ( মূল কবিতা: এল কাবাইয়ো )
হেঁটে যাচ্ছিল সে পথে
ক্ষয়াটে চাঁদের পানে
আদ্যিকালের যুদ্ধে
মৃত এক ঘোড়া ।
তার আবছায়াময় শিরস্ত্রাণ
কেঁপে ওঠে, পিছলে যায়;
ডেকে ওঠে কর্কশ হ্রেষা
তার দূরবর্তী কণ্ঠস্বরে ।
ব্যারিকেডের ছায়ান্ধকার
কোণে,
শূন্য দৃষ্টিতে,
আতঙ্কে থেমে যায় সে ।
অনেক পরে শোনা যায়
তার পদধ্বনি,
ধূ ধূ পথ
আর ধূলিস্বাৎ প্লাজার মাঝে ।
লাল রাজারা ( মূল কবিতা: লোস রেইয়েস রোহোস )
ভোর থেকে
যুদ্ধে রত দুই লাল রাজা
সোনার বর্শা নিয়ে ।
সবুজ গহীন জঙ্গলে
আর নীলচে লাল পাহাড়ে
কাঁপন ধরে বিরাগে ।
শ্যেন্ রাজারা যুদ্ধে রত
নীলচে সোনার
দূরের দেশে ।
ক্যাডমিয়ামের আলোয়
কৃষ্ণকায় রাগী রাজাদের
দেখায় যেন ক্ষুদ্র ।
রাত্রি নামে
যুদ্ধ চলে
শত্রু দুই লাল রাজায় ।
অনুবাদ কবিতাঃ৩
(ফসিলের পাতা থেকে)
অনুবাদকঃ রূপাই পান্তি
ভিনসেন্ট বাকলে
সহযাত্রী
তবে তাকে তার প্রাপ্য খাদ্য দেওয়া হোক,
কেননা তিনিই আমাদের প্রকৃত বিচারক।
দেওয়া হোক তার প্রাপ্য সম্মানও
আর শোনা যাক এই ভ্রমণ প্রসঙ্গে।
যদিও তেমন কথা ছিল না আমাদের--
শুধু সৌজন্যবশত এই বাক-বিনিময়।
আর শোনো , অন্তত একবার,
শূন্যপ্রায় এই নলটির এপাশে কান দিয়ে,
নিষ্প্রভ চোখের দিক তাকিয়ে, শোনার চেষ্টা করো
একটা রিভলবার কেমন গর্জে উঠছে।
( অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রসিদ্ধ
কবি। জন্মঃ১৯২৫ মৃত্যুঃ১৯৮৯)
অনুবাদ কবিতাঃ৩
অনুবাদকঃরূপাই পান্তি
ডেনিস ব্রুটেস
ঘৃণাই আমাদের সম্পর্ক কে বাঁচিয়ে
রাখে,আর আমাদেরও
মাঝে মাঝে মনে হয়,এই পরবাস ভেঙে একটু বমি করি।
কিন্তু এই প্রসারিত নিস্তব্ধতা ঠিক
চেপে ধরে আমাদের
আর ক্রমে আরো টক হয়ে যায় মদের গন্ধ
ঘূর্ণিয় জলের কাছে দাঁড়ালেই
গুরুভোজনের পর
বমি করতে ইচ্ছে হয় আমার,সংক্রামিত দেহভার রেখে,
মনে পড়ে আমাদের পুরাতন প্রতিকুলতার
কথা।
আহত সৈন্যের মতো পাথরে আঘাত করি
ক্রোধ
কখনও ভেজা বাতাসে নিভন্ত তারার মতো
ঝলসে উঠি
আর ক্রমে খুঁজে পাই কোমলতার এক তীক্ষ্ণ প্রান্তদেশ
তারপর,আমাদের মতো করে সাজাতে থাকি তাকে।
ভূমির বিরুদ্ধে জমে থাকা আবেগ আর
দুঃশ্চিন্তার মতো
ঘেন্না করতে শিখি লোক-দেখানো আবেগের বারাবাড়ি
কেননা ঘৃণাই আমাদের সম্পর্ক কে
বাঁচিয়ে রাখে,আর আমাদেরও
(দক্ষিণ আফ্রিকার কবি। জন্মঃ১৯২৪)
অনুবাদ কবিতাঃ৪
অনুবাদকঃরূপাই পান্তি
এডয়ারড ব'
প্রাচীন সম্পর্কের কিছু
আর যদি এইসব মুখস্থ করা শব্দ আওড়ানো
যেত,
তবে হয়ত আমি পায়ে পায়ে
পৌঁছাতে পারতাম পাহাড়ের মতো উচ্চতায়
সে উচ্চতায় উঠে দেখতাম দিনগুলি কেমন
ভেঙে যায়,হাত বাড়াতাম সূর্যের দিকে
আর বুক ভরে শ্বাস নিতাম সমুদ্রের
শীতলতায়
তারপর যখন নামার সময় হত
রৌদ্রের মতো উচ্ছ্বাসে,
আমাদের প্রাচীন আলাপন দেখে হয়ত বা
মনে হত কী সুখের দিন ছিল আমাদের।
(ক্যারিবিয়ান কবি। জন্মঃ১৯৩৬)
অনুবাদ কবিতাঃ৫
অনুবাদকঃরূপাই পান্তি
মার্গারিট অটউড
আমার একটা ছবি
ছবিটা কিছুকাল আগেই তোলা।
প্রথম প্রথম ছবিটা দেখলে
মনে হত অস্পষ্ট, কলঙ্কমাখা
কয়েকটা দাগ আর ধূসর সব চিহ্নগুলো
একটা কাগজে একাকার হয়ে আছে
তারপর মন দিয়ে
দেখলে, বামদিক থেকে
মনে হচ্ছিল একটা ( লতান বা ঋজু)
গাছ যেন দু'হাত বাড়িয়ে আছে
আর ডানদিক থেকে মনে হচ্ছিল
একটা অর্ধেক ঢালু জমি,আর
একটা বাড়ির ছোট্ট কাঠামো।
পেছন দিকটায় একটা পুকুর ছিল
আর তারও পেছনে, নীচু পাহাড়।
(ছবিটা আমি তলিয়ে যাওয়ার
পরদিন তোলা হয়েছিল।
আমি ছবির মধ্যমণি,পুকুরের গভীরে,
জলের গভীরে ডুবে ছিলাম কোথাও।
আসলে আমি যে ঠিক কোথায় ছিলাম
তা বলতে পারবো না,বলতে পারবো না
কতটা বড় বা ছোট দেখাচ্ছিল আমাকে--
আলের ওপর জলের একটা
দোমড়ান-মোচড়ান ছায়া
কিন্তু তুমি দেখনি। যদি আরো,আরো দূরে
তাকাতে, আরো গভীরে, তবে এর মধ্যই
হয়ত আমাকে কোথাও খুঁজে পেতে তুমি।)
(কানাডার কবি।জন্মঃ১৯৩৯)
অনুবাদ কবিতাঃ৬
অনুবাদকঃরূপাই পান্তি
রবার্ট কোয়েৎসজ
আমার বয়স হচ্ছে
এতদিন পর মনে হয় ,আমার বয়স হচ্ছে।
আজকাল মা'কে প্রায়ই স্বপ্নে দেখি।গতরাত্রেও
দেখলাম--বাড়ির পেছনে পাহাড়ের ওপর
একটা বাগানে মা দাঁড়িয়ে আছেন,আর আমি
সবুজ মটর নিয়ে খেলছি। খুব সুখী
দেখাচ্ছিল আমাদের।
স্বপ্নের মধ্যে কেউ একটুও নড়িনি,কিংবা কে যানে
হয়ত আমি খেলছিলাম না,নীচু হয়ে মটর তুলছিলাম,
আর মা আঁচলে জড়ো করছিলেন সেই মটর।
আমি মটর তুলছিলাম আর মা, দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আমি জানি কী ভাবে বেড়ে উঠছি--বলতেন ,যেন
একটা আগাছার মতো,--বলতে খুশী হতেন মা।
আমারও তবে বয়স হচ্ছে । এখন সুখী কি
না বলতে পারি না
শান্তিও কোনও যথার্থ শব্দ নয় কেননা
মৃত্যুও যে অশান্ত
মৃত্যু এক বিস্মৃতপ্রায় বন্ধুর মতো
এগিয়ে আসে,
যাকে হঠাৎ মনে পড়ে যায়।আমি খেলছিলাম ।বাগানে।
(কানাডার কবি। জন্মঃ১৯২৭ সালে)
অনুবাদ কবিতাঃ৭
অনুবাদকঃরূপাই পান্তি
সিলভিয়া প্লাথ
এরিয়েল
অন্ধকারের ভেতরে এই স্থিরতা
অতল নীলের মধ্যে তখন
ঢেলে দিচ্ছে পাথর আর দূরত্ব
হে ভগবান,আমরা এক-একজন কী ভাবে বেড়ে উঠি
গোড়ালি আরে হাঁটুর ধার ঘঁসে!আর লাঙল
মাটির বুক চিরে এগিয়ে যায়,আমার
বোনের পাশ দিয়ে ধূসর দিগন্তের
কাছাকাছি, আমি ধরতেও পারি না
অবজ্ঞার জ্বলন্ত চোখ আমাকে আঁকড়ে ধরে-
মুখ ভরতি কালো,জমাট রক্ত
আরো ছায়াছন্ন হয়।
আর কারা যেন
আমাকে টেনে নেয় বাতাসের দিকে ...
আমার জানু,চুল
আমার গোড়ালি থেকে উঠে যায় স্তরে
স্তরে।
সাদা গডিভা ফুল
আমি টুকরো করি....
মৃত হাত,মৃত এই সব সামাজিক ভার
এবং এখন,আমি
গমের কাছে ফেনার মত,সমুদ্রের কাছে উজ্জ্বল।
ছোটো ছেলেটির কান্না
দেয়ালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে
আর আমি তো
একটা নিক্ষিপ্ত তীর,
ফোটা-ফোটা জলকনা
যা আত্মহত্যার মতো উড়ছে,কখন যে ঝাঁপিয়ে
পড়বে রক্তের মধ্যে--
সেই অপেক্ষায় সকালের দিকে চোখ রাখছি
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
(গডিভাঃ মার্কিন দেশীয় সাদা রঙের
এক ধরণের ফুল।
এরিয়েলঃ প্লাথের প্রিয় ঘোড়া,যার পিঠ থেকে পড়ে যাবার পর এই কবিতাটি লেখেন।
সিলভিয়া প্লাথঃ(১৯৩৩-৬৩) মার্কিন দেশের পোস্ট-মডার্নিস্ট যুগের অন্যতম প্রধান মহিলা কবি।)
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
[অচেনা যাত্রী~৯ -এ মোট পাঁচ পাতা।পুরো সংখ্যাটা পড়ার জন্য পুরাতন পোস্টসমূহে ক্লিক করুন।]
----------------------------------------------------------------------------------------------------------
[অচেনা যাত্রী~৯ -এ মোট পাঁচ পাতা।পুরো সংখ্যাটা পড়ার জন্য পুরাতন পোস্টসমূহে ক্লিক করুন।]
মন্তব্যসমূহ
==========================
শুভেচ্ছা অচেনা যাত্রী কে। যে ভাবে অচেনা লেখক দের চেনা লেখকে বানিয়ে তুলছে দিনের পর দিন। আরো আরো আরো সাফল্য কামনা করি। অচেনা যাত্রী মুলত তরুণ লেখক দের একটা প্লাটফর্ম। পত্রিকাটির নামকরন যথার্থ। সম্পাদক অমিত কুমার বিশ্বাস নিরলস পরিশ্রম করে চলেছে তরুণ লেখক দের জন্য। এই সংখ্যায় দু-তিন টি বিভাগ না থাকলেও কোথাও আমরা অর্থাৎ পাঠক নিরাশ হইনি। বরাবরই প্রিয় পাঠ বিভাগ টি মন কড়ে নেয় পাঠকের। কবিতা বিভাগ, ব্যক্তিগত গদ্য বিভাগ, অনুবাদ কবিতা বিভাগ, বই এবং পত্রিকার আলোচনা বিভাগ দুটি সহ সম্পাদকের এক গুচ্ছ অণু গল্প মন কেড়ে নিল। সব শেষে ধন্যবাদ জানাই সম্পাদক কে এমন একটি ব্লগ ম্যাগাজিন আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।
"অবশেষে বারোটা বাজল। কিন্তু কার? না বিশেষ কোনো ব্যক্তির নয়। আবার এক জনের-ও বটে। অনেক গুলতানি হল, এ বার আসল কথায় আসা যাক। প্রতিবারের মত এ বারও প্রকাশিত হল 'আচেনা যাত্রী"। সংখ্যা ~৯।কথা রাখলেন আমিত দা (আমিত কুমার বিশ্বাস) তার তীক্ষ্ণ সম্পাদকীয় মাধ্যমে। ঠিক ১২টায় না হলেও তার কিছুটা পরে । বাংলা সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুদের কাছে প্রার্থনা যে যদি আপনার মূল্যবান সময় কিছুটা বাঁচাতে পারেন, তাহলে এই ই-ম্যাগাজিন টা পড়েফেলুন, কথা দিলাম মন্দ লাগবে না ।"---ওয়াসিম ফিরোজ, জনৈক পাঠক।