অনুগল্প
অমিতাভ দাস-এর দুটি অনুগল্প
সম্পর্ক
জবার মালাটা গাঁথতে দিয়ে ফল আনতে গেলাম । ফিরে এসে দেখি মালা গাঁথা হয়ে গেছে ।
-কত হলো মাসি ?
উত্তরে ফুলওয়ালি মাসি বললেন,মালা আর ফুল দিয়ে বারো টাকা দেন ।
তারপর বললেন , আপনাকে দেখি আমাদের পাড়ায়...
--আপনাদের পাড়া ? কোথায় ?
--ও ই যে শ্রীনগরে ।
--আচ্ছা ।আমি এখন ওখানেই থাকি ।
--কোন বাড়ি ?
--ঐ নতুন যে বাড়িটা হয়েছে । কেষ্টদের মুদি দোকানের পাশে...।
--ঐ টা ? ঐ টা তোদের বাড়ি ? ঐ বাড়ি ছাড়িয়ে চার-পাঁচটা বাড়ি পরে আমার বাড়ি ।ঐ যে রেল লাইনের ধারে...।
--আচ্ছা !আচ্ছা !
মাসি বলে চলেছেন ,তোর কাকাই-তো দাঁড়িয়ে থেকে বাড়িটা করে দিল।
--কাকা নন , ঐ ভদ্রলোক আমার বাবা ।
দেখলাম মাসির বেশ আনন্দ আমি ওঁর পাড়ায় থাকি বলে । আরও লক্ষ্য করলাম ঐ ফুলওয়ালি পাড়াতুতো সম্পর্কে মুহূর্তে আমায় আপনি থেকে তুই-তে নামিয়ে এনেছেন ।
বিচ্ছেদ
ওটা নিয়ে গেল । আর ফিরে আসবে না । যে কোনো বিচ্ছেদই কষ্টের । খুবই কষ্টের । গত পয়ত্রিশ বছর যাবৎ চৌকিটায় ঘুমোতাম । সেটা ভেঙে ফেলা হল । ওটা দিয়ে নতুন বাড়ির একটা দরজা তৈরি হবে । কাঠের যা দাম--আগুন ছোঁয়া । মনটা বেশ খারাপ হয়ে আছে । এতদিনের স্মৃতি--কীভাবে এত সহজে ভুলে যাবো ? মনে হচ্ছে নতুন কোনো বাসায় এসেছি ।এই চির চেনা ঘরটা আমার নয় । একটা হাহাকার লেগে আছে ঘরে । আমি এখন মেঝেতে বিছানা করে ঘুমোই ।
শান্তনু হালদার
মিশটাহ্ কার্জ
মৃত্যু শয্যায় ছোটো ছেলের হাত দুটি ধরে শ্রীধরবাবু বললেন, চললাম । অনেক স্বপ্ন ছিল তোকে বড়ো করার। তুই বড়ো হয়ে এলাকার মাথা হবি, নাম করবি,কাগজে তোর নাম বড়ো করে ছাপা হবে...কিন্তু দেখে যেতে পারলাম না রে। তুই কথা দে আমার কথা রাখবি......কথা দে বাপ!
আজ তপন বড়ো হয়েছে। এলাকার বস্। আজ সকালে সংবাদপত্রে তার ছবি বেরিয়েছে। নিজের ছবির দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে মনে মনে বলে,দেখো বাবা, কাগজে কত বড়ো করে আমার ছবি ছাপা হয়েছে!
অমিত কুমার বিশ্বাস-এর ছ'টি অনুগল্প
লিটিল বয়
দুম করে একটা চিঠি এসে টেবিলে পড়ল ।রেজিস্ট্রি ডাকে। সবাই ভয়ে কাঠ !
চিঠিটি স্টাফ কাউন্সিলের সেক্রেটারির নামে। ফ্রম রাবেয়া বিবি। সবাই বাকহারা। প্রবীর বাবু তখনও ক্লাসরুমে। ঘণ্টা পড়তে এখনও তেরো মিনিট। প্রধান সিরিয়াস মুখে একটা সিগারেট ধরালেন।
অবশেষে খোলা হল। সবার সে কী ক্লোজ আপ হাসি! অপু কিন্তু শুকিয়েই গিয়েছিল। ছেলেটার তাহলে কিছু হয়নি।
ফ্যাট ম্যান
চুলবুল পাণ্ডে এলাকার থানেদার হবার পর থেকে একটা পরিবর্তন দেখা গেছে,কেউ আর নীল ছবি দেখছে না।
মেয়েটা হেঁটে হাসছিল। কয়েকটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করল। পিছু পিছু এল। কামড়ে দিল।
মেয়েটা হাসপাতালে। পর্যাপ্ত ইঞ্জেকশান নেই।
পাণ্ডেজির নাম এবার নোবেল শান্তি কমিটিতে গেছে।
পথ
রাস্তাটা তিনদিকে চলে গেছে। এবার? একটু দাঁড়িয়েই হন হন করে এগিয়ে যায়। ফিরে আসে। এবার অন্যপথে। আবারও আসা। এবার শেষটায়। ঢোকার আগে একটু থামে। সিগারেট ধরায়। ধোঁয়ায় ঢেকে যায় সমস্থ পথ।
সাক্ষাৎকার
তাকে জানি বলেই দিয়েছি। জানি দেবে। একদিন না একদিন।
২
না।
৩
গলাটা শুকিয়ে গেল। কতগুলো কালোমাখা হাত এগিয়ে আসছে ।
কোলাজ
-রেডি?
-হ্যাঁ। কন্ডোম হবে?
-হুম!বিশ টাকা এক্সট্রা।
২
বাপি আমাকে কলেজগেটে ছেড়ে আসবে!
৩
ধুর,বলেছিনা মেয়ে বড়ো হয়ে গেছে!
এই আলোকচিত্রটি পরিচালক সৌরদীপ্ত চৌধুরী-র।ছবিটি অনুমতি সাপেক্ষে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে।)
বেডকভার
যে দুজন প্রথমে শুয়েছিল তার একজন আবার আসে আর একজন কে নিয়ে ,আর আমিও এভাবে ঢুকে পড়ি , দেখি একজোড়া পেঁপে নিয়ে অপেক্ষা করছে একজন , যেমনটা হয় আর কি!
এই আলোকচিত্রটি পরিচালক সৌরদীপ্ত চৌধুরী-র।ছবিটি অনুমতি সাপেক্ষে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে।)
বেডকভার
যে দুজন প্রথমে শুয়েছিল তার একজন আবার আসে আর একজন কে নিয়ে ,আর আমিও এভাবে ঢুকে পড়ি , দেখি একজোড়া পেঁপে নিয়ে অপেক্ষা করছে একজন , যেমনটা হয় আর কি!
বিদেশী অনুগল্প
অনুবাদঃরুপাই পান্তি
দানিয়েল খারমস
সাক্ষাৎ
কী একটা কাজে যেন একটা লোক বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দ্বিতীয় একজনের দেখা পেলেন। ঐ দ্বিতীয় লোকটি এক টুকরো পাউরুটি কিনে তখন বাড়ি ফিরছে।
ফ্রান্স কাফকা-র পাঁচটি অনুগল্প
অনুবাদঃরুপাই পান্তি
অনুবাদঃরুপাই পান্তি
গাছ
কেন যে আমরা এই তুষারপাতের দেশে গাছের গুঁড়ি পছন্দ করি! দেখে মনে হয়,পিচ্ছিল,যেন ঠেলা দিলেই গড়িয়ে যাবে বহুদূর।কিন্তু ,আসলে তা হয়না,কারণ, মাটির গভীরে গেঁথে থাকা গাছের শিকড়। কিন্তু,ঐ-যে ,দেখা চোখে যা দেখা যায়...
পাশের গ্রাম
আমার ঠাকুরদা বলতেন,"জীবন্টা বড্ড ছোটো। আর আমি যখন পেছন ফিরি,দেখি জীবনটা আরও ছোটো হয়ে গেছে, আমি বুঝতে পারি না কেনেই যেমন কিকরে একটা যুবক ঠিক করল যে পাশের গ্রামে যাবে,ঘোড়ায় চড়ে,নিরভিক ভাবে--দূরঘটনার কথা ছেড়েই দাও--কখনোও স্বাভাবিক সুখি জীবনের দৈর্ঘ্য পাশের গ্রামে যতটা সময় লাগে তার আগে শেষ যায়।
এই আলোকচিত্রটি পরিচালক সৌরদীপ্ত চৌধুরী-র।ছবিটি অনুমতি সাপেক্ষে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে।)
এই আলোকচিত্রটি পরিচালক সৌরদীপ্ত চৌধুরী-র।ছবিটি অনুমতি সাপেক্ষে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে।)
তাহলেই হয়েছে!
ভোর বেলায়, আমি স্টেশন যাচ্ছি। রাস্তা পরিষ্কার , নির্জন। মোড়ের ঘড়ির সাথে নিজের হাতঘড়ি মিলিয়ে দেখলাম,যা ভেবেছি তার চেয়েও বেশ দেরি হয়ে গেছে। পা চালাতে হবে। এই ঘড়ির ভুল আমাকে অনিশ্চিত করে দিল। শহরটা এখনও ভালো চিনি না, তবে কপালজোর, একটা পুলিশের দেখা পেলাম।দৌড়ে কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি,"স্টেশনের রাস্তাটা কোন দিকে?" পুলিশটা শুনে হেসে ফেলল। বলল ,"আপনি আমার কাছে রাস্তা জিজ্ঞেস করছেন?" আমি বলি," হ্যাঁ! আমি রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না।" "তাহলেই হয়েছে!" বলতে বলতে সে এমন ভাবে ঘুরে দাঁড়াল যেন সে এবার সে একটু একা একা হাসতে চায়।
জানলার ধারে অলস চাউনি
এই যে এখন বসন্ত আসেছে , হুড়মুড় করে, এখন এতে আমাদের কী-বা করার আছে? এইতো সকালেই আকাশ ঘোলাটে ছিল। কিন্তু জানলার কাছে গেলে যে কেউ অবাক হয়ে যাবে,আর জানলায় মুখ চেপে দেখবে...
সূর্য এখন অস্ত যাচ্ছে, দূরে ঐ মেয়েটার মুখের দিকে তাকালে দেখবেন তাঁর মুখ ঝলমল করছে, আর পেছনের লোকটার ছায়া কেমন গ্রাস করেছে ওকে।
মন্তব্যসমূহ
amar 2 to golpo chhapa hoyeche .valo laglo .nijeke dhonnyo mone korchi .
subhechha .