ভালোবাসা মন্দবাসা
নিষাদ নয়ন
ভালোবাসা আর না বাসার উপর মানুষের
হাত নেই,মন আছে। মনের খেয়াল , বেখেয়াল
, ভালোলাগা মন্দলাগার নিয়ন্ত্রণ কার কাছে, কোথায় আছে কে জানে?ভালোবাসা সহজ, সহজাত।যাকে একবার ভালোবাসা যায় তাকে ভুলে থাকা যায় না ।তার থেকে হয়তো দূরে
রাখা যায় , এমনকি ঘৃণাও করা যায় , শুধু
ভুলে থাকা যায় না।মন যে বেভুল নয়, তরঙ্গের কাঁপন ছুঁয়ে
যাওয়া হাওয়াকল,একটু
বাতাস পেলেই নড়ে ওঠে পাতার স্থির মায়া কাটিয়ে।শাখার কাছে থেকে পাতা গাছ থেকে কিছুটা দূরে থাকে,
তবুও বুঝতে পাতার হাওয়ার কড়ানাড়া, পাতাদের
নড়াচড়া ,ঝরেপড়া। মন আর ভালোবাসা ,গাছ
আর পাতা কিংবা মেঘ ও
বৃষ্টির প্রেম।প্রতিটি সম্পর্কই কবিতা, গল্পের প্রাণ,
ছোটো ছোটো স্বপ্ন কুন্ডায়ন
মাকড়সার জাল বুনে যাওয়ার প্রাণবন্ত উদ্যম। শিকারের জন্য ফাঁদ পেতে রাখাও এক ধরণের
প্রেম।আত্মপ্রেম। ভালোবাসা মন্দবাসার গল্প। মা মাকড়ষা একপাশে নিপুন ভাবে ওতপেতে
বসে থাকে। তার মধ্যে যুগপৎ উপস্থিত থাকে শিকারের জন্য অপেক্ষা , গর্ভকালীন উষ্ণতার প্রতীক্ষা ।প্রতিটি শিকার যেমন তাকে বাঁচিয়ে রাখে ,বাঁচিয়ে রাখে অনাগত মাকড়সার মায়া। মা মাকড়সাকে খেয়ে বেঁচে ওঠে উত্তর
প্রজন্ম। গর্ভলোকেই খাবারের প্রথম ধারা মাকড়সার কাছে। মা মাকড়সার গন্তব্য উদর চিরে
খাওয়ানো, নিজে
নিঃশেষ হয়ে যাবার পরও তার ভালোবাসা
মন্দবাসা টিকে থাকে।মনের মধ্যে জাল আছে, শিকার আছে , ভালোবাসা আছে ,মায়া কাটানোর মন্দবাসা আছে, তা থেকে
মুক্তির উপায় আপাতত জানা নেই।মন ভাবনার আধার ,ভালোবাসার
আশ্রয় । ভালোবাসাহীন প্রাণের অস্তিত্ব থাকে না, তা জড়বস্তু
তে পরিণত হয়, পাথরে রূপান্তরীত হতে থাকে। পাথর কিছুই
ভালোবাসে না , শুধু বুকের ভিতর আগুন পুষে রাখে। ভালো না বাসা
মনোবৈকল্য, অসুস্থতা। ভালোবাসা আর মন্দবাসার মাঝখানে থাকে
অভিমান । অভিমান থেকে বিমনা আর আনমনা ।নিজের ভিতর একা আর সবার ভিতর আরো বেশি একাকী।যে
ভালোবাসে না সে অসুস্থ,কিন্তু যে ভালোবাসে,ভালোবাসা তাকে ভালোবাসে না --তাকে কী বলা যেতে পারে --বিরহী না বিবাগী। তার কাছে ভালোবাসা তো কষ্টের,না
পাওয়া ভালোবাসাও কষ্টের। তবে সে কে? কষ্টের ফেরিওয়ালা না
আড়তদার? ভালোবাসা সব অবস্থায় ত্রিমুখী। দু’জন যখন দু’জনকে
বেশুমার ভালোবাসে তখন তা মিলন। আর তার বিপরীতে বিয়োগ থাকে ,বিরহ
থাকে, অভিমান থাকে না। অভিমান ভালোবাসার কাছাকাছি থাকে,পাশাপাশি থাকে না। সফল ভালোবাসা ক্রমশ নিম্নগামী, সেটি মনের মন্দির জুড়ে সুজোগ
বুঝে নেমে আসে রোমন্থনের সিঁড়ি বেয়ে। ভালোবাসার ভাষা আছে ,প্রকাশ আছে আলাদা ভাবে। কবি কবিতাকে ভালোবাসে, কবিতাও
কবিকে ভালোবাসে। কবি শুধু কবিতার মাতাল প্রেমিক হতে থাকে আর কবিতা কবি ছাড়াও
অন্যদেরও ভালোবাসতে থাকে, প্রেমে পড়তে থাকে। কবিতার ভালোবাসা কবিকে অতিক্রম করে যায়, কবির একার ভালোবাসা কবিতার জন্য পর্যাপ্ত নয়, কবি
ভাবে এই উজাড় করা মাতাল প্রেম যদি যথেষ্ট না হয়। এর চেয়ে
বিপুল প্রেম, শেকড়ের বিপুল তৃষ্ণা মেটানোর উপায় আসলে কী হতে
পারে? কবি কবিতার কাছে স্বেচ্ছা নির্বাসন চেয়ে বসে। তাদের
মধ্যে কথা কাটাকাটির খেলা শুরু হয় । শেষমেশ তার কোনো ফলাফল হয় না। কবিতার স্পষ্ট
কথা আমার যাকে ভালো লাগবে তার সাথে সম্পর্ক গড়বো।ভালোবাসবো ।মিশবো। আমার অনেক
চাহিদা। কবি কষ্ট পায়। এমনিতে কবিরা খুব কষ্ট প্রিয় হয়। কষ্টের সৃষ্টিসুধা দিয়ে
কবিরা কবি হয়ে ওঠে, সৃষ্টিমুখীন শক্তিপ্রাপ্ত হতে থাকে।তারপরও
তারা দু’জন দু’জনকে খুব ভালোবাসে, খুব মিস করে। কবি কবিতার
কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়। ভাবে আর কবিতা লিখবো না।পারে না ।অগত্যা লিখতে বসে। একটি নতুন কবিতা লিখে তার আরো মন খারাপ পেয়ে বসে। ঘুম আসে না।
তার কোনো কোলবালিশ রাখার অভ্যাস ছিলনা,ঘরে যে কোলবালিশ নেই।
হঠাৎ তার তাকে নিয়ে জড়াজড়ি করে ঘুমাতে খুব ইচ্ছে হয়। নিরুপায় হয়ে মাথার বালিশ
কোলবালিশ বানিয়ে ঘুমাতে চেষ্টা করতে থাকে। তবু তার সহজে ঘুম আসে না।
কখন ঘুম আসে সে জানে না। সকালে মা ডাকতে থাকে । সে উঠে পড়ে। ঘুম ঘুম কিছুতেই কাটতে
চায় না। তবু ঘরবাহির হতেই হয়। এভাবে দিন কেটে যায় । রাতগুলো বড়ো হতে থাকে কয়েক বছর
আগের মতোই। মেয়াদ উত্তীর্ণ ঘুমের ওষুধ গুলো কাজে লাগে। টাকা নষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে
যায়।
ভালোবাসা হারিয়ে গেছে এই শীতের শেষে
বিকেলের কুয়াশার সাথে। দীর্ঘদিন কোনো প্রকার বনিবনা হচ্ছিল না। সে আমাকে ফিরিয়ে
দিয়েছে, আমিও তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি। হয়তো বা সত্যিই
তাকে একমাত্র ভালোবেসে ছিলাম। এখনও বাসি। আমরণ বেসে যাবো। শুধু দু’জনের দুটি পথ
দুই দিকে গেল বেঁকে। রোমন্থনের দরজা খুলে গেল, জানলা বন্ধ
হয়ে গেল। চার বছর ঝুলে গেল,ঝুলে থাকবে স্মৃতিকুন্ডায়ণ।কাশফিয়া হাসতে ভুলে থাক, ভালো
থাকুক ঘাসফরিঙ। কবির কষ্ট অমর হোক ।টিকে থাক কবির কবিতা। কবি আর কবিতার প্রেম। ভালোবাসার রূপ-রস-গন্ধ মেশানো ওম নিয়ে। কবির কষ্ট
থাকতেই পারে, তাতে বসন্ত বাবুর কি এসে যায়? সেতো ঘুরে ফিরে আসবেই । ভালো থেকো ভালোবাসা, মন্দবাসা
আমার কাছে এসো, আমাকে নিবিড় ভালোবাসো। ভালোবাসা যেখানে নিয়ে
যেতে চায় সেখানেই যেতে হয়। মন যেতে চায় ভালাবাসার ঘরে। তার পিছনে না গিয়ে কোনো
উপায়ন্তর থাকে না। সে এক অদ্ভুত আগন্তুক, কোনো রাস্তা না
চিনেও কোথাও না কোথাও পৌঁছে যায়।যেতে পারে। যাবেই। ভালোবাসার ক্ষয় হয় না। শুধু
রূপান্তর ঘটে। ঘটতে থাকে। আর আমরা নিরুপায়, না ভালোবেসে
বেঁচে থাকতে পারি না বলে।
মন্তব্যসমূহ